বই: চিন্তাপরাধ
লেখক: আসিফ আদনান
প্রকাশক: Ilmhouse Publication
চিন্তাপরাধ নিয়ে চমৎকার এই রিভিউর লেখক Abu Sayed ভাই। বারাকাল্লাহু ফীক!
আচ্ছা বলুন তো, অ্যামেরিকা আর জাতিসংঘের সমর্থন পাওয়া সশস্ত্র দল ‘বিপ্লবী’ হলে অন্যরা সবাই ‘জ**ঙ্গি’ বা ‘স*ন্ত্রা*সী’ কেন? কেন এরা ভালো হয় আর ওরা খারাপ? হতে পারে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে যেটাকে ওরা ভালো দাবি করছে সেটা আসলেই ভালো। বন্ধ ঘড়িও ২৪ ঘণ্টায় দুবার ঠিক সময় দেয়। কিন্তু এ ভালো-খারাপটা ঠিক করা হচ্ছে কীভাবে? কিসের ভিত্তিতে? তাই বলে তো বন্ধ ঘড়ির ওপর ভরসা করে থাকা যায় না।
.
লিবারেলিযম, সেক্যুলার হিউম্যানিযম। এনলাইটেনমেন্টের গর্ভ থেকে বের হয়ে আসা বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি। এ ফ্রেইমওয়ার্ক আমাদের যেসব উপসংহার দিচ্ছে সেগুলো নরম্যাটিভ, পযিটিভ না। (আপনার কাছে মনে হতেই পারে কাজটা নরম্যাটিভ না। তাদের অনুসরণ করে যাওয়া উচিত) কিন্তু আপনার মনে হওয়া আপনার মতকে সঠিক প্রমাণ করে না। দাবিকে সত্য বলতে হলে প্রমাণ লাগবে। সেক্যুলার হিউম্যানিযম বা লিবারেলিযমের উপসংহারগুলোকে (চূড়ান্ত) সত্য বলে আমার ওপর চাপিয়ে দেয়ার আগে আপনাকে প্রমাণ দিতে হবে যে, এটাই সত্য। এটা নিছক আপনার মত না।
.
নাস্তিক-ইসলামবিদ্বেষীরা প্রশ্ন করে, ‘আমি স্রষ্টার অস্তিত্ব মেনে নেব কেন?’ (‘কুরআনের ওয়ার্ল্ডভিউ আমি কেন মেনে নেব?’) ‘কুরআনে আছে বলে আমাকে মানতে হবে কেন?’
অথচ এই একই স্ট্যান্ডার্ড তারা নিজেদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে না।
.
তারা যেটাকে ভালো বলছে সেটাকে আমার ভালো বলে মেনে নিতে হবে কেন? তাদের দেয়া মানবাধিকার, অগ্রগতি আর উন্নতির সংজ্ঞাকেই কেন গ্রহণ করতে হবে? আমার কেন মানতে হবে তাদের ঠিক করা ভালোমন্দের কনসেপ্টকে? পুরো মানবজাতির ইতিহাস থেকে মাত্র দু-তিন শ বছরের অল্প একটা সময়কে আলাদা করে নিয়ে, সেই সময়ে গড়ে ওঠা ইউরোপের অল্প কিছু মানুষের চিন্তাভাবনা ও দর্শনকে ধ্রুব সত্য বলে মেনে নেয়ার দাবি তারা কীভাবে করে? তারা চায় আমার পুরো দৃষ্টিভঙ্গিকে আমি ইউরোপিয়ান ধারণার ওপর সাজাব? অথচ তাদের দাবিগুলোর পক্ষে কোনো প্রমাণই তাদের কাছে নেই?
.
এটা হলো পশ্চিমের চাপিয়ে দেয়া ন্যারেটিভের সবচেয়ে বড় বুদ্ধিবৃত্তিক অসততার একটি। নিজেদের মতকে তারা বৈজ্ঞানিক কিংবা প্রাকৃতিক সত্য বলে দাবি করতে চায়। পশ্চিম আমাকে বলে বস্তুবাদী প্রমাণ ছাড়া স্রষ্টার আনুগত্য করা যাবে না। কিন্তু প্রমাণ ছাড়া মানুষের আনুগত্য করতে হবে। বিনা প্রশ্নে! দুঃখজনক বিষয়টা হলো পশ্চিমের এ দাবিগুলোকে নিজের অজান্তেই আমরা অনেকে সত্য বলে মেনে নিই। এগুলোকে সত্য ধরে নিয়ে এমনভাবে নিজেদের পরিচয় ও ইসলামকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি যাতে তা মানুষের বানানো এই কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। আমরা ইসলামকে যখন সমর্থন করি তখনো সেটা পশ্চিমের শেখানো ভাষায় করি। চেষ্টা করি সেক্যুলার হিউম্যানিযমের কাছে ইসলামকে উপাদেয় হিসেবে উপস্থাপনের। আর এটা, আমার মতে (লেখক), আমাদের সবচেয়ে বড় বুদ্ধিবৃত্তিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরাজয়।
.
যুগের হুবালের চারপাশে গড়ে ওঠা এ মায়াজাল না ভেঙে চিন্তার কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব। সাম্রাজ্যের বেঁধে দেয়া ছকের বাইরে গিয়ে সিস্টেমকে প্রশ্ন করা, প্রথাগত প্রথাবিরোধিতা আর নিয়মতান্ত্রিকতার বিভ্রান্তিকে বিসর্জন দিয়ে এ বিশ্বব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যানের স্পর্ধা হলো মানসিক দাসত্বের বাঁধন ছেঁড়া আর আদর্শিক উপনিবেশ থেকে মুক্ত হবার প্রথম ধাপ। যুগের হুবাল আর তার চারপাশে গড়ে ওঠা মিথ্যের বসত ভাঙার প্রথম হাতিয়ার; চিন্তাপরাধ।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?