কা-ফিরকে কা-ফির মনে না করলে কি ঈমান থাকে?

কা-ফিরকে কা-ফির মনে না করলে কি ঈমান থাকে? 

ইসলাম ভঙ্গকারী অনেকগুলো বিষয় রয়েছে। ইসলামি আইনবিদগণ ফিকহের গ্রন্থগুলোতে এর জন্য একটি বিশেষ অধ্যায় রচনা করেছেন যার নাম তারা দিয়েছেন ‘বাব আর-রিদ্দাহ’ বা ধর্ম/ত্যাগ সংক্রান্ত অধ্যায়। এসব অধ্যায়ে উল্লিখিত ইসলাম ভঙ্গকারী বিষয়গুলোর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হল দশটি বিষয়, যা শাইখুল-ইসলাম মুহাম্মাদ ইব্ন আবদুল-ওয়াহ/হাব রহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেছেন:
১. আল্লাহর ইবাদাতের ক্ষেত্রে শির/ক করা, কেননা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,
إِنَّ اللَّـهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শির/ক করাকে ক্ষমা করেন না এবং এছাড়া যাকে ইচ্ছা তিনি যেকোনো পাপ ক্ষমা করে দেন।“ [আন-নিসা’ ৪:৪৮]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আরও বলেন,
إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللَّـهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّـهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ ۖ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
“নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর সাথে শরিক করে আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতকে হা-রাম করে দিয়েছেন। তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম, আর জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।” [আল-মাইদাহ, ৫:৭২]
এ ধরনের শির/কি কর্মকাণ্ডের মধ্যে আরও রয়েছে আল্লাহকে বাদ দিয়ে মাজার, জিন বা অন্য কোনো কিছুর উদ্দেশ্যে পশু জবাই করা।
২. যে ব্যক্তি তার নিজের ও আল্লাহর মাঝখানে কাউকে মাধ্যম বা উসিলা হিসেবে গ্রহণ করে, তাদের কাছে দুআ করে, শাফাআত চায় এবং তাদের উপর নির্ভর করে, সর্বসম্মতিক্রমে সে কা-ফির হয়ে যাবে।
৩. যে ব্যক্তি মুশ/রিকদেরকে কা-ফির সাব্যস্ত করে না এবং তাদের কা-ফির হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে অথবা তাদের ধর্ম ও জীবনব্যবস্থাকে অনুসরণযোগ্য মনে করে সেও কা-ফির হয়ে যাবে।
৪. যে ব্যক্তি নাবি সা. এর আনীত বিধি-বিধানের চেয়ে অন্য কোনো বিধি-বিধানকে অধিক উপযুক্ত বা উত্তম মনে করবে সেও কা-ফির হয়ে যাবে। যেমন, ইসলামি বিধি-বিধানের উপর তা/গুতের প্রণীত বিধানকে প্রাধান্য দানকারী লোকেরা। একইভাবে ইসলামের কোনো কিছুর প্রতি যদি কেউ সামান্যতম ঘৃ-ণা পোষণ করে তবে সেও নিঃসন্দেহে কা-ফির হয়ে যাবে, এমনকি সে যদি নিজে তা পালন করে তবুও।
৬. ইসলাম ধর্মে ঘোষিত কোনো সওয়াবের কাজ বা কোনো শা-স্তির বিধান নিয়ে যদি কেউ উপহাস করে তবে সেও কা-ফির হয়ে যাবে। এর দলিল হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বাণী,
قُلْ أَبِاللَّـهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ ﴿٦٥﴾ لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ
“তুমি বলো, তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াতগুলো ও তাঁর রসূলের প্রতি উপহাস করছ? তোমরা কোনো ওজর পেশ করো না। তোমরা তোমাদের ঈমানের পরে কুফ/রী করেছ।” [আত-তাওবা, ৯:৬৫-৬৬]
৭. কাউকে কোনো কিছু থেকে ফিরিয়ে রাখা কিংবা কোনো কিছুর প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য জাদু করা। সম্ভবত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা বাড়ানো কিংবা বিচ্ছেদ সৃষ্টির জন্য যে জাদু করা হয় এটা তা-ই। যে ব্যক্তি তা করবে কিংবা তার প্রতি সম্মতি রাখবে সে-ও কু/ফরি করল। এর প্রমাণ হল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বাণী,
وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ ۖ
“আর এ দুই ফেরেশতা কাউকে জাদু শিক্ষা দিত না এ কথা না বলা পর্যন্ত যে, নিশ্চয়ই আমরা ফিতনা। সুতরাং তোমরা কু/ফরী করো না।” [আল-বাকারাহ্, ২:১০২]
৮. কা-ফির-মুশ/রিকদের পক্ষপাতিত্ব করা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করা। এর প্রমাণ হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বাণী,
وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ۗ إِنَّ اللَّـهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
“তোমাদের মধ্য থেকে যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে তারা তাদেরই দলভুক্ত বলে বিবেচিত হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা-লঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়কে সঠিক পথের দিকনির্দেশনা দেন না।” [আল-মা’ইদাহ, ৫:৫১]
৯. যদি কেউ মনে করে, কিছু কিছু লোকের জন্য ইসলামি শারী/আহ থেকে বের হয়ে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে—যেমন মূসা আ.-এর শারী/আহ থেকে খিজর বের হয়ে গিয়েছিলেন—সে কা-ফির বলেই বিবেচিত হবে। একদল গোঁড়া ভণ্ড সূফি রয়েছে যারা বিশ্বাস করে যে, পূর্ণতার এমন এক স্তর রয়েছে যেখানে পৌঁছে গেলে শারী/আহ মানার বাধ্যবাধকতা থাকে না। 
১০. আল্লাহর দীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, কোনো গুরুত্ব না দেওয়া, দীন-এর শিক্ষা গ্রহণ না করা, কিংবা শিক্ষা থাকলেও সে অনুযায়ী আমল না করা। এর প্রমাণ হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বাণী,
وَالَّذِينَ كَفَرُوا عَمَّا أُنذِرُوا مُعْرِضُونَ
“কা-ফিরদেরকে যে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল তা থেকে তারা বিমুখ।” [আল-আহকাফ, ৪৬:৩]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আরও বলেন,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ ثُمَّ أَعْرَضَ عَنْهَا ۚ إِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِينَ مُنتَقِمُونَ
“তার চেয়ে যালিম কে আছে যাকে আল্লাহর আয়াত স্মরণ করিয়ে দিলে তা থেকে সে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পাপিষ্ঠদের থেকে অবশ্যই আমি প্রতিশোধ গ্রহণ করব।” [আস-সাজদাহ, ৩২:২২]
শাইখ মুহাম্মাদ ইব্ন আব্দুল-ওয়াহ/হাব বলেন, “তাওহীদ বিনষ্টকারী এ সব বিষয় খুবই স্পর্শকাতর; এসব কথা বা কাজ কারও থেকে প্রকাশ পেলে সে ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাবে; চাই তা ঠাট্টাচ্ছলেই হোক কিংবা বুঝে শুনে ইচ্ছাকৃতভাবে হোক। অবশ্য কাউকে বাধ্য করা হলে সেটা ভিন্ন কথা। সবচেয়ে ভয়ানক যে কাজগুলো মানুষের দ্বারা সচরাচর সংঘটিত হয়ে থাকে তা হচ্ছে এগুলো। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত সচেতনভাবে এ বিষয়গুলো থেকে সাবধান থাকা। আল্লাহর গযব অবধারিত হয়ে পড়ে এমন বিষয় এবং তাঁর যন্ত্রণাদায়ক শা-স্তি থেকে আমরা পানাহ চাই।”
[লেখাটি ড. সালিহ আল ফাওযান রচিত ‘আকি-দাহ আত-তাওহীদ’ গ্রন্থের অংশবিশেষ…]
সিয়ান | বিশুদ্ধ জ্ঞান | বিশ্বমান
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?