ছায়া সময় : শরীফুল হাসান | Saya Somoy By Shoriful Hasan

পরিবারের বড় ছেলে গুলি খেয়েছে৷ 
কামরুল আকন্দ৷ 
হুট করেই কেউ এসে গুলি করে রেখে গেছে তাকে বাড়ির সামনে৷ তোলপাড় উঠে যায় সেই পরিবারে৷
সাথে পুরো শহরেও৷
সময়টা আশির দশক৷
ময়মনসিংহ শহর৷ তখনো পুরোদস্তর মফস্বল৷

সেই শহরেরই বাসিন্দা আকন্দ পরিবার৷ বিশাল যৌথ সেই পরিবার; প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী করিম আকন্দ যার মাথা৷ কামরুল সেই পরিবারের বড় ছেলে৷ কিন্তু পালক৷ সমস্ত ব্যাবসা, লেনদেন সেই সামলায়৷ সাথে সামলায় আরো অনেক কিছু৷
এই আকন্দ পরিবারকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় আরো কিছু সংসার আর মানুষের জীবন৷ কামরুলের শরীরে আঘাত করা বুলেটগুলো নিস্তরংগ সেই পরিবারে উঠিয়ে দেয় অশুভ তরঙ্গের ঢেউ৷ সেই ঢেউ এসে আছড়ে পরে দেশের মাটি কামড়ে পড়ে থাকা শিক্ষক অণিমেষ চক্রবর্তী, তার কণ্যা অনন্যা, ঘর জামাই ইউসুফ কিম্বা ওপার থেকে আসা নকশালপন্থী তপনের জীবনেও৷ জড়িয়ে পরে ভয়ংকর ডাকাত কোহিনূর৷ উত্থাল পাথাল স্রোত আর অস্থির সেই সময়ে আকন্দ পরিবার মুখোমুখি হয় আকস্মিক কিন্তু অবশ্যম্ভাবী এক উত্থান পতনের৷
সেই সময়, সেই শহর, সেই পরিবার আর সেই মানুষগুলোকে নিয়ে লেখা শরীফুল হাসানের সামাজিক থ্রিলার – ছায়া সময়৷ 
প্রতিক্রিয়া –
অসাধারণ একটা বই!! শরীফুল হাসান যে অসম্ভব প্রতিভাবান এবং শক্তিশালী একজন লেখক, তার অন্যতম প্রমাণ এই ছায়া সময়৷
প্রতিটা চরিত্র চমৎকার ভাবে চিত্রিত হয়েছে৷ মেদহীণ ঝরঝরে লেখা৷ অসাধারন গল্প বলার স্টাইল৷ চিরাচরিত শরীফুল হাসানের সিগনেচার৷
কিছু কিছু জায়গায় যদিও খটকা লেগেছিল৷ যেমন – পরিবারের সবাই কামরুল কে এত ভালবাসে, তার এত প্রভাব, যুব সমাজের সে অলিখিত লিডার, যে পরিবারের এত সম্পত্তি – সেই কামরুল কেন সকাল বেলায় দোকান ঝাড়ু দিবে? এক জায়গায় দেখলাম আমিনাকে জোর করে ইউসুফের সাথে বিয়ে দেয়া হয়েছে, আবার আরেক জায়গায় দেখলাম তাদের মধ্যে প্রেম ছিল৷ কিছু জায়গায় সেলিম হয়ে গিয়েছিল সাইফুল৷ তারপর, প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করা দাগী ডাকাত কোহিনূর শেষে এসে কিভাবে এত ডুমুরের ফুল হয়ে গেল পুলিশের কাছে; এই ব্যাপারগুলো বিচ্যুতির ছাপ ফেলেছে সুলিখিত এই উপন্যাসে৷
যাইহোক, এইসব ছোটখাট অসঙ্গতি বইয়ের স্বাদ নষ্ট করেনি একটুও৷ এক টানে পড়ে ফেলার মত একটা বই৷ দেশভাগ, নষ্ট রাজনীতি, শত্রু সম্পত্তি, ক্ষমতার লড়াই, মানুষের উচ্চাকাঙ্ক্ষা, প্রতিশোধপরায়ণতা ইত্যাদি প্লটগুলো প্রাসঙ্গিক ভাবেই এসেছে গল্পে এবং দারুন ভাবে একজিকিউট করা হয়েছে৷ আবার মানব জীবনের নষ্ট দিকগুলোর বিপরীতে একইভাবে উঠে এসেছে মানুষের স্বভাবজাত ভালোবাসা – পুত্রের প্রতি পিতার, প্রেমিকার প্রতি প্রেমিকের, মাতৃভূমির প্রতি সন্তানের৷
গল্পের শেষটা পাঠকের মনে দাগ ফেলবে নিশ্চিত৷
কিছু কিছু চরিত্রকে অনেক অনেক দিন মনে থাকবে৷ যেমন, কোমলে কঠোরে মেশানো একজন করিম আকন্দ আর অবশ্যই কামরুল৷ দৃঢ়চেতা এই ছেলেটাকে খুব সহজে ভোলা যাবে না৷ মনের মণিকোঠায় সে নিজের জায়গা করে নেবে স্বকীয়তায়৷
ছায়া সময়
শরীফুল হাসান
বাতিঘর
#books_of_rumee 22
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?