ইসলামি সভ্যতায় চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস : লেখক ড. রাগিব সারজানি | Islami Sovvotai Chikitshabigganer Itihash

  • ইসলামি সভ্যতায় চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস
  • লেখক : ড. রাগিব সারজানি
  • প্রকাশনী : মাকতাবাতুল হাসান
  • বিষয় : ইসলামি ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  • অনুবাদক : আবদুল্লাহিল বাকি, আশিকুর রহমান
  • পৃষ্ঠা : 347
ইসলামি সভ্যতায় চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস : লেখক ড. রাগিব সারজানি | Islami Sovvotai Chikitshabigganer Itihash
যদিও কিছু পাঠকের ধারণা হতে পারে যে, বক্ষ্যমাণ “ইসলামি সভ্যতায় চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস” গ্রন্থটি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও ফার্মাসিস্টদের জন্য রচিত কিন্তু বাস্তবে তা নয়। কারণ, এই গ্রন্থে আলোচনা করা হয়েছে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে মুসলিমদের গৌরবোজ্জ্বল অবদান। অমূল্য এই গ্রন্থ পাঠে একজন পাঠক মুসলিমদের জ্ঞান-গবেষণা দেখে আশ্চর্য না হয়ে পারবেন না। মুসলিমজাতির জ্ঞান-গবেষণা দেখে আশ্চর্য না হয়ে পারবেন না। মুসলিমজাতির একজন সদস্য হতে পেরে গর্ববোধ করবেন। একই সঙ্গে মুসলিমজাতির হারানো গৌরব ও মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে উজ্জীবিত হবেন ইনশাআল্লাহ।
বাস্তবিকপক্ষে ইসলামি সভ্যতায় চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস গ্রন্থটি একটি কার্যকরী পদক্ষেপ, যার অন্যতম উদ্দেশ্য মুসলিমজাতিকে পুনরায় তাদের সফলতার রাজপথে তুলে আনা।
একসময় ইসলামি সভ্যতার মাহাত্ম্য, গৌরব ও উৎকর্ষ ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা বিশ্বে। এই আলোকোজ্জ্বল সভ্যতার ছায়ায় মানবসমাজ অনেক শতাব্দী সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি আর নিরাপত্তায় নিঃশঙ্ক জীবন যাপন করেছে। যদি বলি ইসলামি সভ্যতায় মানুষ, প্রাণী এমনকি উদ্ভিদও তার অস্তিত্বের মূল্য অনুধাবন করেছে তাহলে মোটেও বাড়িয়ে বলা হবে না। কারণ মুসলিমরা বিশ্বাস করে, প্রকৃতির কোনো কিছুই আল্লাহ তাআলা অনর্থক সৃষ্টি করেননি। এই শাশ্বত সত্য মাথায় রেখে তারা আল্লাহর কিতাবে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করেছেন এবং সকলপ্রকার রোগবালাই থেকে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে আবিষ্কার করেছেন সর্বাধুনিক প্রতিষেধক।
ইসলামি সভ্যতায় (২) মুসলিমদের কোনো আবিষ্কার বা অর্জন, নির্দিষ্ট কোনো ধর্ম বা গোত্রবিশেষের মাঝে কুক্ষিগত করে রাখা হয়নি। বরং জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে সকলেই মুসলিমদের আবিষ্কার থেকে উপকৃত হয়েছে। এটা ইসলামের সর্বজনীনতার এক প্রকৃষ্ট দলিল। আমরা এ গ্রন্থে এর সপক্ষে বহু প্রমাণ উল্লেখ করেছি।
২. ইসলামি সভ্যতা বলতে মুসলিমদের সভ্যতা, সংস্কৃতি ও শাসনের স্বর্ণযুগ বোঝানো হচ্ছে।
সম্ভবত মুসলিম সভ্যতার অগ্রগতির সবচেয়ে উজ্জ্বল আলো ফুটে উঠেছিল জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গনে। কারণ তারা মানবজাতির প্রাচীন জ্ঞানবিজ্ঞান রক্ষা করেছেন অত্যন্ত যত্ন ও আন্তরিকতার সাথে। যারা ইসলামি সভ্যতার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, তারা একদিকে যেমন অনুবাদ করে গিয়েছেন গ্রিক, পারসিক, চৈনিক আর হিন্দুস্তানি প্রাচীন জ্ঞানবিজ্ঞান, আরেকদিকে এগুলোর অযাচিত অংশগুলোর সমালোচনাও করেছেন। সম্পাদনা ও পরিমার্জনেও এগিয়ে ছিলেন তারা। ফলে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা অন্ধ অনুসরণে পর্যবসিত হয়নি। সাহিত্য, বিজ্ঞান আর শিল্পের পরতে পরতে ছিল মুসলিমদের সৃজনশীলতার ছাপ। এভাবেই তারা মানবসভ্যতার ইতিহাসে স্বতন্ত্র একটি অধ্যায়ের সূচনা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ইতিহাসের পাথরে খোদাই করা এই গভীর পদচ্ছাপ মোছা যাবে না কখনোই ৷
মুসলিম সভ্যতার এই সৃজনশীলতা আর অগ্রগতির দরুন গোটা পৃথিবীর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছিল ইউরোপের রাজরাজড়াদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু । খ্রিষ্টান রাজন্যবর্গ পাশ্চাত্য থেকে প্রায়ই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আসত। কখনো শিক্ষাদীক্ষা অর্জন করতে, কখনো আবার ভালো চিকিৎসা নিতে। এজন্য ফ্রান্সের প্রাচ্যবিদ গুস্তাভ লি বোঁ (Gustave Le Bon)(৩) আকাঙ্ক্ষা করেছেন, যদি মুসলিমরা ফ্রান্সের ওপর কর্তৃত্ব বিস্তার করতে পারত, তাহলে কতই-না ভালো হতো! প্যারিস নগরী হয়ে উঠত মুসলিম আন্দালুসিয়ার কর্ডোভা। (৪) ইসলামি সভ্যতার বুদ্ধিবৃত্তিক
৩. গুপ্তাভ লি বোঁ (Gustave Le Bon) : একজন ফরাসি প্রাচ্যবিদ। ১৮৪১ সালের ৭ মে ফ্রান্সে তিনি জন্মগ্রহণ করেন । মৃত্যুবরণ করেন ১৯৩১ সালের ১৩ ডিসেম্বর। নৃতত্ত্ব, মনোবিজ্ঞান, সমাজ, মেডিসিন এবং পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন। তার অনেক মৌলিক গবেষণামূলক কাজের মধ্যে একটি হলো, আরব সভ্যতা নিয়ে তার লেখা বই La Civilisation des Arabes (ফরাসি ভাষায় লিখিত)। বইটি প্রকাশিত হয়েছে ১৮৮৪ সালে। এর ইংরেজি অনুবাদ হয় ১৯৭৪ সালে The World of Islamic Civilization নামে। বইটির আরবি অনুবাদ হয়েছে হাযারাতুল আরব নামে। আধুনিক যুগে লেখা ইসলামি আরব সভ্যতা সম্পর্কে নিরপেক্ষ বিশ্লেষণের দরুন বইটি বিশেষ খ্যাতি লাভ করে। • হাযরাতুল আরব, পৃ. ১৩, ৩১৭
উৎকর্ষ বোঝাতে গিয়ে তিনি এ-ও বলেছেন যে, ইউরোপীয় সভ্যতার অগ্রগতি আরব মুসলিমদের অবদান ছাড়া আর কিছুই নয়। (৫)
ইহুদি গবেষক ফ্রাঞ্জ রোজেনথালও (Franz Rosenthal) (3) এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ইসলামি সভ্যতার উৎকর্ষে অবাক হয়ে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই সভ্যতার ক্রমশ অগ্রগতির দিকটা খুবই উদ্দীপক একটি বিষয়। ইতিহাসে স্বতন্ত্রভাবে এ নিয়ে চিন্তাভাবনা ও গবেষণার দাবি রাখে। কারণ যে অভাবনীয় দ্রুততায় এই সভ্যতার বিনির্মাণ হয়েছে, তা আমাদের হতবাক করে দেয়। সভ্যতার উৎপত্তি ও বিকাশের ক্ষেত্রে এমন বিস্ময়কর ঘটনা পাওয়া দুষ্কর। এই সভ্যতা নিয়ে গবেষক ও শিক্ষার্থীদের মনে সর্বদাই জেগেছে নানা বিস্ময়। এজন্যই এই সভ্যতাকে আমি ‘অলৌকিক সভ্যতা’ বলে অভিহিত করতে চাই। কেননা এই সভ্যতার সূচনাপর্ব থেকে পরম রূপ এত দ্রুত লাভ করেছে যে, বলা যায়, এই সভ্যতার পথচলা শুরু হওয়ার আগেই পৌঁছে গিয়েছে সর্বোচ্চ শিখরে। (৭)
ইসলামি সভ্যতা জ্ঞানবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যে অভাবনীয় উৎকর্ষ সাধন করেছে, তার বিশাল একটি অংশ জুড়ে ছিল চিকিৎসাবিজ্ঞান। এই চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়েই কিছু কথা বলতে চাই কিসসাতুল উলুমিত তিব্বিয়া ফিল হাযারাতিল ইসলামিয়া (চিকিৎসাবিজ্ঞানে মুসলিমদের অবদান) নামক এ গ্রন্থে। চিকিৎসাবিজ্ঞান মানুষের সুস্থতার সাথে সম্পর্কিত একটি বিজ্ঞান। এর সাথে আরও রয়েছে প্রাণিবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, ফার্মাকোলজি, পরজীবীবিজ্ঞান এবং জেনেটিক্‌স বা বংশগতিবিদ্যা প্রভৃতি। এসব বিজ্ঞানও বেড়ে উঠেছে চিকিৎসাবিজ্ঞানের হাত ধরে; মানব, প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য একটা সুন্দর পরিবেশ আর সুস্থ জীবনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে।
৫. হাযরাতুল আরব, পৃ. ৫৬৬
• ফ্রাঞ্জ রোজেনথাল (Franz Rosenthal 1914-2003): হল্যান্ডের একজন দার্শনিক।
*. হিরা পত্রিকা (বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক ত্রৈমাসিক পত্রিকা), সংখ্যা: ৯ অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০০৭
উৎকর্ষ বোঝাতে গিয়ে তিনি এ-ও বলেছেন যে, ইউরোপীয় সভ্যতার অগ্রগতি আরব মুসলিমদের অবদান ছাড়া আর কিছুই নয়। (৫)
ইহুদি গবেষক ফ্রাঞ্জ রোজেনথালও (Franz Rosenthal) (3) এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ইসলামি সভ্যতার উৎকর্ষে অবাক হয়ে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই সভ্যতার ক্রমশ অগ্রগতির দিকটা খুবই উদ্দীপক একটি বিষয়। ইতিহাসে স্বতন্ত্রভাবে এ নিয়ে চিন্তাভাবনা ও গবেষণার দাবি রাখে। কারণ যে অভাবনীয় দ্রুততায় এই সভ্যতার বিনির্মাণ হয়েছে, তা আমাদের হতবাক করে দেয়। সভ্যতার উৎপত্তি ও বিকাশের ক্ষেত্রে এমন বিস্ময়কর ঘটনা পাওয়া দুষ্কর। এই সভ্যতা নিয়ে গবেষক ও শিক্ষার্থীদের মনে সর্বদাই জেগেছে নানা বিস্ময়। এজন্যই এই সভ্যতাকে আমি ‘অলৌকিক সভ্যতা’ বলে অভিহিত করতে চাই। কেননা এই সভ্যতার সূচনাপর্ব থেকে পরম রূপ এত দ্রুত লাভ করেছে যে, বলা যায়, এই সভ্যতার পথচলা শুরু হওয়ার আগেই পৌঁছে গিয়েছে সর্বোচ্চ শিখরে। (৭)
ইসলামি সভ্যতা জ্ঞানবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যে অভাবনীয় উৎকর্ষ সাধন করেছে, তার বিশাল একটি অংশ জুড়ে ছিল চিকিৎসাবিজ্ঞান। এই চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়েই কিছু কথা বলতে চাই কিসসাতুল উলুমিত তিব্বিয়া ফিল হাযারাতিল ইসলামিয়া (চিকিৎসাবিজ্ঞানে মুসলিমদের অবদান) নামক এ গ্রন্থে। চিকিৎসাবিজ্ঞান মানুষের সুস্থতার সাথে সম্পর্কিত একটি বিজ্ঞান। এর সাথে আরও রয়েছে প্রাণিবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, ফার্মাকোলজি, পরজীবীবিজ্ঞান এবং জেনেটিক্‌স বা বংশগতিবিদ্যা প্রভৃতি। এসব বিজ্ঞানও বেড়ে উঠেছে চিকিৎসাবিজ্ঞানের হাত ধরে; মানব, প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য একটা সুন্দর পরিবেশ আর সুস্থ জীবনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে।
৫. হাযরাতুল আরব, পৃ. ৫৬৬
• ফ্রাঞ্জ রোজেনথাল (Franz Rosenthal 1914-2003): হল্যান্ডের একজন দার্শনিক।
*. হিরা পত্রিকা (বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক ত্রৈমাসিক পত্রিকা), সংখ্যা: ৯ অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০০৭
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যারা পথিকৃৎ ছিলেন তাদের কথাও এখানে মর্যাদার সাথে তুলে আনা হয়েছে। তাদের আবিষ্কার আর সৃজনশীলতা মানবসভ্যতার অমূল্য সম্পদ। বর্তমানের চিকিৎসাবিজ্ঞান আজও তাদের কাছে ঋণী । মেধা আর অতুলনীয় প্রতিভার পাশাপাশি তাদের মাঝে ছিল অত্যন্ত বিনয়-নম্রতা আর ইলমের আমানতদারির মহৎ গুণ। তারা গ্রিক কিংবা অন্যান্য সভ্যতা থেকে যা শিখেছেন, তা কখনোই নিজেদের নামে চালিয়ে দেননি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বহমান ছিল এই ধারা।
এই গ্রন্থে আমি ইসলামি সভ্যতার ভূমিকা বোঝাতে গিয়ে পাশ্চাত্যের গবেষক এবং বুদ্ধিজীবীদের সাক্ষ্যও এনেছি। বিশেষত চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কে তাদের মূল্যায়ন তুলে ধরেছি। ফলে মানবসভ্যতায় মুসলিমজাতির অবদান জানতে যারা আগ্রহী, তাদের জন্য এটি হবে এক আলোকমশাল।
পরিশেষে আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আমাদের হারানো সম্মান এবং মর্যাদা আবার ফিরিয়ে দেন। মুসলিমরাও যেন সব রকমের চেষ্টা-প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। আদর্শিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অনুশীলনের মাধ্যমে যেন তারা সোনালি অতীতের গৌরব পুনরুদ্ধার করতে পারে, পৃথিবীর ইতিহাসে যার উপমা মেলা ভার। আল্লাহর পক্ষে সবকিছুই করা সম্ভব। তিনিই সকলকিছুর অভিভাবক।
আল্লাহ তাআলা ইসলাম ও মুসলিমজাতিকে মর্যাদার সুউচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করুন। আমিন
— ড. রাগিব সারজানি
কায়রো, মিশর।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?