খুশু নামাজের প্রাণ – ইমাম ইবনু রজব হাম্বলি (রহঃ) | khushu namajer pran

  • বই : খুশু নামাজের প্রাণ
  • লেখক : ইমাম ইবনু রজব হাম্বলি (রহঃ)
  • প্রকাশনী : মাকতাবাতুন নূর
  • বিষয় : সালাত/নামায
  • অনুবাদ: জোজন আরিফ
  • সম্পাদক: মানযূরুল করীম
  • পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৪৪ (হার্ড কভার বাধাই)

খুশূ নামাজের প্রাণ’ ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী রহ. রচিত ‘আল খুশূ ফিস সালাহ’ রিসালাটির সরল ভাষান্তর। এছাড়াও এখানে তিনটি পরিশিষ্ট সংযুক্ত করা হয়েছে। যেখানে স্থান পেয়েছে ইমাম ইবনুল কায়্যিম জাওযিয়্যাহ রহ. রচিত ‘খুশূ’ ও ‘নিফাকী খুশূ’ এবং শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. রচিত ‘নামাজে খুশূর বিধান’ নামক সর্বমোট তিনটি নিবন্ধ। আলহামদুলিল্লাহ। বইটি যে কতটা মূল্যবান তা আপনারা নিশ্চয় অনুধাবন করতে পারছেন।

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তার ইবাদতের জন্য।তার ইবাদত করাই আমাদের কতর্ব্য। ইসলামের দ্বিতীয় রুকুন হচ্ছে নামাজ। ইমানের পরেই সালাতে স্থান।
আমরা সবাই তো নামাজ আদায় করি। কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের নামাজ কি কবুল করতেছে তা আমাদেরকে জানতে হবে।মাশাআল্লাহ “খুশু নামাজের প্রাণ ” বইটিতে অসাধারণ ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

নামাজের ভিতর মুনাফিকির আলামত ৬টি:

(১) যখন নামাজে দাঁড়ায়, অলসতার সাথে দাঁড়ায়
(২) অন্যকে দেখানোর নিয়তে নামাজ পড়ে
(৩) ইচ্ছাকৃত-ভাবে নামাজে বিলম্ব করে
(৪) নামাজ শেষ করতে তাড়াহুড়ো করে
(৫) নামাজের ভিতর খুব কমই মন থেকে আল্লাহকে স্মরণ করে
(৬) সুন্নত এবং নফল নামাজ খামখেয়ালী করে ছেড়ে দেয়
.
— ইমাম ইবনুল-কাইয়্যিম রহ.
.
[হুকমু ত্বরিকুস সালাত, পৃঃ ১০৫]

 
অন্তরের খুশুই হলো আসল খুশু।
“আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর আনুগত্যের অংশবিশেষ হলো: অঙ্গ -প্রত্যঙ্গ আজ্ঞাধীন থাকবে এবং দৃষ্টি নত হবে।কোনো মুসলিম যখন নামাজের জন্য দাড়াঁবে তখন আল্লাহর ভয় তাকে ডানে বামে তাকানো থেকে বিরত রাখবে।”
আতা আল-খুরাসানি বলেন,
“অন্তরের নম্রতা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অনুবর্তিতা উভয়ের মিলিত রূপ হলো খুশু”
খুশু ছাড়া নামাজ মূল্যহীন।
চূর্ণ-বিচূর্ণ বা ভগ্ন হৃদয় বলতে আব্দুল্লাহ ইবনুস সালাম বলেছেন,
ভগ্ন বা চূর্ণ -বিচূর্ণ হৃদয় বলতে সেই সব বান্দার হৃদয়কে বোঝায়, যাদের হৃদয় পরাক্রমশালী ও সুমহান আল্লাহর ভালোবাসায় চূর্ণ হয়েছে, অন্য কোনো কিছুর ভালোবাসাতে নয় l
সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত যে, যেসব অন্তর আল্লাহর পরীক্ষায় খণ্ডিত হয়েছে, তাঁর হুকুমে ধৈর্যধারণ করেছে ও সন্তুষ্ট থেকেছে, আল্লাহ তায়ালা সেসব অন্তরের নিকটবর্তী l

মহিমাময়, প্রশংসনীয় সত্তা তিনি, যিনি খুশুতে পরিপূর্ণ হৃদয়ের কাছে আগমন করেন,যেমনি ভাবে তিনি নামাজে দাঁড়ানো বান্দার সাথে গোপনে কথা বলেন।

আল্লাহর প্রতি শরীরের খুশু সঞ্চারকারী সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো নামাজ। আর যারা খুশু সহকারে নামাজ আদায় করে,আল্লাহ তায়ালা নিজ ভাষায় তাদের প্রশংসা করেছেন,
“যারা নিজেদের নামাযের বিনয় নম্রতা অবলম্বন করে “
এমন একটা সময় আসবে যখন অন্তরে খুশু আছে এমন একজন মানুষকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আমাদের প্রত্যেক মুসলমানদের একবার হলেও ‘খুশু নামাজের প্রাণ’ বইটি পড়া উচিত।
বইটি পড়ার আগে আমি অন্ধকারে হেঁটেছি, বইটি পড়ার পর ইলম অনেকটা পানির মত স্বচ্ছ।
উপকারী ইলম হলো, যা অন্তরের গভীরে বাসা বাঁধে।
তাই সবার জেনে রাখা প্রয়োজন, সর্বপ্রথম খুশুকেই দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নেওয়া হবে।
যে ব্যাক্তি নামাজে প্রকৃত খুশু অর্জনে সক্ষম হয়েছে কেবল সে-ই পারবে এমন সংকটময় মুহূর্তে নামাজ পড়তে।
ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো নামাজ। নামাজ হচ্ছে ইসলামের দ্বিতীয় রুকন। কালিমার পরেই এর স্থান। একজন মানুষ কালিমা পাঠ করে ঈমান আনার পর তার উপর সর্ব প্রথম ফরজ হুকুম আল্লাহর পক্ষ থেকে নামাজ। অথচ আমারা নামাজে ই করি তাড়াহুড়ো করে। থাকি উদাসীন। সালাতে দাঁড়ালেই যেন দুনিয়ায় সমস্ত চিন্তা চেপে বসে আমাদের মনে। মূলত সালাতে খুশুর অভাবেই এমন হচ্ছে। খুশু হচ্ছে নামাজের প্রাণ। প্রাণহীন কোন কিছুই উপকারী নয়।
খুশু সম্পর্কিত কোরআনের আয়াত ও হাদিসে সমৃদ্ধপূর্ণ একটি বই “খুশু নামাজের প্রাণ”। নামাজে খুশুর পাশাপাশি বইটি থেকে জানতে পেরেছি প্রকৃত বান্দা হওয়ার উপায় যা আমাকে সত্যিই অনুপ্রাণিত করেছে। সর্বপ্রথম খুশু আনতে হবে অন্তরে। যার মাধ্যমে সৃষ্টি হবে আল্লাহর ভয় এবং তার মাধ্যমেই নামাজের সময় দৃষ্টি হবে নত।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিম্নোক্ত সাবধান বাণীটি মনে
রাখা জরুরী। তিনি বলেছেন, “মানুষের মধ্য
থেকে যা সর্বপ্রথম উঠিয়ে নেয়া হবে তা হলো
খুশু। “
আরো মনে রাখা উচিত, “আল্লাহ কোনো উদাসীন ও অমনোযোগী অন্তরের দোয়া কবুল করেন না।”
আমাদের উচিত উপকারী ইলম অর্জন করা। যা আমাদের খুশুর পরিমাণ বাড়িয়ে দিবে। উপকারী ইলম বলতে সেই ইলমকে বোঝায় যা আল্লাহ ও তাঁর বান্দার মধ্যে আধ্যাত্নিক সম্পর্ক তৈরি করে। এমনভাবে তাঁর ইবাদত করা যেন সে তার রবকে দেখছে। কারণ খুশু
হচ্ছে অনুভবের বিষয়। নামাজে খুশু অবলম্বনে এই বইটি নিঃসন্দেহে উত্তম। বইটির সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দুনিয়া ও আখিরাতে জাযায়ে খাইর দান করুক।
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহ.) বলেন,
সুমহান ও মহিমাময় আল্লাহর কিতাব লক্ষ করলে দেখা যায়, ইসলামে আল্লাহ পছন্দ করেন এমন জিনিস সহ্য করতে না পারা একটি নিন্দনীয় ব্যাপার এবং যারা এরূপ করে তারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি প্রাপ্ত হয়। একজন বান্দার জীবনে তিরস্কার ও অসন্তুষ্টি কেবল তখনই আসে যখন সে কোনো ফরজ ত্যাগ করে বা হারাম কাজে লিপ্ত হয়। সুতরাং যাদের অন্তরে খুশু নেই তারা যদি তিরস্কৃত হয়, তবে খুশুর অপরিহার্যতা প্রমাণিত হবে।আল্লাহর কালামে খুশুর কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে :

“…অবশ্য তা (নামাজ) যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।”

অর্থাৎ আমাদের অবশ্যই খুশু-সহকারে নামাজ আদায় করতে হবে। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থে নামাজে খুশু-খুযুর গুরুত্ব, পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ইমাম ইবনু রজব হাম্বলি রহ.।

প্রথম অধ্যায়
খুশু

রহমানুর রহিম আল্লাহ তাআলার নামে, আমরা তাঁরই নিকট সাহায্য কামনা করি এবং সমস্ত প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার জন্য ।
হাফিয ও আল্লামা যাইনুদ্দিন ইবনুল শাইখ আবুল আব্বাস আহমাদ ইবনু রজব ( ) বলেন, এটি আল্লাহর সামনে খুশু (একাগ্রতা) ও ইনকিসার (অন্তরের বিনম্রতা ও ভঙ্গুরতা)’ সম্বন্ধীয় আমার লেখা একটি নিবন্ধ।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, সেসব অন্তরের মেরামতকারী যেসব অন্তর তাঁর নিমিত্তে ভগ্ন হয়েছে এবং তাঁর অনুগ্রহে অনুতাপকারীদের গুনাহ ক্ষমা করা হয়। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য অন্য কোনো সত্তা নেই; আল্লাহ এক, তাঁর কোনো শরিক নেই এবং তাঁর সমতুল্য কেউই নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ () তাঁর বান্দা ও রাসূল; তিনি তাঁকে পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহকারে প্রেরণ করেছেন, যাতে আমাদের দ্বীন সকল ধর্মের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে। তিনি তাঁকে
৭. ‘ভগ্ন হৃদয়’ অর্থ হলো এমন একটি অন্তর, যা মহিমান্বিত আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও ভয়ের কারণে নম্রতা, পরাধীনতা এবং স্থৈর্যে পরিপূর্ণ থাকে। ৮. যেমন, আল্লাহ বলেন :
هو الذي أرسل رسوله بالهدى ودين الحق ليظهرة على الدين كله ولو كرة المشركونه “তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন-সহকারে, যেন এ দ্বীনকে অপরাপর দ্বীনের ওপর জয়যুক্ত করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপ্রীতিকর মনে করে।”
২৩
[সূরা তাওবাহ, ৯ : 30] =
নবীদের বাদশাহ এবং বান্দা ও রাসূল হওয়ার মধ্যে যেকোনো একটি বাছাই করার সুযোগ দিয়েছেন এবং তিনি আল্লাহর দাসত্বের সাথে রাসূল হওয়াকে বেছে নিয়েছেন।
নবী (*) বলতেন,
اللهم أحيني مسكينا وأمتني مسكينا واحشرني في زمرة المساكين يوم القيامة
“হে আল্লাহ, আপনি আমাকে মিসকিন (দরিদ্র ও নিঃস্ব) হিসাবে দুনিয়াতে বাঁচিয়ে রাখুন, মিসকিন হিসাবে মৃত্যু দান করুন এবং পরকালে মিসকিনদের সঙ্গে আমার হাশর করুন।”১০
এভাবে নবী (*) এ পদমর্যাদার শ্রেষ্ঠত্ব ও গুণগান বর্ণনা করতেন। নবী (*), তাঁর পরিবার, তাঁর সাহাবীগণ ও তাঁর উত্তরসূরি, যারা তাঁর রশিকে আঁকড়ে ধরেছে তাদের প্রতি দরুদ ও সালাম।
মহিমাময় ও মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে তাঁর সামনে যারা বিনম্র, যারা তাঁর মহত্ত্বের সামনে ভঙ্গুর এবং যারা তাঁর উপস্থিতিতে নতমস্তক (খাযি’) এবং ভীত (খাশি’) তাদের প্রশংসা করেছেন।
= هو الذي أرسل رسوله بالهدى ودين الحق ليظهرة على الدين كله وكفى بالله شهیدان “তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে একে অন্য সমস্ত ধর্মের ওপর জয়যুক্ত করেন। (এ ব্যাপারে) সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।”
[সূরা ফাতহ, ৪৮: ২৮] هو الذي أرسل رسوله بالهدى ودين الحق ليظهرة على الدين كله ولو كرة المشركونه “তিনি তাঁর রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীন নিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে একে সব ধর্মের ওপর প্রবল করে দেন, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।” [সূরা আস-সফ, ৬১ : ৯] ৯. এ বিষয়ে ৩য় অধ্যায়ে আলোচনা করা হবে।
১০. তিরমিযি শরীফ : ২৩৫২, আনাস (4) থেকে বর্ণিত এবং ইমাম তিরমিযি বলেন, হাদীসটি গারিব; ইবনু মাজাহ : ৪১২৬, আবু সাঈদ (4) থেকে বর্ণিত; এবং তাবারানী, দুআ; উবাদাহ ইবনুস সামিত () থেকে বর্ণিত। সবগুলোই যঈফ সনদে, তবে হাদীসটি সহীহ। আবু সাঈদ ()-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি মুস্তাদরাকে হাকিম : ৭৯১১ এ বর্ণিত আছে। যাহাবীর মতানুসারে সহীহ; সুয়ুতী ()-ও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, আল-জামি আস-সগীর : ১৪৫৪ এবং আলবানী, সহীহ আল-জামি : ১২৬১; আস-সাহিহাহ : ৩০৮; আল-ইরওয়া : ৮৬১। আরও দেখুন : সাখাবী, মাকাসিদ আল-হাসানাহ : ১৬৬।
মহান রব বলেন :
إنّهم كانوا يسرعون في الخيري ويدعوننا رغبا ورهبا وكانو التالجشعين “তারা সৎকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ত, তারা আশা ও ভীতিসহকারে আমাকে ডাকত এবং তারা ছিল আমার কাছে বিনীত ।”””
তিনি আরও বলেন:
إن المسلمين و المسلمت و المؤمنين والمؤمنت والفنيين والفنيت و الشدقين ة الضيقة و الشبرين و الصبرت و الخشيين و الخشعت و المتصدقين و المتصدقت و الشابيين والصمت والحفظين فروجهم و الحفظت و الذكرين الله كثيرا والذكرت أعد الله لهم مغفرة و أجرا عظيما
“নিশ্চয় মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ, ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, সাওম পালনকারী পুরুষ, সাওম পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী নারী—তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।”১২
আল্লাহ তাদেরই মুমিন বলে ঘোষণা করেছেন, যারা খুশুর সাথে তাদের সর্বোত্তম ইবাদত করে এবং যারা নামাযে যত্নশীল।
قد افلح المؤمنون الذين هم في صلاتهم لخشعون “মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাযে বিনয় নম্রতা অবলম্বন করে। ১৩
১১. সূরা আম্বিয়া, ২১ : ১০ ১২. সূরা আহযাব, ৩৩ : ৩৫
১৩. সূরা মুমিনুন, ২৩ : ১-২ খুশু : নামাজের প্রাণ
যারা আল্লাহর কালামের তিলাওয়াত শুনে বিনয়াবনত হয় আল্লাহ তাআলা তাদের ইলমপ্রাপ্ত বলেছেন। قن أمنوا به أو لا تؤمنوا إن الذين أوتوا العلم من قبلة إذا يتلى عليهم يجرون
للاذقان سجدات و يقولون سبحن ربنا إن كان وعد ربنا لمفعولات و يجرون
للاذقان يبكون ويزيدهم خشوعات
“বলুন, তোমরা কুরআনকে মান্য করো অথবা অমান্য করো; যারা এর পূর্ব থেকে ইলমপ্রাপ্ত হয়েছে, যখন তাদের কাছে এর তিলাওয়াত করা হয়, তখন তারা নতমস্তকে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং বলে, আমাদের পালনকর্তা পবিত্র, মহান। নিঃসন্দেহে আমাদের পালনকর্তার ওয়াদা অবশ্যই পূর্ণ হবে। তারা ক্রন্দন করতে করতে নতমস্তকে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের বিনয়ভাব আরও বৃদ্ধি পায়। ১৪

খুশুর অর্থ

খুশুর মৌলিক অর্থ হলো—অন্তরের কোমলতা, নম্রতা, স্থিরতা, নতমস্তক, ভগ্নতা ও আকুলতা। মূলত অন্তরের খুশুই আসল খুশু । কারণ, অন্তরে যখন খুশু তথা আল্লাহ তাআলার প্রতি ভয়-ভীতি, বিনয় ও নম্রতা সৃষ্টি হবে, তখন বাকি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও তা ছড়িয়ে পড়বে। কারণ, মানুষের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই তার অন্তরের অনুগামী। 
আল্লাহর রাসূল (*) বলেছেন,
ألا وإن في الجسد مضغة، إذا صلحت، صلح الجسد كله، وإذا فسدت ، القلب فسد الجسد كله، ألا وهي
“নিশ্চয়ই শরীরের মধ্যে একটি মাংসের টুকরো আছে, যদি সেটা ঠিক থাকে, তাহলে পুরো শরীরও ঠিক থাকবে। কিন্তু যদি সেটা কলুষিত হয়, তাহলে পুরো শরীর কলুষিত হবে। সেটা হলো অন্তর বা কলব।””
১৪. সূরা বনি ইসরাঈল, ১৭ : ১০৭-১০৯ [সিজদার আয়াত ] ১৫. সহীহ বুখারী: ৫২,২০৫১; সহীহ মুসলিম : ১৫৯৯
২৬ খুশু : নামাজের প্রাণ
যখন অন্তর বিনম্র হয়ে যায়, তখন শ্রবণ, দৃষ্টি, মুখমণ্ডল— সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও তাদের কাজকর্ম, এমনকি মুখের কথাও বিনম্র হয়ে যায়। এ জন্যই নবী (*) রুকুতে বলতেন,
خشع لك سمعي، وبصري، ومخي، وعظمي، وعصبي “আমার কান, চোখ, মগজ, হাড়, শিরা-উপশিরা সবই তোমার প্রতি বিনয়াবনত হয়েছে।”
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
به قدمي وما استقلت “এবং আমার পা যা বহন করে।”” একবার একজন সালাফ একলোককে নামাজের মধ্যে অস্থিরতায় ভুগতে দেখে মন্তব্য করলেন,
لو خشع قلب هذا خشعت جوارحه “যদি লোকটির অন্তর বিনম্র হয়, তাহলে তার দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও বিনয়াবনত হবে।”
ঘটনাটি হুযাইফা (), সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব () এবং রাসূলুল্লাহ () থেকে বর্ণিত; তবে নির্ভরযোগ্য নয়।
মাসউদী (*) আবু সিনান (*) হতে তার নিকট বর্ণনা করেছেন এমন একজনের বরাত দিয়ে বলেন, আলী ইবনে আবি তালিব (*)
১৬. সহীহ মুসলিম : ৭৭১, আলী () থেকে বর্ণিত।
১৭. মুসনাদে আহমাদ : ১৬০; আলী () থেকে বর্ণিত, শাইখ শুআইব আল আরনাউত
(৯)-এর মতে ইমাম বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ এবং সহীহ ইবনু খুযাইমাহ : ৬০৭ । ১৮. ইবনু নাসর আল-মারওয়াযী প্রণীত তাজিমু কাদর আস-সালাহ : ১৫০। [সনদ যঈফ ] ১৯. মারওয়ায়ী : ১৫১; ইবনুল
মুবারক (b) প্রণীত আয-যুহদ : ৪১৯। [ সনদ যঈফ ] ২০. শাইখ যাকারিয়া আনসারীর মতে এর সনদ যঈফ, তাফসিরু বাইযাভীর (2/202) তা’লিক; ইমাম সুয়ূতী ()-এর মতে যঈফ, জামিউস সগীর, হা : ৭৪২৯। ইবনুল মুবারক প্রণীত আয-যুহদ: ১১৮৮।
২৭

খুশু নামাজের প্রাণ রিভিউ

প্রারম্ভিকাঃ আমরা জানি, ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত। যথাঃ কালিমা, নামাজ, রোজা,হজ্ব এবং যাকাত। এরমধ্যে নামাজ হল দ্বিতীয় স্তম্ভ। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক নর-নারীর ওপর নামাজ ফরজ করা হয়েছে। নামাজের মাঝে যে বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তা হল ‘খুশু’। খুশুর মৌলিক অর্থ হল- অন্তরের কোমলতা, নম্রতা,স্থিরতা, নতমস্তক,ভগ্নতা ও আকুলতা। এরমাঝে অন্তরের খুশু-ই হল আসল। নামাজে দাঁড়ানো মানে-ই স্বীয় রবের সাথে সাক্ষাৎ করা। স্বীয় রবের সাথে সাক্ষাৎ করতে হলে অন্তর থাকতে হবে সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন। যে অন্তরে থাকবে না দুনিয়াবি কোনও চিন্তা। রবের সাথে একনিষ্ঠভাবে সাক্ষাৎ করা হয় নামাজের মাঝে। নামাজে কীভাবে খুশু ধরে রাখা যায় এনং নিফাকী খুশু সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এ বইটিতে। আবার নামাজের মাঝে এখন পরে ইবাদত ও দুআ নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা আছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাযে বিনয় নম্রতা অবলম্বন করে।”

বইয়ের অধ্যায় সমূহঃ

কোরআন ও হাদিসের আলোকে প্রতিটি অধ্যায়ে কয়েকটি পাঠে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে নামাজে খুশু,ইবাদত ও দুআ নিয়ে।
১. খুশু
২. ইবাদত
৩. দুআ

বইয়ের বিষয়বস্তুঃ

কলববিহীন দেহাবয়ব যেমন জনমানবশূন্য বিরান ঘরের মতো,ঠিক তেমনি খুশুবিহীন অন্তর মহান রবের মহত্ত্ব, বড়ত্ব ও গরিমা সম্পর্কে অজ্ঞাত। যে অন্তর সবসময় আল্লাহর ভয়ে কেঁপে ওঠে, সে অন্তরের অধিকারী মানুষ নামাজে পায় পরিপূর্ণ খুশু, জীবনে পায় সজীবতা। নামাজে খুশু ধরে রাখা নিয়ে এই বইটি রচিত হয়েছে। আমাদের অন্তর তো অনেক আগেই প্রায় মারা গেছে, এই মৃতপ্রায় অন্তরে একটু আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও তাঁর সাথে সাক্ষাৎকারে সজীবতা ফিরে আনার জন্য লেখকের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস!

বইটি কেন পড়তে হবে?

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের সৃষ্টির করার উদ্দেশ্যে’র মধ্যে অন্যতম কারণ হল-তাঁর ইবাদত করা। ইবাদতের মধ্যে নামাজ অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইবাদত। আমরা আল্লাহর পাপী বান্দা। আমরা এতটাই দুনিয়ামুখি হয়ে গেছি যে, রবকে বেমালুম ভুলেই রয়েছি! বস্তুবাদী দুনিয়ার কার্যকলাপের সাথে নিজেদের এমনভাবে জড়িয়ে ফেলেছি এর ফলে কোথাও পরিপূর্ণভাবে শান্তি পাই না। ইবাদত থেকে শুরু করে পারিবারিক বিষয়াদি সহ সবকিছুতে-ই যেন সুখ খুঁজে পাওয়া বড়োই কষ্টসাধ্য। নামাজের দাঁড়ালে কখন কী করেছি, কী করতে হবে, কী করব,কী করলে অর্থ-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে- এরকম হাজারো ধরণের চিন্তা আসে আমাদের মনের মাঝে। এতে খুশু সহকারে আমরা নামাজ আদায় করতে পারি না। আর খুশুবিহীন নামাজ আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। নামাজে পরিপূর্ণ খুশু অর্জন করা, ইবাদত এবং নামাজ শেষে দুআ নিয়ে বইটিতে খুব সাবলীলভাবে প্রতিটি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে ভালোভাবে জানার জন্য বইটি অবশ্যই পড়তে হবে।

বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকেঃ

১. কাতাদাহ বলেন, ”অন্তরের খুশু বলতে বোঝায় আল্লাহর ভয় ও সালামের সময় দৃষ্টি নত রাখা।”
২. আবু দারদা হতে বর্ণিত রাসূল ( সা.) বলেছেন, “এ জাতির মধ্যে থেকে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি উঠিয়ে নেওয়া হবে তা হল খুশু।”

৩. আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, ” তোমাদের কেউ যখন নামাজ আদায় কুরবক তখন এদিক-সেদিক তাকাবে না; কারণ সে তখন একান্তে রবের সাথে কথা বলছে৷ তার রব তার সামনে আছেন। আর তিনিও এদিক-সেদিক না তাকিয়ে তার সাথে কথা বলছেন।”
৪. আহমাদ ও তিরমিজি বর্ণনা করেন, নবী (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ কোনও উদাসীন ও অমনোযোগী অন্তরের দুআ কবুল করেন না।”
৫. ইমাম সুফিয়ান ইবনে উয়াইনাহ বলেন, “নেককারদের আলোচনায় রহমত নাযিল হয়।”

পাঠ অনুভূতিঃ

বইটিতে সর্বমোট ১৪৩ পৃষ্ঠা রয়েছে। আর এরমধ্যে ৩টা অধ্যায় রয়েছে। প্রতিটি অধ্যায়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারি না নামাজে খুশু ধরে রাখতে কেন পারি না,বা কীভাবে ধরে রাখব আর নিফাকী খুশু কোনটা! বইটি পড়ে খুশু, দুআ আর ইবাদত সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। যা এর আগে আমি জানতাম না। এককথায় খুব সাবলীলভাবে প্রতিটি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। যেটা পাঠক সহজে বুঝতে পারবে। যাই হোক, যারা অনেক পরিশ্রম করে বইটি রচিত করেছেন সবার জন্য অন্তরের অন্তস্তল থেকে দুআ আর ভালোবাসা রইল।

 
বই সম্পর্কে ব্যক্তিগত মতামতঃ

‘খুশু: নামাজের প্রাণ’ বইটির শব্দশৈলী আর ভাষাশৈলী অত্যন্ত চমৎকার। আমি তেমন উল্লেখযোগ্য কোনও বানান ভুল পাই নাই। বিরামচিহ্নের প্রয়োগও সুন্দরভাবে হয়েছে। লেখার মানও মা শা আল্লাহ অনেক সুন্দর। সবদিক দিয়েই মোটামুটি বইটি ভালোই।

 
তবে আরও কিছু আলোচনা এড করলে বোধহয় আরেকটু উপকৃত হতাম। হাদিসের সাথে আলোচনা আরেকটু বৃদ্ধি করা উচিত ছিল।

সমাপনীঃ

আমরা আল্লাহর গুনাহগার বান্দা। আমাদের গুনাহের শেষ নেই। প্রতিনিয়ত রবের অবাধ্যতায় লিপ্ত সবাই। দুনিয়ার সাথে নিজেদের অধিক সম্পৃক্ততার ফলে তাঁর (আল্লাহর) সাথে ঠিকভাবে সাক্ষাৎ করা হয় না আমাদের। নামাজে দাঁড়ালে মনে আসে হাজারো চিন্তা। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের অন্তর পরিষ্কার করে দিন। নামাজে খুশু ধরে রাখার তৌফিক দিন। আমাদের পূর্বের সব গুনাহ ক্ষমা করুন। আমীন!

পরিশেষে বলব, নামাজ যেহেতু প্রাপ্ত বয়স্ক নর-নারীর ওপর ফরজ করা হয়েছে। আর দিনশেষে রবের কাছে আমল নিয়ে হাজির হতে হবে। সেহেতু আমাদেরকে সুন্দরভাবে সালাত আদায় করতে হবে। রবের সাথে ভালোবাসা বৃদ্ধি করতে হবে। তাই সবারই বইটি পড়া উচিত মনে করি। বইটি পড়ে অনেক কিছু জানতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?