কন্টেন্টের বিভাগ: বুক রিভিউ
বইয়ের নাম: আশা আকাঙ্ক্ষা
লেখকের নাম: শংকর
লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
কত অজানারে, চৌরঙ্গী, জন-অরণ্যের মত সাড়া জাগানো বিখ্যাত উপন্যাসগুলোর লেখক মণিশংকর ( ছদ্মনাম শংকর ) ১৯৩৩ সালের ০৭ই ডিসেম্বর ( বঙ্গাব্দ: ১৩৪১ সালের ২২শে অগ্রহায়ণ ) যশোরের বনগ্রামে জন্মগ্রহণ করলেও শৈশবের বেশিরভাগ ও কৈশোর কাটে কলকাতার হাওড়ায় । সংগ্রামী ও অদ্ভূত জীবনের অভিজ্ঞতায় যেন তাঁর লেখার উপজীব্য বরং, বলা ভালো অভিজ্ঞতাগুলো লেখাগুলোকে প্রাণ দেয় ।
বইয়ের জনরা: চিরায়ত উপন্যাস
প্রকাশনী: দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড ( ২০১০ সংস্করণ )
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১২৮
প্রচ্ছদ: গৌতম রায়
মূল্য: ২০০ টাকা
নিজস্ব রেটিং: ৮.৫ / ১০
“বল বীর, বল বীর
বল উন্নত মম শির ।
শির নেহারি আমারি নত শির
ওই শিখর হীমাদ্রির ।”
-কাজী নজরুল ইসলাম
ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়ে দু’যুগ এবং একটু বেশি মতন পেরিয়েছে । শংকর বাবু অর্থাৎ, লেখক তখনই যা বুঝেছিলেন এবং লেখেছিলেন তা এক চরম সত্য যা হয়তো আমাদের বুঝতে এখনও অনেক বছর লেগে যাবে । উপমহাদেশের প্রতিটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে কথাটা খাটে সমানে সমানে । আমরা গোলাম ছিলাম তাই বলে কী পরনির্ভর হয়ে থাকব? শীর উঁচু করে আত্মনির্ভর হয়ে বাঁচতে আমাদের এত দ্বিধা এবং বাধা কেন? ভারতবর্ষের আত্মনির্ভর হওয়া মানুষের চোখে যেন বিদ্রুপের হাসি । তবে সেই বিদ্রুপের হাসিও যে হিসেব করে সময়ের নির্দিষ্ট গণ্ডির মাঝে হাসতে হয় তা কেউ জানত না ।
কমলেশ রায়চৌধুরী, সদ্য আইআইটি ( ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ) হতে ডক্টরেট করা কাজ পাগল এক আদর্শবান যুবক যাঁকে খপ করে ধরে এইচএসির ( হিন্দুস্থান এগ্রো ক্যামিক্যালস ) রিসার্চ ডিরেক্টর হিসেবে সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত নোয়েল দিগম্বর বনার্জি তাঁর স্বপ্ন পূরণের ডার্বিতে ঘোড়ার বদলে লাগিয়েছেন বাজি । অগত্যা কমলেশকেও যোগদান করেত হল চন্দনপুরে এইচএসির গবেষণাগারে সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার হিসেবে । ধীরে ধীরে কাজের নেশায় মেতে ওঠা দিগম্বর শিষ্যরা স্বয়মধিগত বিদ্যেই দেশকে কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে জোরছে কাজ করছে । এরই মাঝে কমলেশ এক গুরু দায়িত্বের ভার নিজের কাঁধে চাপাতে বাধ্য হল । চন্দনপুর থেকে সোজা দরিয়াপুর তথা, পরিবর্তিত নাম কৃষিনগরে পদোন্নতি পেয়ে প্রোজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পেলেন । দিগম্বর বনার্জির নির্দেশ সাতই ডিসেম্বর কৃষিনগর কারখানা চালু করতে হবে আর অন্যদিকে কমলেশ তাঁর সর্বশেষ চেষ্টা অবধি করে যাচ্ছে । দিগম্বর বনার্জি তাঁকে চিনেয়েছি নতুন এক জগৎ, চাখিয়েছে নতুন এক সৃষ্টি এবং সাফল্যের উন্মাদনার অলীক পানীয় । দিগম্বর বনার্জির সাথে তাঁর বন্ধন অন্য এক কথা বলে এবং তাই তাঁর প্রাণ দিয়ে হলেও সে সাতই ডিসেম্বরই কারখানা চালু করবে ।
ইতোমধ্যে কমলেশ পরিচিত হয়েছে পার্সনাল সেক্রেটারি সুজাতা দাস, কৃষিনগর প্রোজেক্টের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার সুদর্শন সেন ছাড়াও বেশ কয়েকজন সহকর্মী যাঁরা কারখানা বসানোর কাজকে তড়ান্বিত করতে সচেষ্ট দিবানিশি হরদম । কর্মকুশল বিদিশি বাবুরা, যাঁরা জাপান ও জার্মান থেকে এসেছে তাঁদেরও অবাক করা অমানবিক পরিশ্রম যেন প্রেরণা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে । আবার, কমলেশের জীবনে একজন বিশেষ মানুষেরও আগমন ঘটেছে । চন্দ্রমল্লিকা চ্যাটার্জি, বিয়ের পর নামের পদবী পরিবর্তন করে রেখেছে রায়চৌধুরী । দুজনার মিষ্টি মধুর সম্পর্কের চেয়েও যেন কৃষিনগর প্রোজেক্টের কারখানা বড় কিছু । সবকিছু তবুও ঠিকঠাকই চলছিল কমলেশের জীবনে কিন্তু, হঠাৎই দিগম্বর বনার্জি কারখানা এক হপ্তা এগিয়ে দিতে বলেন যদিও সে কাজেও বেশ দারুণ অগ্রগতি ঘটেছিল এবং নির্দিষ্ট দিনের এক হপ্তা আগেই যে কারখানা চালু হবে এটাও ঠিক হয়ে গিয়েছিল কিন্তু, কী হল শেষে?
কমলেশ কি পেরেছিল দিগম্বর বনার্জির কথা রাখতে? কেনইবা ঘোষিত নির্দিষ্ট দিন থেকে এক হপ্তা এগিয়ে কারখানা চালুর ফের নির্দেশ দিলেন বনার্জি? কমলেশ-চন্দ্রমল্লিকার সম্পর্কের বন্ধন কি অটুট থাকবে? সুজাতা দাস, সুদর্শন সেন, বিদিশি বাবুরা কি পারবে কমলেশকে যুদ্ধে জয়ী করতে? দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আমি রাখব না আপনাদের বরং নিজেরাই একবার বইটি পড়ে দেখুন না শেষ পর্যন্ত কারখানায় কি সঠিক দিনে ইউরিয়া উৎপাদন চালু হয়েছিল? কমলেশ রায়চৌধুরী কি পেরেছিল এই গুরু দায়িত্বের ভার রক্ষা করতে?
বইয়ের কাহিনী ও অন্যান্য সমালোচনা:
লেখক বইটি এক ছটুির দিনে বেড়াতে গিয়ে গন্তব্যস্থলে কিছু তরুণ বৈজ্ঞানিকের সাথে কাহিনীগুলো বাস্তব হতে আশ্রিত হয়ে তাঁর মস্তিষ্কে কল্পিত হলে পরে তা তিনি কাগজ ও কালিতে রচনা করেন । এখন আপনারা নিজেরাই বইটি পড়ে দেখুন তিনি কি আমার কথিত মর্যাদার যোগ্য অধিকারী নাকি নয় ।
বইটি যেই প্রকাশনী হতে প্রকাশিত তার অন্য বইগুলো পড়িনি আগে এইটিই প্রথম । বাঁধাই যথেষ্ট নয়, বলার মতন । বানান সম্পাদনা বেশি একটা জুতসই নয় । বইটির প্রচ্ছদ পশ্চিম বাংলার দে’জ পাবলিশিং-এর অনুরূপ তবুও প্রচ্ছদটি বটে কাহিনী, কল্পনা ও নামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ । বইটির মূল্যও তুলনামূলক বেশ কম বলাই বাহুল্য ।
বই হতে উদ্ধৃত কিছু পছন্দের উক্তি:
* “সন্ধান করো তাকে নিশ্চয়ই খুঁজে পাবে ।”
– লে ব্লাঙ্ক
বেশি বেশি বই পড়তে তো কোনো বাঁধা নেই, বই ছুঁয়েই দেখুন না একবার ক্ষতি তো নেই । জ্ঞানের উৎস হোক বই ।
মোঃ শাহরিয়ার খান,
কন্টেন্ট রাইটার,
রাইটার্স ক্লাব বিডি ।
Leave a comment