‘কেন বই ভালোবাসি’ বলার আগে ভাবা উচিত—বই কেন ভালোবাসব না? যখন অন্যরা মুভি, গান, ফেসবুকিং বা অযথা হাসিঠাট্টা করে সময় পার করে, তখন আমি বইয়ের পাতায় ডুব দিই। ঘুরে আসি অতীতের ফেলে আসা দিনগুলোতে। কখনো আড্ডা জমে উঠে বরেণ্য কোনো ব্যক্তির সাথে, কখনো বসে যাই কোনো দাঈ’র মজলিসে, কখনো-বা দুনিয়াবিমুখ কোনো শায়খের দরসে। বইয়ের পাতায় ডুব দিয়ে ঘুরে আসি পৃথিবীর উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু অবধি।
প্রচণ্ড মন খারাপের সময় বই আমাকে খুব ভালো সঙ্গ দেয়৷ এসব সামান্য দুনিয়াবি ব্যাপারে মন খারাপ করতে বারণ করে। বলে—পৃথিবীটা পরীক্ষাকেন্দ্র, জীবনের ছোট ছোট সমস্যা রবের সুনির্দিষ্ট সেই পরীক্ষার অংশ। এই পরীক্ষায় সফল হতে পারলে আমাদের জন্য রয়েছে এক মহাপুরস্কার। বই পড়ে আমরা সেসব ব্যাপার জানতে পারি। বই কখনো কখনো আমাদের বিনোদনের মাধ্যমও হয়; কোনো কোনো পাঠ আমাদের আনন্দ দেয়, পড়তে পড়তে আনমনেই খিলখিল করে উঠি। আর মন ভালো থাকলে তো কথাই নেই, বই-ই আমাদের সঙ্গী হয়।
Elizabeth Barrett Browning বলেছেন, ❝No man can be called friendless who has God and the companionship of good books.❞
কথাটা আসলেও সত্য। আমার জন্য তো একদম।
.
বই পড়ার উপকারিতা William Styron তুলে ধরেছেন দুই বাক্যে। তিনি বলেছেন, ❝A great book should leave you with many experiences, and slightly exhausted at the end. You live several lives while reading.❞
এটাই একমাত্র উপকারিতা না। আরও উপকার আছে। বই পড়ে নতুন নতুন অনেককিছু তো জানা যায়ই, সবচেয়ে বড় যে সুবিধা; সেটা হচ্ছে—আড্ডা দেওয়া, অর্থাৎ না চাইলেও কথাতে ভুল হওয়া, কখনো মুখ ফসকে এমন কথা বলে ফেলা; যা ওই মানুষটার খারাপ লাগতে পারে। তা ছাড়া অন্যদের নিয়ে কথা বললে গিবত তো হয়েই যায়। বই পড়ার মাধ্যমে নিজের জীবন নিয়ে নতুন করে ভাবনার খোরাক পাওয়া যায়, মনে প্রশ্নরা উঁকি দেয়—এই যে কাজগুলো করছি, এগুলো কি ঠিক! এসবের জন্য আবার রবের সামনে জবাবদিহি করতে হবে না তো!
.
বই না পড়ার ক্ষতি অনেক। একটা দিন বই ছাড়া কাটিয়ে দেওয়া মানে, একটা দিন আত্মাকে অভুক্ত রাখা, ব্রেনকে তথ্যহীন করে রাখা এবং অবশ্যই অকাজে সময়ব্যয় করা; যদি-না আসলেই কোনো ব্যস্ততা থাকে। যারা বইপ্রেমী, সব সময় বই পড়ে, তারা বই পড়তে না পারলে সে দিনটাই তাদের কাছে নিরর্থক মনে হয়৷
বই পড়ার আরেকটা সুবিধা হচ্ছে, বইপড়ুয়াদের সবাই একটু ভিন্ন নজরে দেখে। বিভিন্ন কিছু জানতে চায়, তো বইপাঠের মাধ্যমে যদি কাউকে কিছু জানানো যায়, তা হলে তো ব্যাপারটা খুবই ভালো। কাউকে সদুপদেশ দেওয়া গেলে সেটা অবশ্যই ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত হবে।
বই না পড়লে আপাতদৃষ্টিতে তেমন কোনো ক্ষতি নেই; কিন্তু যেখানে স্বয়ং আল্লাহ বলেছেন ‘ইক্বরা’ অর্থাৎ ‘পড়ো’। সে জায়গায় আমি কেন পড়ার মতো যোগ্যতা আর সময় থাকতেও নিজেকে তা থেকে দূরে রাখব? নিশ্চয় আল্লাহর এই ইক্বরা বলার পেছনে কোনো-না-কোনো কারণ রয়েছে। তা ছাড়া কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ বলেছেন—‘যারা জানে, আর যারা জানে না; তারা কি সমান’! আল্লাহকে ভালো করে চিনতে হলে, জানতে হলে, তাঁর ইবাদত করতে হলেও বই পড়ার বিকল্প নেই। কারণ বইপাঠের মাধ্যমেই আমরা জানতে পারি। স্কুল-কলেজ বা মাদরাসার একাডেমিক-পাঠ সাধারণত আমাদের সার্টিফিকেট দেয়, রিজিকের একটা ব্যবস্থার জন্য দরকার হয় এই শিক্ষার; কিন্তু শুধু সার্টিফিকেট অর্জনই প্রকৃত শিক্ষা নয়। সিলেবাসের নির্ধারিত বইগুলো আমাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে পারে না। এটা উপলব্ধি করার পর থেকেই বই পড়ার ঝোঁক আরও বেড়েছে।
.
মাঝেমধ্যে বই পড়ার সময় না পেলে হতাশ হয়ে আল্লাহর কাছে দুআ করতে থাকি—আল্লাহ ভালো ভালো অবশ্যপাঠ্য বইগুলো পড়ে শেষ না করা পর্যন্ত আমার মৃত্যু দিয়ো না। কী অদ্ভুত দুআ না!
তবে আমি এখানে যা বলেছি, সবাই ভাবতে পারে ইসলামি বই সম্পর্কে বলেছি। না, শুধু ইসলামি বই নিয়ে বলিনি; যেসব বই পড়ে কিছু শেখা হবে না, অর্থাৎ অনৈতিক-অশালীন বিনোদন-কথায় ভরপুর; সেসব বই না পড়াই ভালো; নয়তো সময়টা বই পড়ে কাটালেও নষ্ট হবে। তাই বই পড়ুন, ভালো বইয়ের আলোয় নিজের জীবন গড়ুন।
কেন বই ভালোবাসি?
– সিরাজাম বিনতে কামাল
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?