ইকিগাই রিভিউ + IKIGAI Full Audio And Video book (Bangla) – হেক্টর গারসিয়া, ফ্রান্সেস মিরালেস

দীর্ঘায়ু এবং তারুণ্য ধরে রাখার জন্য মেনে চলুন একটি ইকিগাই ডায়েট!

লেখা – নীলা মনি গোস্বামী

দীর্ঘায়ুর জন্য জাপান বেশ বিখ্যাত। তবে তারচেয়েও বেশি বিখ্যাত দক্ষিনের দ্বীপ ওকিনাওয়া। দ্বীপটির প্রতি একলাখ লোকের মধ্যে অন্তত চব্বিশজন আছেন, যাদের বয়স এক শর বেশী। জাপান তো অবশ্যই, গোটা দুনিয়াতেই এই হার সর্বোচ্চ। গবেষণা করে দেখা যায় জাপানের বাসিন্দাদের এ দীর্ঘায়ুর পেছনে যে ব্যাপারগুলো কাজ করে, সেগুলো হলো –



১. স্বাস্থ্যকর ডায়েট
২. বাইরে হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়াম
৩. গ্রিন টি
৪. উষ্ণ মন্ডলীয় আবহাওয়া
৫. ইকিগাই
৬.ভ্রাতৃত্ব। জাপানের ভাষায় যাকে বলে ইচারিবা চোডে
৭. ইয়ুইমারু কিংবা দলগত কাজ
৮. পরিমিত বিশ্রাম
৯. মোয়াই বা অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব
১০.রাতে সঠিক সময়ে বিছানায় যাওয়া এবং ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে পড়া
১২. নিয়মানুবর্তিতা
১৩.স্ট্রেস ফ্রি থাকা
১৪. নিত্য নতুন জ্ঞান আহরন করা এবং কমফোর্ট জোনের বাইরে গিয়ে কাজ করা
১৫.ইতিবাচক চিন্তা করা এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারা
১৬.কঠিন পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে পারা

মূলত এ ব্যাপারগুলোই তাদের দীর্ঘায়ুর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে আর সাহায্য করেছে দীর্ঘদিন পর্যন্ত তারুণ্য ধরে রাখতে। সেখানকার বয়ষ্ক লোকদের সঙ্গে কথা বললে বোঝা যায় তাদের মধ্যে অচেনা এক উছ্বাস প্রবাহিত হয়, যা তাদের নিয়ে যাচ্ছে আনন্দময় গন্তব্যে এবং চাঙ্গা রাখে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।

এছাড়াও শতায়ুধারী লোকজনের জীবন বিশ্লেষণ করে বেশ কিছু আকর্ষণীয় তথ্য পাওয়া গেছে। যেমন 

১. ক্যান্সার, হৃদরোগ, হাঁপানি ও অ্যালার্জির মতো রোগগুলি তাদের মধ্যে বিরল
২. তারুন্য দীর্ঘস্থায়ী হয়
৩. মানসিক রোগাক্রান্তের আশঙ্কা অন্যদের তুলনায় কম থাকে
৪. জীবনের শেষ দিকে এসেও শক্ত সমর্থ থাকেন

আজ ইকিগাই বইটির আলোকে একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েটের ভূমিকা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ,এবং স্বাস্থ্যকর ইকিগাই ডায়েটে কী কী বিষয় মেনে চলতে হয়, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। সেই সাথে জেনে নিবো জাপানীদের গোপন ডায়েটের রহস্য।

দীর্ঘায়ু এবং তারুণ্য ধরে রাখার জন্য ডায়েটে যা যা মেনে চলতে হবে –
১. চিনি এবং লবন কম খেতে হবে
২. প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাকসবজি এবং মাছ রাখতে হবে। মাংস কম খাওয়া ভালো। তারা দৈনিক অন্তত পাঁচ প্রকারের ফলমূল শাকসবজি খেয়ে থাকেন। শাক, আলু, সিমজাতীয় খাবার, সয়াবিন তার মধ্যে অন্যতম।এছাড়াও তারা প্রচুর পরিমান আঁখ খান। বলা হয়ে থাকে আখের মাঝে ক্যান্সাররোধী গুন আছে।
৩. তারা নিয়মিত সাদাভাত খান। মাঝে মাঝে তার মাঝে নুডুলস মিশিয়ে নেন
৪. খাবারে কম ক্যালরি গ্রহন করেন
৫. খাবার শেষে ডেজার্ট বা হালকা খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে
৬. নিযমিত গ্রিন টি, জেসমিন টি, হোয়াইট টি ইত্যাদি খেতে হবে
৭. বিভিন্ন লেবুজাতীয় ফল যেমন জাম্বুরা, কমলা, লেবু, শিকুয়াসা ইত্যাদি খেতে হবে।

গ্রিন টি, জেসমিন টি, সয়াবিন ছাড়াও তাদের নিয়মিত খাদ্য তালিকায় প্রকৃতিক অ্যান্টি অক্সিডেন্টযুক্ত যে খাবারগুলো থাকে, সেগুলো হলো –

১. টফু
২. মিসো
৩. টুনা
৪. গাজর
৫. করলা
৬. কম্বু
৮. বাঁধাকপি
৯. সমুদ্র – শৈবাল
১০. পেঁয়াজ
১১. সয়া স্প্রাউটস
১২. লুফা
১৩. মিষ্টি আলু
১৪. মরিচ

IKIGAI Full Audiobook (Bangla) | ইকিগাই সম্পূর্ণ অডিওবুক


হারা হাছি ব্যু!

খেতে হবে কম কম। অর্থাৎ খাওয়ার মাঝে যখনি মনে হবে পেট প্রায় ভরে গেছে, তবে চাইলে আরেকটু খাওয়া যাবে, ঠিক তখনি খাওয়া শেষ করে ফেলতে হবে। অর্থাৎ খেতে হবে এমনভাবে যেনো খাবার পরেও আর একটু ক্ষুধা থাকে। পাকস্থলীর ৮০% খাবারে ভরপুর থাকবে আর বাকি ২০% থাকবে খালি।জাপানে এই ধারনাটি ” হারা হাছি ব্যু” নামে পরিচিত। কিছু কিছু জায়গায় এটা ৮০% রুল নামেও পরিচিত।এটি একটি পুরানো পদ্ধতি। বারো শতকের দিকে জেন বৌদ্ধ ধর্মের বই “জাজেন ইয়ুজিনকি” তেও এ পদ্ধতিটির উল্লেখ পাওয়া যায়।যতটুকু চাহিদা আছে, তার তুলনায় দুই – তৃতীয়াংশ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয় বইটিতে।যাদের ৮০% রুল ম্যান্টেইন করতে কষ্ট হয়, তারা বিকল্প হিসেবে সপ্তাহে দুইদিন রোজা রাখা কিংবা উপবাস পালন করতে পারে। ফলে পরিপাক তন্ত্র পরিষ্কার হবার এবং বিশ্রামের সুযোগ পায়।

কম খাবার পাশাপাশি খাবারের পরিবেশনাতেও গুরুত্ব দিতে হবে। জাপানিরা তাদের তাদের খাবারগুলো ছোট ছোট প্লেটে পরিবেশ করেন। যার মূল উদ্দেশ্য কম খেতে উৎসাহিত করা। এছাড়াও তাদের টেবিলে খাবারের পরিমানের চেয়ে বিচিত্রটা বেশি প্রাধান্য পায়। বিভিন্ন ছোট ছোট বাটিতে থাকে বিভিন্ন রকম পুষ্টিকর খাবার। আর কয়েকটি বাটিতে বিভিন্ন রকম খাবার থাকে বলে মনে হবে যে, খাবার বেশি খাওয়া হচ্ছে। কিন্তু আসলে পরে দেখা যায় পেটের কিছুটা অংশ খালি থেকে যায়।

তো এটাই ছিলো ” ইকিগাই ” বইটির আলোকে তরুন্য ধরে রাখার এবং দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ জাপানীদের ইকিগাই ডায়েটের বর্ননা।
আপাতত এতোটুকুই। পরবর্তী পর্বে নিয়ে আসবো আরও কিছু গোপন গোপন টিপ্স। 😌🤫

বইয়ের নাম – ইকিগাই
মূল লেখক – হেক্টর গারসিয়া, ফ্রান্সেস মিরালেস
অনুবাদ – Yusuf Munna
প্রকাশনী- আদর্শ
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?