একটি ঘর, একটি পাঠাগার; কবে দেখবো এমন দিন?

একটি জাতি কতটুকু সভ্য, তা মূল্যায়ন করা যায় সে-জাতির লোকেরা কেমন বই পড়ে, তা দেখে। অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন—এই তথ্য-প্রযুক্তির যুগে বই পড়া কতটুকু প্রয়োজন! বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা আসলে কখনোই ফুরাবার নয়। বইয়ের সাথে আছে জ্ঞানের সংযোগ। আর এই জ্ঞানই সৃষ্টির অন্যান্য প্রাণীদের থেকে মানুষকে আলাদা করে। জ্ঞানই মানুষকে বানায় আশরাফুল মাখলুকাত। 

যেই আদমকে ফেরেশতারা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের আদেশে সিজদা করেছিল, সেই আদমেরও ছিল ফেরেশতাদের ওপরে জ্ঞানগত শ্রেষ্ঠত্ব। আদম আল্লাহর সৃষ্টিজগতের বস্তুসমূহের নাম জানতেন, যা ফেরেশতারা জানত না। আলাইহিস-সালাম। 
পুরো কুল-কায়নাতের বাদশাহ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ‘কিতাব’ অর্থাৎ বইয়ের মাধ্যমে তাঁর সুমহান বাণী আমাদের জানিয়েছেন। তিনি মানুষের সাথে বইয়ের মাধ্যমে কথা বলেন। ভাবতে পারেন? যে-জিনিসের মাধ্যমে এই গোটা সৃষ্টি জগতের রবের সাথে আমরা নিজেদের সংযুক্ত করতে পারি, তা হলো ‘কিতাব’। 
আমরা যখন সালাতে দাঁড়াই, তখন আল্লাহর দেওয়া বই থেকেই আমরা তিলাওয়াত করি। আল্লাহর প্রিয় হাবিব, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চৌদ্দশ বছর আগের বলে যাওয়া পবিত্র কথামালাও আমরা জানতে পারি বই থেকে।
পৃথিবীর নিকট অতীতের যত জ্ঞান-প্রজ্ঞা, তা সংরক্ষিত আছে বইয়ে। একটা ভালো বইয়ে যখন ডুবে যাই, তখন আমরা লিটারেলি ‘টাইম ট্রাভেল’ করি। কিছু ভালো বই পড়ার মানে হলো—পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কিছু মানুষের আন্তরিক সঙ্গ লাভ করা। শৈশবের কাদামাটির মতো নরম মননে একটি বই যে-আবেদন সৃষ্টি করতে পারে, তার রেশ রয়ে যায় বাকি জীবনে। 
বই আমাদের ভাবতে শেখায়। আমাদের এলোমেলো চিন্তাগুলোকে কাঠামো দিতে শেখায়। বই মানুষের কল্পনাশক্তিকে বিকশিত করে। মানুষের রুচিশীল ব্যক্তিত্বের উন্নতি ঘটায়। তাই একজন পাঠক সর্বদাই একজন মননশীল ব্যক্তি হয়ে থাকেন।
আমাদের কথা ও আচরণ কীভাবে সুন্দর হবে—যদি আমরা বই না পড়ি? কীভাবে আমরা একেকজন সমাজকর্মী ও উদ্যোক্তা হয়ে উঠব; যদি আমরা নিজেদের সৃজনশীলতা আর বুদ্ধিবৃত্তিকে বিকশিত না করতে পারি? 
বই পড়ার হাজারটা উপকারিতা আছে। খুব খেয়াল করলে দেখবেন, সেই জাতিই সভ্যতার দিক থেকে সবচেয়ে উন্নত, যেই জাতির মানুষরা ভালো ভালো বই পড়ে। বই পাঠের এমন শতশত উপকার গ্রহণ থেকে আমরা যদি স্বেচ্ছায় নিজেদের বঞ্চিত করি, তবে আমরা কীভাবে অন্য জাতিগুলোর তুলনায় উন্নত হব?
একটি ঘর, একটি পাঠাগার; কবে দেখব এমন দিন? কবে দেখব—আমাদের প্রত্যেকটি মহল্লা, স্কুলে, মাদ্‌রাসা-মসজিদে একেকটি লাইব্রেরি গড়ে উঠেছে? কবে আমরা হয়ে উঠব পড়ুয়া জাতি? 
কবে আমরা জ্ঞানচর্চার গুরুত্বপূর্ণ এই মাধ্যম ‘বই’কে মূল্যায়ন করতে শিখব? প্রকাশনাসংশ্লিষ্ট স্বপ্নবাজ মানুষেরা কবে এদেশে সত্যিকারঅর্থে সম্মান পাবে? কবে আমরা সত্যি সত্যি উন্নত ও সভ্য হব?
আমরা যদি সত্যিই উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি গড়তে চাই, তবে আমাদের সমাজে বইকে জনপ্রিয় করে তুলতে হবে। বইকে বানাতে হবে শ্রেষ্ঠ উপহার। বই হাতে থাকার অর্থ করে তুলতে হবে রুচিশীলতার বহিঃপ্রকাশ। বই পাঠের পাশাপাশি সাজিয়ে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠুক। ‘একটি ঘর, একটি পাঠাগার’—এমন স্বপ্নের সারথি হোন আপনিও। বইয়ের রাজ্যে আপনাকে স্বাগতম। 
সিয়ান | বিশুদ্ধ জ্ঞান | বিশ্বমান |সিয়ান পাবলিকেশন
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?