জল কুঠুরি – মুশফিক উস সালেহীন

জল কুঠুরি – মুশফিক উস সালেহীন
মুদ্রন মূল্য – ৩০০ টাকা
মুশফিক উস সালেহীনের “কাকতাড়ুয়া” পড়ার পরেই তার আরো বই কেনার ইচ্ছা হয়, উনার লিখা আমাকে কখনোই হতাশ করেনি,এবারো নাহ। He is a gem ❤️
পরিপূর্ণ যৌবনে, ৭১’ এর যুদ্ধকালীন সময়ে, বাবার প্ররোচনায় আমেরিকা চলে যাবার ৪০ বছর পর দেশে আসেন আরিফ সাহেব। উদ্দেশ্য,রয়ে যাওয়া সম্পত্তি আত্নীয়দের মাঝে ভাগ বাটোয়ারা করে দেওয়া।যখন গিয়েছিলেন তখন তার বয়স ছিল ২২,এখন ৬২ বছরের বৃদ্ধ। জীবনের দীর্ঘ সময় পর দেশে ফিরে,নিজের আপন নিবাসে ফিরে পুরোনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন,ছোটবেলার বন্ধুদের খোঁজ করা,তাদের সাথে জীবনের সেকাল একালের আলাপ গল্পটাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে।একসময় একসাথে উঠাবসা থাকলেও নিয়তি যে সবার জীবনটাকেই ভিন্ন পথে ঘুরিয়ে দেয়, “জল কুঠুরী” তার অন্যতম উদাহরণ। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার রাজাকার-পাকবাহিনীর যৌথ তান্ডব,কতক হিন্দু মুসলমানের একি সাথে দাঁড়ানো ছবিও যে শখানেক মানুষকে নির্মম হত্যার,বাড়িঘর পোড়ানোর কারণ হতে পারে সেটাও উঠে এসেছে গল্পতে।
গল্পের মূল চরিত্র আরিফ সাহেব, যিনি এখন বয়সের ভারে নত,খুঁজে ফিরেন তার তার যৌবনের প্রেমিকা হিন্দু তনুশ্রীকে। তার জীবনের বিভিন্ন ফিলসোফিক্যাল থটের আশ্রয় নিয়ে লেখক জীবনের কিছু নির্মম সত্যকে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন-
” একজন মেয়ে তার জীবনে নানান স্বরে কাঁদে – কখনও বুঝহীন বালিকার আবদারের কান্না;কখনও কিশোরীর অস্তিত্বসংকটের কান্না;কখনও তরুণীর অব্যক্ত প্রেমের অভিমান;কখনও মায়ের পৃথিবী উজাড় মমতার কান্না।
সব কান্নার স্বর আলাদা।কিন্ত পুরুষের সব কান্না একরকম-প্রথমে সশব্দে,তারপর শব্দহীন,তারপর অশ্রুহীন।”
” যে আঘাত একবার এসে যায়,তা সেরেও যায়। কিন্ত যে আঘাত সম্ভাব্য,তা প্রতিদিনই অল্প অল্প করে ক্ষত বৃদ্ধি করে এবং মাঝে মাঝে সেই আশংকা বরং মূল আঘাতকেও ছাপিয়ে যায়।”
” জগতের সকল অপূর্বতার খোঁজে হাজার হাজার পথ চললেও,শান্তির খোঁজে সেই পুরোনো বাড়িতেই ফিরতে হয়।”
” যে সত্য সহজে বলা যায় না,তার জন্য মানুষ মিথ্যার আশ্রয় নেয়।সত্যের তলোয়ার দু-দিকেই কাটে।তাই মানুষ মিথ্যের চাদর গায়ে মোড়ায়।একটা উষ্ণ আলিংগনে ডুবে আছেন তিনি।এই আলিংগন মিথ্যার তৈরি।কিন্ত উষ্ণ ,আরামদায়ক।জীবনের পথ আর বেশি বাকি নেই।যেটুকু আছে,সেটুকু এই পরিচিত উষ্ণতা দিয়ে কাটুক।”
” মেয়ে মানুষের হিংসে বড় ভয়ংকর জিনিস,আরিফ! চারপাশ ছাই করে দেয়।”
” তিনি একবার হারিয়েছিলেন।এখন আবার হারাচ্ছেন।হারানোর নিষ্ঠুরতা তিনি বোঝেন।কিন্ত যে একবার পথ চলা শুরু করে,তার আর থামার উপায় নেই।”
“জল কুঠুরি” গ্রামীণ জীবনের সহজ সরল রূপ। বন্যায় পুরো বাড়ি ডুবে যাবার দুর্ভোগ,অসুস্থ ছেলেকে চিকিৎসা করাতে স্বামীহীন মায়ের হাহাকার,অভিভাবকহীন মহিলার দিকে গ্রামের মানুষের বদ নজর-সবকিছুই উঠে এসেছে সুন্দর এই গল্পটায়। পরিবারকে রেখে স্বামী চলে যাবার পরে একাই ছেলেকে মানুষ করতে থাকা রিতার জীবনের কাহিনী গল্পটার একটা বিশেষ দিক।কেউ যদি আমাকে কেউ জিগেস করে যে কোন বইটা দিয়ে এখনকার নতুন লেখকদের বই পড়া শুরু করবো,আমি অবশ্যই তাকে এই বইটা সাজেস্ট করব।পাশাপাশি কেউ এরকম সামাজিক বই আগে পড়ে থাকলে আমাকে সাজেস্ট করতে পারেন।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?