দু হাজার উনিশ। রামাদানের শেষ দশক। গভীর রাতে আচমকা এক স্বপ্ন দেখলাম। আম্মাকে নিয়ে মদিনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে লাগানো খেজুর বাগানে খেজুর গাছের কাঁটা পরিষ্কার করছি। খেজুর গাছের গোড়ায় জমজমের পানি দিচ্ছি। নিজেও জমজম পান করছি।
স্বপ্ন দেখে ভেতরে প্রচণ্ড অস্থিরতা কাজ করল। এমন আশ্চর্য স্বপ্ন আমি আর কখনো দেখিনি। সকালেই চলে গেলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সহ সারাদেশের সর্বোচ্চ দ্বীনি শিক্ষাপীঠ, জামিয়া ইউনুছিয়ার সম্মানিত নাজিমে তালিমাত, আমার মুরুব্বী, শায়েখ আল্লামা সামসুল হক সরাইলী হুজুর দামাত বারকাতুহুমের কাছে।
স্বপ্নের সবটুকু হজরতকে শোনালাম। বর্ণনার পর হুজুর আমার কপালে চুম্বন করলেন। বললেন, আল্লাহ কবুল করুক। তোমার দ্বারা আল্লাহ তাআলা দ্বীনের খেদমত নিতে পারেন। তোমার দেখা খেজুর গাছের কাঁটা হলো ‘বাতিল ফিরকাহ’—যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দ্বীনকে নষ্ট করে দিচ্ছে। এগুলো তোমার দ্বারা কাটবেন, পরিষ্কার করবেন। আর গাছের গোড়ার পানি হলো ‘ঈমান’। তোমার দ্বারা আল্লাহ এ খেদমত নেবেন হয়তো। দুআ করি বাবা।
স্বপ্নটির ব্যাখা শোনার পর অঝোরে কাঁদছিলাম। কারণ, আমি তো জানি আমি কে। কত বড়ো গোনাহগার আর নিকৃষ্ট—সেটা তো কেবলই আমার জানা। আমার দ্বারা দ্বীনের কী এমন খেদমত হতে পারে?
গভির রাত, তাহাজ্জুদের মুসল্লায়, ইতেকাফের সময়। ভেতরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হলো, কেন জানি মনে হলো, মানুষ আল্লাহকে ভুলে যাচ্ছে। পথ হারাচ্ছে পথিক। আল্লাহকে বললাম মনের যত কথা। মনে হলো, কেউ যেন কানে কানে বলল, ‘কিছু লিখো’। কলম ধরলাম। উম্মাহর প্রতি প্রচণ্ড দরদ আর ব্যথা নিয়ে। শুরু করলাম প্রথম কলাম। কে তিনি?
যখন লিখতাম মনে হত আমার চোখের সামনে গোটা আসমার-জমিন, গ্রহ-নক্ষত্র, চন্দ্র-সূর্য চলাফেরা করছে। আর আমি এসব দেখে দেখে লিখছি। যতগুলো লেখা লিখেছি, প্রতি পৃষ্টা লেখার আগে সালাতুল হাজত পড়ে আল্লাহর কাছে আকুতি মিনতি করেছি। আল্লাহ, আমি প্রচণ্ড দুর্বল—আপনাকে ছাড়া। আমার তো কিছুই নেই, কেবলই আপনি ছাড়া। আমার থেকে এমন কিছু বের করুন, যা আপনার বান্দাদের ভেতর তীরের মতো বিদ্ধ হবে। ইখলাস দিন মাবুদ। লেখাগুলো লেখার সময় নিজেই কান্নায় হাঁপিয়ে উঠতাম। অনেক সময় হাত চলত না। ব্যথা আর চোখের পানির কারণে চোখ ঝাপসা হয়ে যেত। বন্ধ করে দিতাম কলম।
স্রেফ বান্দা তার মালিককে চিনে যাক। স্রেফ একটা মানুষ তার মালিকের সাথে সম্পর্ক গড়ে নিক। সে আশা আর দরদ নিয়েই লেখা ‘কে তিনি’ বইটি।
—মুহাম্মাদ বিনইয়ামিন
৪-৬-২০২২ খ্রি.