আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সত্য ও ন্যায়বান হওয়ার আদেশ দিয়েছেন এবং অন্যায় ও অবিচার থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তিনি তাঁর সকল নবিদের পাঠিয়েছেন মানুষকে তাঁর এককত্বের দিকে আহ্বান করে তাওহীদের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করতে। তিনি নিষিদ্ধ করেছেন বিদ’আহ, মুসলিমদের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ, দলাদলি করা, দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ ও গীবত করা।
অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজকাল যারা ইসলামের দাওয়াহর কাজ করেন, নিজেদের স্কলার, স্টুডেন্ট অব নলেজ বা তালিবুল ইলম মনে করেন তাদের মাঝে ফেলো দা’ঈ, স্টুডেন্ট অফ নলেজ ও তালিবুল ইলমদের ত্রুটি ও দুর্বলতা নিয়ে প্রকাশ্যে ও গোপনে আলোচনা সমালোচনার এক ভয়াবহ ব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক সময় তারা পরস্পরের ভুল-ত্রুটির অডিও-ভিডিও মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে তাদের হেয় প্রতিপন্ন করেন। অথচ যে ইসলামের দাওয়াত তারা দিয়ে থাকেন সেই ইসলামের মূলনীতির সাথে এ কাজ অনেক দিক থেকেই সাংঘর্ষিক। যেমন—
১। এর দ্বারা একজন মুসলিমের অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়, যা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। আর এ ক্ষেত্রে যাদের অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয় তারা সাধারণ শ্রেণির মানুষও নন; বরং তারা হলেন মুসলিম সমাজের সেই সকল জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি যারা মানুষের মাঝে দ্বীনী জ্ঞানের আলো বিতরণে, মানুষের আকীদা-বিশ্বাস ও আমল-আখলাক সংশোধনের কাজে সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করেন। অতএব, তারা হলেন সমাজের সর্বোত্তম শ্রেণির মানুষ।
২। এর দ্বারা মুসলিমদের মাঝে দলাদলি ও অনৈক্যের বীজ বপন করা হয়, অথচ উম্মাহর জন্য ঐক্য এক অতীব প্রয়োজনীয় বিষয়; বিশেষ করে উম্মাহর এই সংকটময় মুহূর্তে। তাছাড়া যারা দ্বীনের প্রচারে নিয়োজিত তাদের গীবত করে ও দোষ-ত্রুটি প্রকাশ্যে সমালোচনার মাধ্যমে তাদের ছোট করার মধ্যে একমাত্র ইসলামের শত্রু, কাফির মুশরিক ও মুনাফিকদেরই স্বার্থ থাকতে পারে। অতএব, মু’মিনদের মধ্য থেকে ভুলক্রমে কেউ এ কাজ করে ফেললে তার উচিত—এ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং যেভাবে জনসমক্ষে সমালোচনা করেছে সেইভাবে জনসমক্ষে ক্ষমাপ্রার্থনা করে।
৩। এ কাজ দ্বারা ইসলামবিদ্বেষী, পাশ্চাত্যমনা, ধর্মনিরপেক্ষ নাস্তিকদেরই উপকার হয়। এরা এর দ্বারা নানা রকম গুজব ছড়িয়ে সমাজে ইসলামের দা’ঈদের হেয় প্রতিপন্ন করে ইসলামের দাওয়াতী কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার সুযোগ পায়। অথচ ইসলামি ভ্রাতৃত্ববোধ কখনো ইসলামবিরোধীদের মুসলিমদের বিরুদ্ধে কোনো সুযোগ তৈরি করে দেওয়াকে সমর্থন করে না।
৪। এর দ্বারা সাধারণ শ্রেণির মানুষেরা নানা রকম গুজব, গীবত ও নামীমাহমূলক(চোগলখুরি) কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। দুর্বলচিত্ত ও স্বল্প জ্ঞানী মানুষদের জন্য শয়তানের দ্বার খুলে যায়। তারা দা’ঈদের প্রতি আস্থা হারায়; যার অনিবার্য পরিণতি হলো ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়া।
৫। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, যে বিষয়টাকে কেন্দ্র করে কারো সমালোচনা করা হয়—তা হয় মিথ্যা, না হয় অর্ধ-মিথ্যা, না হয় অনুমান, না হয় ভুল পর্যবেক্ষণ, কিংবা একচোখা দর্শন, যা মূলত শয়তানের উসকে দেওয়া। অথচ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা বেশি বেশি অনুমান করা থেকে বিরত থাকো; কেননা কিছু অনুমান হলো পাপাচার।’ (সূরা আল হুজুরাত আয়াত: ১২)
একজন মু’মিনের কোনো কথার যতক্ষণ পর্যন্ত ভালো কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত কিছুতেই উচিত নয় তার কথার কোনো খারাপ অর্থ খুঁজে বের করা।
৬। কোনো স্কলার যদি কোনো ইজতেহাদ করেন সেটা কোনো দোষের বিষয় নয়, যদি তিনি তার যোগ্য হয়ে থাকেন। যদি তার ইজতেহাদের কেউ বিরোধিতা করেন, তারাও তা করতে পারেন, যদি তার ইজতেহাদকে ভুল মনে করেন। কিন্তু সর্বাবস্থায় তা করতে হবে দ্বীনী মেজাজ ও ভদ্রতা বজায় রেখে এবং আন্তরিকভাবে সত্যান্বেষণের মানসিকতা রেখে।
৭। যদি কারো কোনো কাজ সুস্পষ্টভাবেই ভুল প্রমাণিত হয় তবে প্রথমে তাকে তার ভুল সংশোধনের জন্য একাকিত্বে উপদেশ দিতে হবে। যদি কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, বিষয়টিকে জনসাধারণের দীনি কল্যাণের জন্য প্রকাশ্যে নিয়ে আসতে হবে, সে ক্ষেত্রেও তা করতে হবে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ বিনয়ের সাথে। ব্যক্তিগত আক্রমণ, কটাক্ষ, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করে এবং কারো নিয়্যতের ওপর হামলা না করে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন—‘হে ঈমানদাররা, কোনো সম্প্রদায় যেন অপর সম্প্রদায়কে ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও উপহাস না করে; হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম’। (আল হুজুরাত, আয়াতঃ ১১)
যে বা যারা দা’ঈদের অকারণ সমালোচনা করেন, আমি তাদের বলব তাওবা করতে। আর যদি সত্যিই আপনি ভালো মুসলিম এবং তার শুভাকাঙ্ক্ষী হন, তাহলে একটু সময় করে তার সাথে গিয়ে সাক্ষাৎ করুন। কিছু হাদিয়া তোহ্ফা দিন; তারপর আন্তরিকতার সাথে তাকে বুঝিয়ে বলুন।
আল্লাহ আমাদের সকলকে এই ব্যাধি থেকে হেফাজত করুন। আমীন!!!
সিয়ান | বিশুদ্ধ জ্ঞান | বিশ্বমান
Leave a comment