- বই: এখানে কয়েকটি জীবন
- লেখক: সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
- ধরন: গল্পগ্রন্থ
- প্রকাশনী: কিংবদন্তী পাবলিকেশন
” চিঠি পড়া শেষ হতেই উচ্চস্বরে হাসে অনন্ত। কি সহজ-সরল ভাষা। সাবলীল ভঙ্গি। সাহিত্যের মারপ্যাচে নেই। আবেগের আতিশয্য নেই। অথচ সবটুকু আবেগ যেন উপচে পড়ছে। দরদমাখা এই চিঠির মানুষটি আজ পাশে নেই। হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা দিয়েও সোনাবউ পায়নি অনন্তকে। তখন বাস্তবতার কাছে হেরে যায় ভালোবাসা। প্রতিষ্ঠা নামক কালো ছায়া তাদের বিচ্ছিন্ন করে দেয় এক মুহুর্তেই। “
উক্ত অংশটুকু লেখক সালাহ উদ্দিন মাহমুদের ‘এখানে কয়েকটি জীবন’ গল্পগ্রন্থ থেকে নেয়া। মোট ১১ টি গল্পের সমাহার এই বইটি। যেখানে আছে জীবনের গল্প, হাসি-কান্নার গল্প এবং আশা-নিরাশার গল্প। প্রত্যেকটা গল্পে লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন জীবনের গভীর বেদনা।
১ম গল্প ~ জীবন:- সাত বছরের বিবাহিত জীবনে সন্তানের মুখ দেখতে পারছে না আনিস-রিজিয়া দম্পতি। সমাজের নানান কথা শুনার পরেও তারা একে অপরের পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছে। হঠাৎ একদিন বিদ্যুতের খুটিতে লাগানো বিজ্ঞাপনে চোখ আটকে যায় দুজনের। সেই বিজ্ঞাপনে অসহায় এক দম্পতি তাদের বাচ্চাকে বিক্রি করবে যে কিনা এখনও পৃথিবীতে আসে নি। আনিস-রিজিয়া সেই বাচ্চাকে পৃথিবীর আলো দেখানোর জন্য সব রকম সাহায্য করে যায়। কিন্তু সবশেষে নিজেদের বাচ্চার শখ পূরণ করতে আরেক মায়ের কোল খালি করার সাহস তাদের আর হয়ে উঠে নি।
২য় গল্প ~ সোনাবউ:- নিঃসঙ্গ একাকী জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা অনন্ত একদিন তার জমানো সব চিঠি খুলে বসে। কেউ একজন তাকে হারিয়ে ফেলার তীব্র কষ্ট প্রকাশ করেছে একটা চিঠিতে যেইটা তার প্রেমিকার ছিল। বেকারত্বের কারণে সেই মানুষটাকে নিজের করে পায় নি অনন্ত। সেইদিন যদি সব কিছু উপেক্ষা করে সেই মানুষটার হাত ধরত তাহলে আজ তার জীবন এত এলোমেলো হয়ে যেত না। আজ সবকিছু থাকলেও তার সোনাবউ নেই।
৩য় গল্প ~ শাড়ি:- বারোশ পঞ্চাশ টাকার শাড়ি আর ফতুয়া পেয়েই মহা আনন্দে ফেটে পড়ে আজমের মা মতিজন ও বাবা মকবুল। সল্প আয়ের বেতনেই তাদের পরিবারে আনন্দের শেষ নেই। অল্পতেই যেন তাদের ঈদের আনন্দ। এখানে লেখক অত্যন্ত নিখুতভাবে তাদের আনন্দকে ফুটিয়ে তুলেছেন। পাঠককে উপলব্ধি করিয়েছেন টাকার মাঝেই সব সময় সুখ থাকে না। ভালোবাসা যেখানে পবিত্র ও গভীর হয় সেখানেই সুখ থাকে।
৪র্থ গল্প ~ বিবস্ত্র:- অসহায় পথশিশু রুবি যার কোনো আবেগ নেই কোনো অভিযোগ নেই কোনো রাগ-অভিমান নেই। কখনো রাস্তার পাশে শুয়ে থাকে কখনোবা লম্পটের সামনে পড়ে। তাদের বিচার দেবার মত কেউ নেই। এই রুবির খুব কাছের একজন বন্ধু হয়ে উঠে সুজন। সেও রুবির মতই পথশিশু। কোনো একদিন রুবির কথায় অভিমানে লুকিয়ে থাকে সুজন। সারাদিন তাকে সারা শহরে খোঁজে না পেয়ে কিসের যেন একটা চাপা কষ্টে সে হাঁটতে থাকে। তখনই তিন অচেনা পুরুষের হাতে খুন হয় রুবি। কিন্তু এই পথশিশুর বিচার কি কেউ করবে? তাদেরও তো মায়ের বুকে নিরাপদে ঘুমাবার অধিকার আছে। নিরাপত্তা নিয়ে জীবনে চলার অধিকার তাদেরও আছে।
গ্রন্থের বাকি গল্পগুলো হচ্ছে দায়ী, জয়শ্রী, কুমারী, নাকফুল, কুকুর, গোলেয়া, মিঠু। এখানে প্রত্যেকটা গল্প একেক মানুষের একেকরকম জীবনের আলোকে লেখা। পড়তে পড়তে কখনো আপনার চোখ ভিজে যাবে। কখনো আপনি হারিয়ে যাবেন তাদের নানা রকম জীবনের মাঝে। এক কথায় বলা যায় হৃদয় নাড়িয়ে দেবার মত সব গল্প। ধন্যবাদ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ স্যার আমাদেরকে এত সুন্দর একটি বই উপহার দেয়ার জন্য। আগামীতে আপনার এইরকম আরো বই প্রত্যাশা করি। বইয়ের প্রচ্ছদ, বাইন্ডিং, পৃষ্টা বরাবরের মতোই দারুন। ধন্যবাদ প্রকাশককে এবং কিংবদন্তী পাবলিকেশনকে।
ব্যাক্তিগত রেটিংঃ ০৪/০৫