একনজরে : জাতিসংঘ ও মুসলিম বিশ্ব -Zia Ul Haque

Post ID 111552

                    
Photo 

কাশ্মিরে বিগত ৭০ বসরে কম করে হলেও ৬০ হাজার প্রাণ ঝরে গেছে। ১৯৪৮ সালের ২১ শে এপ্রিল পাস হওয়া জাতিসংঘের ৪৭ নম্বর রেজুলেশনটা বাস্তবায়নে ভারতকে বাধ্য করতে পারেনি। স্বাধীনতার প্রশ্নে সেখানে কোন গণভোট আজ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়নি।
কিন্তু ১৯৯৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ১২৬৪ নম্বর রেজুলেশনা কয়েক মাসের মধ্যেই পূর্ণ বাস্তবায়ন করে পূর্ব তিমুরকে ইন্দোনেশিয়া হতে পৃথক ও স্বাধীন করে দিতে পেরেছে। একই কথা প্রযোজ্য দক্ষিণ সুদানের বেলাতে, ২০১১ সালে জাতিসংঘের ১৯৯৬ নম্বর রেজুলেশন বাস্তবায়ন করে খৃষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ, তেল সমৃদ্ধ দক্ষিণ সুদানকে সুদান হতে স্বাধীন করে দিতে কোন সমস্যা হয়নি তার।
বসনিয়া হার্জেগোভিনার ক্ষেত্রেও আরও ভয়াবহ অবস্থা ছিল তার। ১৯৯১ সালের ৭১৩ নম্বর জাতিসংঘ রেজুলেশন দ্বারা বসনীয়দের উপরে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করতে পারলেও সেই নিরস্ত্র দেশবাসীকে রক্ষার জন্য পাশকৃত, ১৯৯৩ সালের ৮১৯ নম্বর রেজুলেশনটা সন্ত্রাসী সার্বীয়দের মানাতে পারেনি। ফলত আড়াই লক্ষ মুসলমানকে প্রাণ দিতে হয়েছে বর্বরোচিতভাবে। লক্ষ লক্ষ নারীর সম্ভ্রমহানী হয়েছে। জাতিসংঘ মুখে কুলুপ এঁটে বসে থেকেছে। 
২০০১ খৃষ্টাব্দের ২০ শে এপ্রিল রেজুলেশন পাশ করেও তা রাশিয়াকে মানানো যায়নি, ফলে চেচনিয়ায় হত্যযজ্ঞ সে বন্ধ করতে পারেনি। 
সাদ্দাম হোসেনের ইরাককে কুয়েত হতে প্রয়োজনে শক্তির জোরে বের করার জন্য ১৫ই জানুয়ারি, ১৯৯১, ৬৭৮ নম্বর রেজুলেশন পাশ করে জাতিসংঘ, তা বাস্তবায়িত হয়। ২০০২ সালের ৮ই নভেম্বর আবার ১৪৪১ নম্বর রেজুলেশন পাশ করে আমেরিকা ও তার মিত্রদের ইরাক আক্রমণ করার সুযোগ করে দেয়া হয়। মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশটিকে ধ্বস করা হয় এভাবেই। 
ইরানের পারমানবিক বোমা ঠেকাতে ২০০৬ সাল (রেজুলেশন ন: ১৬৯৬) থেকে ২০১৫ সালের ২২ শে জুলাই পর্যন্ত (রেজুলেশন ন: ২২৩১) মোট ১১টি রেজুলেশন পাশ করে তার প্রতিটি বাস্তবায়ন করে ইরানের পারমানবিক কর্মসূচীকে নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। বাড়ির পাশে বার্মায় রোহিঙ্গা নিধনের বেলাতে জাতিসংঘ বাগাড়াম্বর করলেও একটা রেজুলেশনও পাশ করতে পারেনি। 
উদাহারণ দিতে গেলে এরকম কয়েক ডজন ঘটনার উদারাণ টেনে দেখানো যাবে, খৃষ্টান ও ইহুদি স্বার্থ রক্ষার বেলায় জাতিসংঘের সফলতা একশতভাগ। কিন্তু তার বিপরিতে মুসলিম স্বার্থরক্ষায় ঠিক একশতভাগই ব্যর্থ! ঘটনা কি?
আজ থেকে বেশ ক’টা বসর আগে (২০০৬ খৃ:) London থেকে ট্রেনে Newcastle ফেরার পথে ঘটনাক্রমে সহযাত্রী হিসেবে পেয়েছিলাম একটি ইরাকি পরিবারকে। তারা এডিনবার্গ যাচ্ছিলেন। সারাটা পথ ইরাকি পেট্রোকেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোকের সাথে আলাপ করতে করতে এসেছিলাম। স্ত্রী’সহ সাথে তার বসর দমেকের দুটো জমজ ছেলে ছিল।
আমাদের মুখে বার বার উমামুল মুত্তাহিদা (জাতিসংঘ) নামটি শুনতে শুনতে একটা ছেলে হঠাৎ করেই তার বাবাকে জিজ্ঞেস করে বসেছিল; ‘উমামুল মুত্তাহিদা‘ কি?  আরব বাচ্চাকে জাতিসংঘের সঙ্গা বুঝাতে গিয়ে যা বলেছিলাম, সেটাকেই পরে ছোট্ট একটা কবিতায় রুপ দিয়েছিলাম এভাবে;
শোনো বাহে-
নিত্য যেথা আসর বসে চিত্তসূখের উল্লাসে- 
বিত্ত যেথা সত্য কেনে দর্প-দাপট উচ্ছাসে! 
জাতির যেথা জাত চলে যায়, মৃত্যু যেথা ক্রুর হাসে। 
শোনো বাহে, জাতি সংঘ তারেই কহে। 
ফিলিস্তিনে চলমান মুসলিম হত্যাযজ্ঞের প্রেক্ষাপটে ঘটনাটার সাথে সাথে মুসলিম স্বার্থ রক্ষায় জাতিসংঘের অনীহা ও ব্যর্থতার ইতিহাসটা আবারও মনের মধ্যে ভেসে উঠলো। জাতিসংঘ নামে ইবলিশের এই চক্র হতে মুসলমানদের মুক্তির পথ খুঁজতেই হবে।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?