সারাজীবন ফুল ভালবাসা আমার বিয়ে হতে হল একজন মৃত পশু-পাখি প্রেমিকের সাথে। তার ভালবাসার নিদর্শন জুড়ে ছিল তাদের পুরনো ধাঁচে গড়া বাংলো বাড়ির গোটাটা।
জয়দেবপুরে তার বাংলোটা। আমার শাশুড়ি না থাকায় আমাকে সাদর সম্ভাষণ জানাবার কেউ ছিল না। তবে আমার ভুলোমনা স্বামী কম আয়োজন করেননি। বিয়ের সপ্তাহখানেক পর গেলাম সেখানে। বাড়িতে পা দিতেই নাকে এল কড়া ফরমালিনের সাথে বোঁটকা গন্ধ। আমার ঢোকার রাস্তা আগলে রাখা সুন্দর কারুকাজ করা
কাঠের দরজার দুপাশে দুটো স্টাফড বুনো বিড়াল ঠায় দাঁড় করিয়ে রাখা ছিল। আমি প্রথমটায় বুঝতেই পারিনি ওগুলো স্টাফড। চোখগুলো জ্বলছিল তাদের জীবন্ত প্রাণির মতোই। আমার শরীরের সব লোম দাঁড়িয়ে গেল মুহূর্তেই। আমার মা বলতেন ঘরে পা দিয়েই নাকি বোঝা যায় সে ঘরটা কেমন। আমি আগে শুনে হেসেই উড়িয়ে দিতাম। আজ হঠাৎ মনে হল আমার চেনা জগতের দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এই ঘরে পা দেবার মুহূর্ত থেকে। পৃথিবীর সবচেয়ে নিষ্প্রাণ বাতাস আমার চুল ছুঁয়ে গেল। আমি সব কেবল মনের ভুল ধরে নিয়ে প্রবেশ করলাম বিলাসবহুল প্রাসাদসম বাড়িটায়।
” আমার ছোট্ট দুই সাগরেদ। তোমাকে তো প্রপোজ করিনি কোনদিন। কারণ উপযুক্ত সাক্ষী ছিল না। আজ ওদের সাক্ষী রেখে বলছি তোমায় ভালবাসি। ভালবাসি আমার বেডরুমে ঝোলানো চিত্রা হরিণের ধড়টার চেয়েও, ” হাঁটু গেড়ে নিচে বসল ফয়সাল-আমার বিয়ে করা স্বামী। আমার গা গুলিয়ে উঠল। সেটা বেডরুমে হরিণের মাথা আছে শুনে নাকি ফয়সালের হাতে থাকা মৃত জিরাফের চামড়ায় বানানো সাত ডিজিট মূল্যের লেদারের ঘড়িটা থেকে আসা কাল্পনিক দুর্গন্ধের জন্যে-তা বুঝলাম না। স্টাফড বেড়ালগুলোর চোখে যেন স্পষ্ট বিরক্তি দেখলাম-জ্ঞান হারাবার আগে এইটুকুই ভাল মনে আছে।
(বেহুলার সাপ- হরর থ্রিলার জনরার এ গল্পটি চলন্তিকা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত রহস্যলীনা-২ সংকলনে ছিল… এবার এসেছে ইবুক সংকলন #কোন_এক_ইন্দ্রাণী তে)