আশিয়ানী – জুলিয়ান | Ashiyani A Drama By Julian

At A Glance Of Ashiyani

  • বই : আশিয়ানী
  • লেখক : জুলিয়ান
  • জনরা : ড্রামা,ফ্যান্টাসি,এডভেঞ্চার 
  • পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৬৫৬ 
  • মুদ্রিত মূল্য : ৮০০ টাকা 
  • প্রকাশনী : চিরকুট
  • রিভিউ ক্রেডিট : শামীম রেজা ✌️

কাহিনী সংক্ষেপ

সেভিদোনিয়া রাজ্যের রাজকুমারী আশিয়ানী আরনোমিয়েল এক রহস্যের পিছনে ছুটতে ছুটতে পৌছে যায় এমন একটা জায়গায় যা তার জীবনাচরণকে বদলে দেয় চিরদিনের জন্য! সেই সাথে বদলে যায় আরও একটি জীবন। 
এদিকে সেভিদোনিয়ায় হঠাৎ করেই একের-পর-এক অযাচিত ঘটনা ঘটে চলেছে, যা নিয়ে ক্রমেই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে রাজা আরসালান আরনোমিয়েল। রাজপ্রাসাদের প্রধান সেনাধ্যক্ষ আরহাম মেনদারকে সাথে নিয়ে সেইসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে থাকেন তিনি, যার সাথে একসময় জড়িয়ে ফেলা হয় আশিয়ানীকেও। সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারী হিসেবে তার উপরও চাপ বাড়তে থাকে। অভিজাতদের সাথে রাজকুমারীর নীরব যুদ্ধ প্রকাশ্যে চলে আসে হঠাৎ! 
ইলদারাম পর্বতমালার উত্তরাংশ কেন হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠলো? রাজধানী সোভিয়ানেই বা এমন অযাচিত ঘটনা কারা ঘটালো? প্রাচীন জাদুকর সংঘের একজন প্রকৃতিসাধিকা ঠিক কিসের আশংকা করছে? আরনোমিয়েল সেনাবাহিনী এবং রাখশামান সেনাদলকে কেন হঠাৎ করে তলব করার প্রয়োজন পড়লো? হরিৎসেনারাই বা কী নিয়ে কাজ করছে? রাজবৃক্ষ আরনীমিশিল এর কী ভূমিকা রয়েছে আরনোমিয়েল রাজবংশের উত্থানের পেছনে? 
আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, এসব ঘটনা আশিয়ানীর সাথেই বা কতটুকু জড়িত? 
এসব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে প্রাচীন রহস্য, রাজনৈতিক কূটকৌশল, সমরকৌশল, বিশ্বাসঘাতকতা এবং নিয়তির মিশেলে গঠিত বিশাল প্রেক্ষাপটের ফ্যান্টাসি উপন্যাস আশিয়ানী তে। 
#পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ
অবশেষে কাঙ্ক্ষিত বইটি পড়ে শেষ করলাম। বইটি আমার নজরে অনেক আগে থেকেই ছিল। তাই রিলিজ হওয়ার সাথে সাথে নিয়া নেই। বইটি খুব ধীরে ধীরে পড়লাম। পড়েছি, রেখেছি আবার শুরু করেছি।  পড়ার আগে জুলিয়ান ভাইয়ের আগে বলা কথাগুলো আর সম্পাদক সাহেবের কথাগুলো মাথায় রেখেই মাইন্ডসেট করি। যাইহোক, বইটি নিয়ে অনেক কিছু বলার আছে। কাঙ্ক্ষিত বই বলেই হয়তো। নিজের ভালো লাগা আর খারাপ লাগার দিকগুলোই তুলে ধরার চেষ্টা করবো। তাই এটাকে বইয়ের রিভিউ না বলে, নিজের মনোভাব ব্যক্ত বলে ধরে নেয়াই শ্রেয়!
যেদিকগুলো ভালো লেগেছেঃ 
লেখনিঃ ফ্যান্টাসি তাও আবার বাংলায় কিন্তু সহজ-সরল আর সাধারণ ভাষায় লেখা বলে জিনিসটা চোখে লেগেছে খুব৷ পড়তে এত স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি যে বলা মুশকিল। মনেই হয়নি আলাদা এক জগত নিয়ে পড়ছি। হয়তো দুই জগৎ আছে বলেই৷ তবুও লেখকের লেখার ধরণ এতটা সাদামাটা বলেই পড়ে বেশি মজা পেয়েছি। হুকড হয়ে থাকতে পেরেছি।
শব্দচয়নঃ বইটিতে লেখার সময় শব্দচয়নের যে ব্যবহার লেখক দেখিয়েছেন, তা অবিশ্বাস্য। এতেই বুঝা যায়, লেখক কত যত্ন সহকারে বইটি লিখেছেন৷ প্রতিটা লাইনের শব্দগুলো পড়তে খুবই আরাম পেয়েছি। এরফলে পড়ার সময় পাতার পর পাতা চলে যায়, কিন্তু টেরই পাইনি।
ডিটেইলসঃ ভাই! এই জায়গায় লেখক উনার সর্বচ্চ দক্ষতা আর বুদ্ধিকৌশলের প্রয়োগ দেখিয়েছেন। বাপ্রে! এরকম ডিটেইলসে লেখা বই লাস্ট কবে পড়েছি তা বলতে পারছিনা। প্রত্যেকটা মহূর্ত, ঘটনা যেভাবে লেখনির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন তা বাহবা পাওয়ার যোগ্য। উনি এইক্ষেত্রে এতোটাই ভালো করেছেন যে, পড়ার সময় সব ঘটনা যেন বইয়ের পাতায় ফুটে ফুটে উঠছে চোখের সামনেই। এরকম মনে হয়েছে পুরো বই পড়ার সময়। এটাতে উনি ১০/১০ পাবেন। অসাধারণ কাজ দেখিয়েছেন।
প্লটঃ পড়ার আগেও জানতাম না এরকম হবে গল্প। কেননা সত্যি বলতে বইটির ফ্ল্যাপও পড়িনি আমি। শুধু নাম দেখেই পড়ার অপেক্ষা করেছি এতদিন। তাই পড়ার শুরুতে আলাদারকমের তাড়না কাজ করছিল। আর পরে তো চমকেই যাই। দুই জগতের অবস্থান দেখে। হাহা। যাইহোক, লেখক খুব চমৎকারভাবে প্লটটাকে বিস্তৃত করে শেষ করতে পেরেছেন। অবশ্য শুরুতে কিছুটা পড়েই বিরক্ত আর বোরিং হয়ে গেছিলাম। পরে অবশ্য ভালো লাগা শুরু হয়। মূলত ডিটেইলসে সময় বেশি দেয়ায় এরকমটা মনে হয়েছিল। পরে যখন ডটগুলা কানেক্ট হওয়া শুরু করে, তখনই এসব আর মাথায় আসেনা।
আর্টওয়ার্কঃ আশিয়ানীর আর্টওয়ার্ক বাদে কমবেশি সবই চমৎকার লেগেছে। খুব সুন্দর একেছেন চিত্রশিল্পীরা। অনেকক্ষণ ধরে দেখেছি সবগুলো। যদিও কয়েকটা  অপ্রয়োজনীয় ছিল। আরো ভালো হতো যদি কোন কাজ করা অবস্থায় তাদের ধারণ করা যেত। শুধু শুধু ক্যারেক্টারদের না একে। সিচুয়েশন অনুযায়ী আকলে আরো ভালো হতো৷ অহ! অন্বয়কেও ভালো লাগেনি। কিন্তু আশিয়ানীর শাড়ি পরা অবস্থায় যা লাগছিল না!  উফফ! পুরাই হট। বত্ব, শাড়ির আইডিয়াটা অনেক ইউনিক ছিল। গল্পে এভাবে পেয়ে যাবো, ভাবিনি আগে। 
টুইস্ট এন্ড টার্নসঃ গল্পে টুইস্ট ছিল হালকা পাতলা। যেগুলো গল্পকে বুস্ট আর পড়ার মানসিকতাকে চাঙ্গা করেছিল৷ গল্পে টার্নস ছিল বেশ। হুটহাট করে কোনজায়গায় চলে গেল, আবার নিজ অবস্থানে চলে আসা ব্যপারটা উপভোগ্য। বর্তমানের সাথে অতীতের ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোর মেলবন্ধন ঘটানোটা ভালো ছিল। 
এথেনাঃ গল্পের প্রাণ হলো এথেনা। পাখিটাকে আশিয়ানীর “লক্ষী” বলে সম্বোধন করাটা পড়লে, মনে আলাদারকমের ভালোবাসার জোয়ার বইয়ে দেয়। যদিও পাখিটার এরকম আজব আজব কাজকারবার মাঝেমধ্যে বাকাচোখে দেখলেও ফ্যান্টাসি বলে মাফ করেছি। হাহা। এথেনা গল্পে এলেই নড়েচড়ে বসেছি প্রতিবারে। আশিয়ানীর মতো তার পিঠেও চড়ে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখেছি। তাছাড়া তার আর আশিয়ানীর বন্ডিং ছিল লাজবাব। সহমতে আশিয়ানীর মাথায় ঠোকর দেয়াটা হলো আমার প্রিয় মুহূর্ত। এরকম পাখি না পেলেও খানিকটা হলেও আমার আপত্তি নাই। এথেনা হলো প্রিয়। 
হিউমারঃ এই সেক্টরে লেখক বাজিমাত করে তবেই ছেড়েছেন। বইয়ের পরতে পরতে উনার হিউমারের ব্যবহার দেখে বিষ্মিত হয়েছি। এই একটা জিনিসই শুরুর দিকে বিরক্তি ধরা থেকে রক্ষা করেছে। নতুবা মনে হয়না শেষ করে এই লেখা লিখতে পারতাম। 
বিল্ড-আপঃ আশিয়ানী বইয়ের প্লট আহামরি বড় লাগেনি আমার কাছে। স্ট্যান্ড-এলোন বলেই ঠিকই আছে। কিন্তু শুধুমাত্র উনার বিল্ড-আপের দক্ষতার দরুণ গল্পটি এতবড় আর সুন্দর হয়েছে। উনি খুব ধীরে সুস্থে সময় নিয়ে প্লটটিকে বাড়তে দিয়েছেন৷ যা পরে বড় গাছের ন্যায় হয়ে উঠেছে। গল্পের বিল্ড-আপে কোন প্রকার তাড়াহুড়ো ছিল না। ক্যারেক্টারদের ডেভলপমেন্টও গল্পের মতো ধীরে সুস্থে এগিয়েছে। 
সম্পাদনাঃ আশরাফুল সুমন ভাই নিজেও ফ্যান্টাসি লেখক। সেক্ষেত্রে বইটির সম্পাদনাও দারুণ কায়দায় সম্পাদন করেছেন৷ আমি কোন ভুল পাইনি। হয়তো গল্পে বুদ হয়েছিলাম বলেই। এটা হলেও তো উনার কাজের দক্ষতাটাও বুঝা যায়। কি দারুণ না কাজেই করেছেন। হ্যাটস অফ! 
অন্বয়ের ক্যারেক্টারটার সাথে আমি নিজেকে রিলেট করতে পারি। লেখক এই ক্যারেক্টারটার ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্টে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। দিতে চেয়েছেন কিছু মেসেজ। যেটা আমার মতো পাঠকদের বড্ড উপকারে আসবে৷ হয়তো অনেকেরই এই অংশটি ভালো লাগবেনা, যেমন শুরুতে আমারও লেগেছিল। কেননা লেখক সময় নিয়ে ক্যারেক্টারটা বিল্ড করতে চেয়েছিলেন। আর যখন বিল্ড করে সমস্যাগুলো বিস্তরভাবে তুলে এবং এর থেকে পরিত্রাণ পাবার রাস্তাগুলো বলা শুরু করলেন, তখন কি আর ভালো না লেগে যায়? এই অংশে লেখক ফ্যান্টাসির আদলে আমাদের সমাজের সাধারণভাবে দেখা সমস্যার ভয়ানক ব্যাধি দেখাতে চেয়েছেন, যেখানে উনি সফল। উনি সার্থক এই ক্ষেত্রে। 
আমার সাথে হয়তো অনেকেই একমত হবেন যে, এই বইয়ের সেরা দিক হলো এর থার্ড এক্ট। এটা যদি এরকম জোস না হতো, তাহলে বইটি এতটা স্পেশাল হয়ে উঠতো না। বইয়ের মানটাও এটার কারণে বেড়ে গেছে। উনি খুব দক্ষতার সাথে সাজিয়েছিলেন সবকিছু৷ তাই শেষ পর্যন্ত দারুণ এক বই হয়েই দাঁড়ায়। সম্পাদক সাহেবের মতো বলতেই হয়, এই বই ২য় ক্যাটাগরিতে পড়ে। 
বইটির প্রডাকশন ছিল টপ-নচ। কাগজের দাম বেশি হওয়াতেও লেখক আর প্রকাশন বইয়ের দাম কম রাখার জন্যে ধন্যবাদ। আমার তো স্টুডেন্টদের কথা ভাবার জন্যে ধন্যবাদ। এই দামে এরকম বই উপহার দেয়ার জন্যে আপনারা বাহবার দাবীবার। প্রচ্ছদটা দেখেই প্রেমে পড়ে যাওয়ার মতো ছিল। আবার প্রত্যেকটা চ্যাপ্টারের আগে হালকা আর্টগুলোও মনোমুগ্ধকর ছিল।
সব যে ভালো লেগেছিল পড়ার সময় তা না কিন্তু। কিন্তু সেগুলো লেখকের সাথে শেয়ার করে বুঝতে পেরেছি কি কারণে সেগুলো ভালো লাগেনি। সেগুলো আবার একটু চিন্তা করেই বুঝতে পেরেছি তাড়াহুড়োতে কীভাবে এগুলা ভালো করে বুঝিনি। বিধায় খটকা লেগেই ছিল। তাই আমাদের উচিত লেখকের সাথে কথা বলে একটু বুঝার। পরেরটা নাহয় পরের জন্যেই তোলা থাক। ফ্যান্টাসি লাভার হলে তো অবশ্যই এই বইটি পড়া উচিত। নিজের দেশের লেখক এরকম মানের এক বই লেখেছে, পড়ে উৎসাহ দেয়া উচিত। আর সাধারণ পাঠক হলেও এটা একবার ট্রাই করা। জুলিয়ান ভাইয়ের নতুন বইয়ের অপেক্ষায় আছি এখন। আমার তরফ থেকে এটা হাইলি রিকমন্ডেড। একবার শুরু করেই দেখুন না। এটা ফ্যান্টাসির চাদরে অন্য কিছু মুড়ানো জিনিস। ভালো লাগবে৷
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?