জীবনকে কাজে লাগান লেখক : আহমাদ ইবনু উসমান আল-মাযইয়াদ | Jibonke Kaje Lagan

  • বই : জীবনকে কাজে লাগান
  • লেখক : আহমাদ ইবনু উসমান আল-মাযইয়াদ, ইমাম ইবনু রজব হাম্বলি (রহঃ), মুহাম্মাদ ইবনু সুলাইমান আল-মুহান্না
  • প্রকাশনী : দারুল ফালাহ
  • বিষয় : ইবাদত ও আমল, প্রোডাক্টিভিটি
  • অনুবাদক : আবদুল্লাহ জুবায়ের
  • পৃষ্ঠা : 304, কভার : হার্ড কভার
  • ভাষা : বাংলা

জীবন কী? এ জীবন আমরা কেন পেলাম? পৃথিবীতে কী উদ্দেশ্যে আমাদের পাঠানো হয়েছে? এসব দার্শনিক প্রশ্নের উত্তর বহুকাল ধরেই মানুষ খুঁজে ফিরছে। অবশ্য যিনি আমাদের পাঠিয়েছেন, সেই মহান আল্লাহ-ই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে রেখেছেন কুরআন কারীমে। 
এ পৃথিবীতে মানুষকে পাঠানোর উদ্দেশ্য শুধু তাঁর ইবাদাত করা। স্রেফ এটুকুই, আর কিছু না। এই ইবাদাতের জন্যে তিনি আয়ুষ্কাল দিয়েছেন। সময়কে ভাগ করে দিয়েছেন বছর-মাস-সপ্তাহ ইত্যাদি এককে। এক সময়ের ওপর আরেক সময়কে শ্রেষ্ঠত্বও দিয়েছেন।আমাদের এই দুনিয়ার জীবন কিছু ঘণ্টা-মিনিট-সেকেন্ডের সমষ্টি মাত্র। সময়কে উপযুক্ত খাতে ব্যয় করা তথা ইবাদাতে বিনিয়োগ করার মধ্যেই দুনিয়ার জীবনের সার্থকতা। আর এটাই জীবনকে কাজে লাগানো।
কুরআন-সুন্নাহ’র আলোকে জীবনকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তার একটা প্র্যাক্টিকাল গাইডবুক ‘জীবনকে কাজে লাগান’ বইটি। প্রায় ৭০০ বছর পূর্বে রচিত কিতাব থেকে অনূদিত এই গ্রন্থের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে মহান রবের জন্যে বছরের বারোটি মাস কীভাবে নিবেদিত করা যায়, তারই নমুনা। বারো মাসের করণীয়-বর্জনীয়, গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক আমল, সেগুলোর দলিল-ভিত্তিক আলোচনা সব মিলিয়ে ইবাদাত-বন্দেগির এক চমৎকার নির্দেশিকা ‘জীবনকে কাজে লাগান’।
সূর্যের সাথে সালাত এবং সিয়ামের বিধান সম্পৃক্ত করার কারণ হলো, সূর্য দৃশ্যমান। এর জন্য কোনো রকম হিসাব-নিকাশের প্রয়োজন পড়ে না। সুবহে সাদিক, সূর্যোদয়, সূর্য হেলে পড়া, অস্ত যাওয়া কিংবা বস্তুর ছায়া সমপরিমাণ হওয়া এবং লালিমা অস্ত যাওয়ার সাথে সালাতের ওয়াক্ত জড়িত। আর সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দিনের অংশটুকু সিয়ামের সময়।
কিছু হুকুম মানার জন্য বান্দাকে আল্লাহ দৈনিক সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এ সময়গুলোতে কিছু হুকুম মানা ফরয আর কিছু নফল। ফরয হুকুম হলো পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এবং নফল হলো নফল যিকর, তিলাওয়াত, তাসবীহ ইত্যাদি। আবার চান্দ্রমাস অনুযায়ীও কিছু হুকুম মানার সময় নির্ধারণ করেছেন। যেমন : সিয়াম, যাকাত এবং হাজ্জ। এখানেও রমাদানের সিয়াম এবং হাজ্জের মতো কিছু হুকুম মানা ফরয আবার কিছু নফল। যেমন : শাবান, শাওয়াল এবং সম্মানিত কয়েকটি মাসের সিয়াম।
কয়েকটি মাসকে তিনি অন্য মাসগুলোর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন,
منها أربعة حرم ذلك الدين القيم فلا تظلموا فيهن أنفسكم “তার মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এগুলোতে তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করো না।।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
الحج أشهر معلومات
“হাজ্জ হয় সুনির্দিষ্ট কয়েকটি মাসে।।
আবার কিছু রাত এবং দিনকে অন্যান্য রাত এবং দিনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যেমন লাইলাতুল কদরকে হাজার মাস থেকেও বেশি শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছেন এবং শপথ করেছেন দশটি রাতের। নির্ভরযোগ্য মতানুসারে এই দশটি রাত হলো ফুল-হিজ্জাহ মাসের প্রথম দশ রাত। এ বিষয়ে আল্লাহ চাহেন তো যথাস্থানে আলোচনা করব।
এই শ্রেষ্ঠ সময়গুলোতে বান্দাকে আল্লাহ তাঁর নৈকট্য অর্জন করার জন্য কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন, যা বান্দার জন্য এক গোপন উপহার বিশেষ। সুতরাং সে ব্যক্তিই সৌভাগ্যবান, যে আল্লাহর নির্দেশনা অনুসরণ করে। বিশেষ মাস, দিন এবং সময়গুলো কাজে লাগিয়ে নির্ধারিত উপহার লাভ করে। ফলে জাহান্নাম ও সেখানে থাকা কষ্ট থেকে বেঁচে গিয়ে হয় চিরসুখী।
তাবিয়ি মুজাহিদ বলেছেন, “প্রতিটি দিন মানুষকে লক্ষ করে বলে, ‘হে আদম সন্তান! আমি আজ তোমার কাছে এসেছি। আজকের পরে আমি আর তোমার কাছে ফিরে আসব না। সুতরাং তুমি আমার মাঝে কী কাজ করছ, তা ভেবে-চিন্তে করো।’ দিনটি চলে যাওয়ার পর সেটিকে গুটিয়ে নিয়ে তাতে সিলমোহর মেরে দেওয়া হয়। কেবল কিয়ামাতের দিনই আল্লাহ তাআলার নির্দেশে সেই সিলটি ভাঙা হবে।”
হাসান বলতেন, ‘দুনিয়ার প্রতিটি দিন মানুষকে ডেকে বলে : লোকসকল! আমি তো একটি নতুন দিন। আমাতে যেসব কাজ করা হয় সে ব্যাপারে আমি সাক্ষী থাকি। আজকে সূর্য অস্ত যাওয়ার পর থেকে কিয়ামাতের দিন পর্যন্ত আমি আর ফিরে আসব না।’
উমার ইবনু যার বলতেন, ‘তোমরা নিজেদের জন্য আমল করো, তাহলে আল্লাহ তোমাদের এই রাতের আঁধারেও তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। সত্যিকারের প্রতারিত তো সে ব্যক্তি, যে রাত-দিনের কল্যাণের ব্যাপারে প্রতারিত। আর বঞ্চিত তো সে ব্যক্তি, যে এ দুয়ের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। মুমিনদের জন্য রাত এবং দিনকে আল্লাহর ইবাদাতের মাধ্যম বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে অন্যদের জন্য এ দুটি হলো উদাসীনতার মাধ্যম। তোমরা আল্লাহর যিকরের মাধ্যমে নিজেদের অন্তরকে সতেজ রাখো। কারণ, অন্তর কেবল আল্লাহর যিকরের মাধ্যমেই সতেজ থাকে। কবরে এমন কত রাত্রি জাগরণকারী আছে, যারা নিজেদের রাত্রি জাগরণ নিয়ে পরিতৃপ্ত। আবার এমন অনেক ব্যক্তি আছে, যারা ঘুমিয়ে রাত কাটিয়ে দিয়েছে। তারা যখন আগামীকাল আল্লাহর কাছে ইবাদাতকারীদের মর্যাদা দেখবে, তখন অনুশোচনায় দগ্ধ হতে থাকবে। সুতরাং চলে যাওয়া সময় এবং রাতগুলোর ব্যাপারে যত্নবান হও।’
কাতাদাহ বলেন, ‘মুমিন কখনো রাতে ইবাদাতের কথা ভুলে যায় এবং দিনে তার স্মরণ হয়। আবার কখনো দিনে ইবাদাতের কথা ভুলে যায় এবং রাতে তার মনে পড়ে।’ তিনি আরও বলেন, এক লোক সালমান ফারসি -এর কাছে এসে বলল, আমি রাত জেগে ইবাদাত করতে পারি না। 
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?