চাঁদের মুখে তারার চোখে
তুমি আমাকে লিখতে বলেছো।
দেখ তো, এটা কেমন অবিচার?! আমি যে লেখায় একেবারে দূর্বল, এবং আরো দূর্বল আমার মনের কথা গুলো বাঙময় করে তুলতে।
জানো, আমি আরো দূর্বল হই যখন সিদরাতুল মুনতাহার শাখায়, কিংবা পত্র পল্লবে সেঁটে থাকা নূরের বর্ণনার কাছে আমি মূক হয়ে যাই। তুমি বলবে, তা কি করে? না, আমি দাবি করছিনে আমি ঐ নূর দেখেছি।
পাগলের মত তোমাকে বলছি না, ঐ নূর কেমন ছিলো, কেমনে তা ছাঁ ছাঁ ছাঁ করে নেমে এসে “সিদরাহ”কে ঢেকে ফেলেছিলো। ঐখানে ছিলো নূরের হাজার হাজার পর্দা। ঐখানে নূরের তৈরি ফিরিস্তারাও ছিলো টিকে থাকার মত ক্ষমতাহীন। ওটা আমি কীভাবে বুঝবো। আমি মূক হয়ে হয়ে যাই যখন সূরা নাজম বা “তারকার সূরার” আয়াতে আয়াতে থাকা বিস্ময়গুলো দেখি। এবং হয়ত বিনয়ে নত হয়ে মাটিতে মুখ লুকাই। অথবা মাটির মানুষের আরশ পানে যাবার নিরন্তর প্রচেষ্টার পথিক মুহাম্মাদ (সা)কে সেখানে দেখি।
তুমি হাদীস গুলো পড়ো, দেখবা যেন তিনি ঐখানে বিচরণ করছেন তুমি অনুভব করতে পারবা। এ নিয়ে আমি লিখি কি করে? বরং শোন, এই সব আয়াতগুলো কেমন বাঙময় হয়, আমার সাথে কথা বলে, আমার নয়নে বৃষ্টি ঝরায়।
বিশ্বাস করো, আমি মাঝে মাঝে রাতে জানালা খুলি। বাড়ির পেছনে সোয়ান্সীর সবচেয়ে সেরা স্কুল “অলফার” সুবিশাল সবুজ মাঠ দেখি। আর সামনে ছোট বাগানের পর সোয়ানসী সাগরের কুলুকুলু তানে নেচে উঠি।
আমি জানালা খুলে সবাক ইথারে ভাসা পাখিদের গান শুনি, গ্রামের সবুজে ভাসা চাঁদের আলোকময় হাসি দেখি, আর জ্বলে ওঠা তারার মেলায় অবিশ্বাস্য ভাবে জেগে ওঠা মোহনীয় চাহনির কাছে লাজুক আনত হই।
ঐ সব আমাকে নিয়ে যায় এক অসীমের দিকে। তারার জোনাকি , গ্যালাক্সির পর গ্যালাক্সির ঢেও বা বালিয়াড়ি আমাকে কতটুকুন করে দেয় যে, তুমি তো জানোনা।
চাঁদের মুখে হাসি ফোটে, গর্বের হাসি। তারার চোখ বিস্ফারিত হয়, বিস্ময়ে। ধরার ধুলোয় মানুষের আগমন ছিলো এক আসলেই সেরা রহমানি হাদিয়া, আসমানি তোহফা। আমি সেই মানুষের একজন হয়ে কখনো মাথা উঁচু করি। সামিআল্লাহ লিমান হামিদাহ বলি, শব্দরা গান হয়, গান অশ্রু হয় এবং সাজদায় ভিজে যায় মাটির ধরণী।
এই ছোট্ট মানুষ তখন হয়ে ওঠে কী এক চীজ রে আল্লাহ!
ওকে ঐ অবস্থায় দেখে শায়তান হিংসায় ও অপমানে চিৎকার করে কাঁদছে। সারা দিনে তাকে যে পাপে পাপে ভরাতে চেয়েছেলি, কান্নাময় এই সাজদায় তো তার উল্টোটাই হলো। রহমান তার নিকটেই চলে এলেন। মানুষ সাজদায় যেয়ে আল্লাহর যত কাছে পৌঁছাতে পারে, অন্য কোন পন্থায় তা পারে না।
কী সুন্দর কথা। সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা। পবিত্র তুমি, নিষ্কলুষ তুমি ও আমার মহান রাব্ব। তোমার শক্তির কাছে আমি এই নত, তোমার দয়ার কাছে এই আমি ভিখেরি, তোমার বিশালত্বের আমি আজ সেরা গায়ক।
আমি রোগাক্রান্ত ও আল্লাহ, আমাকে ভালো করে দাও। আমি ইয়াতিম ও রাব্ব, আমাকে একটা যায়গা করে দাও। আমি সব কিছু হারানো এক আহত পাখি আমাকে পরাঙ্মুখ করে দাও। আমি পাপী ও আল্লাহ, আমাকে তোমার রহম দিয়ে ঢেকে দাও।
আমি তাজ্জব হই, আমি একদিন দাঁড়াবো আমার রব্বের সামনে। আমি আশায় বুক বাঁধি, সেদিন তিনি আমার প্রতি একটুও হলেও রহমাতের নযরে হয়ত তাকাবেন। আমার দূর্বল সিয়াম হয়ত আমাকে দয়া করার জন্য কথা বলা শুরু করবে, আমার ভালোবাসার কুরআন হয়ত সেদিন আমার দুরাবস্থায় দেখে দরদে আহত পাখির মত গোঙরাবে।
আমার চামড়া গুলো গুণগুনিয়ে কথা বলা শুরু করবে। কথা বলবে হাত, কথা বলবে পা, কথা বলবে অহংকার করা জিভ। হয়ত আমার সীল মারা মুখ দেখে আমার রব আমার হিসেব খুব সহজ করে দেবেন। অথবা দেবেন না, তাকাবেন না, কথা বলবেন না, পবিত্র করবেন না বরং কঠিন করবেন আমার প্রতিটি পদবিক্ষেপ।
আমাকে তুমি লিখতে বলেছো।
এই গভীর রাতের নিঃস্তব্ধতায় শুন্যের সাথে আমার এই আশার আলোর মায়ার মাঝে কী ভাবে লিখবো বলো?
আমি মূক হয়ে যাই, আমার জিভ নির্বাক হয়, আমার চোখ জোড়া বিস্ফারিত হয়, মন হয় ম্রিয়মান। আমি বলি, বোকা, এমন আমল তোমার কই যে, তার দোহায় দিয়ে আল্লাহর কাছে সফল হবা?
সারা পৃথিবীর সেরা আমার বন্ধু (সা) বলে গেছেন, ও রে বোকা আব্দুস সালামেরা শুনে রাখ, তোর দয়ালু রাব্ব তোকে রহমত দিয়ে না ঢাকলে তুই জাহান্নামের ঐ গর্জনের মধ্য দিয়ে, আগুনের লেলিহান শিখার উপরে টাঙানো “সিরাত” পার হয়ে জান্নাতের কিনারে যাবি কি করে? সে আমল তোর কইরে?!!