কাসাসুল হাদিস (২য় খণ্ড) লেখক : ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ)

কাসাসুল হাদিস (২য় খণ্ড) (pdf no available right now)
লেখক : ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ)
প্রকাশনী : মাকতাবাতুস সুন্নাহ (বাংলাবাজার)
বিষয় : হাদিস বিষয়ক আলোচনা

পৃষ্ঠা : 368, কভার : হার্ড কভার

Image


কাসাসুল হাদিস (২য় খণ্ড) রিভিউ
গল্প পড়তে সবারই ভালো লাগে। ভালো লাগাটা আরও বেড়ে যায়, যদি গল্পটি হয় প্রিয়নবী সা.-এর। আর সেটি যদি হয় অলৌকিক বিষয় নিয়ে, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। প্রিয়নবী সা.-এর মু‘জিযার গল্প পড়ার অপেক্ষা আর সহ্য হতে চায় না।
.
প্রিয় পাঠক! ইতিপূর্বে আমরা আপনাদের উপহার দিয়েছিলাম কাসাসুল হাদিস-০১। এবার কিন্তু আমরা আরও সুন্দর করে সাজিয়েছি কাসাসুল হাদিস-০২। এ উপহার আপনাদের জন্য। হ্যাঁ, আপনাদের জন্য আমরা উপহারটি সাজিয়েছি দলিল-প্রমাণ সমৃদ্ধ ঘটনা দ্বারা। বইটির প্রতিটি ঘটনাই রাসূল সা.এর মুজিযা।এবং প্রতিটি মুজিযাই হাদিস।ভালো লাগার আরেকটি বিষয় হলো, আমাদের এবারের আয়োজন সব বয়সী পাঠকের জন্য। শিশুরা যেমন পড়ে আনন্দ পাবে। আবার বড়রাও এটা পড়ে অনেক কিছু জানতে পারবে। অর্থাৎ শিশুতোষ ভাষায় চমৎকার তথ্য সমৃদ্ধ করেই আমাদের এবারের আয়োজন।

লেখক সামনে রেখেছেন ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি রহ.-এর কালজয়ী গ্রন্থ ‘মু‘জিযাতুর রাসূল’ এই বইটি। এরপর সুন্দর করে বিন্যস্ত করেছেন প্রিয়নবী সা.-এর মুজিযাকে। গল্পের আদলে উপস্থাপন করেছেন নবীজীবনে ঘটে যাওয়া অলৌকিক কাহিনীগুলোকে।
কাসাসুল হাদিস-০২ এর লেখক নিজে হাদীসের শিক্ষক। এ পর্যন্ত চারটি চারটি সীরাতগ্রন্থ সংকলন ও অনুবাদের কাজ করেছেন তিনি। সাহাবী সিরিজ লিখেছেন আট খণ্ড। এসব লিখনীর নির্যাস হলো কাসাসুল হাদিস-০২

চাঁদের সাথে খেলা

তখনও তিনি মুসলমান হননি। তারপরও…

তারপরও তিনি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসতেন। তাঁর কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করতেন। যে কোনো বিপদাপদে তিনি রাসূলের পাশে দাঁড়াতেন। অথচ তখনও তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি। মুসলমান হননি।

মহান আল্লাহ তাআলা তখনও রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মদীনা হিজরতের অনুমতি দেননি; তবে ইশারা ইঙ্গিত বিবেচনায় তিনি হিজরতের চিন্তা-ভাবনা করছেন। নবুওয়াতের ১০ম বর্ষের রজব মাস। এ সময় মদীনা থেকে মক্কায় এলো একটি প্রতিনিধিদল।

তাঁরা এসেছিলো হজ্জব্রত পালন করতে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম আকাবা নামক স্থানে তাঁদের সাথে মিলিত হলেন। তিনি তাঁদেরকে মহান আল্লাহ তাআলার সুমধুর বাণী পবিত্র কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত করে শোনালেন। এসব লোক একজন আরেকজনের (সাথে পরামর্শ করে) রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন

‘মনে হচ্ছে ইনিই সেই সর্বশেষ নবী। এমন যেন না হয় যে, ইহুদিরা আমাদেরকে হারিয়ে দেয়। এ কথার বলার সাথে সাথে তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হলেন। এঁরা ছিলেন ছয়জন।

পরের বছর মদীনা থেকে ১২জন লোক এসে মুসলমান হলেন। এসব নওমুসলিম লোকেরা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আবদার জানালেন যে, আমাদের সাথে এমন ব্যক্তিবর্গ প্রেরণ করুন, যাঁরা আমাদেরকে ইসলামের বাণী শেখাতে পারে এবং আমাদের শহরে গিয়ে ওয়ায নসীহত করে দীন প্রচার করতে পারে।

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কাজের জন্য বিশিষ্ট সাহাবী হযরত মুসআব ইবনে উমায়ের রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহুকে নির্বাচন করলেন। তিনি ছিলেন আবদে মানফের নাতী এবং

প্রবীণ মুসলমানদের মধ্যে অন্যতম।
হযরত মুসআব ইবনে উমায়ের রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু এসব লোকের সাথে মদীনায় আগমন করলেন। এখানে এসে তিনি মানুষের ঘরে গিয়ে গিয়ে ইসলামের সুমহান বাণী প্রচার করতে লাগলেন। তাঁর ওয়ায নসীহত শুনে মানুষ ইসলাম গ্রহণ করতে আরম্ভ করলো। আলহামদুলিল্লাহ! মাত্র একবছরের মধ্যেই প্রায় প্রতিটি ঘরে (দুয়েকজন করে লোক ) মুসলমান হয়ে গেল।
পরের বছর যখন হজ্জের সময় হলো তখন মদীনার ৭২ জন লোক রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ করতে এলেন এবং তাঁরা গোপনে বাই’আত গ্রহণ করলেন।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক চাচা ছিলেন আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব। তখনও তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি; কিন্তু রাসূলকে ভীষণ ভালোবাসতেন। কাজে-কর্মে সাধ্যমতো সহযোগিতা করতেন।
আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব এসব নওমুসলিমদের বললেন
‘হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বংশে অনেক মর্যাদার অধিকারী। শত্রুর মোকাবিলায় আমরা সবসময় তাঁর সাথে থাকি। এখন তিনি আপনাদের সাথে যেতে চাচ্ছেন। যদি আপনারা জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর সাথে থাকেন, তো ভালো। অন্যথায় এখনই পরিষ্কার ভাষায় সেটা বলে দিন।
মদীনার নেতা হযরত বারা ইবনে মা’রূর রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু তখন বললেন
‘আমরা তরবারীর ছায়াতলে লালিত পালিত হয়েছি। আপনার এবং ইসলামের হেফাজতের জন্য নিজেদের জীবনবাজি রেখে এমনভাবে লড়াই করে যাবো। যেভাবে আমরা নিজেদের আত্মরক্ষা, পরিবার পরিজনের সুরক্ষা ও মান সম্মান বাঁচানোর জন্য জীবনবাজি রেখে লড়াই করে থাকি।’
তিনি এ কথা বলার পরে অপর নেতা হযরত আবুল হায়সাম বিন তায়হান রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বললেন ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের ও ইহুদিদের মাঝে সম্পর্ক ছিলো। বাইআতের পরে সে সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে। এমন যেন না হয় যে,
ইসলামের যখন শক্তি-সামর্থ্য অর্জিত হবে তখন আপনি আমাদের ছেড়ে
তাদের কাছে চলে যাবেন।’
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুচকি হেসে বললেন ‘তোমাদের রক্তই আমার রক্ত। তোমরা আমার, আমিও তোমাদের।’
এই যে, আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব, যিনি ইসলাম গ্রহণ না করা সত্ত্বেও রাসূলকে ভালোবাসতেন এবং তাঁর কর্মকাণ্ডের সহযোগিতা করতেন। তিনি এটা কেন করতেন?
এর উত্তর আমাদের দিয়েছেন ইমাম বায়হাকী, সা’বুনী, খতীব ও ইবনে
আসাকির রহ.। তারা বর্ণনা করেন যে, হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল
মুত্তালিব রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বলেন
‘রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াতের একটি নিদর্শন আমাকে রাসূলকে ভালোবাসতে, তাঁকে সাহায্য সহযোগিতা করতে এবং ইসলাম গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছে।
‘তা হলো- রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিশু বয়সে দোলনায় বিশ্রামের সময় যখন হাত নেড়ে চাঁদের দিকে ইশারা করতেন, তখন যেদিকে তিনি আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেন আকাশের চাঁদ সেদিকে ঝুঁকে যেতো।
এ কথা শুনে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন ‘আমি তখন চাঁদের সাথে কথা বলতাম। চাঁদ আমাকে কাঁদতে বারণ করতো।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন ‘চাঁদ যখন আকাশের নিচে সিজদায় পতিত হতো তখন আমি তার পতনের শব্দ শুনতে পেতাম।’
লক্ষণীয় বিষয়ঃ
বর্ণনাকারীরা বলেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের মু’জিযাসমূহের মধ্যে এটাও একটি চমৎকার বর্ণনা। 
শিক্ষণীয় বিষয়ঃ
আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয়নবীর জন্য চাঁদকে অনুগত করে দিয়েছিলেন। মানুষ যদি আল্লাহ তাআলার হুকুম মেনে চলে, তাহলে তাকে মহান আল্লাহ তাআলা এভাবেই পুরস্কৃত করেন।

চাঁদ হলো দ্বিখণ্ডিত

পৃথিবীটা যখন আঁধারে নিমজ্জিত ছিলো তখন এ ধরাতে আগমন করেন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি মানুষকে সত্যের আহ্বান করতে থাকেন; কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো, আরবের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ ইসলামের এ সুমহান দাওয়াতকে কবুল করতে পারলো না।
শুধু তাই-ই নয়, তারা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দেয়া আরম্ভ করলো। তাঁকে যাদুকর, কবি এবং আরও অনেক মুখরোচক কথা বলে নির্যাতন করতে লাগলো। রাসূল হলেন দয়ার সাগর। তিনি তাদের সব কথা মুখ বুজে সহ্য করে যেতে লাগলেন। সাথে সাথে তাদের হিদায়াতের জন্য আপ্রাণ চেষ্টাও অব্যাহত রাখলেন।
এদিকে মক্কার কাফেররা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নির্যাতনের বিভিন্ন কৌশল উদ্ভাবন করতে লাগলো। কখনও গালমন্দ করে, কখনও পথে কাঁটা বিছিয়ে, কখনও নামায আদায়রত অবস্থায় মাথার উপর উটের নাড়ি-ভুঁড়ি চাপিয়ে দিয়ে যুলুম-নির্যাতনের ধারা জারি রাখলো।
একদিন কাফেরের দল বসেছিলো কাবা চত্তরে। সভায় উপস্থিত শীর্ষনেতা আবু জাহাল, ওলীদ ইবনে মুগীরা ও আস ইবনে ওয়ায়েল প্রমুখ। পবিত্র আঙ্গিনায় বসে ওরা অপবিত্র চিন্তা-ভাবনায় লিপ্ত। ওদের একটাই ভাবনা কীভাবে ইসলামের আলোকে নিভিয়ে দেয়া যায়? কী করে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নির্যাতন করা যায়?
পদ্ধতিটা হয়তো আবু জাহাল-ই উদ্ভাবন করলো। সে সবার মাথায় এ ধারণা ঢুকিয়ে দিল যে, এখন থেকে আমরা মুহাম্মাদকে (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মারাত্মক কঠিন কিছু বিষয়ে প্রশ্ন করবো। সে এগুলোর উত্তর দিতে পারবে না। আর যায় কোথায়
ধরাশায়ী হবে সবার সামনে। ঘটনাটি ঘটেছিলো হিজরতের আগে, পবিত্র মক্কা শরীফে। অর্থাৎ পূর্ব সিদ্ধান্ত মোতাবেক আবু জাহাল, ওলীদ ইবনে মুগীরা ও আস ইবনে ওয়ায়েল প্রমুখ কাফের চলে গেল রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে। তারা আবদার জানালো
‘হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! যদি আপনি সত্যনবী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করে দেখান। যার একখণ্ড থাকবে আবু কুবাইস পাহাড়ের উপর। অপর খণ্ড থাকবে কুয়াইকানের উপর।’
ওদের এ কথা বলছিলো আর মনে মনে হাসছিলো। কারণ, ওদের মিথ্যাবাদী অন্তর সায় দিচ্ছিলো যে, এ আবদার তিনি কখনই রক্ষা করতে পারবেন না।
আসলে ওরা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামকে চিনতো না। তাঁর আসল পরিচয় সম্পর্কে জানতো না। তিনি ওদের ধারণা ভুল প্রমাণিত করলেন। ওদের অবাক করে দিয়ে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করলেন
‘আমি যদি এমনটি করে দেখাতে পারি, তাহলে কি তোমরা ঈমান আনবে?’ কাফেরের দল হ্যাসূচক জবাব দিল।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার দরবারে দুআ করলেন, ‘যেন চাঁদ দুটুকরা হয়ে যায়।’
আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয়নবীর দুআ কবুল করলেন। যথাসময়ে তিনি চাঁদের দিকে ইশারা করতেই তা দুটুকরা হয়ে গেল। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের আঙ্গুলের ইশারা পাওয়ার সাথে সাথেই একটুকরা গিয়ে পড়লো আবু কুবাইস পাহাড়ের উপর। অপর টুকরা গিয়ে পড়লো কুয়াইকানের উপর।
এবার তিনি কাফেরদের এক একজনের নাম ধরে ডেকে ডেকে বলতে লাগলেন
‘হে অমুক, সাক্ষী থেকো!
‘হে অমুক, সাক্ষী থেকো!!
সব কাফের চাঁদের দ্বিখণ্ডিত রূপ ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছিলো। চাঁদের খণ্ড দুটি পরস্পর থেকে এতো দূরে সরে গিয়েছিলো যে, তাদের মাঝপথে হেরা পর্বত পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিলো। তারা যেমনটি চেয়েছিলো, ঠিক তেমনটিই হলো।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতের ইশারায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার মু’জিযাটি শুধু যে আরবের লোকেরাই প্রত্যক্ষ করেছিলো এমন নয়; বরং সমগ্র পৃথিবীর মানুষ নিজ নিজ এলাকা থেকে তা অবলোকন করেছিলো।
লক্ষণীয় বিষয়ঃ
চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের মু’জিযা।
শিক্ষণীয় বিষয়ঃ
আসলে হিদায়াত একমাত্র আল্লাহ তাআলার হাতে। তিনি যাকে দেন সেই হিদায়াত পেয়ে ধন্য হয়। আর যাকে দেন না, সে কখনই হিদায়াতের আলো চোখে দেখে না।
কাফেরদলের দুর্ভাগ্য। এমন সুস্পষ্ট নিদর্শন দেখার পরও তাদের কপালে হিদায়াদের প্রদীপ জ্বলে উঠলো না। তারা আঁধারে থেকে যাওয়াকেই শ্রেয় মনে করলো। হতভাগ্য কাফেররা এ ঘটনার বাস্তবতাকে অস্বীকার করে তাকে নিছক ‘যাদুক্রিয়া’ বলে মন্তব্য করলো।
আবু জাহাল তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত বললো, বিষয়টির সত্যতার ওপর আরও তদন্ত করা হবে। যদি তা নিছক যাদু হয়ে থাকে, তবে উপস্থিত
১. সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আব্বাস রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে এবং নির্ভরযোগ্য অপরাপর হাদীসগ্রন্থে সুনিশ্চিত ও প্রসিদ্ধ বর্ণনা অনুযায়ী এ ঘটনার সত্যতা স্বীকৃত।
আমাদের ওপরই তার প্রভাব পড়বে। যারা এখানে উপস্থিত নেই বা দূরবর্তী শহর ও জনপদে অবস্থান করছে, তাদের ওপর এ যাদু কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। সুতরাং ভিনদেশ থেকে আগত লোকদের মাধ্যমে এ ঘটনা তদন্ত করা হবে।
পরবর্তীতে দেখা গেল যে, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল ও দেশ থেকে আগত লোকদের সবাই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলছে যে, আমরাও অমুক দেশ থেকে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ বিশেষ
মু’জিযা সম্পর্কে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হচ্ছে :
اقتربت الساعة وانشق القمر وإن يروا آية يعرضوا ويقولوا سحر مستمر وكذبوا واتبعوا أهواءهم وكل أمر مستقر
‘কিয়ামত নিকটে এসে পড়েছে এবং চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে। আর যদি তারা কোনো মু’জিযা দেখে, তবে টাল-বাহানা করে এবং বলে, তাতো যাদু। এখনই তার অবসান ঘটবে। তারা মিথ্যারোপ করছে এবং নিজেদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করছে। প্রতিটি কাজ যথাসময়ে স্থিরকৃত হয়।
-সুরা ক্বমার, আয়াত : ১-৩ অর্থাৎ ঘটনার সত্যতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হবার পরও তারা বলতে লাগলো যে, ‘এটা সম্ভব নয়’। অর্থাৎ পৃথিবীর সব কিছু ওলোট পালট হলেও তারা মূর্তিপূজা ত্যাগ করতে প্রস্তুত নয়। মানুষের স্বাভাবিক বুদ্ধি-বিবেচনায় যে মূর্তিপূজা অর্থহীন বলে প্রমাণিত; তারা তা কোনো অবস্থাতেই ত্যাগ করবে না। পক্ষান্তরে কোনো মু’জিযা সার্বিক বিবেচনায় সত্য বলে প্রমাণিত হবার পরও তাকে যাদু বলে প্রত্যাখ্যান করা হবে।
২. এই ঘটনাটি হযরত মাওলানা রফিউদ্দীন সাহেব তার ‘শাকুল কুমার’ গ্রন্থে তারীখে ফজল থেকে নকল করেছেন। তাতে তাঁর নাম ‘রাজা ভূয়াজ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বরকতের থলি
৩৫ হিজরী। যিলহজ্জ মাসের ১৮ তারিখ। আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের আপন শহর মদীনা মুনাওয়ারা রক্তে রঞ্জিত। আজ সেখানে খুনীর খঞ্জর উন্মত্ত। উন্মুক্ত। মিথ্যা দুর্বিনীত। সত্য পরাজিত। ঘাতকের দল হাতিয়ার হাতে। বিশ্বাসীরা ব্যস্ত নীরব অশ্রুপাতে।
একদল বিপথগামী ঘাতকের নির্মম আঘাতে শাহাদতবরণ করেছেন যূন নূরাইন হযরত উসমান ইবনে আফফান রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু। তিনি ছিলেন আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া
সাল্লামের
-একান্ত আপনজন।
-আস্থাভাজন।
-আদরের জামাতা।
—ইসলামের তৃতীয় খলীফা।
হযরত উসমান রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এদিন রোযা রেখেছিলেন। আসর নামায শেষ হয়েছে। কিছুক্ষণ পরেই কাঙ্ক্ষিত ইফতার। তিনি
চন্দ্র দ্বিখণ্ডিতকরণ প্রসঙ্গে বিধর্মীরা প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। হযরত মাওলানা রফিউদ্দীন সাহেব তার ‘দফয়ে এ’তেরাজাতে মু’জিযায়ে শাক্কুল কুমার’ (চন্দ্র দ্বিখণ্ডিতকরণের ওপর উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব) গ্রন্থে ঐ উত্থাপিত সব প্রশ্নের বিস্তারিত ও যুক্তিসঙ্গত জবাব দিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, অতঃপর ইউরোপীয় পণ্ডিতরাও এ মু’জিযার সত্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। পাশ্চাত্যের প্রথম শ্রেণীর সৌরবিজ্ঞানীরা রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক চাঁদ দ্বিখণ্ডিতকরণ ও পুনঃসংযোজনের বিষয়টিকে নির্বিঘ্নে স্বীকার করে নিয়েছেন।
বিজ্ঞানীদের একটি ক্ষুদ্র অংশ একে অস্বীকার করেছে বটে; কিন্তু এক্ষেত্রে তাদের বক্তব্যসমূহ যুক্তিগ্রাহ্য নয়। উলামায়ে কেরাম তাদের ঐ দুর্বল যুক্তিসমূহেরও যুক্তিসঙ্গত ও প্রামাণ্য জবাব দিয়েছেন।
বসে পবিত্র কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত করছিলেন। দুর্বৃত্তরা এ মুহূর্তে ঢুকে পড়লো খলীফার বাসভবনে। বয়োবৃদ্ধ খলীফাকে নৃশংসভাবে শহীদ করে ফেললো পাষণ্ডের দল। শয়তানের দল ফেঁটে পড়লো পৈশাচিক উল্লাসে।
গোটা মুসলিম জাতিই শোকাহত। আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের সফল মুখপাত্র হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু শোকে মুহ্যমান। অবশ্য তাঁর শোক একটু বেশি-ই। একটু নয় অনেক বেশি। দ্বিগুণ প্রায়…
কারণ…???
এর কারণ খুঁজতে আমরা সফর করবো পবিত্র মদীনা মুনাওয়ারায়। দরবারে রিসালাতে। সেখানে আমাদের নিয়ে যাবেন ইমাম তিরমিযী রহ.। মাধ্যম হলেন, আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের সফল মুখপাত্র হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু।
হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বর্ণনা করেন
‘একদিন আমি কয়েকটি খেজুর নিয়ে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে হাজির হলাম। বিনীতভাবে আরজ করলাম
‘হুজুর! আমার এ খেজুরগুলোতে বরকতের দুআ করুন।’
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেজুরগুলোকে একত্র করলেন। সেগুলোতে বরকতের জন্য দুআ করলেন। এরপর বললেন
‘এগুলো তোমার থলিতে রেখে দাও। প্রয়োজন মতো বের করবে। আহার করবে; কিন্তু মনে রেখো। কখনও থলি একেবারে শূন্য করে খেজুর বের করবে না।’
হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বলেন
‘ঐ খেজুর আর তাতে বরকতের কথা কী বলব!
দীর্ঘদিন যাবৎ অনবরত আমি ঐ থলে থেকে খেজুর বের করে আহার করেছি।
অন্যদেরকে খেতে দিয়েছি।
আর আল্লাহর ওয়াস্তে কী পরিমাণ দান করেছি, তার হিসাব নেই।
ঐ থলেটি সবসময় আমার কোমরে ঝোলানো থাকতো।
হযরত উসমান রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অত্যন্ত দক্ষতা ও একনিষ্ঠতার সাথে খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ইসলামের জয়যাত্রা অব্যাহত ছিলো পূর্ণোদ্যমে। একটির পর একটি রাজ্য ইসলামী সাম্রাজ্যের অধিভুক্ত হচ্ছিলো অবিরতভাবে। মানুষের মধ্যে কৃতজ্ঞতা ও সন্তুষ্টির সুবাতাস পরিলক্ষিত হচ্ছিল সবসময়।
কিন্তু পরাজিত ইহুদি চক্র আবারো মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। সংঘবদ্ধ হলো ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে। ওদের লক্ষ্য ইসলামকে পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে মুছে ফেলা। কুচক্রী আবদুল্লাহ ইবনে সাবার নেতৃত্বে ওরা দলভারী করতে লাগলো। একদিন ওরা ধেয়ে এলো মদীনায়।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামের শহরে। ঘেরাও করে ফেললো খলীফার বাসভবন। খলীফাকে হত্যার হুমকি দিয়ে তাঁর পদত্যাগ দাবি করলো। বন্ধ করে দিল খলীফার বাসগৃহের খাবার ও পানি। ওরা মসজিদে নামায আদায় করতেও বাধা সৃষ্টি করতে লাগলো।
হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বলেন হযরত উসমান রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু যেদিন শাহাদতবরণ করেন, সেদিন আমার ঐ থলেটি ছিড়ে কোথায় যেন পড়ে যায়।
ঐ থলের খেজুরে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক বড় মু’জিযা প্রকাশ পেয়েছিলো। তাঁর দুআর বরকতে সামান্য কয়েকটি খেজুরের মধ্যে সীমাহীন বরকত হয়েছিলো।
৩০ বছর পর্যন্ত আমি তা থেকে নিজে খেয়েছি। মানুষকে খেতে দিয়েছি এবং অনেক খেজুর আল্লাহ তাআলার রাস্তায় দান করা হয়েছে।
কিন্তু প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুআর বরকতে কখনও ঐ থলেটি খেজুর শূন্য হয়নি।
হযরত উসমান রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহুর শাহাদতের মর্মান্তিক ঘটনাটি ছিলো মারাত্মক অপরাধ। যে কারণে হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু আল্লাহ প্রদত্ত ঐ সীমাহীন বরকত থেকে বঞ্চিত হলেন। এ বেদনাদায়ক পরিস্থিতিতে তিনি দুই লাইন কবিতা রচনা করেন ‘মানুষ আজ একটি শোক করছে; কিন্তু আমার শোকের কারণ দুটি। ‘একটি হলো, হযরত উসমান রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহুর শাহাদত। ‘অপরটি হলো, আমার কারামতের থলি হারাবার শোক। লক্ষণীয় বিষয়ঃ
সামান্য কয়েকটি খেজুরে এমন বরকত হওয়া, এটা নিঃসন্দেহে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের মু’জিযা।
উপরোক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উলামায়ে কেরাম বলেন ‘অনেক সময় সাধারণ মানুষের বদ আমলের কারণে আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দারা বরকত থেকে বঞ্চিত হন। শিক্ষণীয় বিষয়ঃ
আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দাদের সাথে কোনো ধরনের
বেয়াদবিমূলক আচরণ থেকে দূরে থাকা উচিত।
ফেত্না-ফাসাদ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা একান্ত কর্তব্য।
আহারে নয়, ত্যাগে…
না, গোশত খাবেন না। মেহমান স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন। কেন খাবেন না, রান্না ভালো হয়নি?
না, মেহমান তেমন কিছুই বলেননি। অবশ্য রান্না ভালোই হয়েছে। তা ছাড়া এ মেহমান তো কোনো খাবারের ত্রুটি বের করেন না। এমনকি, খাবারের ত্রুটি বের করতে নিষেধ করেন।
তাহলে খাবেন না কেন, যথাযথ পরিবেশন হয়নি?
না, তাও না। পরিবেশন যথাযথই হয়েছিলো। অত্যন্ত ভক্তি সহকারে খাশির রান দুটো তুলে দেয়া হয়েছিলো মেহমানের পাতে। আরও অনেক গোশত দেয়া হয়েছিলো তাঁর প্লেটে। আর তাঁকে পুরো খাশিটাই খাওয়াতে প্রস্তুত ছিলেন গৃহকর্ত্রী। তারপরও মেহমান খাবেন না কেন? কেন খাবেন না তিনি…???
অথচ গোশত সবার প্রিয় খাবার। সবচেয়ে প্রিয় বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। ছোট বড় সব বয়সী মানুষই গোশত পছন্দ করে। আর কাউকে যদি দাওয়াত করা হয়, তাহলে তাকে গোশত খাওয়ানোটা একপ্রকার জরুরী হয়ে পড়ে আমাদের সমাজে। আবার গোশতের নাম শুনলেই অনেকের জিভে পানি এসে পড়ে।
মহিলার বাড়িতে এসেছেন একজন মেহমান। এমন মেহমান, যাঁর পরিচয় বলার দরকার নেই। পৃথিবীর সূচনা থেকে সমাপ্ত পর্যন্ত বিশ্বাসী মুমিনরা তাঁকে চিনেন। আপন বলে জানেন। সবচেয়ে প্রিয়জন বলে বিশ্বাস করেন। তাঁর প্রতিটি কথা ও কাজের ওপর চলতে চেষ্টা করেন। আর এভাবে চলাকে নিজের জন্য সৌভাগ্য মনে করেন।
কে এই মেহমান?
তাহলে শুনুন, মহিলার বাড়ির মেহমান হলেন আমাদের প্রিয়নবী রাহমাতুল্লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

আরো পড়তে অথবা দেখতে :- অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন।

We Respect Every Author Hardwork – boipaw.com™
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?