বই : জলকুঠুরি
❝যে অতীত অচেনা হয়ে যায়, তাকে পুনরায় ধরার প্রচেষ্টা কেবল বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে।❞
দীর্ঘ সময়ের পর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনও কি তেমন কোনো বিড়ম্বনার কারণ হতে পারে? অতীতের ফেলে আসা স্মৃতি, বারবার যখন মনে পড়ে—তা কি এড়িয়ে চলা যেতে পারে? সে-জন্য কি আধো কোনো প্রত্যাবর্তনের প্রয়োজন? —উত্তর হয়তো হ্যাঁ কিংবা না। বিনিদ্র রজনীর খোঁচাতে থাকা অনুভূতিরা কি জলকুঠুরিতে বন্দি থাকে? তাদের কি কখনও মুক্তির দাওয়াত দেওয়া হয় না? এই বিড়ম্বনা আর অতীতের সাথে জলকুঠুরির কী সম্পর্ক? জল আর কুঠুরি। খুব পরিচিত না হলেও দুটো পরিচিত শব্দ। কুঠুরি অর্থ ছোটো ঘর। জলের ওপর তৈরি করা কোনো ঘরকে গ্রামবাংলার মাচা বলতে লোকে বেশি পছন্দ করে। বিশেষ করে পুকুরের ওপর হাঁস-মুরগি পালনের জন্য এমন মাচা তৈরি করে অনেকে। তবে কি শুধু এই লালন-পালনের জন্য এমন জলকুঠুরি তৈরি করা? ঠিক মিলছে না; কোথাও যেন গড়মিল আছে। এই জলকুঠুরির আসল রহস্য কী তবে?
❛জলকুঠুরি❜ উপন্যাসে আক্ষরিক অর্থে লেখক জলের ওপর ভেসে থাকা ছোটো ঘরকে স্মৃতি লালন-পালনের বায়োস্কোপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেখানে বসে স্মৃতিদের সাথে কথা বলা যায়; অন্তর্দাহে নিজেকে পোড়ানো যায়। অন্তত আমার তা-ই মনে হয়েছে। তবে এর দুটো কারণও অবশ্য রয়েছে। প্রথম কারণ—দুটো অপরিচিত মানুষের অস্তিত্বকে ভালোবাসার শপথে মিলিয়ে দেওয়ার তীব্র ইচ্ছা। লেখক কিন্তু শুরু থেকে গল্পের মাঝামাঝি পর্যন্ত এমন কোনো আভাস দিয়ে বসেননি যে তিনি অস্তিত্ব সংকটের জাল বুনছেন। খুব ধীরে আর যত্ন করে চলা গল্প যখন সমাপ্তির দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত—ঠিক তখনই তিনি; তার আমোঘ অস্ত্র ছুড়ে দিলেন পাঠক হৃদয় লক্ষ্য করে। যে অস্ত্র মনোবেদনার। কতটুকু সফল তিনি এই বেদনার আখ্যান রচনা করতে? বেদনা আর মন নিয়ে যে যুদ্ধ তিনি রচনা করেছেন—সেখানে পাঠকের ভাবনার কী আছে তবে? আর দ্বিতীয় কারণ?
অল্পতে এমন অধিক প্রশ্নের জন্ম দেওয়াটা আমার এক ধরনের বদভ্যাস। অনেকে এতে বিরক্ত হোন। কিন্তু আমার ভালো লাগে। যে দ্বন্দ্ব আমি বইয়ের পাতা থেকে ধার করি, তা আপনাদের সাথে শেয়ার করে শোধ করি। এই প্রতিক্রিয়া আপনার-আমার নীরব কথোপকথনের সাক্ষী। যদিও উক্ত উপন্যাস যে অল্প প্রশ্নের জন্ম লেখক দিয়েছেন বলেছি, তার গভীরতা প্রাচুর্যে পূর্ণ।
❛জলকুঠুরি❜ উপন্যাসের দ্বিতীয় কারণ বেশ স্পষ্ট, একেবারে জলের মতো পরিষ্কার। কারণ জল-ই এখানে সব। যে জলে শুধু মাছ ভাসে না; ভাসে নৌকাও। বর্ষার ভরা মৌসুমে বন্যায় প্লাবিত হওয়া একটি গ্রামের চিত্রপটকে উক্ত উপন্যাসে খুব যত্ন করে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। প্রকৃতির সাথে মানুষের দ্বন্দ্ব, মানুষের সাথে মানুষের কলহ। এই কলহ নিশ্চুপ, অন্ধকারের মতো। যা কখনও আলোর দেখা পায় না। যেখানে ঈর্ষা আছে, প্রতিহিংসা আছে। প্রকৃতি স্নিগ্ধ রূপের বর্ণনা আর চরিত্রদের টানাপোড়েনের চঞ্চলতায় পুরো উপন্যাসে আরামসে কয়েক ঘণ্টা ডুবে থাকা যায়। দম বন্ধ হওয়ার অবকাশ একেবারে নেই। ঠিক যেন, প্রেমের মরা জলে ডুবে না। এই সত্য—সহজে স্বীকার করতে বাধ্য।
❝সহজ সত্য স্বীকার করা এবং মেনে নেওয়া খুব কঠিন কাজ। ভাগ্যের ফেরে অনেক কিছু হারিয়ে যায়। আবার ভাগ্যই আরও অনেক কিছু মিলিয়ে দেয়। মানুষের অভ্যেসই এমন। হারানোর তালিকায় তাদের প্রাত্যহিক মনোযোগ। কিন্তু পাবার ভাণ্ডারের দিকে দু-বেলা সন্তোষ প্রকাশের সুযোগ নেই।❞
যা একবার হারিয়ে যায় তা আর ফিরে আসে না। তেমনই স্বাধীনতা যে সবার জন্য সুখ বয়ে নিয়ে আসে না; তারও এক অনন্য উদাহরণ রয়েছে উক্ত উপন্যাসে। তাই তো মান্না দে-এর গানের লাইনগুলো বলতে ইচ্ছা হয়—
❝আমিও রাধার মত ভালোবেসে যাবো
হয় কিছু পাবো নয় সবই হারাবো
এই চেয়ে থাকা আর প্রাণে সয় না
সবাই তো সুখী হতে চায়
তবু কেউ সুখী হয়… কেউ হয় না…❞
পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা
❛জলকুঠুরি❜ কোনো মিষ্টি প্রেমের দুষ্ট উপন্যাস নয়। নেই কোনো খুনশুটি বা অতি মাখামাখি বিষয়। যুদ্ধটাও যে খুব করুণার তেমনও নয়। সামসময়িক উপন্যাস থেকে এ যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি প্রচেষ্টা। যেখানে একজন চরিত্রের মনস্তত্ত্বের লড়াইয়ের সাথে সুনিপুণভাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে একটি গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের গল্প আর বন্যা কবলিত অবস্থায় জর্জরিত চরিত্রদের চিন্তাভাবনা আর করণীয় কাজের বিবরণ সমূহ।
গল্পের চরিত্রদের মধ্যে লেখক যে-সব কনফ্লিক্ট তুলে ধরতে চেয়েছেন; তা যেন অতি পুরানো অথবা নিত্যনৈমিত্তিক। সমাজের চোখে যা অপরাধ, তাতেই যেন আসল স্বাদ। যে স্বাদ উপেক্ষা করা কোনো সমবয়সি বালক-বালিকার মাঝে থাকে না। তেমনই থাকে না চরিত্র (ইজ্জত) নিয়ে ছেলেখেলা। যা বেঁচে থাকার লড়াইয়ের মূল বাধা। লাল চোখ মেলে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা হায়েনারা সমাজের শিক্ষিত আর মার্জিত মুখের অধিকারী। মুখে ভালো আর মনে কালো মেখে চলা এমন চরিত্র যেন উপন্যাসটিকে করেছে আরও পোক্ত।
প্রকৃতি আর মানুষের খেলা—উক্ত উপন্যাসে একে অপরের সাথে সংযুক্ত। সাবলীল লিখনপদ্ধতি আর মনকাড়া বর্ণনা শৈলী দিয়ে উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ অবধি সাজানো। এ যেন আমার পরিচিত কোনো গ্রামের গল্প, লেখক শুধু রংতুলির কালো আঁচড়ে সাদা পাতায় এঁকেছেন সবটুকু।
গল্পে যে খুব রহস্য-রোমাঞ্চ দিয়ে ভর্তি তেমনও না। তবে ক্লাইম্যাক্সে যে ধাক্কা লেখক দিতে চেয়েছেন তা যেন পূর্ব নির্ধারিত। যা উপন্যাস শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত লুকায়িত থাকে। একেবারে তুরুপের তাসের মতো তিন থেকে চারটি ক্লাইম্যাক্স সিন নিয়ে লেখক বসে ছিলেন। প্রয়োজনে সেই রহস্য উন্মোচন করে ভালো লাগা দিগুণ করেছেন। এই ভালো লাগা আবার দুঃখের; অখুশি হয়ে সুখীর অভিনয় করা যাকে বলে। ভালো সময় কাটানোর পাশাপাশি বাস্তবতার অনেকটা ছোঁয়া পেতে এমন একটি উপন্যাস অবশ্যই পাঠ্য।
গল্পের শুরু এবং কিছু প্রশ্ন
মুক্তিযুদ্ধের চল্লিশ বছর পর জমিজমা ভাগবাঁটোয়ারা করতে গ্রামে ফিরলেন আরিফ সাহেব। এত বছর পর পুরোনো বাড়িতে, পুরোনো ঝড়ের রাতে, পুরোনো সেই ভেজা গন্ধ, খুব অচেনা ঠেকছে।
যেই সিঁড়ির গোড়ায় রাতের বেলা চোখ বন্ধ করে ছুটতে গিয়ে হাঁটু কেটেছেন। যেই জানালার শার্সিতে চুড়ুই পাখির জন্য চাল চুরি করে এনে রেখে দিতেন। আজ তার সব কিছুই কেমন নতুন এবং দূরের বলে মনে হচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে বরং দেশে না এলেই বোধহয় শান্তিটা রক্ষা হতো।
চারদিকের লোকজনে পরিচিত মুখও কমে এসেছে।
বুড়ো বয়সে নতুন করে পরিচিতের সংখ্যা বাড়াতে আর আগ্রহ হয় না। কিন্তু সেটা না যায় প্রকাশ করা, না যায় এড়ানো। সবকিছু এড়িয়ে গেলেও যায় না শুধু—অতীত। এমন কিছু স্মৃতি যা আরিফুর রহমানকে প্রতিনিয়ত আত্মকলহে ভুগিয়ে মারছে। কী সেটা? কেন হঠাৎ ফেলে আসা পুরোনো স্মৃতিরা জাগ্রত হচ্ছে? এর কারণ খুঁজতে ভাতিজা হারুনকে নিয়ে মাঠে নামেন ষাটোর্ধ্ব মানুষটি।
রিতা সারওয়ার সমাজের শুধু কি দয়ার পাত্র? না-কি এর পেছনে রয়েছে কোনো কূ-রহস্য? রানু ফুফুর রহস্যময় আচরণের কারণ কী? করিম মজুমদার কোন সত্য লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন? আর কেন?
প্রশ্ন বরাবরই অনেক, উত্তর জলকুঠুরিতে…
════════════════════════════════
❛জলকুঠুরি❜ উপন্যাসের শুরুটা অতীত আর বর্তমানের স্মৃতি রাঙানোর খেলা। তবে খুবই সামান্য। পুরো গল্প জুড়ে এমন দৃশ্যপটের নাড়াচাড়া চলতে থাকে। গল্পের প্রধান চরিত্র আরিফুর রহমানকে দিয়ে কাহিনির সূত্রপাত। ধীরে ধীরে লেখক পরিচিত করাতে থাকে একে একে সব চরিত্রদের। এমন চরিত্র পরিচিতি; লেখকের লেখার কমন ফ্যাক্টর। টাইমলাইন ঠিক রাখার জন্য ধাপে ধাপে চরিত্র পরিচিত করাতে লেখক সিদ্ধহস্ত। তার ওপর আসল নাম, ডাকনাম মিলিয়ে শুরুটা একটু দ্বিধাদ্বন্দ্বের হলেও; পারিপার্শ্বিক আবহ গল্পে মজে যাওয়ার মতো যথেষ্ট।
আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে একটি গ্রামের অবস্থা ঠিক কেমন হয়; বিশেষ করে বন্যায় কবলিত অঞ্চলগুলো—তা লেখক দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন উক্ত উপন্যাসে। সব মিলিয়ে শুরুটা ভালো।
● গল্প বুনট » লিখনপদ্ধতি » বর্ণনা শৈলী—
লেখকের গল্প বুননের ধরন চমৎকার। কয়েকটি ঘটনাকে একই সময়ে একসাথে টেনে নেওয়ার দক্ষতা দেখার মতো। ছোটো-ছোটো বিষয়গুলো যে বর্ণনা লেখক দিয়ে থাকেন, তা পুরো দৃশ্যকে মানসনেত্র দিয়ে দেখতে দারুণ লাগে। এর বিশেষ কারণ লিখনপদ্ধতি। খুবই সাবলীল লেখা। সহজ শব্দ চয়নে পুরো উপন্যাসটি হয়ে উঠেছে জীবন্ত। প্রত্যকটি চরিত্রদের কথোপকথন আর চলনবলন খুবই নিখুঁত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তেমনই দেখানো হয়েছে মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলোও।
গ্রাম্য প্রেক্ষাপটে লেখা হলেও, ভাষায় যে মার্জিত ভাব তা লক্ষণীয়। অর্থাৎ গ্রামে যে এখন শুধু আঞ্চলিক ভাষার প্রচলন আছে; তেমনও না। শুদ্ধ ভাষায় কথা বলার চেষ্টা এখন প্রায় পরিবারে করতে দেখা যায়। লেখক সে-দিকটিও খেয়াল রেখেছেন দেখে ভালো লাগল।
এ-ছাড়া এমন উপন্যাস পড়ার মোক্ষম সময় হলো—কোনো ভরা বৃষ্টির দিনে হাতে কফি অথবা চা খেতে খেতে পড়া। তাহলে বইয়ের চরিত্র আর বর্ণনার সাথে বেশি করে খাপ খাওয়ানো যাবে। ওয়েদার ডিমান্ড না থাকলে সেটা অবশ্য অন্য কথা।
● যেমন ছিল গল্পের চরিত্ররা—
উক্ত উপন্যাসে স্ট্রং পয়েন্ট হচ্ছে চরিত্ররা। মূল চরিত্রদের পাশাপাশি সব কয়টি চরিত্র ছিল স্বতন্ত্র। ছোটো থেকে বড়ো, প্রত্যকটি চরিত্রদের যে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য লেখক দিয়েছেন—তা উপলব্ধি করার মতো। বইয়ের ব্যাপ্তি অনুয়ায়ী হয়তো সব চরিত্রকে সেভাবে বিস্তারিতভাবে দেখানো সম্ভব হয়নি, তবে যতটুকু সময় নির্ধারিত ছিল—তাতেই যথেষ্ট ছাপ ফেলতে সক্ষম হয়েছে তারা।
আরিফ সাহেবের সাথে সাথে তার ভাতিজা হারুন, বন্ধু করিম এবং রিতা চরিত্রটি আমার বেশ পছন্দের। বাদবাকি চরিত্রদের অবস্থান বেশ ইতিবাচক।
● শেষের গল্প বলা প্রয়োজন—
সমাপ্তি নিয়ে একগলা আক্ষেপ আমাদের সব সময় থাকে। একটি সুন্দর বইয়ের সুন্দর সমাপ্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তেমনটা হয়েছে ❛জলকুঠুরি❜ উপন্যাসের ক্ষেত্রে। পুরো কাহিনিকে দক্ষ হাতে টেনে যে সমাপ্তি লেখক দিয়েছেন; তা সন্তুষ্ট করার মতো। ঠিক এমনটাই হয়তো আমার পাঠক সত্তা চেয়েছিল।
পাঠকের উদ্দেশ্যে পূরণ করতে লেখক যেন এমন সমাপ্তি বেছে নিয়েছেন। গল্পের শক্তিশালী দিকগুলো নিয়ে ভাবলে যা যথোপযুক্ত।
● খুচরা আলাপ—
গ্রাম্য সমাজে টিকে থাকতে গেলে ঠিক কী কী সমস্যার মুখোমুখি একজন নারীকে হতে হয়; কী করে সেটা এড়িয়ে চলতে হয়—লেখক তা ভালোভাবে তুলে ধরেছেন। দু থেকে তিন রকম নারী স্বভাব এই উপন্যাসে নিয়ে এসেছেন। যা গল্পে ভালোই প্রভাব ফেলে। তেমনই কিশোর জীবনের প্রেম-ভালোবাসার পরিণতি, ধর্ম অর্জন-বিসর্জনের চিন্তা, লাভ-লোকসানের হিসাবনিকাশ ইত্যাদি খুব অল্পতে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
❝যে আঘাত একবার এসে যায়, তা সেরেও যায়। কিন্তু যে আঘাত সম্ভাব্য, তা প্রতিদিনই অল্প অল্প করে ক্ষত বৃদ্ধি করে এবং মাঝে মাঝে সেই আশঙ্কা বরং মূল আঘাতকেও ছাপিয়ে যায়।❞
উপন্যাসে ঘাতপ্রতিঘাতের বিষয়টি গতানুগতিক মনে হলেও; প্রচলিত। পূর্বেও যেমন হয়েছে, বর্তমানেও তেমনই হচ্ছে। যুগ পালটে গেলেও মানুষের মনের ময়লা এখনও কয়লা হয়ে রয়ে গেছে। এ যেন কখনও চলে যাওয়ার কিংবা শেষ হওয়ার না।
❝পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক বিষধর প্রাণী হলো মানুষ। তারা যতদিন বেঁচে থাকে, স্থলে-জলে-জীবনে, কেবলই বিষ ছড়িয়ে যায়।❞
◆ লেখক নিয়ে কিছু কথা—
লেখকের ঋ এবং কাকতাড়ুয়া আমার পড়া। কাকতাড়ুয়া বইটি আমার ব্যক্তিগত পছন্দের। সেই লিস্টে এখন যুক্ত হলো ❛জলকুঠুরি❜। সামসময়িক লেখকদের মধ্যে মুশফিক উস সালেহীন দারুণ লিখেন। ওনার কিছু কাজ যদিও এখনও পড়া বাকি; বিশেষ করে ‘জাদুকর’ ট্রিলজি। ট্রিলজির তৃতীয় বই প্রকাশিত হলে অচিরেই সংগ্রহ করে নিব। এ-ছাড়া যারা এখনও লেখকের কোনো লেখা পড়েননি তারা উক্ত উপন্যাসটি পড়ে নিতে পারেন। ভালো লাগবে এইটুকু আশ্বাস নির্দ্বিধায় দিতে পারি।
● বানান ও সম্পাদনা—
বেশ কিছু বানান ভুলের দেখা পেলেও প্রচলিত কিছু বানান ভুল চোখে পড়ার মতো। তেমনই কিছু জায়গায় সম্পাদনার অভাব বোধ করেছি। নামের গড়মিল এবং একজন চরিত্রকে একই সিকোয়েন্সে একবার জামা আবার শাড়ি পরানোর মতো ভুল তো রয়েছে-ই। এক্ষেত্রে আরও যত্নশীল হওয়া যেত।
বিশেষ করে বাহ্যিক চরিত্রদের নিয়ে আর একটু খোলাসা করা গেলে ভালো হতো। নির্দিষ্ট চরিত্রদের সমাপ্তি দিলেও, অমুকের বাপ কেন মেয়েকে চিনল না-সহ এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। কিছু রহস্য কাহিনি শেষ হওয়ার পরও থেকে গিয়েছে। তবে এ-কারণে মূল গল্পে তেমন কোনো সমস্যা হতে দেখা যায়নি।
● প্রচ্ছদ—
খুবই সাধারণ আর মন ভালো করে দেওয়ার মতো প্রচ্ছদ। নতুনদের মধ্যে জাওয়াদ ভাই বেশ ভালো কাজ করছেন। ইতোমধ্যে ওনার কিছু সিগনেচার কাজ রয়েছে; যার মধ্যে এটি একটি। প্রচ্ছদে বইয়ের নামটা ‘জল কুঠুরি’ কি ইচ্ছাকৃত লেখা না-কি এইভাবে নামলিপি করা হয়েছে?
● মলাট » বাঁধাই » পৃষ্ঠা—