উধাও বই রিভিউ লেখকঃ শরীফুল হাসান | Udhaw By Shoriful Hasan

বইঃ উধাও
লেখকঃ শরীফুল হাসান 
প্রকাশকঃ বইঘর অ্যাপ
প্রকাশকালঃ এপ্রিল, ২০২২
ঘরানাঃ সুপারন্যাচারাল থ্রিলার
মূল্যঃ ৫০ টাকা
ফরম্যাটঃ ই-বুক
কাহিনি সংক্ষেপঃ আলোকনাথ সিনহা একজন স্কুল শিক্ষক। নির্বিরোধী ভালো মানুষ স্বভাবের এই ভদ্রলোক একদিন দেখা করলেন সাইকোলজিস্ট আহমেদ করিম সাহেবের সাথে। সমস্যাটা ভদ্রলোকের একমাত্র মেয়ে সোমলতাকে নিয়ে। মেয়েটা ইদানীং বাবা আলোকনাথ সহ বাড়ির সবাইকেই সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছে। তার ধারণা, তার পরিবারের কেউ আসল না। বরং একটা কালো ছায়া তাদেরকে গ্রাস করে তাদেরই চেহারা নিয়ে ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে। 
সহকারী সোহেলকে সাথে নিয়ে আহমেদ করিম সাহেব আলোকনাথবাবুর বাড়িতে গেলেন। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো, আলোকনাথবাবু তাঁদেরকে চিনতে পারলেন না। আসলেই চিনতে পারলেন না, নাকি না চেনার ভান করছেন ভদ্রলোক? এদিকে সোমলতার সমস্যাও যেন আরো বেড়ে গেছে। মেয়েটার সাথে আহমেদ করিমের কথা হলো বটে, কিন্তু তিনিও এই সমস্যার কোন তল তৎক্ষনাৎ খুঁজে পেলেন না। 
আঠারো শতকের শুরু দিকের কথা। ইউরোপে তখন ডাইনি সন্দেহে নারীদের পুড়িয়ে মারা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও বাভারিয়া’র এক অখ্যাত গ্রামে ভয়ঙ্কর ও ব্যাখ্যার অতীত কিছু ঘটনা ঘটেছিলো। ওই ঘটনাগুলোর সাথে সোমলতার কি কোন সম্পর্ক আছে? কালো ছায়াটা আসলে কিসের, যা গ্রাস করে নিয়ে একটা মানুষকে একদম মুছে ফেলছে সময়ের পাতা থেকে? এবার অদ্ভুত এক রহস্যের মুখোমুখি হলেন সাইকোলজিস্ট আহমেদ করিম, যা হয়তো টলিয়ে দেবে তাঁর লালন করা দীর্ঘদিনের বিশ্বাসের জগতটাকেই।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ সুলেখক শরীফুল হাসানের আহমেদ করিম সিরিজের নতুন কাহিনি ‘উধাও’। এর আগে আমি সিরিজের মাত্র একটা বই পড়েছি। সেটা ছিলো সিরিজের দ্বিতীয় বই ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’। বইঘর অ্যাপে ‘উধাও’ প্রকাশ হওয়ার পরপরই পড়ার ইচ্ছা ছিলো। ইচ্ছাটা পূর্ণ করলাম। 
‘উধাও’-কে আসলে আহমেদ করিম সিরিজের বড় গল্প বলা যায়। এখানে এমন এক রহস্যের মুখোমুখি করা হয়েছে আহমেদ করিমকে, যা শেষমেষ রয়ে গেছে অমীমাংসিত। কিন্তু অমীমাংসিত থেকে গেলেও আমার কাছে মনে হয়েছে শেষটা এভাবেই হওয়া উচিৎ ছিলো। একটা পর্যায়ে গিয়ে আমি নিজেও আহমেদ করিমের অস্তিত্ব টিকে থাকার ব্যাপারে কিছুটা ভয় পেয়ে গেছিলাম। কালো একটা ছায়া, যা আপনাকে গ্রাস করে নিয়ে আপনার সমস্ত সত্ত্বাকে মুছে ফেলছে – ভাবতেই কেমন অদ্ভুত লাগে না? আমারও লেগেছিলো। 
শরীফুল হাসান তাঁর ‘উধাও’-এ মধ্যযুগে ডাইনি সন্দেহে ইউরোপের অনেক নারীকে পুড়িয়ে মারার ব্যাপারে কিছুটা আলোচনা করেছেন। এই ব্যাপারটা নিয়ে আরো বিস্তারিত পড়াশোনা করবো বলে ঠিক করেছি। স্পৃহাটা জাগিয়ে দেয়ার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ। এই বইয়ে তিনি আরো একটা কেস সম্পর্কে আলোচনা করেছেন, যেখানে অক্সফোর্ডের দুইজন প্রাক্তন শিক্ষক কোন এক রহস্যের মুখোমুখি হয়ে নিজেদেরকে লুকিয়ে ফেলেছিলেন লোকচক্ষুর সম্পূর্ণ আড়ালে। এই ব্যাপারটাও আমার কাছে ইন্টারেস্টিং লেগেছে। বরাবরের মতোই তাঁর গল্প বলার ধরণ চমৎকার ছিলো। আর এই কারণেই বোধহয় ‘উধাও’ কখন শেষ হয়ে গেছে, টেরই পাইনি। ছোটখাটো দুই-একটা টাইপিং মিসটেক চোখে পড়েছে, স্বাভাবিক। 
বইঘর অ্যাপ কর্তৃপক্ষের প্রতি আমার দুটো সাজেশন। এক, বইয়ের পৃষ্ঠাসংখ্যার ব্যাপারটা উল্লেখ থাকা উচিৎ। আর দুই, প্রচ্ছদশিল্পীর নাম উল্লেখ থাকা উচিৎ। অ্যাট লিস্ট আমার কাছে এমনটাই মনে হয়েছে, এই দুটো বিষয় উল্লেখ থাকলে ভালো হয়। এমনিতে অ্যাপ এক্সপেরিয়েন্স আগের চেয়ে বেটার ছিলো। 
চাইলে পড়ে ফেলতে পারেন ‘উধাও’। আশা করি, ভালো লাগবে। 
ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৩.৭৫/৫
গুডরিডস রেটিংঃ ৪.১৮/৫ 
Review Credit 💕 শুভাগত দীপ
(৭ মে, ২০২২, বিকাল ৪ টা ৭ মিনিট; নাটোর)
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?