বইঃ গ্রামের সংসদ
লেখকঃ কাজী আমির হোসেন রিপন
প্রচ্ছদঃ সাদিতউজজামান
প্রকাশনীঃ প্রহেলিকা প্রকাশন
প্রকাশকঃ কে.এম পারভেজ ওয়াহিদ
প্রকাশকালঃ গ্রন্থমেলা ২০২২
রাত আটটা বাজে। রিকসা চালক আজগর আলী রিকসা বন্ধ করে আলমের দোকানে গিয়ে বলে, আলম ভাই, আমাকে এক সের আটা দিন। দোকানদার বলে, টাকা আছে? বাকি দেয়া যাইবো না। তোমার কাছে এমনিতে আগের ম্যালা টাকা বাকি। আজগর আলী বলে, আলম ভাই কালকেই দিমু। আজ ভাড়া হয় নাই। এখন কেউ আমার রিকসায় উঠতে চায়না। সবাই অটোতে যায়। আমি জোরে চালাইতে পারিনা, গায়ের জোর কমছে। আজ দেন ভাই, সকালে আমার একমাত্র মেয়ে মালা স্কুলে যাইবো, আইবো সেই বিকালে। সকালবেলা একটা রুটি খেয়ে গেলে তো পেট ভরা থাকবো। কালকে টাকা দিয়া দিমু, জবান। অবশেষে এক সের আটা নিয়ে রাতে বাড়ি ফিরলো রিকসা চালক আজগর আলী।
প্রতিদিন সকালে আলমের দোকানে কত মানুষের আসা যাওয়া, কেউ বসে করে গল্প, গুজব। কেউবা ব্যস্ত অন্যের সমালোচনায়। কার বাড়িতে কার বউ মাথায় কাপড় দেয় না। কার মেয়ের বিয়ে হয় না। আরো নানান কথা। পাড়ার করিম শেখ বলে, আজগর আলী রিকসা চালাইয়া, মালারে পড়ালেখা করাইতে পারবো? কারো বাসায় কাজে দিয়া দিতে পারে। এত কষ্ট করা লাগে?
এভাবেই যায় দিনের পর দিন।
তারপর বছর দশেক হলো, আজগর আলী মারা যায়। সেই দোকানদার আলমও এখন চুল পেকে বুড়ো। শরীর খুব খারাপ। নিয়ে গেলো শহরের নাম করা ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার দোকানদার আলমকে দেখে বিনা পয়সায় চিকিৎসা করলো, ঔষধ কিনে দিলো। উল্টো ডাক্তার ম্যাডাম দোকানদারকে দেখে কান্না করতেছে। ঘটনা কি?
আরে! এই ডাক্তার ম্যাডাম তো আমাদের মালা! সেই মালা, রিকসা চালক আজগর আলীর মেয়ে মালা।
গ্রামের সংসদ : গ্রামের সংসদ গল্পটি সত্যি অসাধারণ বলা যায়। এখানে একটি গ্রামে মানুষের জীবন, গ্রামের ভালো, খারাপের মানুষের চিত্র ফুটে উঠেছে। গ্রামের কিছু শ্রেণি মানুষের অধিক জ্ঞানি দাবি করা, নিজের ক্ষমতা, সঠিক বিচার না দেওয়া। আর নিজের স্বার্থ ক্ষমতার জন্য খারাপের থেকেও অধিক খারাপ কাজ করতেও নিজেদের বিবেকে বাধেঁ না। অন্য দিকে খারাপ কাজ করা মানুষদের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সৎ মানুষ বিনা দোষে গ্রেপ্তার হওয়া সব কিছু মিলিয়ে লেখক অসাধারণ লিখার চেষ্টা করেছেন।
মায়াবতী : মায়াবতী গল্পটাও অনেক ভালো হয়েছে। মায়ের সম্মান আর পরিবারের সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে নিজের মতামত পছন্দ হীন একজন অচেনা অজানা মেয়েকে বিয়ে করে এনেও ছেলেটি অনেক ভালো কাজ করছিল। এখানে একটা বাক্য আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে
মর্ডান গার্লফ্রেন্ড কে বিয়ে করে ওয়াইফ পাওয়ার চেয়ে, গ্রাম্য মেয়েকে বিয়ে করে লক্ষী বউ পাওয়া অনেক ভালো।
যুগের হাওয়া : এখানে একজন সাধারণ পরিবারের জীবন কাহিনী এবং বোনের প্রতি ভাইয়ের অসীম ভালোবাসার কিছু কথা, মুহূর্ত ফুঁটে ওঠে। আর এখানে আরেকটি চরিত্র ফুঁটে ওঠে গায়ে দামি কাপড় পরিধান করলেই যে ভালো হওয়া যায় না। ময়লা কাপড় পরিহিত মানুষটিও ভালো হতে পারে।
বাস্তবিক কাল্পনিক : এই গল্পটিও অনেক ভালো লেগেছিল, কিছুটা রোমান্টিকতা নিয়ে লেখা। হুট করে জীবনে চলে আসা কিছু মানুষ আবার হুট করে আমাদের অজান্তেও হারিয়ে যায়। যা এই গল্পে চরিত্রে পাওয়া।
কানপড়া : গ্রাম গঞ্জে কানপড়ার মতো মানুষ অভাব থাকে না। যদিও গল্পটা অনেক ছোট ছিল। তবে এই গল্পটা পড়ে কেন যেন আমি অধিক হেসেছিলাম। আমি নিজেও জানিনা।
বেঁচে থাকা মানে জীবন নয় চলে যাওয়া মানে ছেড়েযাওয়া নয় :
বাবাহীন পৃথিবী মানে কতটা কষ্ট একজন মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা এখানে সেরকম একটি অসাধারণ চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে। একদিকে নিজের মায়ের কষ্ট নিজের বেকারত্ব আর অন্য দিকে ভালোবাসার মানুষ।
বোন : বোন শব্দতা ছোট হলেও এর গভীরত্ব অনেক বেশি। একজন বোনের অবদান কখনো শেষ নেই। বোন হচ্ছে মায়ের আরেক রূপ। এই বোন গল্পটির মাঝে বোনের প্রতি দায়িত্ব, ভালোবাসা আর একজন বোন কীভাবে মায়ের মতো আগলে রাখে তা ফুটে ওঠেছিল।
আমার বোন নেই, ছোটও নেই বড়োও নেই। তাই বোনের তেমন কিছুই আমি জানিনা কিছুটা উপলব্ধি করতে পারি। তবে আমার আপন বোন না থাকলেও আপনের চেয়েও অধিক আপন আমার কয়েকজন বোন আছেন। আমি তাদের ভীষণ ভালোবাসি।
গ্রামের সংসদ গল্প গ্রন্থে সকল গল্পগুলো অসাধারণ হয়েছে। লেখক ভালো কিছু পাঠকদের দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। শুধু মাত্র কিছু বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে একটু সমস্যা রয়েছে। সাধু- আর চলিত কিছু কিছু বাক্যর ক্ষেত্রে মিশ্রিত হয়ে গিয়েছিল। লেখক পরবর্তী অবশ্যই আরো অনেক ভালো করবে এই প্রত্যাশা রাখি। নিজে যতটুকু অর্জন করতে পেরেছি সেটাই তুলে ধরেছি। ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই।