জোছনা ও জননীর গল্প PDF : লেখক হুমায়ূন আহমেদ

  • বই : জোছনা ও জননীর গল্প পিডিএফ PDF 
  • লেখক : হুমায়ূন আহমেদ
  • প্রকাশনী : অন্যপ্রকাশ
  • পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৫২৮
  • মুদ্রিত মূল্য : ৮০০ টাকা
  • ব্যক্তিগত রেটিং : ৫/৫

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতটা কেমন ছিল? আজ ৫১ বছর পার করে সেই রাতের বি.ভী.ষি.কা অনুধাবন করা সম্ভব নয়। জা.হা.ন্না.মে.র আ.গু.নে.র তী.ব্র.তা না কি খুবই ভ য়া ব হ। সেদিন এক টুকরো জা.হা.ন্না.ম নেমে এসেছিল ঢাকার বুকে। চারিদিকে গো.লা.গু.লি.র শব্দ। আ.গু.নে.র তী.ব্র.তা.য় কয়লা হয়ে যাচ্ছে সবকিছু। দা.উ.দা.উ করে জ্ব.ল.ছে আ.গু.ন। সেই আ.গু.নে.র লে.লি.হা.ন শি.খা যেন আকাশ ছুঁতে চাইছে। জানান দিচ্ছে বী.ভ.ৎ.স.তা.র এক নিকৃষ্টতম নিদর্শন।

গো.লা.গু.লি.র শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠছে ঢাকা শহর। কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে কেউ বুঝতে পারছে না। চিৎকার, আহাজারিতে ঢাকার আকাশ এক অদ্ভুত রূপ ধারণ করেছে। এ যেন মানুষের আর্তনাদের সাক্ষী। রাতের আঁধারে অসহায়, নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার যে ব.র্ব.র.তা.র নিদর্শন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রেখেছিল, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত খুবই খুব। পূর্ব পাকিস্তানের মেরুদন্ড নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার প্রথম ধাপ ছিল এই ‘অপারেশন সার্চলাইট’। সেদিন যেন এক উৎসবে মেতেছিল ব.র্ব.র পাকিস্তানিরা। এই উৎসব র.ক্তে.র। এই উৎসব বি.ভী.ষি.কা.র। এই উৎসব হত্যা আর ধ্বং.সে.র। 

এমনই এক রাতে আসমানীকে খুঁজতে বের হয়েছে শাহেদ। মেয়েটা বড্ড অভিমানী। সামান্য ঝগড়াঝাঁটি হলেই বাসা থেকে মেয়েকে নিয়ে বের হয়ে যায়। এবার অবশ্য দোষ শাহেদের বেশি ছিল। রাগের মাথায় মেয়ে রুনির গায়ে হাত দেওয়া ঠিক হয়নি। যা ভুল হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখন আর আফসোস করে লাভ নেই। ওদের খুঁজে বের করতে হবে। দেশের পরিস্থিতি ভালো না। এমন অবস্থায় কেউ এমন করে? কোথায় খুঁজবে ওদের? শাহেদ ওদের খুঁজে পায়নি। তবে খুঁজে পেয়েছে অন্য এক পরিবারকে। সেদিন রাতেই মিলিটারি নেমেছে রাস্তায়। ভারী মিলিটারি ট্রাক, মিলিটারি জিপ অবাধে চলাফেরা করছে। শুরু হয়ে গিয়েছে বি.ভ.ৎ.স এক রজনী। বাজির মতো শব্দ করে গুলি ছুটছে। কত মায়ের কোল খালি হচ্ছে? কত স্ত্রী তার স্বামীকে হারাচ্ছে? কত সন্তান তার বাবাকে হারিয়ে ফেলছে। আবার কত বাবার সামনে তার ফুটফুটে সন্তানের মৃ.ত্যু ঘটছে! মেনে নেওয়া যায়? এই সময় এক আশ্রয়ের খোঁজে সম্পূর্ণ নতুন পরিবারে শাহেদের আগমন। বিপদে পড়লে সবাই এক হয়ে যায়। অচেনা মানুষও খুব দ্রুত চেনা হয়ে ওঠে। কয়েক ঘন্টার পরিচয়ে এই পরিবার হয়ে ওঠে শাহেদের আপনজন। এই পরিবারেও এক ছোট্ট শিশু রয়েছে। কংকন। ঠিক যেন রুনির মতো।

আসমানী রাগ করে চলে এসেছিল নিজের বান্ধবীর বাসায়। ভেবেছিল রাগ কমলে ফিরে যাবে। তার সে ইচ্ছে আর পূরণ হয়নি। কেননা বাংলাদেশে তখন চলছে না.র.কী.য় তা.ন্ড.ব। আসমানী আর শাহেদের ঝগড়া খুবই সামান্য ব্যাপার। ছোটো বিষয়ে ঝগড়া হবে, আসমানী গেল ফুলিয়ে বসে থাকবে, শাহেদ রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবে, ফিরে এসে দেখবে দরজায় তালা ঝুলছে। আবার খুঁজতে যাওয়া। এভাবেই চলছে। সেদিনের ঘটনাও এভাবে চলতে পারত। কিন্তু ইয়াহিয়া খান ও তার দোসররা উল্টেপাল্টে দিয়েছিল সবকিছু। একটি রাতে বদলে গিয়েছিল পুরো বাংলাদেশের জীবনযাত্রা।

নাঈমুল ছেলেটা খুবই মেধাবী। প্রথম ব্যতীত কখনো দ্বিতীয় হয়নি। বিদেশের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পর্যন্ত পেয়ে গিয়েছে। প্রহর গুনছে সেখানে যাওয়ার। এমন সময় এসেছে বিয়ের সম্বন্ধ। বাপ-মা হারানো ছেলেটার সাথে পুলিশ ইন্সপেক্টর মোবারক হোসেনের বড়ো মেয়ের বিয়ে হয়ে গেল। মরিয়মের স্বামীকে খুব পছন্দ হয়েছে। ছোটো থেকেই কোনো কিছু না চেয়ে বড়ো হওয়া মরিয়মের যা-ই পায়, তাতেই খুশি। নাঈমুলকে নিয়ে নতুন দিনের স্বপ্নে বিভোর সে। তার জীবনেও নেমেছে কাল রাত্রি। বাবা মোবারক হোসেনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মেয়ের যেন চিন্তা নেই। দেশের এই পরিস্থিতি নিয়েও মরিয়মের চিন্তা নেই। তার সমস্ত ধ্যানজ্ঞান নাঈমুল। কিন্তু নাঈমুল মনে অন্য বাসনা। নিজের সামনের উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে দূরে ঠেলে দিয়ে তার ইচ্ছা সে মু.ক্তি.যু.দ্ধে যাবে। দেশকে ইবলিশমুক্ত করতে। সে মরিয়মকে কথা দিয়েছে, সে ফিরবে। আবার ফিরে আসবে প্রিয়তমা স্ত্রীর কাছে। নাঈমুল কি পারবে? যু.দ্ধে যাওয়ার আগে অনেকেই কথা দিয়েছিল। কেউ মাকে, কেউ বোনকে, কেউ স্ত্রীকে। সবাই কথা রাখতে পারেনি। কেউ কেউ হারিয়ে গিয়েছে অন্ধকারে। বাংলার মাটি পরম আদরে তার বীর সন্তানদের ধারণ করে রেখেছে। নাঈমুল কি ফিরেছিল মরিয়মের কাছে?

জীবন বাঁচাতে সবাই ছুটছে। শহর থেকে গ্রামে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আসমানীও পালিয়ে বেড়াচ্ছে তার বান্ধবীর পরিবারের সাথে। শাহেদের দেখা নেই। শাহেদ হন্যে হয়ে খুঁজছে ওদের। কোথাও পাচ্ছে না। আসমানীও অপেক্ষা করছে শাহেদের। তার বিশ্বাস শাহেদ আসবে। আবার দেখা হবে ওদের। সময়ের সাথে সাথে সেই বিশ্বাস একটু একটু করে মিলিয়ে যাচ্ছে। তবুও ক্ষীণ আশা। শাহেদের সাথে দেখা হবে আসমানীর? রুনি আবার তার বাবার আদর পাবে? কত সময়ের অপেক্ষা?

মু.ক্তি.যু.দ্ধে.র সময়কালে কিছু সুযোগ সন্ধানী মানুষের দেখা মিলেছিল, যারা নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য দেশের সাথে গাদ্দারী করতেও দ্বিধা করেনি। তাদের মধ্যে একজন কলিমুল্লাহ। শাহ কলিম ছদ্ম নামে সে কবিতা লেখে। আর এভাবেই তার পরিচয় কবি শামসুর রাহমানের সাথে। আরও পরিচয় ঘটে পাকিস্তান মিলিটারি বাহিনীর এক মেজরের সাথে। সেখান থেকে বিভিন্ন কাজ পাওয়া। অন্যের কাঁধে ব.ন্দু.ক রেখে নিজের পিঠ বাঁচানো কলিমুল্লাহ দেশের সাথে এমন এক বেইমানি করেছিল, পাকিস্তানীদের এমন এক ষড়যন্ত্রের অংশ হয়েছিল; যার জন্য জাতি তাকে কোনোদিন ক্ষমা করবে না। কী করেছিল সে?

আমাদের উপন্যাস লেখক হুমায়ূন আহমেদের মু.ক্তি.যু.দ্ধে.র সময়টা কেমন কাটছিল? তার পিতা শহীদ ফয়জুর রহমান ছিলেন পিরোজপুর মহকুমার উপ-বিভাগীয় পুলিশ অফিসার (এসডিপিও)। মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করার জন্য তিনি অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন। এমনকি যুদ্ধে পর্যন্ত শ.হী.দ হন। তার মৃ.ত্যু.র পর মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করার অপরাধে তার দুই জৈষ্ঠ্য পুত্রকে হন্যে হয়ে খুঁজে মিলিটারি বাহিনী। এক পুত্র তো হুমায়ূন আহমেদ। আরেকজন? মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এখানে ল.ড়া.ই শুরু করেন তাদের মা আয়েশা বেগম। সন্তানদের নিয়ে পালিয়ে বেড়ান। এ কুল থেকে ও কুলে ভেসে বেড়ানো ছাড়া উপায় নেই। এরপর কী হয়েছিল? জানা যাবে হুমায়ূন আহমেদের নিজের বয়ানে। 

মু.ক্তি.যু.দ্ধে সবাই এক হয়ে উঠেছিল। কেউ স্ব.শ.স্ত্র যু.দ্ধ করেছিল। কেউবা যো.দ্ধা.দের সাহায্য করে যু.দ্ধে নাম লিখিয়েছিল। সে সময়ের সাত কোটি বাঙালির প্রত্যেকেই মু.ক্তি.যো দ্ধা। কেউ প্রত্যক্ষভাবে, কেউ পরোক্ষভাবে। এভাবেই এগিয়েছে প্রতিটি দিন। কেটেছে প্রতিটি রাত। দেশকে বাঁচানোর তাগিদে জীবন হারিয়ে জন্ম দিয়েছে আরও অনেক যো.দ্ধা.র। যাদের চোখেমুখে দেশ স্বাধীন করার প্রত্যয়। ওরা এগিয়ে আসছে। চেপে ধরছে ব.র্ব.র পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে। এবার পালাবে কোথায়? সমস্ত র.ক্তে.র হিসাব দিতে হবে যে…

বই পর্যালোচনা ও পাঠ প্রতিক্রিয়া

হুমায়ূন আহমেদের বিপক্ষে সমালোচকদের সাধারণ এক অভিযোগ সবসময় পরিলক্ষিত হয়। হুমায়ূন আহমেদের লেখায় গভীরতা নেই। আচ্ছা, এই গভীরতা কীসের মানদণ্ডে মাপা হয়? কঠিন শব্দচয়ন, ভাষার গাম্ভীর্য, কাব্যিক লেখনী দিয়ে লিখলেই সেই লেখার গভীরতা ব্যাপক; আমি অন্তত তা মনে করি না। সহজ ও সাবলীল লেখনীর মাধ্যমে গভীর কিছু অনুভূতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যায়। আর এই ক্ষেত্রে হুমায়ূন আহমেদ অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

হুমায়ূন আহমেদকে বলা হয় গল্পের জাদুকর। তবে আমার কাছে তিনি শব্দের জাদুকর। শব্দ নিয়ে খেলা একটি বইয়ে আরও বেশি উপভোগ্য করে তোলে। “জোছনা ও জননীর গল্প” উপন্যাসে হুমায়ূন আহমেদের লেখনীর চেয়ে তার শব্দের খেলা নিয়ে প্রশংসা বেশি করা উচিত। আমি তাঁর বই পড়ে বরাবরই মুগ্ধ হই। আরও একবার মুগ্ধ হয়েছি এই বইটি পড়ে। শব্দ নিয়ে খেলা, লেখার প্রতি আগ্রহ আমার এই হুমায়ূন আহমেদের লেখা পড়েই গড়ে উঠেছে।

“জোছনা ও জননীর গল্প” মোটা দাগে মু.ক্তি.যু.দ্ধে.র উপন্যাস। তবে এই বইটিকে আমার শুধু মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস বলে মনে হয় না। এই উপন্যাস সম্পর্কের বন্ধনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এখানে আছে প্রেম, ভালোবাসা, সন্তানের প্রতি মমতা, অভিমান, আক্ষেপ, প্রিয়জন হারানোর বেদনা, আবার সব ফিরে পাওয়ার আকুলতা। আমাদের জীবন যু.দ্ধে.র এক পরিপূর্ণ উপন্যাস এই “জোছনা ও জননীর গল্প”।

মু.ক্তি.যু.দ্ধে.র সময়টা প্রতিটি মানুষের জীবনে খুব কঠিন এক সময় ছিল। সেই কঠিন সময়টা কী দারুণভাবে লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন! চারিদিকে জ্বা.লা.ও পো.ড়া.ও চলছে, তারই মাঝে বেঁচে থাকার তাগিদে জীবন হাতে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে মানুষ। লেখক স্বয়ং তাদের দলে। সবকিছুকে লেখক নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন। লেখক তুলে এনেছেন এমন কিছু মানুষের জীবনের গল্প। যার কিছু বাস্তব আবার কিছু কল্পনা। সেই সময়ের গল্প তো কল্পনাকেও হার মানায়।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ব.র্ব.র.তা ফুটে উঠেছে “জোছনা ও জননীর গল্প” উপন্যাসে। এক দারুণ গ্রামীণ সমাজের প্রতিচ্ছবি এঁকেছেন লেখক। সেই ছবির মতো গ্রামীণ সভ্যতাও নিস্তার পায়নি পাকিস্তানীদের ব.র্ব.র.তা থেকে। মৃ.ত্যু কতটা সহজলভ্য হতে পারে, ১৯৭১ সালের সেই দিনগুলোতে স্পষ্ট দৃশ্যমান ছিল। আরো সহজ করে বলে, মানুষ মা.রা কতটা আনন্দের হতে তাই দেখিয়েছিল পাকিস্তানি মিলিটারি। এতটাই রক্তের মূল্য ছিল তাদের কাছে, যে হাসতে হাসতে ব্রা.শ.ফা.য়া.রে পশুপাখির মতো মানুষ মা.রা যায়!

“জোছনা ও জননীর গল্প” উপন্যাসে কিছু বাস্তবতা তুলে ধরেছেন লেখক। যতটুকু জানা যায়, কিছু বাস্তব ঘটনাকে উপন্যাস আকারে লেখার প্রয়াস এই বিশাল কালজয়ী মু.ক্তি.যু.দ্ধে.র উপন্যাস। তার ইঙ্গিত বইয়ের ভেতরে দেওয়া ছিল। এছাড়া বাস্তব চরিত্রের আনাগোনা গল্পে অহরহ ছিল। শেখ মুজিবর রহমান, মাওলানা ভাসানী, ইয়াহিয়া খান, টিক্কা খান, বেনজীর ভুট্টো প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের ঘটনা গল্পের আকারে লেখা উপন্যাসের প্রাণ ছিল।

“জোছনা ও জননীর গল্প” একটি ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস। মু.ক্তি.যু.দ্ধে.র দলিল নয়। বইয়ের অংশগুলোকে বাস্তব ধরে নিলে ভুল করতে হবে। উপন্যাসে একজন লেখকের এখতিয়ার থাকে নিজের মতো করে গল্প সাজানোর। হুমায়ূন আহমেদ তা-ই করেছেন। সেজন্য বইটিকে ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে বিবেচনা না করে কেবল উপন্যাস হিসেবে পড়লে বেশি উপভোগ করা যাবে।

▪️ চরিত্রায়ন :

চরিত্র গঠনে হুমায়ূন আহমেদের মতো পটু আর দ্বিতীয়টি আমি কাউকে দেখিনি। তিনি শুধু গল্প বলে যান। আর এই গল্প বলাতেই একটি চরিত্র দাঁড়িয়ে যায়। এবং এই চরিত্রকে মনে হয় বাস্তব। “জোছনা ও জননীর গল্প” উপন্যাসে লেখক চরিত্র গঠনে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছেন। এর ফলে, আমাদের সামনে এমন কিছু চরিত্র দৃশ্যমান হয়েছে; যাদের মনে হয় আমাদের আপনজন। আমাদের চারিপাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ওরা।

শাহেদ-আসমানীর কথাই ধরা যাক। ছোটো ছোটো সাংসারিক অশান্তি, ঝগড়াঝাঁটি। এরপর অভিমান, দুজনের দূরে চলে যাওয়া। তবুও ভালোবাসাটা অটুট থাকে। দূরে হারিয়ে গেলে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াতেও দ্বিধা করে না। কিংবা নাঈমুল। কত সম্ভাবনা ছিল তার। স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে দেশে ফেরত এলে হয়তো অর্থবিত্তের অভাব হতো না। কিন্তু নাঈমুল কী করল? সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে রেখে, নিজের ভবিষ্যত পায়ে ঠেলে হাতে অস্ত্র তুলে নিলো। এমন অকাজ কিংবা সুকাজ করার সংখ্যা কি গুনে শেষ করা যাবে?

আরো আছে মোবারক হোসেন। পাকিস্তান ভাগ হবে শুনে বিরক্ত। কিন্তু মনের অজান্তেই স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা শেখ মুজিবর রহমানের ছায়া হয়ে থাকে। বাঙালি র.ক্ত বলে কথা। যেই র.ক্ত.কে পাকিস্তানিরা বিশ্বাস করে না। আর শাহ কলিমদের মতো মানুষকে বাঙালিরা বিশ্বাস করে না। এরা বিশ্বাস অর্জন করে হাসতে হাসতে বিশ্বাসঘাতকতা করে।

এছাড়া উপন্যাসে থাকা ছোটো বড়ো সকল চরিত্র এই সমাজের। আমাদের চারপাশে খুঁজলেই পাওয়া যাবে ইরতাজউদ্দিন কাশিমপুরিকে। কিংবা গৌরাঙ্গ, শাহেদ, আসমানী, মরিয়ম বা নাঈমুলকে।

▪️ যা ভালো লাগেনি :

শতভাগ পরিপূর্ণ কোনোকিছুই হয় না। “জোছনা ও জননীর গল্প” তেমন পরিপূর্ণ কিছু নয়। বরং দুয়েক জায়গায় কিছু কমতি লেগেছে।

শুরুর দিকে চরিত্র গঠনে লেখক বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। মূল কাহিনীতে প্রবেশের ক্ষেত্রে একটু সময়ক্ষেপন করেছিলেন। আমার মনে হয়েছে, আরেকটু দ্রুত গল্পে প্রবেশ করলে উপভোগের মাত্রাটা আরো বাড়ত।

এছাড়া লেখক উপন্যাসের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিল থেকে কিছু উদ্ধৃতি হুবহু তুলে দিয়েছেন। তাছাড়া কিছু ঘটনা এমনভাবে লিখেছেন, যেন মনে হচ্ছিল নন ফিকশন পড়ছি। সেসব জায়গায় গল্পের গতি কিছুটা ধীর হয়ে যাচ্ছিল। সেগুলো সরাসরি না দিয়ে যদি উপন্যাসের গল্প আকারে দেওয়া হতো তাহলে আরো ভালো হতো। 

▪️ প্রচ্ছদ ও প্রোডাকশন :

কালো রঙের প্রচ্ছদ যেন ১৯৭১ সালের সেই অন্ধকার দিনগুলোকেই মনে করিয়ে দেয়! এই প্রচ্ছদ আমার বিশেষ ভালো লাগে।

সম্পাদনার ভুল তেমন ছিল না। বানান ভুলও খুব একটা নেই। হুমায়ূন আহমেদের বইয়ে বানান ভুল তেমন চোখে পড়ে না। দুয়েক জায়গায় মুদ্রণ প্রমাদ দেখা গেলেও ৫০০ এর অধিক পৃষ্ঠার বইয়ের জন্য তা তেমন বেশি কিছু নয়।

▪️ পরিশেষে, জোছনা বিলিয়ে চাঁদের আলো ছড়িয়ে যায়। আলোকিত হয় মাঠঘাট, রাজপথ। এই পথেই হয়তো একদিন ওরা হেঁটেছিল। তাড়িয়ে বেরিয়েছিল পাক হানাদার বাহিনীদের। এই পথের কোথাও হয়তো চিরনিদ্রায় শুয়ে আছে এই দেশের বীর সন্তানেরা। তারা কী ভাবছে? আজকের এই বাংলাদেশের অবস্থান দেখলে কেমন হতো ওদের অনুভূতি? এরই জন্য কি বুকের র.ক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিল ? কতটা আক্ষেপের জন্ম নিত ওদের মনে? কে জানে? Josna O Jononir Golpo PDF Format Download Free

বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?