Title |
গাভী বিত্তান্ত |
Author |
আহমদ ছফা এর জীবনী |
Publisher |
সন্দেশ |
Quality |
হার্ডকভার |
ISBN |
9848088288 |
Edition |
2nd Printed, 2002 |
Number of Pages |
128 |
Country |
বাংলাদেশ |
Language |
বাংলা |
লেখক আহমদ ছফা সম্পর্কে
|
Ahmed Sofa Biography : Click On Image |
আহমদ ছফা ছিলেন একাধারে লেখক, ঔপন্যাসিক, কবি, চিন্তাবিদ, অনুবাদক ও গণবুদ্ধিজীবী। ১৯৪৩ সালের ৩০শে জুন জন্ম নেওয়া এই লেখক তার প্রথাবিরোধিতা, স্পষ্টবাদিতা ও ভিন্নধর্মী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য বুদ্ধিজীবী মহলে ছিলেন ব্যাপক আলোচিত ও বিতর্কিত। তিনি তার ৫৮ বছরের জীবদ্দশায় রচনা করেছেন অসংখ্য গল্প, উপন্যাস , কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি, অনুবাদ ও জীবনী। তাঁর লেখা প্রথম বই “সূর্য তুমি সাথী”। তাঁর লেখা “যদ্যপি আমার গুরু” গ্রন্থটি বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিন্তাবিদ জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক স্যার এর জীবনকে নিয়ে রচিত। আহমদ ছফা একদিকে যেমন লিখেছেন গাভী বিত্তান্ত, অলাতচক্র, ওঙ্কার, একজন আলী কেনানের উত্থান-পতন, অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী এর মত ভিন্নধর্মী উপন্যাস তেমনি অন্যদিকে রচনা করেছেন বাঙালি মুসলমানের মন, বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস, আনুপূর্বিক তসলিমা ও অন্যান্য স্পর্শকাতর প্রসঙ্গ, সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস এর মত বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ।
তিনি বারো বছরের অমানুষিক পরিশ্রম করে অনুবাদ করেন জার্মান কবি গ্যোতে-এর অমর কাব্য ‘ফাউস্ট’। তাঁর কবিতার বইগুলোর মধ্যে আছে জল্লাদ সময়, লেনিন ঘুমোবে এবার, একটি প্রবীণ বটের কাছে প্রার্থনা। তাঁর সৃজনশীল লেখাকে মূল্যায়ন করে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, মীর মশাররফ হোসেন ও কাজী নজরুল ইসলামের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি মুসলমান লেখক হলেন আহমদ ছফা। আহমদ ছফার প্রতিবাদী চেতনা ও প্রগতিশীল ভাবধারাকে চিন্তা করলেই বোঝা যায় কীভাবে তিনি “গাভী বিত্তান্ত” এর মত উপন্যাস লিখতে সক্ষম হয়েছিলেন।
প্রেক্ষাপটঃ
বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গাত্মক উপন্যাস কোনটি জিজ্ঞাসা করলে আপনাকে একটি নামই বলতেই হবে যদি পড়ে থাকেন সেই শ্রেষ্ঠ উপন্যাসটি। নাম “গাভী বিত্তান্ত”। ৮০’র দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবদুল মান্নানের গর্ভবতী গাভী ছাত্রদের গোলাগুলির মাঝে নিহত হওয়ার সেই সত্য ঘটনাকে উপজীব্য করে ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত আহমদ ছফার এই রচনা। যেখানে তিনি বিশেষ অর্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতি ও তার প্রভাবের প্রেক্ষাপট ধরেই পুরো উপন্যাস মিয়া মুহাম্মদ আবু জুনায়েদকে প্রধান চরিত্রে রেখে সম্পূর্ণ করেছেন।
পাঠ সংক্ষেপঃ
মিয়া মুহাম্মদ আবু জুনায়েদ, রসায়নের পিরিয়ডিক টেবিলের নিষ্ক্রিয় মৌল্গুলোর মতোই তিনি তার জীবনে ছিলেন অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব, রাজনীতি, স্বার্থপরতার নোংরা বলয়ের বাইরে একজন সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন শিক্ষক। কিন্তু ঘটে যায় এক আশ্চর্যজনক ঘটনা, রসায়ন বিভাগের সুন্দরী শিক্ষিকা দিলরুবা খানমের নারীপ্রভাবের বদৌলতেই তিনি হয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। সেই তীর ধরেই তার সাদামাটা জীবনে ফিরে আমুল পরিবর্তন কিন্তু সেই আমূল পরিবর্তনে তিনি তার অযোগ্যতাকেই ঢাকতে প্রয়াস চালান নানান ব্যর্থ চেষ্টা তার মধ্যে দুইটি স্যুট কিনে তার গায়ে সর্বদা স্যুট জড়িয়ে রাখার দৃশ্যটি পাঠকদের চোখে খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু তাতেও মনে ফিরে না কোনো শান্তি কারণ পারিবারিক, সামাজিক বা পেশাগত বিভিন্ন সমস্যা নিরসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মিটিং মিছিল দুর্ঘটনা, নিজ দলীয় সহকর্মীদের অসন্তুষ্টি সামলে উঠতে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন, ক্ষমতা লাভের চেয়ে বরং তার সদ্ব্যবহার করা সত্যিই কঠিন। সকল দিক থেকেই তিনি চরম অসুখী হয়ে উঠেন।
তার বহুদিনের একটা স্বপ্ন ছিল গাভী পালন করবেন আর উপাচার্য ভবনের বিশাল চত্বর পেয়ে তিনি তার ইচ্ছের কল্পনা করতে থাকেন। তার সেই কল্পনাকেই বাস্তবে পরিণত করে আবু জুনায়েদের চাচা শ্বশুর এবং একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকাদার শেখ তবারক আলী। ইচ্ছার কথা জানার পরপরই উপাচার্য ভবনে গোয়ালঘর নির্মাণের কাজ শুরু করে। আনা হয় একটি বিদেশি গাভী। বিদেশি গাভী প্রসঙ্গে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খানের মতে এখানে আহমদ ছফা বাঙালির বিদেশপ্রবণতাকে তুলে ধরতে চেয়েছেন।
আবু জুনায়েদ উপাচার্য হওয়ার পর থেকেই নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে শুরু করেন। হলের পানির সমস্যা থেকে শুরু করে পরীক্ষা পেছানো – সকল ইস্যুতেই ভাংচুরের শিকার হয় উপাচার্যের ভবন ও অফিস। ছাত্রদের মারামারি থেকে রাস্তায় ময়লা ফেলানো প্রত্যেক বিষয়েই যেন উপাচার্যের হস্তক্ষেপ জরুরি। আবু জুনায়েদ ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়গুলোর সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করেন । শিক্ষক রাজনীতি থেকে ছাত্র রাজনীতি সবকিছুর স্বরূপ উপলদ্ধি করতে থাকেন। এই ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও আবু জুনায়েদ সময় পেলে ছুটে যান তার “তরণী” নামের গাভীটির কাছে। আসার পর থেকেই সেটি তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তুতে পরিণত হয়।
এই উপন্যাসের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং চরিত্র হলেন আবু জুনায়েদের স্ত্রী- নুরুন্নাহার বানু। নুরুন্নাহার বানু নিঃসন্দেহে এই বইয়ের সবচেয়ে মজার চরিত্র। আহমদ ছফা এই চরিত্রটির মাধ্যমে মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন। নুরুন্নাহার বানুর বাবার টাকায় আবু জুনায়েদ লেখাপড়া করেছিল। তাই সে সবসময় ভাবতো তার স্বামী সর্বদা তার অনুগত থাকবে। কিন্তু উপাচার্য পদে বসার পর থেকেই আবু জুনায়েদের পরিবর্তন হওয়া শুরু হয়। নানান বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে মতের অমিলের সৃষ্টি হয়। উপাচার্যের ভবনে এসে নিজেকে রানী মনে করা নুরুন্নাহার বানু যখন দেখতে পারেন অনেক কিছুই তার নিয়ন্ত্রণাধীন নয় তখন তার নানান বিষয়ে মেজাজ বিগড়ে যায়। নুরুন্নাহার বানুর ধীরে ধীরে মনে হতে থাকে তার সংসার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তার স্বামীর গাভীটির প্রতি অনুরাগ তার মনে একধরণের ঈর্ষার সৃষ্টি করে। তার স্বামীর অবাধ্যতা ও মেয়ের বিপথগামীতা তার জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে।
তাছাড়াও আবু জুনায়েদের “গাভী” নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়েও বিতর্ক শুরু হয়। তার গাভীপ্রীতিকে কটাক্ষ করে লিফলেট বিতরণ করে বিরোধীপন্থীরা। এদিকে গাভী ও তার গোয়ালঘরকে কেন্দ্র করে ধীরে ধীরে আবু জুনায়েদের একটি নিজস্ব দল তৈরি হয়। তারা আবু জুনায়েদকে প্রচার করতে শুরু করে প্রকৃতিপ্রেমী হিসেবে। এভাবেই এগিয়ে যেতে থাকে “গাভী বিত্তান্ত” এর কাহিনী। শেষ পর্যন্ত নুরুন্নাহার বানু ঈর্ষার বশবর্তী হয়ে বিষ প্রয়োগ করে গাভীটিকে হত্যা করেন।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
শিক্ষক রাজনীতির মত বিষয়কে এমন স্যাটায়ার আকারে তুলে ধরা সত্যিই দুর্দান্ত। অনেক শিক্ষক-ছাত্রই সাধারণ মানুষের পয়সা নষ্ট করে এই ধরনের বিলাসী ‘গাভী পোষা’ কাজ করে আসছেন, এসেছিলেন কিংবা ভবিষ্যতেও করে যাবেন। বইয়ে পাওয়া রসায়নের আধপাগলা শিক্ষক মুস্তাফিজুর রহমান রসায়নে বিশ্বকাঁপানো ব্রেক-থ্রু রিসার্চ করবার পরও তাতে ভ্রুক্ষেপের সময় নেই আবু জুনায়েদের কারণ তিনি যে তার গাভী নিয়ে ব্যস্ত আছেন। তাই এখনো অন্যায়ের প্রতিবাদে নামা তরুণের হাতে দেখা মিলে “গাভী বিত্তান্ত”
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?