এখন যৌবন যার – লেখক : মাওলানা যুলফিকার আহমদ নকশবন্দী | Jowbon Akhon Jar : Mawlana Zulfikar Ahmed Naskhbondi

  • বই : এখন যৌবন যার
  • লেখক : মাওলানা যুলফিকার আহমদ নকশবন্দী
  • প্রকাশনী : উমেদ প্রকাশ
  • বিষয় : আত্মশুদ্ধি ও অনুপ্রেরণা
  • অনুবাদক : আবু মিদফা সাইফুল ইসলাম
  • পৃষ্ঠা : 386, কভার : হার্ড কভার – ওয়াফিলাইফ
  • ভাষা : বাংলা

الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على سيدنا محمد المرسل بشيرا و
نذيرا للعالمين، و على آله و صحبه و من دعا بدعوته الى يوم الدين و بعد রুহের জগৎ থেকে মানুষ এক যাত্রার সূচনা করেছে। জান্নাত তার চূড়ান্ত গন্তব্য। এ পথের পরতে পরতে মানুষকে বিপথগামী করার জন্য ঘাপটি মেরে বসে আছে শয়তান। শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। আল্লাহর দরবার থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর আল্লাহ তাআলার সামনে শয়তানের ঘোষণা ছিল :
فيما أغويتني لأقعدت لهم صراطك المستقيم
‘আপনি যেহেতু আমাকে বিভ্রান্ত করেছেনই, অবশ্যই অবশ্যই আমি
তাদের (বিপথগামী করার) জন্য আপনার সরল পথে বসে থাকব।”
সেই থেকে শয়তান এক মিশনে নেমেছে। মানুষকে সরল পথ তথা জান্নাতের পথ থেকে বিভ্রান্ত করার মিশন। শয়তান ও তার দোসররা প্রতিনিয়ত তাদের কাজ করে যাচ্ছে। মানুষই কেবল এ শয়তানী মিশন থেকে বেখবর হয়ে আছে। মানুষ ভুলে গেছে শয়তান ও শয়তানের দোসরদের সাথে তার চলমান যুদ্ধের কথা। যে যুদ্ধে পরাজিত হলে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হতে হবে। সে ভুলে গেছে তার প্রবৃত্তি তার আপন নয়। মানুষের প্রবৃত্তি তো ‘মন্দের মহা আদেশদাতা’। কুপ্রবৃত্তি ও শয়তানের ধোঁকায় পড়ে মানুষ আজ সরল পথ থেকে বিচ্যুত।
শয়তান ও তার দোসররা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি ধাপে বিভ্রান্তির জাল বিছিয়ে দিয়েছে। মানুষ প্রতিনিয়ত সেসব জালে ফেঁসে যাচ্ছে। নানা বাহানায়
১. সূরা আরাফ : ১৬
শয়তান মানুষকে গোনাহে লিপ্ত করে দিচ্ছে। গোনাহ করতে করতে আজ মানুষের স্বভাবজাত সুস্থ রুচিবোধটুকুও নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আর গোনাহকে গোনাহ মনে করা হয় না। চারদিকে নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা, বেলেল্লাপনার ছড়াছড়ি। বিশ্বের আধুনিকায়ন মানুষের জীবনকে সহজতর করেছে ঠিক, কিন্তু মানুষের অনেক মূল্যবান সম্পদ কেড়ে নিয়েছে। লজ্জা, সরলতা, শালীনতা, ইজ্জত-সম্মান যেগুলোর অন্যতম।
আধুনিকতায় বিশ্ব পেয়েছে বহুকিছু হারিয়েছে সরলতা শালীনতা আরও কতকিছু!
এমনিতেই যৌবনের টগবগে সময়ে প্রত্যেক যুবকের মাঝে একধরনের কামনা বাসনা, উত্তেজনা ও একইসাথে চরম হতাশা ও অস্থিরতা কাজ করে। তার ওপর মানুষের প্রকাশ্য দুশমন বিতাড়িত শয়তান যুবক-যুবতিকে পরস্পরের দৃষ্টিতে আকর্ষণীয় ও সুশোভিত করে তোলে। অভিশপ্ত শয়তান আল্লাহ তাআলার ভয় ও তাঁর ইবাদত-বন্দেগীর ব্যাপারে তাদের ধোঁকায় ফেলে রাখে যে, “এখনই এত ইবাদত-বন্দেগীর কী আছে! পুরো জীবন তো পড়েই আছে। এখন একটু যৌবনটাকে উপভোগ করে নাও!’ ফলে এ সময়ে উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীরা ইবাদত-বন্দেগী ও আল্লাহর ভয় হতে গাফেল থাকে। এ জন্যই আল্লাহ তাআলার নিকট যৌবনের ইবাদত ও যুবক বয়সে তাকওয়া অবলম্বনের মর্যাদা ও গুরুত্ব অনেক বেশি। যারা বয়ঃসন্ধিক্ষণে যৌবনের উন্মাদনা থেকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তারাই সফলকাম। এ কারণেই যৌবনে নিজেকে নির্মল, সৎ ও চরিত্রবান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কুরআন ও হাদীসে জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। শয়তান তার মিশনে সফল হতে নারীদের হাতিয়ারস্বরূপ ব্যবহার করছে। বেপর্দা, নগ্নতা, ব্যভিচারকে ব্যাপকতর করে তুলছে। আজ কোথাও নারীর ইজ্জত-আবরু নিরাপদ নয়। দৃষ্টি থেকে লজ্জাস্থান কোনোটাই আজ পবিত্র নেই। সবাই পাল্লা দিয়ে গুনাহের দিকে ছুটে চলছে।
সর্বত্র আজ অশ্লীলতার ছড়াছড়ি
দৌড়াচ্ছে নর সেদিকে, ডাকছে তাকে নারী।
উম্মতের এই ক্রান্তিলগ্নে শয়তানী অপকৌশলগুলোকে মানুষের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরা ছিল সময়ের দাবি। প্রয়োজন ছিল কোনো দরদি হৃদয় ও অভিজ্ঞ (এখন যৌবন যার) চিকিৎসক উম্মতকে এ বিষয়ে সতর্ক করার। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থে সই শূন্যতাটুকুই পূরণ করেছেন বিশিষ্ট বুযুর্গ পীর হযরত মাওলানা যুলফিকার আলী নকশবন্দী (দামাত বারকাতুহুম)। পারিবারিক, সামাজিক ও চারিত্রিক অবক্ষয়ের নানা দিক, অবক্ষয়ের কারণ ও প্রতিকার নিয়ে তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়া খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে প্রতিটি বিষয়কে চিত্রায়িত করে বুঝিয়ে দিয়েছেন সমাজের ভেতরগত অবস্থা কতটা শোচনীয়। লেখক যৌবনে পদস্খলনের নানা দিক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। অত্যন্ত প্রভাবান্বিত উপস্থাপনায় যৌবনকে নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন উপায় ও জীবনের স্থিতিশীলতা রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করেছেন৷
যদিও অনুবাদকের ভূমিকায় এত লম্বা কথা আসাটা উচিত নয়, তারপরেও পাঠকের মনোযোগকে শানিত করার লক্ষ্যে এখানে হযরতের দরদমাখা আলোচনাগুলোর ছোট একটা সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হলো:
মানুষের প্রকৃতিগত সৌন্দর্যগুলোর অন্যতম প্রধান দিক হচ্ছে লজ্জা। ইসলাম লজ্জাকে ঈমানের অংশ সাব্যস্ত করেছে। লজ্জার কারণে মানুষের কথা, কাজ সবকিছুতে সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। লজ্জাহীন মানুষ পশুর সমান। লজ্জাশীল ব্যক্তি মানুষের মাঝেও সন্মানিত এবং আল্লাহ তাআলারও প্রিয় পাত্র। লজ্জা থেকেই মানুষ পবিত্র ও শালীন জীবনযাপন করতে শেখে। লজ্জা ও পবিত্রতা পরস্পরের পরিপূরক। কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফে পবিত্র ও শালীন জীবনযাপনের ওপর মহা প্রতিদান ও মূল্যবান পুরস্কারের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। অনুরূপভাবে লজ্জাহীনতার কঠোর নিন্দা ও অশালীন জীবনযাপনের জন্য কঠিন শাস্তির হুঁশিয়ারি শোনানো হয়েছে। তাই আমাদের উচিত লজ্জা অবলম্বন করা এবং পবিত্র ও শালীন জীবন অতিবাহিত করা।
কুদৃষ্টি সকল অনিষ্টের মূল। চোখের এ দুই ছিদ্র হতেই অশ্লীলতার প্রস্রবণ প্রবাহিত হয়। অতপর সর্বত্র নগ্নতা ও বেহায়াপনা ছড়িয়ে যায়। মানুষের চোখ যখন লাগামহীন হয়ে পড়ে, তখন এর ওপর ভিত্তি করেই অধিকাংশ অশ্লীলতা সংঘটিত হয়। কুদৃষ্টি হচ্ছে ব্যভিচারের প্রথম সিঁড়ি। কুদৃষ্টি মানুষের মাঝে জৈবিক তাড়নার এমন পিপাসা জাগিয়ে তোলে, যা থেকে মানুষ কখনো পরিতৃপ্ত হতে পারে না। কুদৃষ্টি দানকারী যত সুন্দরী রমণীকেই দেখুক না কেন, তার চোখ এর চেয়ে অধিক সুন্দরের দিকে ধাবিত হয়। কুদৃষ্টির তির যখন একবার বিদ্ধ হয়ে “এখন যৌবন যার” যায়, এরপর এর যাতনা শুধু বাড়তেই থাকে। এমনকি বৃদ্ধ ব্যক্তি পর্যন্ত কুদৃষ্টি থেকে নিরাপদ নয়। তাই আল্লাহ তাআলা নারী-পুরুষ উভয়কে দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
কুদৃষ্টির ফলে মানুষ দুনিয়া-আখিরাতে নানা রকম শাস্তি ভোগ করে। যেমন : আমলের মজা হারিয়ে ফেলে, অনেক সময় আমল হতে বঞ্চিত থাকে, অন্তরের নূর চলে যায়, কুরআন ভুলে যায়, জীবন ও জীবিকা থেকে বরকত উঠে যায়, চেহারা বিবর্ণ হয়ে যায়, শরীরে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়, মানুষের মাঝে তার ওজন কমে যায়, এমনকি মৃত্যুর সময় কালিমা নসিব হয় না। তা ছাড়া কুদৃষ্টির দরুন আল্লাহ তাআলার আত্মমর্যাদাবোধ জেগে ওঠে, কুদৃষ্টি দানকারী আবশ্যকীয়ভাবে পাপে জড়িয়ে পড়ে, তার মন-মস্তিষ্ক বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়, কুদৃষ্টি দানকারীর অন্তর থেকে হক-বাতিলের মাঝে পার্থক্য করার ক্ষমতা চলে যায় এবং সে শয়তানের হাতের খেলনায় পরিণত হয়।
পক্ষান্তরে দৃষ্টিকে সংযত রাখার বিনিময়ে রয়েছে অমূল্য প্রতিদান। যে ব্যক্তি নিজ দৃষ্টি হেফাজত করবে, পরকালে সে দুটি পুরস্কার লাভ করবে : এক. আল্লাহ তাআলা তাকে নিজের দর্শনলাভের সৌভাগ্য দান করবেন। দুই. এমন চোখ কিয়ামতের দিন কান্না করা থেকে নিরাপদ থাকবে।
কুদৃষ্টি থেকে বেঁচে থাকার কিছু উপায় :
১. কুদৃষ্টি বাঁচতে হলে পথে-ঘাটে চলার সময় দৃষ্টিকে নিচু রাখার অভ্যাস গড়ে
তুলতে হবে। এটি দৃষ্টিকে হেফাজত করার কুরআনী পথ্য।
২. কুদৃষ্টি থেকে বেঁচে থাকার একটি উত্তম পন্থা হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে করে নেয়া। পরনারীর কাছে যা আছে, নিজ স্ত্রীর কাছেও তা-ই রয়েছে। তাই নিজ স্ত্র র দিকে ভালোবাসার নজরে দেখবে, এর ওপর আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করবে। তাহলে কুদৃষ্টি থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়ে যাবে।
৩. সর্বদা যিকিরের হালতে থাকার দ্বারা শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। ফলে দৃষ্টিকে সংযত রাখা সম্ভব হয়।
৪. মনের মধ্যে সর্বদা এই খেয়াল রাখবে যে, আমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা আমাকে দেখছেন। এর ফলে দৃষ্টি নিজ থেকেই নত হয়ে যাবে। কোনো নারীর ‘এখন যৌবন যার’ সাথে থাকা তার বাবা, ভাই, স্বামী যমন আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকলে আমরা সেই নারীর দিকে কুদৃষ্টিতে দেখতে পারি না, তেমনই আমরা যখন এ কথা স্মরণ রাখব যে, আল্লাহ আমাকে দেখছেন, তখন পরনারী থেকে নিজের দৃষ্টিকে সংযত রাখতে পারব। সেই সাথে চোখকে আল্লাহর দেয়া আমানত মনে করবে এবং এর অপব্যবহার থেকে বেঁচে থাকবে।
৫. এ কথা মনে করবে যে, আমি যেমন আমার মা, বোন, স্ত্রীর দিকে অন্য কারও
কুদৃষ্টি দেয়াকে পছন্দ করি না, তেমনই অন্যরাও এটা পছন্দ করে না যে, আমি
তাদের মা, বোন, স্ত্রী বা অন্য কোনো নিকটাত্মীয়ের দিকে কুদৃষ্টি নিক্ষেপ করি।
৬. প্রতিবার কুদৃষ্টির জন্য নিজের ওপর কোনো শাস্তি নির্ধারণ করে নেবে। কোনো আর্থিক বা শারীরিক দণ্ড বা নির্দিষ্ট পরিমাণ কোনো নফল আমল নির্ধারণ করার দ্বারা নফস নিজের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। কোনো সুশ্রী নারীর দিকে দৃষ্টি পড়লে তার নানাবিধ ত্রুটি নিয়ে ভাববে ও জান্নাতী র লাভের আশা করবে।
৭. কুদৃষ্টি হতে পারে এমন সকল স্থান ও মাধ্যম থেকে বেঁচে থাকবে। নিজ স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে। তাকে মন ভরে দেখে নেবে, যাতে অন্যদের দেখার প্রয়োজন না পড়ে। পরনারীদের থেকে নিজেকে নির্লোভ করে নেবে। এমন ভাববে যে, পরনারীর কাছে আমার কোনো প্রয়োজন নেই, আমি তার প্রতি লালায়িত নই, সুতরাং তার দিকে আমি কেন তাকাব?
৮. সর্বোপরি নিজ প্রবৃত্তির সাথে সর্বদা বিতর্ক করতে থাকবে, আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য লাভ থেকে বঞ্চিত হবার ভয় করবে। নিজ চেষ্টা অব্যাহত রাখলে ইনশাআল্লাহ এর মাধ্যমে কুদৃষ্টি থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হবে। বান্দা চেষ্টা করলে আল্লাহ তাআলাই তা পূর্ণতায় পৌঁছে দেবেন।
যাবতীয় অশ্লীলতা, বেলেল্লাপনা ও ব্যভিচার থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহ তাআলা নারীদের জন্য পর্দার বিধান অবতীর্ণ করেছেন। ইসলামী শরীয়তে নামায, রোযার মতো পর্দার বিধানকেও ফরজ করা হয়েছে। পর্দার মাধ্যমে নারীকে পরপুরুষ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ করে দেয়া হয়েছে। শরয়ী পর্দার তিনটি স্তর রয়েছে। যথা :
১. নারীদের জন্য পর্দার সর্বোৎকৃষ্ট পদ্ধতি হচ্ছে ঘরের চার দেওয়ারিতে অবস্থান করা। নিজ ঘরেই যাবতীয় কাজকর্ম সম্পন্ন করা। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের ‘এখন যৌবন যার’ বাইরে বের না হওয়া। পরপুরুষের সামনেই না আসা। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন :
وقرن في بيوتكن ولا تبرجن تبرج الجاهلية الأولى
“তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করো এবং জাহেলী যুগের মতো (পর
পুরুষকে) সাজসজ্জা প্রদর্শন করে বেড়িয়ো না।”
২. একান্ত অপারগ হয়ে যদি ঘরের বাইরে বের হতেই হয়, তাহলে গায়ে বোরকা বা বড় চাদর দ্বারা ভালোভাবে নিজেকে ঢেকে নেবে। সম্পূর্ণ পর্দা অবলম্বন করে বাইরে বের হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন :
يدنين عليهن من جلابيبهن
“তারা যেন তাদের চাদরের অংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়।
৩. পর্দার সর্বশেষ স্তর হচ্ছে, নারী একান্ত অপারগতাবশত ঘর থেকে বের হয় এবং চাদর বা বোরকা এমনভাবে পরে যে, তার হাত-পায়ের তালু ও চেহারা খোলা থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
ولا يبدين زينتهن إلا ما ظهر منها
‘তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন
না করে।”
তবে এটিও তখন জায়েয হবে যখন ফিতনা ছড়াবার আশঙ্কা না থাকে। যদি ফিতনার আশঙ্কা থাকে তাহলে এ ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরাম সকলেই একমত যে, তখন এ অঙ্গও খোলা রাখা জায়েয হবে না। বর্তমানে কেউ কেউ এ কথা দাবি করে যে, চেহারা পর্দার অন্তর্ভুক্ত নয়। অথচ রূপ ও সৌন্দর্যের কেন্দ্রই হচ্ছে চেহারা। সুতরাং শুধু চিকিৎসা ও আদালতে শরয়ী সাক্ষ্য প্রদান ছাড়া কোনো অবস্থাতেই চেহারা উন্মুক্ত রাখা জায়েয হবে না। সেই সাথে এ কথাও মনে রাখতে হবে যে, নারীর জন্য খোলা জায়েয মানেই পুরুষের জন্য তাকে দেখা বৈধ হয়ে যাবে না; বরং পুরুষের জন্য স্বীয় দৃষ্টি অবনত রাখার নির্দেশ তখনো বলবৎ থাকবে।
২. সূরা আহযাব : ৩৩
৩. সূরা আহযাব : ৫৯
৪. সূরা নূর : ৩১
২২। এখন যৌবন যার
বর্তমান সমাজে পর্দার বিধানকে উপেক্ষা করার ভয়াবহ পরিণতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই সমাজকে অশ্লীলতামুক্ত রাখতে হলে এখনই পর্দা পালনের প্রতি যত্নবান হতে হবে।
প্রবৃত্তি ও শয়তান মানুষের চিরশত্রু। এদের প্রশ্রয় দিলে, এরা ধীরে ধীরে ভালো ও পুণ্যবান ব্যক্তিকেও গুনাহে লিপ্ত করে দেয়। তাই প্রবৃত্তি ও শয়তানকে কোনো ধরনের সুযোগই দেয়া যাবে না। আর নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার দ্বারা প্রবৃত্তি ও শয়তান সুযোগ পেয়ে যায়। এটি স্বাভাবিক যে, যেখানে গুনাহের সুযোগ থাকবে সেখানে একদিন না একদিন গুনাহ হয়েই যাবে। তাই সতর্কতার দাবি হচ্ছে, যে পথে চলতে মানা সে পথের ধারে-কাছেও না যাওয়া। কেননা সতর্কতা অবলম্বন করা লজ্জিত হওয়া থেকে উত্তম। তাই নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশাকে বন্ধ করতে হবে। শরীয়তে এর ওপর অনেক বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
নারী হচ্ছে এমন যে, নারী সৎ হলে তা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জিনিসে পরিণত হয়। আর যদি নারী নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতায় সে হাজারও পুরুষকে ছাড়িয়ে যায়। পবিত্র কুরআন মাজীদে নারীদের ধোঁকা ও মন্ত্রণাকে বড় শক্তিশালী বলা হয়েছে। নারী যদি ইচ্ছা করে, তাহলে সে পুরুষকে ঘোলা জলে হাবুডুবু খাওয়াতে পারে। পক্ষান্তরে পুরুষের প্রবৃত্তিতে নারীর প্রতি আকর্ষণ ঢেলে দেয়া হয়েছে। পুরুষের মন নারী থেকে কখনো বৃদ্ধ হয় না। তাই পরস্পরকে পরস্পর থেকে পৃথক রাখা জরুরি। বর্তমানে সর্বত্র নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার ফলে সংসার, সমাজ ও শত শত জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। চারদিকে অশ্লীলতার সয়লাব দেখা যাচ্ছে। অবাধ মেলামেশা জন্ম দিচ্ছে অবাধ যৌনাচার। সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তি থেকে লজ্জা-শরম বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তাই আধুনিকতার নামে ধেয়ে আসা নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনার এ ঢলকে রুখতে হলে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশাকে বর্জন করতে হবে।
অনেক লম্বা করে ফেললাম। যাই হোক, হযরতের মূল বইটি উর্দু ভাষায় রচিত। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি তারই বাংলা অনুবাদ। অনুবাদের ক্ষেত্রে আমার যেসব বন্ধু ও শ্রদ্ধাভাজন বড়দের থেকে প্রতিনিয়ত উৎসাহ-উদ্দীপনা পেয়েছি, তাদের কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি। আল্লাহ তাদের জাযায়ে খাইর দান করুন। সেই সাথে প্রকাশকের প্রতিও বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। অনেক কষ্ট-মেহনত
‘এখন যৌবন যার’ করে তিনি বইটি পাঠকের হাতে তুলে দিচ্ছেন। আল্লাহ তাআলার দরবারে তাঁর সুস্থ ও সুন্দর জীবন কামনা করছি। মুহতারাম মুফতী জাওয়ায আহমাদ সাহেব ও শ্রদ্ধাভাজন মাওলানা আহমাদ ইউসুফ শরীফ সাহেব (হাফিযাহুমুল্লাহ) বইটির তাহকীক ও তাখরীজের কাজে তাঁদের মূল্যবান সময় ব্যয় করেছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁদের উত্তম বিনিময় দান করুন।
সময়োপযোগী এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ পাঠকের হাতে তুলে দেয়ার কাজে শরীক থাকতে পেরে নিজেকেও সৌভাগ্যবান মনে করছি এবং মহান আল্লাহ তাআলার দরবারে অশেষ শুকরিয়া আদায় করছি, আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ তাআলার দরবারে সবিনয় প্রার্থনা, আল্লাহ যেন অনূদিত গ্রন্থটিকে তার মূলের মতোই কবুল করেন ও পাঠকপ্রিয়তা দান করেন। আমীন!
আবু মিদফা সাইফুল ইসলাম।
আরো পড়তে অথবা দেখতে – অনুগ্রহ করে বইটির অরিজিনাল কপি ওয়াফিলাইফ থেকে সংগ্রহ করুন।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?