কুনালের চোখ : রোকেয়া আশা | Kunaler Chokh : Rokea Asha – পাঠক অনুভূতি !

কাহিনি সংক্ষেপ: ২৬২ খ্রিস্টপূর্বের এক বিকেলে মগধের রাজধানী পাটালিপুত্রে আগমন ঘটে আচার্য ধীমানের। স্বয়ং সম্রাট অশোক তাকে হিমালয় থেকে নিয়ে এসেছেন জ্ঞান চর্চার উদ্দেশ্যে। আচার্য এসেই দেখেন সম্রাট অশোকের এক পুত্র হয়েছে যার আশ্চর্য সুন্দর নীল দু চোখ। তিনি সেই পুত্রের নাম দেন কুনাল। তাকে শিক্ষাদীক্ষা জ্ঞানে সহচার্য দিয়ে বড়ো করে তুলতে থাকেন। যা বাইরে থেকে দেখলে একজন শিক্ষাগুরু বা পিতার মতোই মনে হবে। কিন্তু এ সবকিছুর পিছনেই ছিল গোপন এক উদ্দেশ্য। শেষমেশ সে উদ্দেশ্য পূরণ না হওয়াতে প্রাসাদ ত্যাগ করেন আচার্য ধীমান। আর আসার পথেই দেখা মেলে মহাবালাচলে এক অসুর গোত্রের সাথে। যেখানে তিনি এক নবজাতকের প্রাণ বাঁচান। আশ্চর্যভাবে এই নবজাতকটিও যখন চোখ মেলেন তখন তিনি সেখানেই থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। কেননা এর চোখও সেই আশ্চর্য নীল। তিনি এই বাচ্চাটারও নাম দেন কুনাল। অসুর পুত্রকেও বড়ো করতে থাকেন ঠিক একইভাবে। সেই উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য। কী সেই উদ্দেশ্য? 
পাটালিপুত্র থেকে মহাবালাচালের অসুর সম্প্রদায়, আর্য আর অসুরীয় গোত্রের চিরাচরিত দ্বন্দ, অসুরজাতিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য মহিষাসুরের আকাঙ্ক্ষা, ভালোবাসার জন্য চামুণ্ডেশ্বরীর দুঃসাহসিক কার্যকলাপ আর এর মাঝে কুনালের চোখকে ঘিরে ধীমানের উদ্দেশ্য হাসিলের প্রয়াস এই নিয়েই গড়ে উঠেছে এই বইয়ের কাহিনি।
পাঠ প্রতিক্রিয়া: ইতিহাসের সবথেকে সুন্দর চোখের অধীকারী ছিলেন কুনাল। সেই কুনালের চোখকে আবর্তিত করে ইতিহাস আর মিথলজির সংমিশ্রণে সুন্দর একটা গল্প দাঁড় করিয়েছেন রোকেয়া আশা। লেখিকার লেখার ধরণ বেশ ভালো লেগেছে। শব্দ চয়ন, বাক্য গঠন এগুলোতে বেশ মুগ্ধ হয়েছি। এই ধরনের উপন্যাসে এভাবে সহজ-সাবলীল বাক্য গঠন দেখা যায় না বললেই চলে। সাধারণত ইতিহাস নির্ভর কিছু পড়তে গেলে একঘেয়েমিতে পেয়ে বসে এখানে সে সম্ভাবনাটা নেই।
তবে এ বই কুনালের চোখের যে আশা নিয়ে আমি শুরু করেছিলাম সেখানে কিছুটা আশাহত হয়েছি, বইটিতে কুনালের অবদান খুব কমই বলা চলে। দুইটা কুনালের চরিত্রই শুরু থেকে যেভাবে বিল্ড আপ করা হয়েছে শেষটা সেভাবে হয়নি। আমার কাছে মনে হয়েছে কুনালের চরিত্রটাকে আরেকটু বিস্তৃত করলে ভালো হতো। লেখিকা এখানে কুনালের পরিবর্তে চামুণ্ডেশ্বরী চরিত্রটাকে বেশ গাঁথিয়ে দিতে পেরেছেন পাঠকের মনে। অন্যদিকে আচার্য ধীমানের চরিত্রটাও বেশ কনফিউজিং লেগেছে। সেই শুরু থেকে মেইন একটা রোল প্লে করে আসছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর চরিত্রের পরিণতিটাও যেন কিছুটা অন্যরকমভাবেই হলো। বইটাতে এই দুইটা মেইন চরিত্রকে আরেকটু গুছিয়ে আনলে এ আক্ষেপটুকু থাকতো না।
এছাড়া বইয়ে কিছু বানান ভুল, উদ্ধৃতি চিহ্নের উল্টো ব্যবহার, বিসর্গের ভুল ব্যবহার চোখে পড়েছে।
লর্ড জুলিয়ানের করা বইয়ের প্রচ্ছদটি খুব ভালো লেগেছে আমার কাছে। আর নহলীর বইয়ের প্রোডাকশন বরাবরই ভালো, এটাও তার ব্যতিক্রম নয়। চাইলে বইটি পড়ে দেখতে পারেন আপনারাও।
পরিশেষে এটুকু বলা যায় যে, রোকেয়া আশা প্রথম বই হিসেবে দারুণ একটা শুরু করেছেন। লেখিকা তার এই ধরণ ধরে রাখলে সহজেই পাঠকের মনে জায়গা করে নিতে পারবেন। শুভকামনা রইলো লেখিকার জন্য।
বই: কুনালের চোখ
লেখক: রোকেয়া আশা
প্রকাশনী: নহলী
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৬০
মুদ্রিত মূল্য: ৩১০ টাকা

কুনালের চোখ বইটি সম্পর্কে আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন

বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?