- বই : খুশু নামাজের প্রাণ
- লেখক : ইমাম ইবনু রজব হাম্বলি (রহঃ)
- প্রকাশনী : মাকতাবাতুন নূর
- বিষয় : সালাত/নামায
- অনুবাদ: জোজন আরিফ
- সম্পাদক: মানযূরুল করীম
- পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৪৪ (হার্ড কভার বাধাই)
খুশূ নামাজের প্রাণ’ ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী রহ. রচিত ‘আল খুশূ ফিস সালাহ’ রিসালাটির সরল ভাষান্তর। এছাড়াও এখানে তিনটি পরিশিষ্ট সংযুক্ত করা হয়েছে। যেখানে স্থান পেয়েছে ইমাম ইবনুল কায়্যিম জাওযিয়্যাহ রহ. রচিত ‘খুশূ’ ও ‘নিফাকী খুশূ’ এবং শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. রচিত ‘নামাজে খুশূর বিধান’ নামক সর্বমোট তিনটি নিবন্ধ। আলহামদুলিল্লাহ। বইটি যে কতটা মূল্যবান তা আপনারা নিশ্চয় অনুধাবন করতে পারছেন।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তার ইবাদতের জন্য।তার ইবাদত করাই আমাদের কতর্ব্য। ইসলামের দ্বিতীয় রুকুন হচ্ছে নামাজ। ইমানের পরেই সালাতে স্থান।
আমরা সবাই তো নামাজ আদায় করি। কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের নামাজ কি কবুল করতেছে তা আমাদেরকে জানতে হবে।মাশাআল্লাহ “খুশু নামাজের প্রাণ ” বইটিতে অসাধারণ ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
নামাজের ভিতর মুনাফিকির আলামত ৬টি:
(১) যখন নামাজে দাঁড়ায়, অলসতার সাথে দাঁড়ায়
(২) অন্যকে দেখানোর নিয়তে নামাজ পড়ে
(৩) ইচ্ছাকৃত-ভাবে নামাজে বিলম্ব করে
(৪) নামাজ শেষ করতে তাড়াহুড়ো করে
(৫) নামাজের ভিতর খুব কমই মন থেকে আল্লাহকে স্মরণ করে
(৬) সুন্নত এবং নফল নামাজ খামখেয়ালী করে ছেড়ে দেয়
.
— ইমাম ইবনুল-কাইয়্যিম রহ.
.
[হুকমু ত্বরিকুস সালাত, পৃঃ ১০৫]
অন্তরের খুশুই হলো আসল খুশু।
“আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর আনুগত্যের অংশবিশেষ হলো: অঙ্গ -প্রত্যঙ্গ আজ্ঞাধীন থাকবে এবং দৃষ্টি নত হবে।কোনো মুসলিম যখন নামাজের জন্য দাড়াঁবে তখন আল্লাহর ভয় তাকে ডানে বামে তাকানো থেকে বিরত রাখবে।”
আতা আল-খুরাসানি বলেন,
“অন্তরের নম্রতা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অনুবর্তিতা উভয়ের মিলিত রূপ হলো খুশু”
খুশু ছাড়া নামাজ মূল্যহীন।
ভগ্ন বা চূর্ণ -বিচূর্ণ হৃদয় বলতে সেই সব বান্দার হৃদয়কে বোঝায়, যাদের হৃদয় পরাক্রমশালী ও সুমহান আল্লাহর ভালোবাসায় চূর্ণ হয়েছে, অন্য কোনো কিছুর ভালোবাসাতে নয় l
সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত যে, যেসব অন্তর আল্লাহর পরীক্ষায় খণ্ডিত হয়েছে, তাঁর হুকুমে ধৈর্যধারণ করেছে ও সন্তুষ্ট থেকেছে, আল্লাহ তায়ালা সেসব অন্তরের নিকটবর্তী l
মহিমাময়, প্রশংসনীয় সত্তা তিনি, যিনি খুশুতে পরিপূর্ণ হৃদয়ের কাছে আগমন করেন,যেমনি ভাবে তিনি নামাজে দাঁড়ানো বান্দার সাথে গোপনে কথা বলেন।
“যারা নিজেদের নামাযের বিনয় নম্রতা অবলম্বন করে “
এমন একটা সময় আসবে যখন অন্তরে খুশু আছে এমন একজন মানুষকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আমাদের প্রত্যেক মুসলমানদের একবার হলেও ‘খুশু নামাজের প্রাণ’ বইটি পড়া উচিত।
বইটি পড়ার আগে আমি অন্ধকারে হেঁটেছি, বইটি পড়ার পর ইলম অনেকটা পানির মত স্বচ্ছ।
উপকারী ইলম হলো, যা অন্তরের গভীরে বাসা বাঁধে।
তাই সবার জেনে রাখা প্রয়োজন, সর্বপ্রথম খুশুকেই দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নেওয়া হবে।
যে ব্যাক্তি নামাজে প্রকৃত খুশু অর্জনে সক্ষম হয়েছে কেবল সে-ই পারবে এমন সংকটময় মুহূর্তে নামাজ পড়তে।
সুমহান ও মহিমাময় আল্লাহর কিতাব লক্ষ করলে দেখা যায়, ইসলামে আল্লাহ পছন্দ করেন এমন জিনিস সহ্য করতে না পারা একটি নিন্দনীয় ব্যাপার এবং যারা এরূপ করে তারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি প্রাপ্ত হয়। একজন বান্দার জীবনে তিরস্কার ও অসন্তুষ্টি কেবল তখনই আসে যখন সে কোনো ফরজ ত্যাগ করে বা হারাম কাজে লিপ্ত হয়। সুতরাং যাদের অন্তরে খুশু নেই তারা যদি তিরস্কৃত হয়, তবে খুশুর অপরিহার্যতা প্রমাণিত হবে।আল্লাহর কালামে খুশুর কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে :
“…অবশ্য তা (নামাজ) যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।”
অর্থাৎ আমাদের অবশ্যই খুশু-সহকারে নামাজ আদায় করতে হবে। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থে নামাজে খুশু-খুযুর গুরুত্ব, পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ইমাম ইবনু রজব হাম্বলি রহ.।
প্রথম অধ্যায়
খুশু
খুশুর অর্থ
খুশু নামাজের প্রাণ রিভিউ
প্রারম্ভিকাঃ আমরা জানি, ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত। যথাঃ কালিমা, নামাজ, রোজা,হজ্ব এবং যাকাত। এরমধ্যে নামাজ হল দ্বিতীয় স্তম্ভ। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক নর-নারীর ওপর নামাজ ফরজ করা হয়েছে। নামাজের মাঝে যে বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তা হল ‘খুশু’। খুশুর মৌলিক অর্থ হল- অন্তরের কোমলতা, নম্রতা,স্থিরতা, নতমস্তক,ভগ্নতা ও আকুলতা। এরমাঝে অন্তরের খুশু-ই হল আসল। নামাজে দাঁড়ানো মানে-ই স্বীয় রবের সাথে সাক্ষাৎ করা। স্বীয় রবের সাথে সাক্ষাৎ করতে হলে অন্তর থাকতে হবে সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন। যে অন্তরে থাকবে না দুনিয়াবি কোনও চিন্তা। রবের সাথে একনিষ্ঠভাবে সাক্ষাৎ করা হয় নামাজের মাঝে। নামাজে কীভাবে খুশু ধরে রাখা যায় এনং নিফাকী খুশু সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এ বইটিতে। আবার নামাজের মাঝে এখন পরে ইবাদত ও দুআ নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা আছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাযে বিনয় নম্রতা অবলম্বন করে।”
বইয়ের অধ্যায় সমূহঃ
কোরআন ও হাদিসের আলোকে প্রতিটি অধ্যায়ে কয়েকটি পাঠে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে নামাজে খুশু,ইবাদত ও দুআ নিয়ে।
১. খুশু
২. ইবাদত
৩. দুআ
বইয়ের বিষয়বস্তুঃ
কলববিহীন দেহাবয়ব যেমন জনমানবশূন্য বিরান ঘরের মতো,ঠিক তেমনি খুশুবিহীন অন্তর মহান রবের মহত্ত্ব, বড়ত্ব ও গরিমা সম্পর্কে অজ্ঞাত। যে অন্তর সবসময় আল্লাহর ভয়ে কেঁপে ওঠে, সে অন্তরের অধিকারী মানুষ নামাজে পায় পরিপূর্ণ খুশু, জীবনে পায় সজীবতা। নামাজে খুশু ধরে রাখা নিয়ে এই বইটি রচিত হয়েছে। আমাদের অন্তর তো অনেক আগেই প্রায় মারা গেছে, এই মৃতপ্রায় অন্তরে একটু আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও তাঁর সাথে সাক্ষাৎকারে সজীবতা ফিরে আনার জন্য লেখকের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস!
বইটি কেন পড়তে হবে?
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের সৃষ্টির করার উদ্দেশ্যে’র মধ্যে অন্যতম কারণ হল-তাঁর ইবাদত করা। ইবাদতের মধ্যে নামাজ অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইবাদত। আমরা আল্লাহর পাপী বান্দা। আমরা এতটাই দুনিয়ামুখি হয়ে গেছি যে, রবকে বেমালুম ভুলেই রয়েছি! বস্তুবাদী দুনিয়ার কার্যকলাপের সাথে নিজেদের এমনভাবে জড়িয়ে ফেলেছি এর ফলে কোথাও পরিপূর্ণভাবে শান্তি পাই না। ইবাদত থেকে শুরু করে পারিবারিক বিষয়াদি সহ সবকিছুতে-ই যেন সুখ খুঁজে পাওয়া বড়োই কষ্টসাধ্য। নামাজের দাঁড়ালে কখন কী করেছি, কী করতে হবে, কী করব,কী করলে অর্থ-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে- এরকম হাজারো ধরণের চিন্তা আসে আমাদের মনের মাঝে। এতে খুশু সহকারে আমরা নামাজ আদায় করতে পারি না। আর খুশুবিহীন নামাজ আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। নামাজে পরিপূর্ণ খুশু অর্জন করা, ইবাদত এবং নামাজ শেষে দুআ নিয়ে বইটিতে খুব সাবলীলভাবে প্রতিটি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে ভালোভাবে জানার জন্য বইটি অবশ্যই পড়তে হবে।
বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকেঃ
১. কাতাদাহ বলেন, ”অন্তরের খুশু বলতে বোঝায় আল্লাহর ভয় ও সালামের সময় দৃষ্টি নত রাখা।”
২. আবু দারদা হতে বর্ণিত রাসূল ( সা.) বলেছেন, “এ জাতির মধ্যে থেকে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি উঠিয়ে নেওয়া হবে তা হল খুশু।”
পাঠ অনুভূতিঃ
বইটিতে সর্বমোট ১৪৩ পৃষ্ঠা রয়েছে। আর এরমধ্যে ৩টা অধ্যায় রয়েছে। প্রতিটি অধ্যায়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারি না নামাজে খুশু ধরে রাখতে কেন পারি না,বা কীভাবে ধরে রাখব আর নিফাকী খুশু কোনটা! বইটি পড়ে খুশু, দুআ আর ইবাদত সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। যা এর আগে আমি জানতাম না। এককথায় খুব সাবলীলভাবে প্রতিটি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। যেটা পাঠক সহজে বুঝতে পারবে। যাই হোক, যারা অনেক পরিশ্রম করে বইটি রচিত করেছেন সবার জন্য অন্তরের অন্তস্তল থেকে দুআ আর ভালোবাসা রইল।
বই সম্পর্কে ব্যক্তিগত মতামতঃ
‘খুশু: নামাজের প্রাণ’ বইটির শব্দশৈলী আর ভাষাশৈলী অত্যন্ত চমৎকার। আমি তেমন উল্লেখযোগ্য কোনও বানান ভুল পাই নাই। বিরামচিহ্নের প্রয়োগও সুন্দরভাবে হয়েছে। লেখার মানও মা শা আল্লাহ অনেক সুন্দর। সবদিক দিয়েই মোটামুটি বইটি ভালোই।
তবে আরও কিছু আলোচনা এড করলে বোধহয় আরেকটু উপকৃত হতাম। হাদিসের সাথে আলোচনা আরেকটু বৃদ্ধি করা উচিত ছিল।
সমাপনীঃ
আমরা আল্লাহর গুনাহগার বান্দা। আমাদের গুনাহের শেষ নেই। প্রতিনিয়ত রবের অবাধ্যতায় লিপ্ত সবাই। দুনিয়ার সাথে নিজেদের অধিক সম্পৃক্ততার ফলে তাঁর (আল্লাহর) সাথে ঠিকভাবে সাক্ষাৎ করা হয় না আমাদের। নামাজে দাঁড়ালে মনে আসে হাজারো চিন্তা। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের অন্তর পরিষ্কার করে দিন। নামাজে খুশু ধরে রাখার তৌফিক দিন। আমাদের পূর্বের সব গুনাহ ক্ষমা করুন। আমীন!