জীবনের আয়না – The Mirror Of Life – মাহমুদ বিন নূর

  • বই : জীবনের আয়না – দ্যা মিরর অব লাইফ
  • লেখক : মাহমুদ বিন নূর
  • ছাড়কৃত মূল‌্য : ১৭৫৳
  • প্রকাশনায় : রাইয়ান প্রকাশন
  • রিভিউ ক্রেডিট : সে‌লিনা আক্তার

হাঁটতে বসতে, চলতে ফিরতে, খাওয়া-দাওয়া, কথাবার্তা সবেতেই আছে আদব। কিন্তু কয়টা আদব আসলে আমরা মানি? কয়টা আদবের ব্যাপারে আমরা সচেতন বা কয়টা আদব সম্পর্কে আমরা জানি? কিন্তু ইসলামে আছে জীবনের সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতম বিষয়ে দিকনির্দেশনা৷ হয়ত খুব ছোট্ট একটা কাজ কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে তা খুবই উত্তম এবং সওয়াবের। আর এর উল্টোটা হলে গর্হিত, অনুচিত৷ 
আমরা একদমই সচেতন নই এমন ছোটো ছোটো মোট ৮৫টা বিষয়ে লেখা হয়েছে বইটি। উত্তম পুরুষে অর্থাৎ লেখকের মুখ থেকে গল্পের মতো বর্ণিত হয়েছে প্রায় প্রতিটা বিষয়। দৈনন্দিন জীবনে লেখক কী কী বিষয়ের সম্মুখীন হয়েছেন, কীভাবে সমাধান করেছেন তার কথা বলা হয়েছে এবং সমাধানটা করেছেন হাদীসের আলোকে। প্রায় প্রত্যেকটা বিষয়েই এক বা একাধিক হাদীস সংযুক্ত করেছেন এবং পৃষ্ঠার নিচে তথ্যসূত্র দিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ, কোন হাদীস, কত নাম্বার হাদীস তা উল্লেখ করা হয়েছে। 
বইটা আমার অনেক ভ্রান্তি দূর করেছে। এমন এমন বিষয় জানতে পেরেছি যার সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিলো না আমার। আমি গালিগালাজ করি না কখনোই৷ কিন্তু অনেক সময়ই খবিশ শব্দটা ব্যবহার করি। এই যেমন, খবিশ ব্যাটা এইটা বলেছে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সঃ) কাউকে খবিশ বলতে নিষেধ করেছেন। কারো কাছ থেকে উপহার বা ট্রিট পেতে আমার বেশ অস্বস্তি হয়৷ অনেক সময়ই না না করি। কিন্তু ইসলাম উপহার ফিরিয়ে দিতে বা কোথাও গেলে, খেতে বললে খাবো না, খাবো না করতে বারণ করেছে যেটা আমি খুব করি। এমন বেশ কিছু বিষয় সম্পর্কে জেনেছি যেগুলো আমি খুব করতাম। সেসব থেকে আস্তে আস্তে বের হওয়ার চেষ্টা করব ইন শা আল্লাহ। সেদিক থেকে বলতে গেলে, বইটা আমার অনেক উপকার করেছে এবং একজন শুদ্ধ মানুষ হওয়ার ক্ষেত্রে বইটা অনেক কাজে দেবে ইন শা আল্লাহ। 
এবার আসি খারাপ লাগার বিষয়ে৷ ‘অহেতুক কথা বলা’ শিরোনামের একটা অংশ নিয়ে আমার ঘোরতর আপত্তি আছে। বর্ণনাকারী যেহেতু লেখক নিজে তাই ব্যাপারটা আরো খারাপ লেগেছে। ঘটনাটা হচ্ছে এমন যে, লেখক ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন। পাশের সিটে এক যুবক এসে বসেই হোয়াট’স আপ বলে কথা শুরু করে। এবং অহেতুক কথা বলতে থাকে। লেখক যারপরনাই বিরক্ত। একপর্যায়ে তিনি তার মুখের ওপরই বেয়াদব বলেন। এমনকি এটাও বলেন যে, জানবেন কেমন করে? হাদীস তো পড়েন নাই… আমার কাছে মনে হয় একজন মানুষ যতই বিরক্তিকর হোক, তার সঙ্গে এভাবে কথা বলা কিছুতেই উচিত না। আর যে এমনিতেই ইয়ো ইয়ো তাকে কিছু শেখাতে হলে নিশ্চয়ই এভাবে বলা যায় না! মানুষ মাত্রই ভুল৷ প্রতিনিয়ত এমন অসংখ্য ভুল আমরা করি। কিন্তু যে বইটা এমন উপদেশমূলক, হাদীসের আলোকে সাজানো সে বইয়ের প্রতিটা শব্দ হওয়া উচিত ছিলো একদম ছাঁকা। কিন্তু এই বেলায় তা হয়নি। বিষয়টা খুবই খারাপ লেগেছে আমার। কাউকে মুখের ওপর অপমান করাও নিশ্চয়ই ইসলাম শেখায় না আমাদের। আর প্র‍্যাঙ্ক শব্দটা ব্যবহার করতে গিয়ে লেখক বেশ কয়েকবার ফ্র‍্যাঙ্ক শব্দটা ব্যবহার করেছেন যা পুরো অর্থটাকেই উল্টে দেয়। এই জায়গাগুলো পড়তে অস্বস্তি লেগেছে। প্রুফ রিডারের চোখ বলেই হয়ত অস্বস্তিটা বেশি।
এবার আসি শেষ কথায়, একটা বইয়ে ভালো মন্দ সব থাকবে। পঁচাশিটা কনটেন্টের মধ্যে যদি পাঁচটা কনটেন্টও খারাপ হয় তবু বইটা খারাপ হয়ে যায় না। চমৎকারই থাকে। বইটা সত্যিই ভীষণ ভালো আর কাজের৷ প্রত্যেকটা মুসলিমেরই বইটা পড়া উচিত। অন্তত একটা বিষয়েও যদি সারা জীবনের জন্য পরিবর্তন আসে, সেটাও তো অনেক তাই না? বইটা প্রথমে পুরোটা একবারে পড়ে এরপর প্রতিদিন একটা একটা করে কনটেন্ট পড়া উচিত বলে মনে করি। এতে প্রতিটা বিষয়ই ভালোভাবে মাথায় গেঁথে থাকবে। আরো একটা ব্যাপার যেটা আমার বেলায় খেয়াল করেছি তা হচ্ছে এমন কিছু বিষয় যেগুলো আমি ভদ্রতার খাতিরে, ম্যানার হিসেবে মানি৷ এক্স্যাক্টলি ওটাই সুন্নাত। কাজটা আমি সবসময়ই করি কিন্তু না জানার কারণে সুন্নাত হিসেবে আমল করতাম না। এখন থেকে একই কাজটা করার বেলায় আমার মাথায় সুন্নাতের ব্যাপারটাও আসবে এবং একটা সুন্নাতও আমল করা হয়ে যাবে ইন  শা আল্লাহ। 
দৈনন্দিন জীবনে হাদীসের প্রয়োগ সংক্রান্ত আরেকটা চমৎকার বই আমি পড়েছিলাম।  সেটা হচ্ছে কষ্টিপাথর৷ তবে সেটার ব্যাখ্যা ছিলো স্বাস্থ্যগত দিক নিয়ে।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?