আরবের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সুদর্শন বালকের নাম উসমান। নির্মল চরিত্রের অধিকারী, শান্ত-শিষ্ট-কোমল মননের অধিকারী। ধন-সম্পদ আর ঐশ্বর্যের কোনো অভাব নেই তার জীবনে। গোত্রের সবাই তাকে শ্রদ্ধা করে, ভালোবাসে। ব্যবসা-বাণিজ্যে সকলের চেয়ে ছিলেন এগিয়ে। একবার তিনি শামে তার ব্যবসায়ী কাফিলার সাথে ছিলেন। স্বপ্ন দেখেন তিনি। ঘুম ভেঙে যায় উসমানের।
জন্মভূমি মক্কার দিকে ঘোড়া হাকান তিনি। জানতে পারেন নবি মুহাম্মদের আত্মপ্রকাশের কথা। বিলম্ব করেন না ইসলাম গ্রহণে। সিদ্দিকে আকবারের মাধ্যমে হয়ে যান প্রথম সারির মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। তারপর সয়ে যান জুলুম-অত্যাচার। উপহার-স্বরূপ নবিজির প্রিয় কন্যা রুকাইয়ার বিয়ে হয় তার সাথে। বাড়তে থাকে জুলুমের ধারা। হিজরত করেন আবিসিনিয়ায়। একবার, দুইবার। হিজরত করেন মদিনায়।
নরম মননের অধিকারী এই মহান সাহাবি ছিলেন লজ্জাশীলতার মূর্তপ্রতিক। দান-সাদকায় ছিলেন সর্বাগ্রে। জুড়ি ছিল না তার দানের সাথে। যুদ্ধের অস্ত্র থেকে শুরু করে সকল স্থানে ছিল উসমানের দানের অংশ। মনখুলে দান করতেন তিনি। নবি কন্যা রুকাইয়ার মৃত্যুর পর আরেক নবি কন্যা উম্মু কুলসুমের সাথে প্রণয় সূত্রে আবদ্ধ হন।
তিনি ইসলামের তৃতীয় খলিফা। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর ইনতিকালের পর সর্বসম্মতিক্রমে তিনিই খিলাফতের আসন সৌভাগ্যমণ্ডিত করেন। বিজয়ের ধারা ছড়িয়ে দেন দূর থেকে বহুদূরে। খিলাফতি জীবনের বর্ণাঢ্য আয়োজন শেষে উগ্রদের হাতে শহিদ হন এই মহান খলিফা, দানবীর, জুননুরাইন। রাদিয়াল্লাহু আনহু ওয়া রাদু আনহু।
মিসরের প্রখ্যাত মুহাক্কিক, লেখক ও সাহিত্যিক শাইখ মুহাম্মদ আশরাফ আল-ওয়াহশ রচিত এর গ্রন্থ আমাদের এ মহান সাহাবিরই গল্প শোনাবে।
দুর্ভিক্ষের কবলে প্রাণ ওষ্ঠাগত মদিনাবাসীর। অনাহারে অর্ধহারে দিনাতিপাত করছেন উম্মাহের শ্রেষ্ঠ জামাত। মসজিদে নববির মিম্বারে উপবিষ্ট নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সাহাবায়ে কিরাম শ্রেষ্ঠ জবানের সুধা নিচ্ছেন একাগ্রচিত্তে।
হঠাৎই একটি সংবাদ সাহাবায়ে কিরামের মনোযোগে চিড় ধরাল। মদিনায় খাদ্য-শস্য এসেছে। দুর্ভিক্ষের কবলে পড়া মদিনাবাসী খাবারের সন্ধানে বের হয়ে গেলেন। রয়ে গেলেন কেবল গুটিকয়েক সাহাবি। যাদের মনোযোগে বিন্দুমাত্রও চিড় ধরেনি।
নবিজি তাদের নাম ধরে ধরে ঘোষণা করলেন। সুসংবাদ দিলেন। জান্নাতের সুসংবাদ। বললেন, আবু বকর জান্নাতি, উমর জান্নাতি, উসমান জান্নাতি, আলি জান্নাতি, তালহা জান্নাতি, জুবাইর ইবনুল আওয়াম জান্নাতি, আবদুর রহমান ইবনু আউফ জান্নাতি, সাদ ইবনু আবি ওয়াক্কাস জান্নাতি, সাইদ ইবনু জাইদ জান্নাতি, আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ জান্নাতি।
দশ সাহাবির এই দলেরই নামকরণ হলো আশারায়ে মুবাশশারা। সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন। দুনিয়ায় অবস্থানরত জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত। যাদের জীবনাচারে রয়েছে উম্মতের জন্য শ্রেষ্ঠ পাথেয়। তাদের প্রতিটি কাজ উম্মাহের জন্য স্বীকৃত দর্শন। তাদের জীবনে রয়েছে এমন দর্পণ; যা আমাদের জীবনকে করবে উজ্জ্বল দীপ্ত আভাময় ।
এ দশ সাহাবির মাঝে একজন হলেন নবিজামাতা, ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান ইবনু আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু। তার জীবনের পাঠ এবং বিশেষ কিছু ক্ষণকে অঙ্কন করা হয়েছে কালো কলমের কালিতে। কেন তিনি জান্নাতি, কীভাবে তিনি এর যোগ্য হলেন, কেমন ছিল তার জীবনযাপন, কীভাবে সাজিয়েছিলেন তিনি নিজ জীবন; তা জানতে অবগাহন করতে হবে বইটিতে। লুফে নিতে হবে মুক্তোমালা। তবেই মিলবে মুক্তির পথ৷ পাথেয় জুটবে জান্নাতের।
বইটি অনুবাদ করেছেন খোবাইব আহমাদ সাঈদ। দারুত তিবইয়ান থেকে তার অনূদিত কয়েকটি বই আগেও প্রকাশিত হয়েছে। পাঠকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে। পাঠকের ভালোবাসা কুড়িয়েছেন। এই বইটির মাধ্যমে আশা করছি তিনি আরও বেশি পাঠকের হৃদয়ে জায়গা করে নেবেন। প্রুফ সমন্বয় করেছেন আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ। দারুত তিবইয়ানের একজন একনিষ্ঠ সঙ্গী। আল্লাহ তাদের উভয়কেই উত্তম বিনিময় দান করুন।
সবশেষ পাঠকের কাছে নিবেদন, একটি বইকে সুন্দর ও নির্ভুল করতে যতটুকু চেষ্টা করা দরকার; আমরা তা করেছি। কিন্তু তারপরও যদি কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি দৃষ্টিগোচর হয়; তাহলে আমাদের জানাবেন। আমরা সংশোধন করে নেব ইনশাআল্লাহ।
বইটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আল্লাহ তাআলা উত্তম বিনিময় দান করুন
এবং বইটির ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা দান করুন। আমিন।
—প্রকাশক দারুত তিবইয়ান