মারজুক রাসেল। খুব প্রতিভাবান মানুষ। যারা চেনেন, তাদের অধিকাংশই তাকে চিনেন অভিনেতা হিসেবে। এর বাইরেও তার অনেক ধ্বংসশীল পদচারণা আছে। তাকে নিয়ে লেখার ইচ্ছে ছিলো না। ইদানিং তার নাটকে পরিধান করা কিছু টি-শার্টের পিকচার নজরে আসায়, কয়েক লাইন তার পেছনে খরচ করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
মারজুক দারুণ ধ্বংসশীল মানুষ(সৃজনশীল বলবো না)। একাধারে সে কবি , গীতিকার, অভিনেতা, পরিচালক, বাম রাজনীতির সাথেও টুকটাক যোগাযোগ ছিলো বা আছে। ধর্মে সে আগে মুসলিম ছিলো(জন্মসূত্রে) পরবর্তীতে ইসলামধর্ম ত্যাগ করে এখন নিজেকে ধর্মনাই পরিচয় দেয়। তাকে অভিনয় জগতে আনে পরিচালক মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী।( ফারুকী’র পরিচয় সম্পর্কে আমি ইতোপূর্বে পোস্ট করেছি)। ফারুকী আবার তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ‘লেটনের ফ্ল্যাটের’ ছবি খ্যাত ব্যাচেলর মুভির মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র জগতে আসা। এরপর ফারুকী’র সাথে বিভিন্ন ছবিতে সহযোগী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। আর ফারুকী’র সাথে চেষ্টা চালিয়ে যান সমাজের নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ধ্বংসে।
কবি হিসেবে সে ‘চটি'(অশ্লীল) কবি হিসেবে সমাধিক পরিচিত। এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার সংকলিত কবিতার বই ‘দেহবণ্টনবিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর’। বইটি প্রকাশের পর কবিতা ও তার বইকে ঘিরে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ব্যাপক সমালোচিত হয় মারজুক। এমনকি সে তার ফেসবুক বায়োতে নিজেকে পরিচয় দিয়েছে ‘চটিয়াল’ হিসেবে! তার অশ্লীল কবিতা উল্লেখ করে তার সুকুমারবৃত্তি দেখানোর প্রয়োজন বোধ করলাম না।
গীতিকার হিসেবে তো তার জুরি মেলা ভার। বাদ্যের কদর্যতা, শব্দদূষণ, শিক্ষাহীন উদ্ভট মাতলামিতে মাতিয়ে রাখা মিরাভাই খ্যাত জেমসের মিরা ভাই( ঝাকানাকা দেহ দোলা না! ) গানের রচয়িতা এই মারজুক। এছাড়া অবৈধ প্রেমে মাতিয়ে রেখে যে গানগুলো এদেশের তরুণদের বিপথগামী করতে ভূমিকা রেখেছে তার অনেক গুলোর স্রষ্টাই এই মারজুক রাসেল।
আসিফের গাওয়া ‘তুমি হারিয়ে যাওয়ার সময় সঙ্গে নিও’ ; আইয়ুব বাচ্চু’র ‘ললনা’; সহ জেমস, আসিফ, আইয়ুব বাচ্চু, হাসান মাসুদ প্রমুখের প্রচুর নৈতিকতা বিরোধী গানের রচয়িতা সে। এছাড়া ফারুকী’র সমাজবিধ্বংসী চলচ্চিত্রগুলোর প্রধান গানগুলোও এই মারজুকের লেখা , যেমন: পরিকিয়া প্রোমোট করা চলচ্চিত্র ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ মুভির পরকিয়ার পক্ষে সবচেয়ে আবেগ জাগানো গান
‘ভেতর বলে বাইরে থেকো,
বাহির বলে আসুক না’
বাহির বলে বাইরে থেকো
ভেতর বলে আসুক না ;
টেলিভিশন ছবির ‘কানামাছি’ গানও তার লেখা।
তার গালিগালাজ, নোংরা কথাবার্তা, কবিতা নিয়ে অতীতে বহুবার বিতর্কিত হলেও ইদানিং তার নতুন একটি কাজ মানুষকে নতুন করে বিব্রত করছে। বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ হলেও সে ধারাবাহিক নাটকে পরিধান করা টি-শার্টে খোল্লামখোলা পর্নোগ্রাফি প্রমোট করছে, সেক্স পজিশনের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে ( এর জন্য তাকে কেই স্পনসর্ড করে নাকি ফ্রী অশ্লীলতা ছাড়ায় জানা নেই) এরকম নির্লজ্জ অশ্লীলবাক্যগুলোকে সে সমাজের মেইনস্ট্রিম বানাতে চাচ্ছে। যে নূন্যতম ‘লজ্জা’টুকু তরুণ প্রজন্মের অবশিষ্ট আছে সেটাও তুলে দিতে চাচ্ছে, সমাজকে পরিণত করেছে একটি কামুক সমাজে। আর অশ্লীলতা যতই বাড়বে ধর্ষণ, ব্যাভিচার, পরকিয়া, সংসার ভাঙন, দাম্পত্য কলহ, যৌন হয়রানি, মাদকাসক্ততা প্রভৃতি হু হু করে বাড়তে থাকবে খুব স্বাভাবিক। আরো অবাক কড়া বিষয় হলো সে একটি পেজ খুলেছে, ‘মারজুক রাসেলের টি-শার্ট- গোল্লা’ নামে। প্রায় তার প্রতি পোস্টেই সে এই পেজের লিংক শেয়ার দিচ্ছে। (এ নিয়ে তার ভিশন কী তাও খতিয়ে দেখা দরকার)। টি শার্টের তিনটি ছবি পোস্টের ক্যাপশন ফটোতে দিয়েছি , যারা এর অর্থ বোঝেন না তারা , মন থেকে আলহামদুলিল্লাহ বলুন, আর অর্থ জানার চেষ্টা না করলেও খুশি হবো।
ব্যক্তি মারজুক রাসেল নিয়ে আমাদের তেমন কোন মাথাব্যথা নেই। সে ব্যক্তিগত লাইফে ঘরে বসে পরিত্যক্ত গাঁজা খেলো না নীল ছবির জগতে বুঁদ হয়ে রইলো তা জেনেও আমাদের লাভক্ষতি নেই। তাই যৌবনের শুরুতে মারজুকের নারীজনিত কারণে তার বাবার তৃতীয়শ্রেণীর চাকরি চলে যাওয়া বা ঢাকার আসার পর কিভাবে লাইভলিড করেছে সেগুলোও আমরা আলোচনায় আনার প্রয়োজন বোধ করিনি। কিন্তু তার রুচিভ্রষ্টতা ও অনৈতিকা যখন সে নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সমাজে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা প্রসার ঘটাতে প্রয়াস চালাচ্ছে তখন নীতিবান মানুষেরা আগামী প্রজন্মকে রক্ষার জন্য অশ্লীলতার প্লাবনকে রুখে দিতে চেষ্টা করবে খুব স্বাভাবিক। মারজুক ও তার কিছু সহচর পচে যেতে পারে দেশের প্রতিটি মানুষ পচে যায়নি এটা মারজুক ভক্তদের মনে রাখা উচিত। কিছু নোংরা মিডিয়া তাকে প্রোমোট দিয়েছে আর তুমিও চোখবুঁজে তার ভক্ত হয়ে গেছো! ঠান্ডা মাথায় একবার নিজেকে প্রশ্ন করতো, মারজুক থেকে বিনোদনের আড়ালে জাতি নোংরামি ছাড়া আর কী পেয়েছে ?
– লেখেছেন @Monir Ahmed Monir
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?