উমাইয়া খেলাফতের ইতিহাস
লেখক : মাহমুদ শাকের
প্রকাশনী : মাকতাবাতুল হাসান
বিষয় : ইসলামি ইতিহাস ও ঐতিহ্য
অনুবাদক : ইহতিশামুল হক
পৃষ্ঠা : 336
ভাষা : বাংলা
ইসলামি ইতিহাসের মধ্যে উমাইয়া খেলাফতের ইতিহাস অনেক বিকৃতির শিকার হয়েছে। আদর্শ চার খলিফার রাষ্ট্রনীতি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন একটি রাজ্যব্যবস্থা হিসাবে উপস্থাপন করা হয় উমাইয়া খেলাফতকে। ফলে স্বভাবতই মানুষের মনে এই ধারণার জন্ম নেয় যে, নববি যুগ ও আদর্শ খলিফাগণের পর ইসলাম স্বরূপে বিদ্যামান থাকেনি। অর্থাৎ খেলাফতে রাশেদা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইসলামি শাসনব্যবস্থারও বিলুপ্তি ঘটে আছে।
জ্ঞানের যে শাখাটিতে সবচেয়ে বেশি ভিত্তিহীন বিষয় যুক্ত হয়েছে, তা হলো ইতিহাস। মুসলিমদের হোক বা অমুসলিমদের। আমাদের মুসলিমদের ইতিহাসে উমাইয়া খেলাফতের ইতিহাস বেশ বিকৃতির স্বীকার হয়েছে, বিভিন্নরকম মিথ্যা অপবাদ আরোপিত হয়েছে তাদের ওপর। কিছু অভিযোগের সামান্য ভিত্তি থাকলেও অধিকাংশই ভিত্তিহীন ও পক্ষপাতমূলক।
উমাইয়াদের দোষারোপ করা হয়েছে বিভিন্ন দিক থেকে। দোষ দেওয়া হয়েছে কখনো আব্বাসিদের পক্ষ থেকে, যাদের যুগে ইসলামি ইতিহাসের সংকলন হয়েছিল। কখনো-বা শিয়া-খারেজিদের পক্ষ থেকে, যাদের দমন করতে উমাইয়া খলিফাগণ ছিলেন বদ্ধপরিকর। আবার কখনো কিছু নিষ্ঠাবান আবেগপ্রবণ মুসলিমও উমাইয়াদের সমালোচনা করেছেন কঠোরভাবে, যারা ইসলাম নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। এর উপযুক্ত কারণও তাদের কাছে বিদ্যমান ছিল। যেমন উমাইয়া শাসনামলে খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগে প্রচলিত শুরাব্যবস্থার পরিবর্তন, আহলে বাইতের প্রতি অবিচার, যুবাইর পরিবারের প্রতি জুলুম, হারামাইনের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করা ও মুসলিমদের প্রতি কঠোরতার আচরণ ইত্যাদি কারণে মানুষ তাদের প্রতি ছিল বীতশ্রদ্ধ।
তাদের ওপর এ সমস্ত অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ার বাহ্যিক আরও কিছু কারণও ছিল। যেমন আবু সুফিয়ান রা. ও মুআবিয়া রা.-এর মতো উমাইয়া সদস্যদের বিলম্বে ইসলামগ্রহণ, প্রাথমিক যুগে ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান, নবী পরিবার তথা আহলে বাইত ও আলি রা.-এর সমর্থকদের ওপর নেমে আসা অন্যায়-অবিচার, কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা, মদিনায় সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, কয়েকজন উমাইয়া শাসকের কঠোরতা ইত্যাদি বিষয়গুলো, পাশাপাশি আহলে বাইতের প্রতি সকল মুসলিমদের প্রচণ্ড ভালোবাসা তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো জনসমাজে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে সহায়ক ভূমিকা পালন
করেছে। অথচ কিছু ঘটনা ছাড়া বনু উমাইয়াদের শাসনামলে ইসলাম ও মুসলিমজাতির প্রভূত কল্যাণ অর্জিত হয়েছে।
বনু উমাইয়ার শাসকগণ আলেমদের যথেষ্ট সমাদর ও সমীহ করতেন। তাদেরকে বিভিন্ন প্রদেশের দায়িত্ব দিতেন। সেনা-অভিযানে তাদের কাছে নেতৃত্ব অর্পণ করতেন । বিচারকের পদে তাদের নিয়োগ দিতেন। তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন।
বনু উমাইয়া কখনো বিচারবিভাগে অন্যায় হস্তক্ষেপ করেনি। যোগ্য লোকদের হাতে এর দায়িত্ব অর্পণ করে বিচারবিভাগকে তারা স্বাধীন করে দিয়েছে।
তাদের হাতে অনেক বিজয় অর্জিত হয়েছে। যার ফলে পূর্বে চীনে আর পশ্চিমে আন্দালুস ও দক্ষিণ ফ্রান্সে ইসলামি ভূখণ্ড সম্প্রসারিত হয়েছে।
তারা অনাবাদি জমিসমূহকে আবাদ করতেন। জমিতে সেচের ব্যবস্থা করে দিতেন। নদনদী খনন করে দিতেন। এ ছাড়াও তাদের আরও অনেক অবদানে সমৃদ্ধ হয়েছে মুসলিমজাতি।
পরিশেষে বলব,
উমাইয়া-প্রতিপক্ষ, প্রাচ্যবিদ ও বিচারজ্ঞানহীন শত্রুরা উমাইয়াদের সম্পর্কে যে বিকৃত ও ফ্যাকাশে চিত্র উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছে বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি পাঠ করলে তাদের সে চেষ্টার অসারতা পাঠকের সামনে প্রকাশ পাবে বলে আশা করি।
বিনীত সম্পাদক
১৪ রমজান ১৪৪৩ হি.
১৬ এপ্রিল ২০২২ খ্রি.
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?