ইবলিস ও আদমের পার্থক্য

ইবলিস ও আদমের পার্থক্য

Credit – Wafilife

মানব ইতিহাসের প্রথম খুনটার কথা কল্পনা করুন। সেই খুনের পেছনে দায়ী এক আদি-রিপু। যে রিপু ইবলিসকে বানিয়েছে শয়তান; তা-হলো অহমিকা, ইগো বা অহংবোধ। এই অহংকার ইবলিসকে আল্লাহর অবাধ্য হতে প্ররোচিত করলো। ইবলিস নিজে আগুনের তৈরি বলে শ্রেষ্ঠত্বের অহমিকায় ভুগে মাটির তৈরি আদমকে সিজদা করলো না, আল্লাহর অবাধ্য হলো, আর পরিণত হলো অভিশপ্ত শয়তানে।

.
মানবজাতির প্রথম খুনটার সাথেও জড়িয়ে আছে সেই একই রিপু—অহম। হাবিলই কেন সুন্দরী বোনকে বিয়ের সুযোগ পাবে? আল্লাহ কেন কাবিলের কুরবানি গ্রহণ না করে হাবিলের কুরবানি গ্রহণ করলেন?—এই ইগো থেকে তৈরি হলো হিংসা, হিংসা থেকে নিষ্ঠুরতা, আর নিষ্ঠুরতা থেকে খুন। সুবহানআল্লাহ।
.
আল্লাহর অবাধ্য শুধু একা ইবলিসই হয় নি, হয়েছিলেন আদমও (আলাইহিস সালাম); আল্লাহ আদমকে জান্নাতের একটি নিষিদ্ধ গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু ইবলিসের প্ররোচনায় পড়ে আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস সালাম আল্লাহর নিষেধ অমান্য করে নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে বসলেন। কিন্তু এরপর যখন বুঝতে পেরেছিলেন যে তারা কী ভুল করলেন—সাথেসাথেই তাঁরা অনুতপ্ত হলেন, আল্লাহর শেখানো দুআর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলেন—
رَبَّنَا ظَلَمۡنَاۤ اَنۡفُسَنَا وَاِنۡ لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَـنَا وَتَرۡحَمۡنَا لَـنَكُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِيۡنَ 
হে আমাদের রব, আমরা নিজেদের উপর যুল্‌ম করেছি। আর যদি আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং আমাদের দয়া না করেন—তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব। [কুরআন ৭ : ২৩]
.
এখানেই আসলে ইবলিস আর আদমের মধ্যে মূল পার্থক্য। ইবলিস অহংকারবসত আল্লাহর অবাধ্য হয়েছে, এবং এই অবাধ্য হওয়াকে সে যুক্তি দিয়ে ন্যায্যতা দিতে চেয়েছে; এরপর আল্লাহ যখন তাকে অভিশাপ করলেন—তখনও সে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা না চেয়ে বরং নিজের ইগোতেই স্থির থেকেছে, আর কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর কাছে মৃত্যু থেকে অবকাশ চেয়েছে—যাতে সে আল্লাহর বান্দাদের তাঁর দেখানো পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে! পক্ষান্তরে আদম আলাইহিস সালাম নিজের ভুলের জন্য শুধু অনুতপ্তই হন নি, আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চেয়েছেন; এরপর তিনি আর নিজের ভুলে স্থির থাকেন নি।
.
মানুষ তো ভুল করবেই, মানুষ খুবই দুর্বল অন্তঃকরণের অস্থির এক মাখলুক; কিন্তু রাহমানের বান্দারা অহংকার বসত তাদের নিজেদের ভুলের উপরে ইবলিসের মতো অটল থাকে না। মুমিনরা যখনই ভুল করে—সাথে সাথেই আল্লাহর কাছে তাওবা করে নেয়, এরপর একই ভুল করা থেকে বেঁচে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন—প্রত্যেক আদম সন্তানই গুনাহগার। আর গুনাহগারদের মধ্যে তওবাকারীগণ উত্তম। [তিরমিযী : ২৪৯৯]
.
ইগো বা অহম হলো আল্লাহর চাদর। আর কোনো বান্দা তাঁর চাদর নিয়ে টানাটানি করুক—তা আল্লাহ পছন্দ করেন না। আর ইগো বা অহমই মানুষকে আল্লাহর কাছে তাওবা করা থেকে বিরহ রাখে।রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন—যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও অহংকার আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। [ মুসলিম : ১৩১]
.
শয়তানের একটা বৈশিষ্ট্য হলো—সে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সুরা আন-নাসে এমন কুমন্ত্রণাদাতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় নেওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। এই কুমন্ত্রণাদাতা জিন অথবা মানুষ উভয়ই হতে পারে। অর্থাৎ মানুষও যখন শয়তানের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে—সে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, যেমনটা হারিয়েছিলো কাবিল। আমরা মানুষ হিসেবে ভুল করবোই, কিন্তু আমাদের খেয়াল করতে হবে—যখন আমরা কোনো ভুল বা আল্লাহর অবাধ্যতা করে ফেলি—তখন আমরা পদাঙ্ক অনুসরণ করি! আদমের? নাকি ইবলিসের?
.
সিয়ান | বিশুদ্ধ জ্ঞান | বিশ্বমান
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?