ইতিহাসের অনন্যা : আলী আহমদ মাবরুর | Unique in history : Ali Ahmad Mabrur

  • বই : ”ইতিহাসের অনন্যা” 
  • প্রকাশনায় : The Pathfinder Publications
  • অনুবাদ : Ali Ahmad Mabrur 
  • প্রচ্ছদ মূল্য : ১০০/ 
  • ধরন : পেপারব্যাক
  • Review Credit : Humayra Mahbuba

বর্তমান কেবিনেট সেক্রেটারী সাহেবের একটি বক্তব্য বেশ ভাইরাল হয়েছে। সেই ভাষণে তিনি বাগদাদের জনৈক জুবাইদার একটি গল্প বলেছেন। আমি এই জুবাইদাকে নিয়ে আরো তিন বছর আগেই একটি লেকচার অনুবাদ করেছিলাম। বইটি প্রকাশিত হয়েছিল The Pathfinder Publications থেকে। সেখান থেকে কিছু অংশ তুলে ধরলাম।

তার মূল নাম ছিল জুবাইদা বিনতে জাফর ইবনে মনসুর। তিনি ছিলেন বিখ্যাত আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী। জুবাইদা নামটি দিয়েছিলেন তারই দাদাজান, সাবেক আব্বাসীয় খলিফা আল মনসুর। জুবাইদা বিনতে জাফরের ব্যক্তিত্ব প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সমসাময়িক একজন লেখক তাকে তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে যোগ্য নারী হিসেবে বর্ননা করেছেন।

তার ধর্মীয় জ্ঞান, বংশগতি, সৌন্দর্য, মার্জিত বাচনভঙ্গি ও উপস্থাপন, পরোপকারী মানসিকতা এবং সাংস্কৃতিক আত্মবিশ্বাসের জন্য অনেকেই তার প্রশংসা করেছেন। তিনি যেমন ছিলেন রূপবতী, ঠিক তেমনি চমৎকার কথা বলতে পারতেন আবার তার জ্ঞান এবং প্রজ্ঞাও ছিল চোখে পড়ার মতো। তার ভাষাগত ও ব্যাকরণগত জ্ঞান ছিল অতি উচ্চমানের।

একটি ঘটনা বলি। একবার একজন লেখক তাকে একটি বই রিভিউ করার জন্য দিলেন। জুবাইদা পুরোটা বই পড়ে এককথায় বললেন, ‘একটা ভুল আছে, ওটা সংশোধন করে নিও।’ তার এই কথায় লেখক তো পেরেশান হয়ে গেলেন। কী ভুল হয়েছে তা বের করার জন্য তিনি প্রানান্তকর চেষ্টা করলেন। কিন্তু তার চোখে কোনো ভুল ধরা পড়লো না। কিন্তু লেখক জানতো যে, জুবাইদা এমনি এমনি মন্তব্য করার মানুষ নয়। তাই সে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যারা বিশেষজ্ঞ ছিলেন তাদের কয়েকজনকেও পান্ডুলিপিটি পড়ার জন্য দিলেন। এদের মধ্যে একজন অবশেষে নিশ্চিত করলেন, লেখক বইটিতে যে দুআগুলো দিয়েছেন, তার মধ্যে একটি দুআয় রেফারেন্স ও ব্যাকরণগত কিছু ভুল আছে। এবার লেখক নিশ্চিন্ত হলেন এবং ভুলটি সংশোধন করে নিলেন। এরকমই ছিল জুবাইদা বিনতে জাফরের পান্ডিত্য।

তার মেধা ছিলো প্রখর এবং তিনি যে বিষয়ে কথা বলতেন, তার ব্যাপারে আগেই স্বচ্ছ ধারণা অর্জনের চেষ্টা করতেন। পাশাপাশি স্থাপত্য শিল্প ও কবিতাতেও তিনি ছিলেন খুবই পারদর্শী। তার সাথে বাগদাদের খ্যাতিমান বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, দার্শনিক, সাহিত্যিক ও ইসলামিক স্কলারদেরও নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। তারা সকলেই জুবাইদার প্রজ্ঞাকে সম্মান করতেন। এই সব জ্ঞানী ব্যক্তিদের কাজে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার অংশ হিসেবে জুবাইদা নিয়মিতভাবে রাজকোষ থেকে তাদেরকে নানা ধরনের প্রণোদনাও প্রদান করতেন।

জুবাইদার এই প্রজ্ঞার কারণেই খলিফা হারুনুর রশিদ তাকে নিয়মিত রাষ্ট্রীয় দরবারে সময় দেয়ার অনুরোধ করতেন। বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে হারুনুর রশিদ স্ত্রী জুবাইদার মতামত নিয়েছেন বলেও জানা যায়। তাছাড়া, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, জুবাইদা খলিফা হারুনুর রশিদকে যেসব মতামতগুলো দিয়েছিলেন কালের পরিক্রমায় তার সবগুলোই সঠিক ও দুরদর্শী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

জুবাইদা বিনতে জাফরকে ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি স্মরণ করা হয় এ জন্য যে, তিনি বাগদাদ থেকে মক্কা ও মদিনায় হাজীদের যাওয়ার পথে অসংখ্য কুপ, পানির সংরক্ষনাগার নির্মান করেন। যেহেতু মরুভূমির শুষ্ক ও তপ্ত বালুর ওপর দিয়ে হাজিরা হজ্জে যেতেন, তাই এই পানির কুপগুলো ছিল তাদের জন্য বিরাট বড়ো নেয়ামত। তারা এই কুপগুলোর পানি পান করতেন আর জুবাইদার জন্য দুআ করতেন। এই কুপগুলোর অনেকগুলোই এখনও টিকে আছে। জুবাইদার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অংশ হিসেবে এই কুপগুলোকে ‘দারবে জুবাইদা’ হিসেবে নামানুকরন করা হয়েছে।

পাশাপাশি, বাগদাদ থেকে মক্কায় যাতায়াতের পথটিকেও তিনি সংস্কার করেন এবং লোকজনের অবাধ চলাচলের জন্য সহজ করে দেন। তিনি পথে পথে মোট ৪০টি বিশ্রামাগার তৈরি করেন। যে উটে বা পশুর উপর চড়ে হাজীরা হজ্জে যাবেন সেই প্রানীদের খাওয়া ও বিশ্রামের জন্যেও তিনি বেশ কিছু কাঠামো নির্মান করেন। সেই সাথে পুলিশের অবস্থানের জন্য ক্যাম্পও নির্মান করেন। ফলে হাজীদের হজ্জযাত্রাও অনেক বেশি নিরাপদ হয়ে যায়।

বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?