একটি সুসাইড কেস অতঃপর…(পঞ্চম পর্ব)
©মারুফ হুসাইন।
১১.
বাজার থেকে বাড়ি ফিরে দেখি চেয়ারম্যান আর তার ছেলে শাহেদ বসে আছে৷ ঘরে ঢুকতেই সালেহা বলে উঠলো, ‘তোমার মাথা ফেটে গেছে শুনে চেয়ারম্যান চাচা তোমাকে দেখতে এসেছে৷ আর তুমি টৈটৈ করে ঘুরে বেড়াচ্ছো!’
সালেহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম, ‘একটু কাজ ছিলো৷ তাই বাজারে গিয়েছিলাম।’
‘এই অবস্থায় না গেলে হতো না?’
আমি কোনো উত্তর না দিয়ে চেয়ারম্যান আর শাহেদের বরাবর গিয়ে বসলাম।
‘তুমি চাচার সাথে কথা বলো! আমি চা-বিস্কিট দিচ্ছি।’ সালেহা বলল।
‘আরে মা কিছু দেয়া লাগবে না। জামাইয়ের অসুস্থতার কথা শুনে দেখতে আসলাম৷ তুই কোনো জামেলা করিস না। জামাইয়ের সাথে কথা বলেই চলে যাবো।’ চেয়ারম্যানের কথা সালেহা কানে নেয়নি। তার আগেই চলে গেছে। সালেহা চলে যেতেই চেয়ারম্যান কিছুটা সামনে এগিয়ে আসলো, ‘জামাই! বলছিলাম তোমারে, তুমি জামাই মানুষ। এসব ঝামেলায় জড়াতে না। তবুও জড়িয়ে নিজের কি হালত করে ফেললে।’
আমি মুচকি হেঁসে বললাম, ‘চাচা! আমার চিন্তা আপনার করতে হবে না।’
‘তুমি জামাই মানুষ তোমার কিছু হয়ে গেলে তো আমাদেরও খারাপ লাগবে। তাই জামাই বলি কি, এখনো সময় আছে। সরে দাঁড়াও। শুধু শুধু নিজের উপর ঝামেলা ডেকে আনছো কেনো?’
‘ধন্যবাদ। আমার চিন্তা আপনার করতে হবে না। আপনি এখন আসতে পারেন।’ বলতেই চেয়ারম্যান উঠে দাঁড়ালো। তার চোখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে। চাপা গলায় গর্জে উঠে আমাকে বলল, ‘জামাই! কাজটা ঠিক করলে না।’
‘জ্বী ঠিক করিনি। আসসালামু আলাইকুম!’ বলে তাদেরকে গেটের দিকে ইশারা করলাম। তারা চলে গেলো। আমি বসে রইলাম৷ কয়েক মিনিট পর চা-বিস্কুট হাতে নিয়ে সালেহা আসলো, ‘তারা চলে গেছে?’
‘হ্যাঁ। চলে গেছে।’
‘বসতে বলনি?’
‘বলেছি কিন্তু বসেনি৷’
‘তুমি ভালো করে বলবে তো!’
‘ভালো করেই বলেছি।’
‘তাহলে চলে গেলো কেন?’ বলে বিরক্তি নিয়ে সালেহা চলে রান্না ঘরের দিকে চলে যেতে লাগলো।
আমি পিছন থেকে ডেকে বললাম, ‘এগুলা নিয়ে যাচ্ছো কেন?’
‘ওনারা চলে গেছে তাই।’
‘আমাকে খেতে দেয়া যাবে না নাকি?’
‘তুমি খেয়ে কি করবে? কাজ নিয়ে পড়ে থাকলেই তো তোমার পেট ভরে যায়৷’ সালেহা আর দাঁড়ালো না। চলে গেলো।
বিকেল দিকে আসাদ আসলো। আমাকে ডেকে বলল, ‘ভাইয়া! হাদি ভাই আসলে আপনাকে জানাতে বলেছিলেন?’
‘এসেছে?’
‘না ভাইয়া এখনো আসেনি।’
‘আচ্ছা একবার চলো তো তার বাড়িতে যাওয়া যাক।’ আমি সময় দেখলাম। ৫টা বাজে, ‘এখন গেলে কি তার ছাত্র-ছাত্রীদের পাওয়া যাবে?’
আসাদ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘হ্যা ভাইয়া পাওয়া যাবে হয়তো৷ হাদি ভাই না থাকলে তো জহির স্যারই পড়ান।’
মাস্টার বাড়িতে ঢুকতেই জহির স্যারকে পেয়ে গেলাম। ছাত্র-ছাত্রী পড়াচ্ছে। আগের দিন তাকে বলেছিলাম, তার ছাত্রী হাবিবার কেসটা আমি ইনভেষ্টিগেশন করছি। খুনিকে ধরার জন্য সে জোর দিয়ে বলেছিলো। আজ আমি আসতেই খুনিকে ধরতে পারলাম কি না! জিজ্ঞাসা করলো৷
‘না স্যার এখনো ধরতে পারিনি। তবে আশা করছি আর সময় লাগবে না।’
জহির স্যার টেবিলের উপর থেকে চশমাটা নিয়ে চোখে দিলেন। তখনি হয়তো আমার মাথার ব্যান্ডেজ খেয়াল করলেন, ‘তোমার মাথায় কি হয়েছে?’
‘তেমন কিছু হয়নি৷ আপনার ছেলে কি এসেছে?’
‘না বাবা! এখনো আসেনি। দু দিন ধরে ফোনেও পাচ্ছি না। আমার খুব চিন্তা হচ্ছে৷’
‘চিন্তার কিছু নেই। চলে আসবে। আচ্ছা স্যার! আমি আপনার ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে একটু কথা বলতে চাচ্ছিলাম।’
‘জ্বী অবশ্যই।’ বলে জহির স্যার অন্য রুমে চলে গেলেন।
আমি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে উদ্দেশ্য করে হাবিবার কথা জিজ্ঞাসা করলাম। তারা জানালো, হাবিবার মৃত্যুর দিন হাদি স্যার তাদেরকে ঠিক সময়ে ছুটি দিয়ে দিলেও হাবিবাকে ছুটি দেয়নি। সেদিন হাবিবা হোমওয়ার্ক করে আসেনি বলে শাস্তিস্বরূপ তাকে এক ঘন্টা বেশী পড়ে যেতে বলেছে। তাই তারা সবাই যখন চলে গেছে তখনো হাবিবা রয়ে গেছে৷ পরে কখন তাকে ছুটি দেয়া হয়েছে সেটা তারা জানে না।
ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা বলে জহির স্যারকে ডাকলাম৷ তাকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হাদি কেনো ঢাকা গিয়েছে?’
‘জানি না৷ হাবিবার যেদিন মারা যায়৷ সেদিন হাবিবার পড়া শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিলো৷ তখন তাকে এগিয়ে দিয়ে আসতে হাদিও বাইরে যায়। ঘন্টাখানেক পর ফোন দিয়ে বলে যে ঢাকায় তার কোন বন্ধু এক্সিডেন্ট করেছে৷ হাসপাতালে ভর্তি। তাই সে ঢাকা যাচ্ছে। আমি তাকে বাসায় এসে তারপর যেতে বলেছিলাম৷ কিন্তু জানালো যে সে রওনা দিয়ে ফেলেছে।’
‘সেদিনই রাতে হাবিবার লাশ পাওয়া যায়। তাতে আপনার মনে কোনো সংশয় তৈরি হয়নি?’
‘আমি একদিন পর জানতে পারি হাবিবা মারা গেছে।’
‘ধন্যবাদ স্যার! আজ আসি!’ বলে হাঁটা শুরু করলাম।
‘আমার ছেলে ঢাকার নামি দামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে। তাকে নৈতিক শিক্ষা দিয়ে বড় করেছি। সে এমন কোনো কাজ করতে পারে না। আর পুলিশ তো বলেছেই হাবিবা সুসাইড করেছে।’ পিছন থেকে জহির স্যার ঢেকে বললেন। আমি কোনো উত্তর দিলাম না। মুচকি হেঁসে হাঁটতে শুরু করলাম।
‘ভাইয়া! আপনার কি হাদি ভাইকে সন্দেহ হচ্ছে?’
‘গোয়েন্দাগিরিতে কাউকে ছাড় দেয়া যায় না। সবাইকে সন্দেহ করতে হয়। বুঝলে?’
‘জ্বী ভাইয়া! কিন্তু হাদি ভাই অনেক ভালো মানুষ।’
১২.
হাসপাতাল থেকে হাবিবার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট নিয়ে থানায় আসলাম। দু দিন থানায় আসা হয়নি। আমি অফিসে ঢুকতেই বুলবুল এসে জিজ্ঞাসা করলো, ‘স্যার! এখন আপনার শরীর কেমন?’
‘ভালো।’ বলে তাকে বসার জন্য ইশারা করলাম। সে আমার সামনের চেয়ারে বসে পরলো।
‘চা দিতে বলো!’ বলে আমি পকেট থেকে রিপোর্টটা বের করে দেখতে লাগলাম৷ কিছুক্ষণ পর চা আসলো। রিপোর্টটা ভাঁজ করে পকেটে রেখে চায়ের কাপে চুমুক দিলাম, ‘বুলবুল সাহেব?’
‘জ্বী স্যার!’
‘হাবিবা মার্ডার কেসটার ব্যাপারে যতটুকু জানেন বলে ফেলেন।’
‘স্যার! কেসটা ওসি স্যার নিজে হ্যান্ডেল করেছিলো। আর আমাদেরকে তেমন কিছু বলেনি।’
আমি বুলবুলের দিকে রিপোর্টটা এগিয়ে দিয়ে বললাম, ‘দেখুন!’
বুলবুল রিপোর্টটা দেখে বিস্ময় নিয়ে বলল, ‘স্যার! ওকে তো মারার আগে রেপ করা হয়েছে।’
‘এক্সাক্টলি তাই। কিন্তু আমার প্রশ্ন কেসটাকে সুসাইড কেস বলে চালানো হলো কেন?’
‘জানি না স্যার।’
‘পুলিশে চাকরী নিয়েছেন কেন সামান্য ব্যাপারগূলো না জানলে!’
‘কেসটা সজিব স্যার নিজে দেখেছে। আমাদেরকে কিছু জানায়নি৷’
‘ঠিক আছে। আপনি আসুন!’ বুলবুল উঠে চলে গেলো। আমি চেয়ারে হেলান দিলাম। পুরো কেসটা মাথায় সাজানোর চেষ্টা করতে লাগলাম, শাহেদ আর হাবিবার মাঝে সম্পর্ক ছিলো। সেটা হাবু ভাই জানতে পেরে চেয়ারম্যানের কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায়। কিন্তু চেয়ারম্যান নাকচ করে দেয়৷ তখন হাবু ভাই কেস করার ভয় দেখায় বলে চেয়ারম্যান হুমকি-ধামকি দেয়৷ হাবু ভাই কেস করতে গেলে সজিব কেস নেয় না৷ তার কিছু দিন পর হাবিবা হাদির কাছে পড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়েছে৷ তাকে এগিয়ে দেয়ার জন্য হাদিও তার সাথে যায়। সেদিনই পুকুরে হাবিবার লাশ পাওয়া যায়৷ আর হাদি নিরুদ্দেশ। মানে ঢাকা চলে যায়। হাবিবার কেসটা সজিবের কাছে গেলে সেটা সে সুসাইড কেস হিসেবে চালিয়ে দেয়৷ তারপর সেও বাজেভাবে খুন হয়৷ কেস দুইটা তদন্ত করতে গেলে আমার উপরও হামলা হয়।’ আমার মাথা ধরে গেছে৷ টেবিলের ড্রয়ার থেকে সিগারেট বের করে জ্বালিয়ে চেয়ারে হেলান দিলাম, এখানে দুইটা কেস৷ এক. হাবিবার হত্যা যা সুসাইড হিসেবে চালানোর চেষ্টা করা হয়েছে৷ দুই. দায়িত্বরত অফিসার সজিবের খুন। যে কিনা প্রথম খুনটাকে সুসাইড হিসেবে চালানোর চেষ্টা করেছে৷ প্রথম কেসের সাস্পেক্ট চেয়ারম্যান পুত্র শাহেদ এবং টিউশন মাস্টার হাদি৷ যে কিনা হাবিবার মৃত্যুর দিন পালিয়ে গেছে৷ শাহেদের খুন করার মোটিভ তার আর হাবিবার সম্পর্ক ছিল৷ কিন্তু সে বিয়ে করতে চায়নি। দ্বিতীয় জনের কোনো মোটিভ নেই৷ কিন্তু খুনের আগ মুহূর্তে সে ভিক্টিমের সাথে ছিলো৷ কিন্তু এরপর থেকে সে পালাতক। তাই সন্দেহটা তার দিকেও যায়৷ আর সজিবের খুনের সাস্পেক্ট…..’ সজিবের কথা ভাবতে গেলেই মনে হলো, এই কেসের আগে পিছে কিছুই নেই। তার খুন হওয়ার মোটিভ একটাই, হাবিবার হত্যাকে সুসাইড হিসেবে চালিয়ে দেয়া। হঠাৎ আমার মনে হলো, হাবু ভাই সজিবকে মারেনি তো! তার মেয়ের হত্যাকে সুসাইড হিসেবে চালানোর দায়ে। তাহলে তো সে চেয়ারম্যান, শাহেদ কাউকেই ছাড়বে না৷
‘হাবু ভাই কৃষক মানুষ৷ কাস্তের ব্যবহার ভালো জানে। তাই কাস্তে দ্বারা সজিবের গলা কাটা অসম্ভব নয়। কিন্তু আমার উপর আক্রমণ করাবে কেন! হাবু ভাই সাধাসিধা মানুষ৷ সে এতো বড় কাজ কিভাবে করবে!’ আবার মনে হল, ‘সে একজন বাবা। মেয়ের জন্য একজন বাবা সব করতে পারে।’ হরেক রকম ভাবনায় মাথায় কেমন ঘোর-প্যাচ লেগে গেলো। আমি চেয়ার ছেড়ে উঠলাম। বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
ঘাটে পৌছে ট্রলারে উঠবো ঠিক তখনি পিছন থেকে কেউ ডাক দিলো। তাকিয়ে দেখি শাহেদ দাঁডিয়ে আছে, ‘ভাইয়া! আপনার সাথে কিছু কথা আছে৷ এদিকে আসবেন?’
আমি তার দিকে এগিয়ে গেলাম। একটু নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে সে বলল, ‘ভাইয়া! আমি হাবিবাকে খুব ভালোবাসতাম।’
‘তাহলে মারলে কেন?’
‘ভাইয়া আমি মারিনি। আমি ওকে খুব ভালোবাসতাম। আমি কেনো মারতে যাবো!’
‘তাহলে কে মেরেছে?’
‘আমি জানি না ভাইয়া। তবে ওর খুনের কেসে আমাকে ফাঁসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।’
‘বিস্তারিত বলো!’
‘আমি ওকে ভালোবাসতাম৷ বিয়েও করবো ভেবেছিলাম। কিন্তু বাবা রাজি হচ্ছিলো না। তাই ও সুসাইড করে। এর আগে আমার আর বাবার নামে হাবিবার বাবা জিডি করে। সেটার উপর ভিত্তি করে আরো কি কি প্রমাণ তৈরি করে নিয়ে ওসি সজিব আমাদেরকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে। মোটা অংকের টাকা দাবী করে। বলে টাকা না দিলে সুসাইডকে তারা খুন হিসেবে চালিয়ে আমাদেরকে ফাঁসিয়ে দিবে।…..’
‘তাই তোমরা ওসি সজিবকে মেরে ফেলেছো?’
‘না ভাইয়া! আমরা টাকা দিতে রাজি হই। টাকা দিয়েও আসি। যে রাতে টাকা দিয়ে আসি। তারপর দিন শুনি ওসি সজিব খুন হয়ে গেছে। এরপর দিন থেকে নতুন একটা নাম্বার থেকে ব্ল্যাকমেইলিং কল আসতে থাকে। সে দাবী করে ওসি সজিবের সাথে চুক্তির কল রেকর্ডিং আছে। সে রেকর্ডিংও নাকি তার কাছে আছে। ওসি সজিব আমাদের সাথে এমনভাবে কথা বলেছিল যে খুনটা আমরাই করেছি৷ তাই বাবা ভয় পেয়ে যায়৷ টাকা দিতে রাজি হয়৷ নতুন আননোন ব্ল্যাকমেইলার দাবি করে সে রেকর্ডিং থেকে সহজেই প্রমাণ করে ফেলতে পারবে, হাবিবা-সজিব দুজনকেই আমরা খুন করেছি। যদি তাদেরকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা না দেই। তাহলে আমাদেরকে ফাঁসিয়ে দিবে। বাবা ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু টাকা দিতে রাজি হয় না। তারপর থেকে প্রতিদিন কল দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে৷’ শাহেদ একটু থামে, ‘এসব ব্ল্যাকমেইলিং কল পেতে পেতে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি ভাইয়া!’
‘তাহলে তোমার বাবা আমাকে কেস ছাড়তে বলছে কেনো?’
‘আপনি কেসটা নিয়েছেন বলে বাবা আরো ভয় পেয়ে যায়। ভাবে আমরা ফেঁসে যাবো৷ তাই বাবা আপনাকে কেসটা ছাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছে।’
‘তোমার কথা আমি কেনো বিশ্বাস করবো?’
‘ভাইয়া! বিশ্বাস করা না করা আপনার ব্যাপার। তবে আমি সত্যিই বলেছি।’
‘তাহলে তুমি বলতে চাচ্ছো যে হাবিবা সুসাইড করেছে?’
‘জ্বী ভাইয়া।’
‘কিন্তু মৃত্যুর আগে সে যে র্যাপ হয়েছে।’
‘কি বলছেন এসব?’ বলে শাহেদ মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো। আমি আর তাকে ঘাটলাম না৷ ব্ল্যাকমেইলারের নাম্বারটা নিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম।
ব্ল্যাকমেইলারের নাম্বারটা আমার ঢাকা অফিসে মেসেজ করে দিয়ে নাম্বারের ডিটেইলস বের করে দিতে বললাম৷
শাহেদের কথা আমার পুরাপুরি বিশ্বাস হয়নি। তবুও কেসটা নিয়ে আমি নতুন করে ভাবতে বাধ্য হলাম৷ শাহেদের চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছে যে সে সত্য বলছে। কিন্তু আবার মনে হচ্ছে সে বা তারা আমার সাথে গেইম খেলা শুরু করেছে। পরশু দিন আমার কাছে আসা ফোন কলটাও আমাকে ভাবাচ্ছে৷ লোকটা আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছে। তিনটায় যেতে বলেছে। আমি গিয়েছিও। ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করেও লোকটার দেখা পাইনি৷ আমার কিছুই বুঝে আসছে না৷ সময় যাচ্ছে কিন্তু কেসটার জোট খুলছে না৷ বরং আরো বেশী জট লাগছে৷ আমি কোনোভাবেই বুঝে উঠতে পারছি না, শাহেদরা যদি সজিবের ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয় তাহলে হাবিবাকে রেপ করেই বা মারলো কে? আর সজিবকেই বা কে মারলো? এবং কেনো মারলো? যদি ধরেই নেই হাবু ভাই মেয়ে হত্যার প্রতিশোধ নিচ্ছে৷ তাহলে তো চেয়ারম্যান আর শাহেদও খুন হতে পারে।
আবার শাহেদের কথা সত্য হলে হাবিবার খুনি অন্য কেউ? কিন্তু সেটা কে? আর তাকে কেনোই বা মারলো? আর শাহেদের কথা মিথ্যা হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করতে হবে৷ সেটা কিভাবে করবো বুঝে আসছে না৷
সব কিছু কেমন ঝাপসা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে৷ কিছুই বুঝতে পারছি না৷
চলবে……