বইয়ের নামঃ এলাচিফুল
লেখকঃ শানজানা আলম
ধরণঃ উপন্যাস
প্রকাশনীঃ বায়ান্ন
একটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখার মত বই।
(photo courtesy : Kajol Haider)
রিভিউ:- মউলি আখন্দ
মিঠি মিঠি ভোর, সোনা সোনা রোদ,
হালকা শিশির,
মনে হয় ছুঁই, সাথে শুধু তুই,
হিজলের ফুল, জলে ভাসা ভুল, শিউলি তলা,
জমেছে কথা কত, হয়নি বলা!
ভেসে আসে কানে, সংসারী ডাক,
আজ তবে থাক!
বর্তমান সময়ের উদীয়মান লেখিকা শানজানা আলমের উপন্যাস “এলাচিফুল” । সামাজিক ও মনস্তাত্বিক ঘরানার এ উপন্যাসের জমাট লেখনী আমাদের জীবনকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
গ্রামীণ জনপদের মেঠো পথে চলা এই উপন্যাস পড়ে বুকের ভেতর হু হু করে উঠবে যে কারো।প্রকৃতি ও মানুষের জীবনের গল্পের এক মনোরম চিত্রায়ণ প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে এই গল্পে। লেখার সঙ্গে পাঠক কখন যে একাত্ম হয়ে যাবেন বুঝতেই পারবেন না। নিসর্গের সৌন্দর্য বর্ণনায় ক্ষণে ক্ষণে মনে পড়ে যায় বিভূতিভূষণের কথা। দেশ ও কালের সীমানা প্রাচীর ছাড়িয়ে এই গল্প আপন করে নিতে পারবে যে কোনো পাঠককে। গল্পের চরিত্রগুলো আমাদের সবার অতি পরিচিত। সেই ছায়া ছায়া মায়া মায়া গ্রাম, নবেতুন রাইস মিল, ভাঁটফুল, স্টিলের থালায় ভেজানো সখের ছৈলাফুল, নয়াবাড়ির ঘাট থেকে জেলেদের জ্যান্ত লেজ নাড়ানো বড় মাছ ধরা, প্রাত্যহিক জীবনের খুঁটিনাটি বর্ণনা গল্পের আরেকটি শক্তিশালী দিক। গ্রাম্য জীবনযাত্রার কাহিনীপটে একটি আদর্শ যৌথ পরিবারের চিত্র তুলে ধরেছে “এলাচিফুল” ।পড়া শেষ হয়ে গেলেও এক অদ্ভুত কষ্ট আচ্ছন্ন করে রাখবে মনকে, বোঝা না বোঝার এক অদ্ভুত দোলাচলে।কী হওয়ার কথা ছিল, আর কী হয়ে গেল, কেন, কীভাবে?
এই উপন্যাস নিছক উপন্যাসমাত্র নয়, এখানে লেখক কিছু ইতিহাসের বর্ণনাও এনেছেন যা তার ডেডিকেশনের প্রমাণ দেয়। জীবনানন্দের কবিতার মতই একটা মিষ্টি মায়াবী আবহ সৃষ্টি করতে সফল হয়েছেন।
সবাই এত হৃদয়গ্রাহী করে গ্রামীণ জীবনধারা তুলে ধরতে পারে না। কেউ কেউ পারে। সৃষ্টিকর্তার বিশেষ আশীর্বাদ তোলা থাকে কারো কারো জন্য। লেখকের কলমে সেই জাদু আছে। তার আগামী বইয়ের জন্য শুভকামনা রইল। তিনি যেন জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য প্রেমের গল্প লেখক হিসেবে নিজের পরিচয় প্রতিষ্ঠা করে ফেলতে না চান, ভক্ত পাঠক হিসেবে আমার এই বিনীত অনুরোধ।
কিছু সমালোচনাঃ
বইয়ে কোথাও কোথাও র, ড় বিষয়ক সমস্যা ও বাক্য গঠনগত কিছু সমস্যা আমার দৃষ্টিকটু লেগেছে। নিজে বই প্রকাশের কারণে বই প্রকাশের প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছু অল্পস্বল্প ধারণা রাখি। তাই দোষ পুরোপুরি লেখককে দিতে পারছি না। এই দায়িত্ব বেশিরভাগ প্রকাশকের ওপরেই বর্তায়।
এটি অফ টাইমের বই। অর্থাৎ এর প্রকাশকাল সেপ্টেম্বর (কিংবা অক্টোবর)। যেহেতু এটি মেলার বই নয় কিংবা প্রকাশের কোনো ডেডলাইন ছিল না, কোনো তাড়া ছিল না, সেক্ষেত্রে আরেকটু সময় নিয়ে প্রুফ রিডিং করলে ভালো হত। শানজানা আলমের মত শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময় লেখক আরও ভালো প্রুফ রিডিং ডিজার্ভ করেন বলে আমার মনে হয়।