জেগে উঠছে ইরান : শিরিন এবাদি, অবনি অনার্য | Jege Uthche Iran

  • Title জেগে উঠছে ইরান
  • Author শিরিন এবাদি, অবনি অনার্য
  • Publisher স্বদেশ প্রকাশ
  • Language Bangla
  • Category গল্প / উপন্যাস
  • Subject উপন্যাস/ গল্প

জেগে উঠছে ইরানঃ 

শিরিন এবাদি, ইরানের মানবাধিকার কর্মী। ২০০৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। শাহ আমলে ইরানের বিচারপতি ছিলেন। একজন দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী এবং ধর্মপ্রান মসুলমান। শাহ আমলের চাপিয়ে দেওয়া পশ্চিমাকরন, নানান অন্যায় আর বিদেশীদের তাবেদারী করার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। শাহ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিলের মুখ এবং ৭৯ সালে সংঘটিত ইসলামিক বিপ্লবের সমর্থক ছিলেন। খোমেনি যেদিন প্যারিস থেকে তেহরান বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তার কয়েকদিন পূর্বেই শাহ ইরান থেকে পালিয়ে যান। লাখ লাখ মানুষ সেদিন খোমেনিকে ইরানের উদ্ধারকর্তা ভেবেছিলেন। সেই দলে শিরিন এবাদিও ছিলেন। 
“খানম” শব্দের অর্থ ভদ্রমহিলা! অনেকটা দেবীর মত। যেমন আমরা বলি মহাশ্বেতা দেবী। “খানম আপনার মাথায় স্কার্ফ কোথায়? আপনার চুল ঢেকে রাখুন!” শিরিন এবাদি আমাদের জানাচ্ছেন- ‘বিপ্লবের কয়েকদিন পরেই মাথায় স্কার্ফ পরার আদেশ জারি হল। আইন মন্ত্রণালয় দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হল বানি সদর নামক এক ব্যক্তির উপর। এক ঝরঝরে মনোরম বিকেলে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম উনার অফিসে গিয়ে অভিবাদন জানাব তাকে। সবাই একসঙ্গে উনার রুমে গেলাম উষ্ণ অভ্যর্থনা এবং ফুলেল অভিবাদন বিনিময় করলাম আমরা। হঠাৎ বানি সদরের চোখ পড়ল আমার উপর। ভাবলাম আমার মত একজন প্রতিশ্রুতিশীল মহিলা বিচারক বিপ্লবে পক্ষে কাজ করেছেন বলে আমাকে নিশ্চয়ই অভিনন্দন জানাবেন তিনি। অথচ তিনি বললেন আপনার কি মনে হয় না বিপ্লবের মহান নেতা ইমাম খোমেনীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি আপনার চুল গুলো ঢেকে রাখলে ভালো হতো। আমি স্তম্ভিত হলাম, আমরা কোথায় আছি গণপ্রতিরোধের মধ্য দিয়ে বিপ্লবের বিজয়ের পর আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি চুল নিয়ে কথা বলছেন। বিশ্বাস করুন তিনি কথা বলছেন- চুল নিয়ে।’
এরপর আলোচনা তিক্ততায় গড়ালো। শিরিন এবাদি হিজাব পরা শুরু করলেন। সেটা অনিচ্ছায় এবং টিকে থাকবার তাগিদে। বিপ্লবের প্রতি সমর্থন আর হিজাব পরিধান করেও কোন লাভ হল না। আইন মন্ত্রালয়ের এক আদেশে শিরিন এবাদিসহ যে গুটি কয়েক নারী শাহ আমলে বিচারপতি হতে পেরেছিলেন, তাদের পদাবনতি দিয়ে মন্ত্রনালয়ের কেরানি স্তরে নামিয়ে দেওয়া হল। খোমেনির নতুন ব্যবস্থায় মেয়েরা বিচারপতি হবার যোগ্যতা হারালেন। এরপর শুরু হল এবাদির সংগ্রাম।
ইরান জুড়ে সামান্যতম বিপ্লব বা সরকারবিরোধী মতবাদ কঠোর হস্তে দমন সত্ত্বেও এবাদি ইরান ছেড়ে পালিয়ে যাননি। ইরানের ভেতর থেকেই ইরানের পরিবর্তনের জন্য কাজ করে করে গেছেন। হুমকি, জেল, নির্যাতন, পদাবনতি, ভয়-ভীতি কিছুই তাকে দমাতে পারেননি। নব্বই দশকের শেষের দিক থেকে ইরান কিছুটা পাল্টাতে শুরু করে। বিশেষ করে সংস্কারবাদী প্রেসিডেন্ট খাতামি কিছুটা ভূমিকা রাখেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মানবাধিকার প্রশ্নে কিছুটা অগ্রগতি হতে থাকে। ২০০৩ সালে নোবেল শান্তি পুরষ্কার নিয়ে এবাদিও খোমেনির মত প্যারিস থেকে তেহরান বিমানবন্দরে নামেন। ১৯৭৯ সালের পর ২০০৩ সালেও লক্ষ লক্ষ ইরানী জনতা উল্লাস ধ্বনি দিয়ে এবাদিকে স্বাগত জানান। কিন্তু এবাদিকে স্বাগত জানাতে আসা ইরানী জনতার বেশির ভাগই ছিল নারী। এবাদি যেদিকে তাকায় সবদিকেই লাখ লাখ খানম। সে এক বিস্ময়কর ব্যাপার! মধ্যরাতে হিজাব পরিহিত এক নারী পোস্টার ধরে আছে- ইহাই ইরান! এবাদির মনে হল “জেগে উঠছে ইরান”! 
ইরান জেগে উঠবে সন্দেহ নেই। যে দেশে শিরিন এবাদি, মাশা আমিনিদের মত শত শত খানমরা রয়েছে, তারা অবশ্যই জেগে উঠবে।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?