গল্পঃ ব্লাড পেইন্টিং ©মারুফ হুসাইন

Post ID 111601

ব্লাড পেইন্টিং
©মারুফ হুসাইন। (approved for boipaw.com by author)

    ✋এক নজরে ব্লাড পেইন্টিং পর্ব সমূহ💕


  1. গল্পঃ ব্লাড পেইন্টিং প্রথম পর্ব ।

  2. গল্পঃ ব্লাড পেইন্টিং দ্বিতীয় পর্ব ।

  3. গল্পঃ ব্লাড পেইন্টিং তৃতীয় পর্ব ।

  4. গল্পঃ ব্লাড পেইন্টিং চতুর্থ পর্ব ।

  5. গল্পঃ ব্লাড পেইন্টিং পঞ্চম পর্ব ।

  6. গল্পঃ ব্লাড পেইন্টিং ষষ্ঠ পর্ব ।

  7. গল্পঃ ব্লাড পেইন্টিং সপ্তম পর্ব ।

  8. গল্পঃ ব্লাড পেইন্টিং অষ্টম ও শেষ পর্ব। 

৩.
গোলাম মাওলার পিছু পিছু এসে সায়মা গাড়িতে উঠে জিজ্ঞাসা করল, ‘স্যার! আমরা কোথায় যাচ্ছি?’
গোলাম মাওলা কোনো উত্তর দিল না। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে এক টানে জেরিনের বিল্ডিংয়ের সামনে এসে গাড়ি থামাল। গাড়িতে চাবি রেখেই সে তড়ঘড়ি করে নেমে বিল্ডিংয়ের ভিতরে ঢুলে গেল। গার্ড তাকে দেখে দাঁড়িয়ে সালামের ভঙ্গি করল। সে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করেই লিফটের দিকে এগিয়ে গেল। সায়মা গাড়ি থেকে চাবি নিয়ে নেমে হালকা দৌড়ে গোলাম মাওলাকে ধরার চেষ্টা করল৷ 
গোলাম মাওলা জানত না, তাকে অবাক করে দেয়ার জন্য এখনো আরো অনেক কিছু বাকি। সে জেরিনের বেডরুমে ঢুকে দেয়ালের পেইন্টিংগুলোর দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে৷
সায়মা লিফট মিস করেছিল। সে যাওয়ার আগেই গোলাম মাওলা লিফট নিয়ে উপরে উঠে গেছে৷ গোলাম মাওলাকে উপরে নামিয়ে লিফট যখন নিচে নেমে এসেছে তখন সে লিফটে চড়ে উপরে উঠে দেখে গোলাম মাওলা পেইন্টিংগুলোর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷
‘সায়মা! এখানে কয়টা পেইন্টিং ছিল?’ গোলাম মাওলার পাশে দাঁড়াতেই সে সায়মাকে জিজ্ঞাসা করল।
‘স্যার! দুইটা পেইন্টিং দেখছি।’
‘উহু! আগে কয়টা ছিল?’
‘স্যার! আগে কয়টা ছিল খেয়াল করিনি।’
‘তোমাদের গোয়েন্দাগিরি করতে বলেছে কে বলো তো! গোয়েন্দার চোখ বাজপাখির মতো তীক্ষ্ণ হতে হয়। ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর জিনিষও তাদের চোখ এড়িয়ে যেতে পারবে না। আর তুমি কিনা এতো বড় বড় পেইন্টিংগুলা খেয়াল করোনি! কাল এই পেইন্টিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে তোমার সাথে কথাও বলেছি!’
সায়মা দেয়ালের দিকে এগিয়ে গেল। দেয়ালটা ভালো করে খেয়াল করে বলল, ‘স্যার! মনে তো হচ্ছে তিনটা পেইন্টিং ছিল।’ দেয়ালের এক অংশে হাত রেখে বলল, ‘দেয়ালের এই জায়গাটুকু অন্য জায়গাগুলো থেকে একটু পরিষ্কার মনে হচ্ছে৷ পরিষ্কার জায়গাটুকু ঠিক বাকি দুইটা পেইন্টিংয়ের আকারের জায়গা।’ 
‘এইটা সাধারণ মানুষও দেখে বুঝতে পারবে। এটা বলার কিছু নেই। কিন্তু আমি অবাক হচ্ছি, তুমি গোয়েন্দাগিরি করছো! কিন্তু এতো বড় পেইন্টিংগুলো খেয়াল করোনি। জিজ্ঞাসা করার পর দেখে মনে হচ্ছে বলছো!’ বলে গোলাম মাওলা পকেট থেকে সিগারেট বের করল, ‘রাফাতকে ফোন দিয়ে বলো যে ওখানের দায়িত্ব অন্য কাউকে বুঝিয়ে দিয়ে এখানে আসতে! আর তুমি অফিসে গিয়ে এই ফ্ল্যাটের যত ছবি তোলা হয়েছে সবগুলা ছবি নিয়ে আসবে। জেরিনের বেডরুমের পেইন্টিংয়ের ছবিগুলো লাগবে!’
‘ঠিক আছে স্যার!’ বলে সায়মা ফ্ল্যাটের সদর দরজার দিকে পা বাড়ায়৷ 
‘আর নিচ থেকে গার্ডকে পাঠিয়ে দিয়ো!’ বলে গোলাম মাওলা সিগারেটটা ধরিয়ে নেয়৷ 
‘সার ডাকসেন আমারে?’
পেইন্টিং থেকে চোখ সরিয়ে পিছনে তাকায়। ওয়াচম্যান দাঁড়িয়ে আছে, ‘নাম কী আপনার?’
‘সাহাবুদ্দিন!’
‘গতকাল আমরা যাওয়ার পর এই ফ্ল্যাটে কে এসেছিল?’
‘কে আইবো সার! চাবি তো আপনাগো কাছে!’
‘কাল রাতে বিল্ডিংয়ের বাইরের কেউ এসেছিল?’
‘সার! রাইতে আমার ডিউটি ছিল না। রতনের ডিউটি ছিল।’
‘কোথায় সে?’
‘নিচে বওয়ায় রাইখা আইসি!’
‘তাকে ডেকে পাঠান!’
সাহাবুদ্দিন চলে যেতে নেয়।
‘থাক ডেকে আনতে হবে না৷ আমিই নিচে আসছি!’
সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে গোলাম মাওলা নিচে নেমে আসে৷ রতন গার্ডের চেয়ারে বসে আছে। 
‘আপনিই রতন?’
রতন দাঁড়িয়ে গোলাম মাওলাকে সালাম দেয়। 
‘কাল রাতে বাইরের কেউ এসেছিল?’
‘জি না সার!’
‘বিল্ডিংয়ে বাইরের কেউ আসলে তো নাম এন্ট্রি করতে হয়। খাতাটা দিন!’
রতন খাতাটা এগিয়ে দেয়৷ গোলাম মাওলা খাতাটা ভালো করে দেখে বলে, ‘কাল আপনি নাইন/বি তে গিয়েছিলেন কেন?’
রতন অবাক হয়, ‘সার! কাল রাইতে আমি এই টেবিল ছাইড়াই উঠি নাই।’
ততক্ষণে রাফাত চলে এসেছে, ‘স্যার! আমাকে আসতে বলেছেন?’
গোলাম মাওলা রাফাতের দিকে তাকায়, ‘হ্যাঁ!’ বলে ওয়াচম্যান গার্ডদের উদ্দেশ্য করে শাষিয়ে বলে, ‘আপনাদের কথাতে যদি আমি কোনো মিথ্যা খুঁজে পাই, তাহলে শরীর চামড়া একটাও আস্ত থাকবে না৷ পুলিশের মাইরের কথা তো শুনেছেনই!’
‘রাফাত! তুমি সিসিটিভি ফুটেজগুলো চেক দিবে। কাল রাতে বিল্ডিংয়ে কে এসেছে, না এসেছে সবার ব্যাপারে নোট করবে। প্রতি তলার সিড়ির দুই অংশের মাঝে সিসি ক্যামেরা লাগানো দেখেছি৷ জেরিনের ফ্ল্যাটের উপরের  এবং নিচের সিড়ির সিসিক্যামেরা দুইটা খেয়াল করে দেখবে, কোন ক্যামেরা থেকে জেরিনের দরজা দেখা যায়। সেই ক্যামেরার ফুটেজে দেখবে, কেউ গত রাতে জেরিনের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেছে কিনা অথবা চেষ্টা করেছে কিনা!’
‘ঠিক আছে স্যার!’
‘গতকাল যেই সিসিটিভি ফুটেজ নেয়া হয়েছে, সেগুলো চেক করে দেখেছো?’
‘স্যার! ওটার দায়িত্ব তো সায়মাকে দিয়েছিলেন!’ 
‘ঠিক আছে, আর তুমি এই বিল্ডিংয়ের প্রতিটা মানুষকে ইনকোয়ারি করবে। কাউকে সন্দেহ হলে সোজা তাকে হেফাজতে নিয়ে নিবে। জেরিনের বেডরুম থেকে একটা পেইন্টিং চুরি হয়েছে৷ এই চোরকে যেভাবেই হোক আমার চাই!”
‘ঠিক আছে স্যার!’
‘একা না পারলে আরো কাউকে সাথে নিয়ে নেও। কিন্তু কাজ আমি একদম পার্ফেক্ট চাই!’ বলে গোলাম মাওলা বেরিয়ে পড়ল।
৪.
গোলাম মাওলা আজকের সুইসাইড স্পটে গিয়ে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। মেয়েটার পুরো ঘর খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে৷ আসার সময় সায়মাকে ফোন করে এখানে আসতে বলে দিয়েছে৷ তার আসা অবধি মেয়েটার ফ্ল্যাট দেখা ছাড়া  গোলাম মাওলার আর কোনো কাজ নেই৷ ফরেন্সিক টিম তাদের কাজ করছে৷ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করছে।
তাদের আরেক টিম মেম্বার ফারুক বিল্ডিংয়ের গার্ড, কমিটি, বাসিন্দাদের থেকে মেয়েটার ব্যপারে তথ্য সংগ্রহ করছে৷ 
সায়মার আসতে আসতে আরো আধ ঘন্টা পার হয়। সে ছবিগুলো এনে গোলাম মাওলার হাতে দেয়। গোলাম মাওলা একেকটা করে ছবি দেখতে থাকে, ‘জেরিনের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট রেডি হয়েছে?’
‘হ্যাঁ স্যার! ডাক্তার শেখ ফোন দিয়ে বলেছিল যে রিপোর্ট রেডি হয়ে গেছে৷ কিন্তু এই নতুন সুইসাইডটার জন্য রিপোর্ট আনতে যেতে পারিনি।’
‘আরিফের খোঁজ পেয়েছ?’
‘না স্যার! সিসিটিভি ফুটেজ থেকে তার ছবি নিয়ে থানা, আমাদের সোর্সদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি৷’
‘সিসিটিভি ফুটেজ থেকে শুধু তার ছবিই সংগ্রহ করেছ নাকি এনালাইসিস করেছ?’
‘স্যার! ঐ বিল্ডিংয়ে যারা যারা থাকে সবার ইনফোরমেশন ও ছবি সংগ্রহ করে, সিসিটিভি ফুটেজসহ সাইবার টিমকে দয়েছি৷  জেরিন যে রাতে সুইসাইড করেছে তার আগের দিন থেকে শুরু করে সুসাইডের পর পুলিশ যাওয়া অবধি বিল্ডিংয়ে কে কে প্রবেশ করেছে এবং বের হয়েছে। সেটা তাদেরকে এনালাইসিস করতে বলেছি। করে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করেছে কিনা জিজ্ঞাসা করতে হবে৷’ 
‘ঠিক আছে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করো!’
সায়মা এক পাশে সরে গিয়ে  ফোন দেয়৷
‘আরো সময় লাগবে স্যার!’ কথা শেষ করে সে গোলাম মাওলাকে জানায়। 
‘আচ্ছা। জেরিনের ফ্ল্যাটের উপরের সিড়ি এবং নিচের সিড়ির ফুটেজসহ-ই তো নিয়েছ?’
‘জি স্যার! ঐ একদিনে জেরিন ছাড়া তার ফ্ল্যাটে আর কে কে গিয়েছে সেটাও দেখতে বলেছি।’
‘গুড’ বলে একটু থেমেই গোলাম মাওলা আবার জিজ্ঞাসা করে, ‘জেরিনের মোবাইল-ল্যাপটপ ক্র‍্যাক করা হয়েছে?’
‘জি স্যার! অফিসে রাখা হয়েছে৷ অফিসে গেলেই সেগুলো চেক করে দেখতে পারবেন।’
কথা বলতে বলতেই গোলাম মাওলা ছবিগুলো একাধিকবার দেখে ফেলেছে। কিন্তু যে দেয়ালে পেইন্টিংগুলো লাগানো সে দেয়ালের কোনো ছবি নেই। গোলাম মাওলা বিরক্ত হয়ে ছবিগুলো সায়মার হাতে দিয়ে বলে, ‘কে তুলেছে এই ছবি? পেইন্টিং করা দেয়ালের একটা ছবিও নেই। কোনো একটা কাজ পরিপূর্ণভাবে কেউ করতে পারে না।’ বলে সে আর দাঁড়ায় না৷ সুইসাইডের রুমের চলে যায়। পকেট থেকে মোবাইল বের করে কয়েক এঙ্গেলে পেইন্টিংটার ছবি তুলে নেয়৷  
গোলাম মাওলা মোবাইলটা পকেটে রেখে একটা সিগারেট ধরায়৷ সে ভাবছে, পেইন্টিংটা এভাবেই রেখে যাবে নাকি তাদের হেফাজতে নিয়ে যাবে৷
প্রথম দেখায় পেইন্টিংটা হুবহু জেরিনের বাসায় দেখা পেইন্টিংটার মতো লেগেছিল৷ কিন্তু এখন কেমন জানি অন্য রকম লাগছে। এই পেইন্টিংটাও পুরাটা লাল রঙ্গে আঁকা। জেরিনের ফ্ল্যাটে দেখা পেইন্টিংটার মতোই। কিন্তু এখন তার কাছে কেমন ব্যতিক্রম লাগছে৷ কিন্তু কী ব্যতিক্রম লাগছে সে বুঝতে পারছে না৷ একবার মনে হচ্ছে যে সকালে তার ব্রেইন একদম ফ্রেশ ছিল। তাই পেইন্টিংটা দেখা মাত্রই রিলেট করে ফেলতে পেরেছিল। আর এখন বিভিন্ন চিন্তা ব্রেইনে প্রবেশ করায় মনে হচ্ছে যে পেইন্টিংটা ব্যতিক্রম। আবার তার খুব জোর দিয়ে মনে হচ্ছে যে জেরিনের ফ্ল্যাটের পেইন্টিং আর এই পেইন্টিংটা সেম নয়৷ আসলেই ব্যতিক্রম।
‘স্যার! কী ভাবছেন?’ সায়মা প্রশ্ন করল। 
গোলাম মাওলা পেইন্টিং থেকে চোখ সরিয়ে বলে, ‘এই দুইটা কেসের সবচেয়ে অবাক করা বিষয়টা তো তোমাকে বলাই হয়নি।’
‘কী স্যার?’
‘পেইন্টিংটা দেখো!’ গোলাম মাওলা পেইন্টিংটার দিকে আঙ্গুল তাক করে বলে, ‘কাল জেরিনের বাসায় একদম সেম পেইন্টিংটা আমি দেখেছি। তাই সকালে পেইন্টিংটা দেখা মাত্র আমি জেরিনের ফ্ল্যাটে গিয়ে চেক দিয়েছি৷ কিন্তু আশ্চর্য জেরিনের ফ্ল্যাটে তো দেখলেই পেইন্টিংটা নেই।’
‘কিন্তু স্যার! এটা কিভাবে সম্ভব? এই বিল্ডিংগুলাতে এলিট শ্রেণীর মানুষদের বসবাস। এমনিতেই হাই সিকিউরিটি৷ আবার জেরিনের ফ্ল্যাট আমরা সিল করে দিয়েছি। চাবিও আমাদের কাছে। সেখান থেকে চুরি হওয়াটা প্রায় অসম্ভব।’
‘আমিও সেটাই ভাবছি৷’ বলে গোলাম মাওলা একটু থেমে খুব চিন্তিত স্বরে বলতে লাগল, ‘আচ্ছা সায়মা! তোমার কি মনে হয়, এই পেইন্টিংয়ের সাথে মেয়ে দুইটার সুইসাইডের কোনো সম্পর্ক আছে? আমার চিন্তা-ভাবনা ঘুরেফিরে বারবার এই পেইন্টিংটার দিকে চলে যাচ্ছে।’
‘স্যার! আমার এমন কিছু মনে হচ্ছে না। একই রকম পেইন্টিং একাধিক থাকতেই পারে।’
‘তাহলে জেরিনের ফ্ল্যাটের পেইন্টিংটা গেল কোথায়?’
সায়মা কোনো উত্তর দিতে পারল না। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।
গোলাম মাওলাও নতুন করে আর কিছু বলল না৷ তার চিন্তা-ভাবনা কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। দুইটা সুইসাইড সে এক সাথে রিলেট করার চেষ্টা কর‍তে লাগল। কিন্তু তার চিন্তা-ভাবনা কেমন এলোমেলো, খাপছাড়া হয়ে যাচ্ছে৷ সে কিছুই ঠিকভাবে ভাবতে পারছে না। তার মাথা ধরে যাচ্ছে। 
চলবে……….
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?