জনপ্রিয় ৭টি স্পয়লার বই সাথে রিভিউ

⚈ স্পয়লার-ফ্রি শর্ট রিভিউ— 
১. ইন্দ্রজাল | জিমি তানহাব (হাইসন)

হান্টার’স লজ রহস্য (The Mystery of Hunter's Lodge), লুকানো উইল (The Case of the missing Will), কালো কফি (Main Drama : Black Coffee, Novelization : Charles Osborne), আশ্চর্য অন্তর্ধান (The Disappearance of Mr. Davenheim), দেবতাদের চোখ (The Adventure of the Western Star)

হাজার বছরের পিছুটান যে প্রেমের মোহে হারিয়ে যাবে সেটা কে জানত? লুপ না টাইম ট্রাভেল এই রহস্য বরং আপনাদের জন্য থাক। শুধু বলব ইতিহাসের পাতায় কী ঘটেছিল সেটা নিজ থেকে জানতে চাইলে অথবা মানসনেত্র দিয়ে অনুধাবন করতে চাইলে ❛ইন্দ্রজাল❜ উপন্যাসিকা আপনাকে পরিপূর্ণ তৃপ্ত দিতে বাধিত করবে। সায়মনের সাথে আপনিও ঘুরে আসতে পারবেন খ্রিষ্টপূর্ব সময়ের প্রাচীন রোম সভ্যতা থেকে। যেখানে গনতন্ত্র থেকে রাজ্যতন্ত্র নির্মাণ করার স্বপ্ন দেখছিল স্বয়ং জুলিয়াস সিজার। এরপরে রোমের ইতিহাস হয়তো সবার জানা, কিন্তু সায়মনের চোখে সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখে হৃদয়ে যে ঘোড়দৌড় শুরু হবে কে জানত। সে ঘোড়দৌড়ের সাথে পাল্লা দিয়েছে প্রেমের হাওয়া; যার মোহে আবিষ্ট হয়ে পড়েছিল সায়মন। ভুলে গিয়েছিল যে আটারো শতাব্দীতে তার জন্ম; অপেক্ষার প্রহর গুনে যাচ্ছে তার পিতা-মাতা!
উঠে এসেছে গ্রিক দেবি আফ্রোদিতির ইতিহাস। যে আফ্রোদিতিকে রোমের মানুষরা ‘ভেনাস’ নামে চিনে। সে আফ্রোদিতির ইতিহাসের মোহে নিজেকে আবদ্ধ করতে গিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক সায়মন নিজেই বন্দি হয়ে পড়েছে ইন্দ্রজালের দুর্নিবারে…
কাহিনির দুয়েক জায়গায় সম্পাদনার অভাব বোধ করেছি। বানানে আরেকটু যত্নশীল হওয়া যেত। বইয়ের কোয়ালিটি বেশ ভালো লেগেছে। 
প্রকাশনা : ঐতিহ্য | পৃষ্ঠা : ১৪৪
──
২. ইন্দ্রজাল ২ | জিমি তানহাব
শেষ যেখানে, শুরুটা সেখানে। ইন্দ্রজালের আরও একবার পুনরাবৃত্তি। প্রথম বইয়ের প্রেক্ষাপটের সাথে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ রেখে লেখিকা উক্ত বই লেখেছেন। প্রথম বইয়ের বেশকিছু কাহিনি  দ্বিতীয় বইতে পাঠক খুঁজে পাবে। তবে এইবারের ঘটনাগুলো ঘটেছে ভিন্নভাবে। অতীন্দ্রিয়ের মাধ্যমে ঘটনাবলি পরিবর্তনের প্রয়াস ভালো লেগেছে যদিও শেষটা—থাক না বলি! গল্পের গাঁথুনি, লেখনশৈলী, বর্ণনাভঙ্গি, চরিত্রায়ন সব যথোপযুক্ত লেগেছে। অনেকের কাছে মনে হবে লেখিকা ইতিহাস আর মিথের কম্বিনেশনে এই প্লট তৈরিতে সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু ইতিহাস আর মিথের কম্বো নিয়ে যখন জীবন্ত কিছু তৈরি করা হয় সেখানে কতটা দক্ষতার প্রয়োজন রয়েছে সহজে বোঝা যায়।৷ সব মিলিয়ে দারুণ উপভোগ্য প্লট। যারা ইতিহাস আর মিথের কম্বো নিয়ে দারুণ কিছুর খোঁজ করছেন তাদের জন্য অবশ্যই পাঠ্য। 
বইয়ের কোয়ালিটি পূর্বের বইয়ের মতো ভালো। তবে বানান ভুল পরিলক্ষিত। 
প্রকাশনা : ঐতিহ্য | পৃষ্ঠা : ১৪৪
──
৩. নিঃশব্দ শিকারি | জুলিয়ান
শুরুটা যতটা আগ্রহ জাগানিয়া ছিল, মাঝামাঝি থেকে শেষটা পর্যন্ত ততটা না। ৷গোয়েন্দা উপন্যাসে যেখানে তদন্ত সবকিছু; সেখানে মনে হচ্ছে কেস সমাধানের উপাদান এর চাইতেও বেশি কিছু। তদন্ত ১১২ পেজের মধ্যে হাতে গোনা কিছু পৃষ্ঠা মাত্র। লেখক চরিত্রের মধ্যকার প্যাঁচ লাগাতে গিয়ে লেখনশৈলীতে লাগিয়ে ফেলেছেন। জমেনি বরং কিছু জায়গায় বেশ অসন্তোষ ভাব উদয় হয়েছে। বর্ণনা ভঙ্গি কিছুটা জটিল (লেখক হয়তো এইভাবে করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন)। গল্পের গাঁথুনি জুতসই না। প্রারম্ভ চমকপ্রদ হলেও সমাপ্তি পূর্বনির্ধারিত। চরিত্রায়নে মনে ধরা বা রাখার মতো কোনোটাই না। উত্তেজনা বিন্দু পরিমাণ টের পাইনি। প্লটে আমাজন, অর্কিড, খুন এইসব কিছু এনেও কৌতূহল সৃষ্টি করতে ব্যর্থ। 
শখের বসে লেখা (ভূমিকায় লেখা ছিল)। সে-দিক থেকে দেখলে লেখনশৈলী অনেকটা আড়ষ্ট। আশা করছি পরবর্তী বইতে এইসব কিছু কাটিয়ে ভালো কিছু পাঠকদের উপহার দিতে সক্ষম হবে। 
বইয়ের কোয়ালিটি ভালো লেগেছে। বানান ভুল ছিল অসংখ্য। 
প্রকাশনা : নন্দন | পৃষ্ঠা : ১১২ 
──
৪. একজন অভ্র এবং বখতিয়ারের জ্বিন |  আবুল ফাতাহ
সিরিজের বই হলেও অভ্র কে (কে?) সেটা জানার জন্য এই বই ভালো ভূমিকা রাখে।৷ কারণ বলতে গেলে, অভ্র সিরিজের অন্যান্য বই থাকলেও নতুন পাঠক যখন উক্ত বইটি পড়বে তখন অভ্র সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা পাবে। স্ট্যান্ড অ্যালোন হিসেবে ঠিকঠাক। মূল কাহিনি শুরু হতে বইয়ের অর্ধেকের বেশি সময় খরচ হয়ে যায়। এদিকটা অর্ধেক পজেটিভ কিছুটা নেগেটিভ। দার্শনিক বিচারের দিক থেকে অভ্রের মাধ্যমে লেখক কিছু বাস্তবতা টেনে নিয়ে এসেছেন। সেগুলো কয়েকটি ক্যাচ করলেও বাকিগুলো মিস করার মতো অর্থাৎ ছেড়ে দিলে খুব একটা সমস্যা হবে না। ৷হিউমার রয়েছে বইতে অনেক; অতিরিক্ত বলব না—তবে অভ্র চরিত্রের দিকে তাকালে ঠিকঠাক। গল্পে টানাপোড়েনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে, যৌক্তিকও ছিল আবার কিছুটা রসাত্মক।
মূল কাহিনি যে বিষয়বস্তু নিয়ে সেটা ইন্টারেস্টিং ছিল। ইতিহাস আর মিথের মিশ্রণ ভালো। তবে আধিক্য ছিল টুইস্টে। দুর্বল দিকও হচ্ছে সেটা। লেখকের গল্পের গাঁথুনি ভালো, লেখনশৈলী প্রাঞ্জল, বর্ণনা ভঙ্গি স্মুথ। কাহিনির অন্দরমহলে ঢোকার দীর্ঘ রাস্তা, অভ্র চরিত্রের কিছুক্ষেত্রে মহানুভবতা, কোমলতা বাদ দিলে বইটি সুখপাঠ্য। কিছু ক্ষেত্রে ঈষৎ বিরক্তির উদ্রেক হলেও হতে পারে।
টাইপো রয়েছে দুয়েক জায়গায়, বানানে ভুল আছে অনেক। আগামিকাল, দেয়া, নেয়া, ঠারেঠুরে; এইরকম আরও অনেক। বইয়ের প্রোডাকশন বেশ ভালো৷ 
প্রকাশনা : নন্দন | পৃষ্ঠা : ১৭৪
৫. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স | কিয়েগো হিগাশিনো 
চুরি বিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড়ো ধরা! এই গল্পে ঠিক চুরি হয়নি হয়েছে খুন! যে খুন হয়েছে সে খুন হওয়ার যোগ্য! কিন্তু যে খুন করেছে বা যার সাহায্য নিয়ে পুরো খুনের প্রেক্ষাপট লুকিয়ে তদন্তকারীদের ধোঁয়াশায় রেখেছে খেলা ঠিক সেখানে। পাঠক গল্পের শুরুতে একটি খুনের পরিদর্শক হবেন। রোমাঞ্চকর জার্নি শুরু এইখান থেকে। কেন, কীভাবে, কোথায় থেকে সবকিছুর শুরু—উত্তর জানতে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে পাঠককে। একজন গণিত শিক্ষক আরেক জন পদার্থবিদের মধ্যে মগজের দুরন্ত খেলা বেশ উপভোগ করেছি। গল্পের অভ্যন্তরীণে যে চাপা উত্তেজনা লেখক পাঠক মগজে আলোড়ন সৃষ্টি করতে চেয়েছেন তিনি সফল। 
সাধারণত পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পিত খুনের টাইমলাইনে গল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ভীষণ ধৈর্যের কাজ।৷ চরিত্রের গঠন আর তদন্তের কার্যকরীতা দক্ষ হাতে সামলানোর পাশাপাশি পাঠকের মস্তিষ্ক পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য বটে। লেখক সবকিছুতে পাণ্ডিত্য দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। এই উপন্যাসের থেকে ইন্সেপায়ার্ড হয়ে মালায়ালাম মাস্টারপিস ‘দৃশ্যম’ সিনেমা নির্মিত হয়েছে। তবে সিনেমা আর বইয়ের মুখ্য বিষয় এক হলেও কাহিনির পার্থক্য অনেক রয়েছে। টুইস্ট কোনোভাবে মিল না। সাসপেন্সের ঘাটতি নেই, কারণ স্নায়ুচাপে যে-ভাবে বইয়ের চরিত্রগুলো ছিল একইসাথে আমিও ছিলাম। 
অনুবাদে সালমান হক ভাই বিধ্বংসী বরাবরই। প্রাঞ্জল আর সাবলীল গল্পটাকে ভিজুয়ালাইজ করতে বেগ পেতে হয়নি। বই পুরান হলেও প্রোডাকশন ভালো ছিল। তবে বানান ভুল রয়েছে। কোন (কোনো হবে), গেলো (গেল হবে) এছাড়া বেশ কিছু শব্দ হ্রস্ব-ই কারের বদলে দীর্ঘ-ই কার হবে।
অনুবাদ : সালমান হক
প্রকাশনা : বাতিঘর প্রকাশনী | পৃষ্ঠা : ২৭২ 
৬. গেম ওভার |  আগাথা ক্রিস্টি
বিচিত্র এক হোস্টের খুনের তদন্ত করতে উপস্থিত প্রাইভেট ডিটেকটিভ এরকুল পোয়ারো, স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল, ঔপন্যাসিক আরিয়ানদে অলিভার, রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার কর্নেল রেস! একটু বেশি কাকতালীয় হয়ে যাচ্ছে না? হওয়ার কথা কারণ সন্দেহভাজন খুনিও ৪ জন! ৪ জন খুনি হলেও খুন করেছে নির্দিষ্ট একজন—এখন কে সে-ই খুনি? যে খুন হয়েছেন তিনি জানতেন যে তাকে খুন করা হবে। অর্থাৎ সবকিছুই সাজানো কিন্তু তাও আস্ত একটা উপন্যাসের দরকার কী ছিল? আদতে ছিল, কারণ কোনো পূর্বসূত্র ছাড়া এই কেসের সমাধান এনে দিতে দুঁদে গোয়েন্দা পোয়ারো থেকে শুরু করে প্রত্যক তদন্তকারী ব্যক্তি নিজেদের সর্বোচ্চ পরিশ্রম অর্পণ করে দিয়েছে এই কেসের পেছনে। সফলতাও পেয়েছে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে। নাটকীয়তার শেষ পর্ব পর্যন্ত উত্তেজনা ঠিক টানটান বলব না তবে ছিল। তবে বাহ্যিক অনেক কিছু ছিল চরিত্রগুলো শক্তিশালী করার কারণে। সংলাপ নির্ভরের পাশাপাশি বাহ্যিক আবহের বর্ণনাভঙ্গির গাঁথুনি মজবুত বটে।
অনুবাদ সাবলীল লেগেছে। দু’জন অনুবাদক ভালো কাজ দেখিয়েছেন। বানানে ভুল ছিল বেশ কয়েক জায়গায়। বিশেষ করে কোনো লেখা হয়েছে ‘কোন’ ভাবে। ইংরেজি শব্দে ‘ন্ড’ এর বদলে ‘ণ্ড’ ব্যবহার। এছাড়া টুকটাক সাধারণ কিছু ভুল রয়েছে। 
অনুবাদ : মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ ও তৌফির হাসান উর রাকিব
মূল বই : Cards On The Table (H.P #15) 
প্রকাশনা : সেবা প্রকাশনী | পৃষ্ঠা : ২৬৪
৭. কালো কফি | আগাথা ক্রিস্টি 
উক্ত বইতে ৫টি গল্প রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে— 
হান্টার’স লজ রহস্য (The Mystery of Hunter’s Lodge), লুকানো উইল (The Case of the missing Will), কালো কফি (Main Drama : Black Coffee, Novelization : Charles Osborne), আশ্চর্য অন্তর্ধান (The Disappearance of Mr. Davenheim), দেবতাদের চোখ (The Adventure of the Western Star)
প্রথম গল্প ভালো লাগেনি, অনুবাদ কম ভালো লেগেছে। দ্বিতীয় গল্প থেকে অনুবাদ সাবলীল হতে শুরু করে। গল্পের প্লট সাধারণ, ছোটো গল্প হিসেবে ঠিকঠাক। কালো কফি অর্থাৎ তৃতীয় গল্প ‘লকড রুম মার্ডার মিস্ট্রি’ টাইপ। সেইদিক থেকে মোটামুটি। চতুর্থ গল্প শুরু থেকে অনুমেয় করা গিয়েছিল। শেষ গল্পটাও চলে। এই বইতে আহামরি বা তাক লাগানো কোনো গল্প ছিল না। 
সব মিলিয়ে কিছুটা শ্লথ গতির বই। পড়তে সময় লেগেছে কারণ আগ্রহ পাচ্ছিলাম না। অন্য দিকে অন্যান্য বড়ো বইগুলো একদিনে শেষ করলেও এইটা করতে ২/৩ দিন তো লেগেছে। 
অনুবাদে প্রথমদিকে কিছুটা জড়তা লেগেছে। পরে সাবলীল হয়েছে। সেবা প্রকাশনার কমন টাইপ বানান ভুলের সমারোহ তো আছে-ই। 
অনুবাদ : সায়েম সোলায়মান
প্রকাশনা : সেবা প্রকাশনী | পৃষ্ঠা : ২৮৮
══ ১৫ এপ্রিল, ২০২১ ══
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?