❐ আপনার কিন্তু কিছুদিন বাদেই মাধ্যমিক পরীক্ষা, ইনকোর্স অথবা সেমিস্টার ফাইনাল। আপনি পড়াশোনা ফেলে এখনও দিব্যি ফেইসবুক স্ক্রল করছেন, আর ভাবছেন কাল থেকে পড়তে বসবেন!
আমাদের এই প্রজন্মকে ”ইলেভেন্-থ আওয়ার জেনারেশন” বললে বোধহয় ভুল হবে না। ইলেভেন্-থ আওয়ার বাক্যাংশের অর্থ দাঁড়ায় নির্ধারিত সময়ের একেবারে শেষ পর্যায়ে যেয়ে কোনো কাজ সম্পাদন করা। মিলিয়ে দেখুন, আপনার কাছে রয়েছে একটি সুনির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম তালিকা (সিলেবাস) এবং এই তালিকা অনুযায়ী ধাপ অতিক্রমের জন্য আপনার হাতে নির্দিষ্ট সময়ও রয়েছে, কিন্তু আপনি এখন হেলায়-খেলায় সময় কাটাচ্ছেন। পরীক্ষার আগের রাতে ঠিকই টনক নড়ে উঠবে। সিলেবাস দেখে মনে হবে চোখের সামনে বিশাল সমুদ্র এবং ধীরে ধীরে আপনি সে সমুদ্রে তলিয়ে যাচ্ছেন। এই মূহুর্তে যেয়ে আমাদের প্রত্যেকেরই আফসোস হয়। আর ভাবতে থাকি, ইশ!আগে থেকে যদি একটু পড়তাম। অন্তত পড়া জমে পর্বত সম হতো না। আপনার সাথে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তা খুবই স্বাভাবিক বরং না ঘটলে ব্যপারটি চমকপ্রদ। অর্থাৎ পড়াশোনা ভালো না লাগা, আলসেমিকে আস্কারা দিতে দিতে একদম শেষ পর্যায়ে যেয়ে আদাজল খেয়ে পড়াশোনা করা এর সবগুলোই স্বাভাবিক। তবে এমনটা যদি চলতেই থাকে, চলতেই থাকে তাহলে ভাবুন একবার পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হবে। তাই এই আলসেমি টা পুরোপুরি কাটিয়ে তুলতে না পারলেও কিছু কার্যকরী করণীয় অনুসরণ করে আমরা পড়াশোনাকে আরেকটু সহজ করে তুলতে পারি।
❐ করণীয় সমূহ:
● “কাল থেকে পড়তে বসবো” এই কথাটি মাথা থেকে একেবারে ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে। আপনি যখনই ভাবছেন কাল থেকে পড়তে বসবেন তখনই পর্যবেক্ষণ করে দেখুন এই মূহুর্তে আপনি কি কাজ করছেন যেটা কিনা পড়াশোনার থেকে গুরুত্বপূর্ণ! একজন ছাত্রের পড়াশোনা অপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আর কিছুই হতে পারেনা। তাই কাল থেকে নয় এক্ষুনি বই নিয়ে বসে পড়ুন।
● পড়াশোনার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে আপনার রিডিং টেবিল। গোছানো ও আকর্ষণীয় রিডিং টেবিল আপনাকে টেবিলের সংস্পর্শে থাকতে সহায়তা করবে। তাই টেবিল গুছিয়ে রাখুন। টেবিলের আশেপাশের দেয়ালে বিভিন্ন রঙিন চিরকুট সেঁটে রাখুন যাতে লেখা থাকবে বিভিন্ন মহৎ মানুষের উক্তি। এসব উক্তি আপনাকে যেন অনুপ্রেরণা দেয় তাই প্রাসঙ্গিকতার বিষয়টি নজরে রাখা ভালো।
● আপনি কেবলমাত্র পরীক্ষায় পাশ করার জন্য পড়ছেন না তো! আপনার ছাত্রজীবনের উদ্দেশ্য যদি হয়ে থাকে পরীক্ষায় পাশ করে শ্রেণী টপকে যাওয়া, তাহলে পড়ায় মনযোগ আসবেনা এমনটাই স্বাভাবিক। কারন পাশ করতে হলে খুব বেশি পড়তে হয়না। আপনি জানার জন্যে পড়বেন। আপনার মস্তিষ্ক ও মনকে জানার ক্ষুধা অনুভব করতে হবে। আপনার পাশে বসা সহপাঠী যদি আপনার থেকে দুই অক্ষর বেশি তথ্য জেনে থাকে সেক্ষেত্রে আপনার ইর্ষান্বিত হওয়া ইতিবাচক, তবে ভেতরে জানার ইচ্ছে থাকতে হবে। পাশ করার উদ্দ্যেশ্যে পড়া যাবেনা। কালেভদ্রে ক্যাম্পাসে আসা, শ্রেণিকক্ষের একদম শেষ প্রান্তের বেঞ্চে বসা ছাত্রটাও পাশ করে। আপনি নিশ্চয়ই নিজেকে সে কাতারে রাখতে চান না। তাই জানার জন্যে পড়ুন, নিজেকে বিচক্ষণ করে তুলুন।
● লক্ষ্য অর্জন করতে পারলে মানব মন আনন্দ পায়। তাই পড়া শুরুর আগে একটা ক্ষণস্থায়ী লক্ষ্য ঠিক করুন। ক্ষণস্থায়ী বলছি এ কারণেই যে, আপনার লক্ষ্য যদি হয় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক হওয়া সেই লক্ষ্য কিন্তু আপনাকে এই মূহুর্তে পড়তে বসার জন্য তাগিদ দিবে না। তাই এই মূহুর্তের জন্য লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট করুন। যেমন; আজ রসায়ন বইয়ের এক অধ্যায় শেষ না করে চেয়ার ছাড়বেন না, ত্রিকোণমিতির ১৫ টা অংক শেষ করার আগে কোনোভাবেই ফোন হাতে নেয়া যাবে না ইত্যাদি।
● লক্ষ্য অর্জন শেষে নিজেকে পুরস্কৃত করুন। যখনই লক্ষ্যের একটি ধাপ শেষ হবে নিজেকে সময় দিন। নিজেকে ভালো মূহুর্ত, শখের জিনিস উপহার, শখের কাজ ইত্যাদি করার সুযোগ দিন। যা আপনাকে পরবর্তী লক্ষ্য অর্জনের দিকে ধাবমান করে তুলবে।
● সময় অপচয় হয় এমন কাজ ও বস্তু থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। যেমন; পড়ার সময় ফোন পাশে থাকলে দশ মিনিট পড়ার পরই ইচ্ছে হবে ফেইসবুকারের যেয়ে একটু “মন বসেনা পড়ার টেবিলে” পোস্ট দিয়ে আসা যাক। পোস্ট থেকে লাগাতার লাইক কমেন্টের নোটিফিকেশন আসতে থাকবে। দেখা যাবে আপনার বন্ধুমহলের সকলেরই “মন বসেনা পড়ার টেবিলে” নামক রোগ রয়েছে এবং কমেন্ট বক্সে আপনাদের অনবরত উত্তর-প্রত্যুত্তর চলছেই। হায়! পাঁচ মিনিটের জন্য ফোন ব্রাউজিং করতে চেয়েছিলেন কিন্তু সময় প্রায় গোল্লায় গেছে এক ঘন্টা।
● নিজে যা জানুন, তা অন্যের মাঝে বিলিয়ে দিতে চেষ্টা করুন। এতে আপনার মাঝে একধরনের মনোভাব কাজ করবে যে, আপনি কাউকে শেখাতে পারছেন। এই মনোভাব আপনাকে নতুন জিনিস জানতে অনুপ্রাণিত করবে। প্রতিনিয়ত যা শিখছেন তা অন্যদের শেখান। এক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা রাখে টিউশন অথবা সহপাঠীদের সাথে গ্রুপ স্টাডি। সহপাঠীদের কিছু বোঝানোর আগে অথবা টিউশনের আগে কনফিডেন্ট হওয়ার জন্য হলেও আপনি কিছু না কিছু পড়বেন। যা আপনাকে পড়াশোনার সাথে যুক্ত থাকতে সাহায্য করবে।
● পড়াশোনার ফাঁকে ছোট ছোট বিরতি রাখুন। বিরতিগুলো যেন ছোট ছোট লক্ষ্য শেষ হওয়ার আগে না হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ অসম্পন্ন লক্ষ্য রেখে টেবিল ছেড়ে উঠা যাবেনা।
● পরিশেষে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনের ভূমিকা বর্ণনাতীত। স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে পর্যাপ্ত ঘুম, সঠিক সময়ে ঘুম, ভোরে ঘুম থেকে জাগা, সুষম খাবার, শরীরচর্চা, ধ্যান বা প্রার্থনা, বিনোদনকারী কার্যক্রম ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে। যা আপনাকে কর্মক্ষম থাকতে বিশেষ সহায়তা করে। অর্থাৎ জীবনযাপনে “স্বাস্থ্যকর” শব্দটির প্রবেশপথ উন্মুক্ত করে দিন।
কাল থেকে নয় এক্ষুনি পড়তে বসুন।
নাফিসা তাবাসুম,
ভলান্টিয়ার কনটেন্ট রাইটার,
রাইটার্স ক্লাব বিডি।