খলিফা হারুনুর রশিদের উদ্দেশ্যে প্রেরিত চিঠি – লেখক : ইমাম মালিক ইবনে আনাস র. | Kholifa Harunur Rashider Uddesshe Prerito Chithi

Image


খলিফা হারুনুর রশিদের উদ্দেশ্যে প্রেরিত চিঠি

লেখক : ইমাম মালিক ইবনে আনাস র.
প্রকাশনী : মাকতাবাতু ইবরাহীম
বিষয় : ইবাদত ও আমল
সম্পাদক : জাবির মুহাম্মদ হাবীব
পৃষ্ঠা : 80, কভার : পেপার ব্যাক
আইএসবিএন : 9789849528371, ভাষা : বাংলা
_________________________________________________
যদি একজন মুসলিমের সারা জীবনের সংক্ষিপ্ত পাথেয় তুলে দিতে বলা হয়, তাহলে নির্দ্বিধায় তুলে দেওয়া যাবে এই বইটি। ছোট্ট এই বইটি সত্যিকার অর্থে কোনো বই নয়; বরং একটি চিঠি। তবে, চিঠি হলেও এটি সাধারণ কোনো চিঠিও নয়। একজন মুসলিমের জীবন-চলার পথে কী কী বিষয় আসতে পারে এবং একজন মুসলিমের সারা জীবনের মৌলিক দিক-নিদের্শনা কী হতে পারে—তা উল্লিখিত হয়েছে এই চিঠিতে। এই চিঠিটি রচনা করেছিলেন জগদ্বিখ্যাত ইমাম, মুহাদ্দিস, ফকিহ—ইমাম মালিক ইবনে আনাস এবং এটি তিনি তৎকালীন পৃথিবীর প্রভাবশালী মুসলিম শাসক খলিফা হারুনুর রশিদ বরাবর পাঠিয়েছিলেন। ইমাম মালিকের সেই মূল্যবান চিঠিরই বাংলা অনুবাদ এই মহামূল্যবান বই।
__________________________________________________
খলিফা হারুনুর রশিদ, যিনি ইসলামি সালতানাতের একজন মহান খলিফা ছিলেন। জীবন পাথেয় সংবলিত মল্যবান পত্রটি লিখেছিলেন ইমাম মালিক ইবনে আনাস রাহিমাহুল্লাহ হিজরি দ্বিতীয় শতকে তৎকালীন শ্রেষ্ঠ খলিফা হারুনুর রশিদের উদ্দেশ্যে। পত্রটি ঈমানিরশ্মী ও ইসলামি সৌন্দর্যের রূপক হয়ে আজও প্রত্যেক মুমিনের জন্য সৌভাগ্যের তারকা হয়ে ঝলঝল করছে।
সকল প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য, যিনি আসমান ও জমিন সব কিছুর মালিক। তিনি যাকে ইচ্ছা হিদায়েত দান করেন। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক সৃষ্টিকুল শিরোমনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবারবর্গ এবং অনুসারিদের ওপর।
মানুষের দুয়ারে হেদায়াতের আলো পৌঁছে দিতে ঐতিহাসিক এই পুষ্প (চিঠি) অতুলনীয়। লেখক তার পুষ্পকে কুরআন-হাদিসের নির্যাস দ্বারা সুশোভিত করেছেন। যা আমাদের জন্য সমুজ্জ্বল মতি— সদৃশ। লেখকের দ্বীনি পয়গাম পাঠকের জন্য সাবলীল ও হৃদয়ঙ্গম করে তুলতে মাকতাবাতু ইবরাহীম বদ্ধপরিকর। তথাপি মানুষ মাত্রই ভুল, তাই পাঠকের সজাগ দৃষ্টি ও ভালোবাসা আমাদের কাম্য। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইখলাস ও ল্লিল্লাহিয়্যাত দান করুন। (আমিন ইয়া রব্বাল )
__________________________________________________

হামদ ও সালাতের পর, পত্রটি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অনুসৃত শিষ্টাচারস্বরূপ। তাই এটি শান্ত মনে একাগ্রচিত্তে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের আশা নিয়ে পাঠ শুরু করি.. প্রিয় আমির..
মৃত্যুশয্যায় আপনার অধীনরা চারদিক থেকে আপনাকে ঘিরে রাখবে, তবুও মৃত্যু আপনাকে গ্রাস করে নেবে। পার্থিব জগতের তুলনায় কবরের সময়টা অনেক দীর্ঘ, তবে আখিরাতের তুলনায় খুবই সামান্য। এই মহা সফরে সাওয়াল-জাওয়াব (প্রশ্নোত্তর) আর হিসাব নিকাশের ক্ষেত্রে আপনার কী-ই-বা প্রস্তুতি আছে?
হায়, আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিতদের সাথে জাহান্নামের আচরণ কেমন হবে—যদি আপনি দেখতেন! হায় আফসোস, (আমি কল্পনার চোখে দেখতে পাচ্ছি) দোজখের আগুনে জাহান্নামিদের চেহারাগুলো ঝলসে যাচ্ছে। ভয়াবহ আজাব আর দুর্বিষহ অবস্থায় তারা আর্তচিৎকার ও আর্তনাদ করে কত কিছু বলছে। অথচ শাস্তিদাতা ফেরেশতারা হবে অন্ধ ও বধির। তারা কিছুই শুনতে পাবে না। শাস্তিও কমাতে পারবে না। জাহান্নামিরা আফসোস আর হা-হুতাশ করে নিজেদের ধ্বংস কামনা করবে। অথচ তারা হবে উপেক্ষিত। কুরআনুল কারিমের ভাষ্য—
ه اخسئوا فيها ولا تكلمون »
তোমরা হীন ও ঘৃন্য অবস্থায় জাহান্নামে পড়ে থাকো।
প্রিয় আমির..
দুনিয়ার এক রাজত্ব বা বাদশাহি নয়, যদি আখিরাতে সারা পৃথিবীকে মুক্তিপণ হিসাবে পেশ করা হয়, তবুও তা তুচ্ছই জ্ঞান করা হবে। বাস্তবে আখিরাতে দুনিয়ার কি কোনো মূল্য আছে! স্রষ্টার সন্তুষ্টিতে জান্নাতিদের চেহারায় থাকবে আনন্দোজ্জল রেখা, মুখাবয়ব হবে জ্যোতির্ময়, আল্লাহর কাছে তাদের মর্যাদা হবে আকশচুম্বী। দুনিয়ার জীবনে আপনি সর্বোচ্চ যে বড়ো বড়ো (দুনিয়াবি ভোগসামগ্রী) আশা করেন—সেদিনের নাজ-নেয়ামতের তুলনায় তা অতি সামান্য।
আল্লাহ তাআলা হিদায়াতের মালিক, হিদায়াত পেতে আপনাকেই হাত প্রসারিত করতে হবে। আশা করি, অন্তরাত্মার চাহিদাকে প্রাধান্য না দিয়ে আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশে আপনি ব্রতী হবেন। প্রিয় আমির..
স্মরণ রাখবেন, পাপ কাজ থেকে দূরে না থাকলে বা মন্দ কাজে বাধা না দিলে সমাজে আপনি ভ্রুকুঞ্চিত হবেন। প্রবিত্তির প্রবৃদ্ধি ঠেকাতে আপনি নিজেকে সহায়তা না করলে, কালের আবর্তে আপনার হিসাব সহজ নাও হতে পারে। তখন দলিল বা দস্তাবেজ আপনার কোনো উপকারে আসবে না, ফলে যা হবার তাই হবে। দিন ও রাতের কিছু সময় একান্তে স্রষ্টার সমীপে নিজেকে তুলে ধরবেন (অর্থাৎ একান্তে আপনি আল্লাহ তাআলার ইবাদত করবেন)। প্রতি ওয়াক্তের ফরজের সাথে সুন্নতে মুয়াক্কাদার প্রতি যত্নবান থাকবেন। অবশ্যই আখিরাতে এর মহা পুরস্কার রয়েছে।
[১] সূরা মুমিনুন : ১০৮
প্রিয় আমির..
নিশিশয্যা কিছুতেই যেন আপনাকে কাবু করতে না পারে। আর তাহাজ্জুদকে নিজের পাথেয় সংগ্রহের প্রধান উপকরণ হিসাবে গ্রহণ করবেন। রাতের নীরবতায় স্রষ্টার সাথে নিভৃতে কথা বলা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সিরাত।
তিনি দুই রাকাআত-দুই রাকাআত করে ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়তেন। সবশেষ বিতির নামাজ আদায় করতেন।
সম্ভব হলে প্রতি মাসে ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ নফল রোজার নিয়ত করবেন। এতে দুনিয়া ও আখিরাতে প্রভূত কল্যাণ রয়েছে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
ذلك صيام الدهر
এটা সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য (সাওয়াব পাওয়া যায়)।
সম্পদ আল্লাহ তাআলার দেওয়া অনেক বড়ো নিয়ামত; আপনার সম্পদে গরিব-দুঃখী-অসহায়দের হক রয়েছে। তাই সম্পদের ওপর বছর পূর্ণ হলে কাল-বিলম্ব না করে যথাসময়ে জাকাতের ফরজিয়্যাত আদায় করে ফেলবেন। আর কুরআনুল কারিমে জাকাত উপযুক্তদের কথা সুম্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে—
وإنما الصدقات للفقراء والمساكين والعاملين عليها والمؤلفة قلوبهم وفي الرقاب والغارمين وفي سبيل الله وابن السبيل فريضة من الله والله عليم حكيم –
[২] সহিহ বুখারি : ১৯৭৫
প্রকৃতপক্ষে সদকা (জাকাত) অভাবগ্রস্ত, জাকাত উসুলকারী, ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট (নওমুসলিম), দাসমুক্তি, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদের পথে) এবং মুসাফিরদের জন্য (যাদের পাথেয় হারিয়ে গেছে বা নিঃশেষ হয়েছে) এটা আল্লাহপ্রদত্ত বিধান। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। [0]
হজ আল্লাহ তাআলার একটি ফরজ বিধান। আপনার পবিত্র সম্পদ দ্বারা হজব্রত পালন করবেন। কেননা, আল্লাহ পবিত্র সম্পদ ব্যতীত কোনো কিছু কবুল করেন না।
ه فمن تعجل في يومين فلا إثم عليه ومن تأخر فلا إثم
عليه لمن اتقى
যে ব্যক্তি তাড়াতাড়ি করে (হজ সম্পাদন করে) দু’দিনেই চলে যাবে তারও কোনো গুনাহ নেই এবং যে ব্যক্তি (একদিন) পরে যাবে তারও কোনো গুনাহ নেই। (অর্থাৎ, এই ব্যাখ্যা) তার জন্য, যে তাকওয়া অবলম্বন করে।[৪]

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালোবাসা

আপনি আল্লাহর আনুগত্যের আদেশ করবেন। কাউকে ভালোবাসলে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালোবাসবেন। কারও প্রতি ঘৃণা রাখলে
[৩] সূরা তাওবা : ৬০
[৪] সূরা বাকারা : ২০৩
টিকা : হজ্জের সময় মিনার তিনদিন অবস্থান করা সুন্নত এবং এসময় জামরায় পাথর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। তবে ১২ তারিখের পর মিনা থেকে চলে আসা জায়েয। ১৩ তারিখ পর্যন্ত থাকা জরুরী নয়। কেউ থাকতে চাইলে ১৩ তারিখ পাথর নিক্ষেপ করে চলে আসতে পারে।
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ঘৃণা রাখবেন। আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন—
‘তোমরা সৎকাজে আদেশ করো এবং মন্দ কাজে নিষেধ করো। কেননা, তোমাদের পূর্বে খোদাভক্ত ও কত শিক্ষিত লোক অসৎ কাজে নিষেধ না করার দরুন ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই তোমাদের ওপর তাদের মতো আজাব আসার পূর্বে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করো।’ [] [[a]
সব সময় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন। আপনাকে অধীনদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। তাই তাদের প্রতি সদাচরণ করবেন। একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজান্তে বললেন—
আসমান চড় চড় শব্দ করছে। বস্তুত আসমানে এমন চার আঙুল পরিমাণ জায়গা ফাঁকা নেই, যেখানে কোনো ফেরেশতা সেজদাবস্থায় নেই। [*]
নিখাদ ভালোবাসা
অধীন ব্যক্তিবর্গ এবং কর্মচারীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করবেন এবং তাদেরকে আদব-কায়দা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য। ফজল ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
لا ترفع العصا عن أهلك، وأجلهم في الله عز وجل
[৫] হিলয়াতুল আউলিয়া : ৩/১১৮ [৬] জামে তিরমিজি : ২৩১২ (হাদিসের মান-গরিব)
আরো পড়তে অথবা দেখতে :- অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন। 

অনুরোধঃ– বই :  খলিফা হারুনুর রশিদের উদ্দেশ্যে প্রেরিত চিঠি এর প্রি অর্ডার চলছে … তাই খলিফা হারুনুর রশিদের উদ্দেশ্যে প্রেরিত চিঠি – লেখক : ইমাম মালিক ইবনে আনাস র. বইটি PDF Free Download চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না।
We Respect Every Author Hardwork – boipaw.com™
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?