আলসেমি দূর করবেন যেভাবে – আল্লামা ইবনুল জাওযী (রহঃ)

আলসেমি দূর করবেন যেভাবে

বেকার বসে থাকা, আরাম ভালো লাগা আর পরে থাকা কাজটার কঠিনতার চিন্তা থেকে আলস্য বাসা বাঁধে। আনাস ইবনু মাালিক (রাদ্বি.) বলেছেন, নবিজি (সা.) হামেশা দুআ করতেন, ‘আল্লাহ্‌, আমি আপনার কাছে কষ্ট, দুশ্চিন্তা, বুড়ো বয়স আর অলসতা থেকে আশ্রয় চাই।’ (বুখারী, ২০৭৯, ২০৮০)
.
সক্রিয় মুমিনদের ব্যাপারে নবিজি (সা.) বলতেন, ‘দুর্বল মুমিনদের চেয়ে শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়।’ (মুসলিম, কিতাবুল-কাদর, ৩৪)
.
সব সময় যাতে ফায়দা হবে তাতে লেগে থাকুন। আল্লাহর সাহায্য চান। হাল ছেড়ে বসে থাকবেন না। মুসিবতে পড়ে গেলে বলবেন না ‘যদি ওটা করতাম তা হলে এটা হতো না।’ বরং বলুন, ‘আল্লাহ এটাই ভাগ্যলিপিতে লিখে রেখেছিলেন। তিনি যা চান তা-ই হয়।’ ‘যদি’ শব্দটা শয়তানের দিকে যাওয়ার রাস্তা খুলে দেয়। 
.
ইবনু মাস‘ঊদ (রাদ্বি.) বলেছেন, “দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য কাজ না করে যে অলস বসে থাকে তাকে আমি প্রচণ্ড ঘৃণা করি।” তিনি আরও বলেছেন, “দুনিয়ার শেষ সময়ে কিছু লোকের সেরা কাজ হবে বসে বসে অন্যের নিন্দা করা। এসব লোকের আরেক নাম কুঁড়ে।”
.
ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বি.) বলেছেন, “ঢিলেমি অলসতাকে বিয়ে করেছে। আর তারা জন্ম দিয়েছে দারিদ্রকে।”
.
আলসেমির ওষুধ হচ্ছে, নিজেকে তাগাদা দিন: বসে থাকলে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব না। নিন্দিত হতে হবে। পরে চলে যাওয়া সময় নিয়ে আফসোসের দহনে পুড়তে হবে নিজেকে। কোনো কর্মঠ লোকের সফলতা যখন চোখে পড়বে তখন এই আফসোস হবে আপনার সবচেয়ে কষ্টকর সাজা। জ্ঞানবুদ্ধিওয়ালা মানুষ অলসতার নেতিবাচক পরিণাম নিয়ে ভাবে। বেশির ভাগ সময়েই অলসতার পরিণামে পরে কপাল চাপড়াতে হয়।
.
যখন দেখবেন আপনার প্রতিবেশী মুনাফা নিয়ে ঘরে ফিরেছে আর আপনি বসে বসে অন্ন ধ্বংস করেছেন তখন কি আপনার খারাপ লাগবে না? কিংবা কেউ জ্ঞান অর্জনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে অথচ আপনি কিনা অলস বসে সময় নষ্ট করেছেন। তখন কি আপনার আফসোস হবে না? এদুটো কথা একারণেই বললাম যে, আরামে থাকার যে-মজা, ভালো কিছু ছুটে যাওয়ার ব্যথা তার চেয়ে অনেক বেশি।
.
আলসেমি অসুখ থেকে উদ্ধার পেতে কর্মঠ উদ্যমী মানুষদের জীবনী পড়ুন। তাদের কাজকর্মনিয়ে ভাবনাচিন্তা করুন। বীজ বপনের মৌসমে যে ঘরে বসে বসে তা দিয়ে ফসলকাটার মৌসুমে ঘরে ফসল তোলার স্বর্ণসুযোগ নষ্ট করে তাকে দেখে অবাক লাগে আমার। 
.
ফারকাদ বলেছেন, কাজে নামার আগেই আপনি আরামের পোশাক গায়ে চাপিয়ে নিয়েছেন। শ্রমিকেরা কীভাবে কাজ করে সেটা কি খেয়াল করেছেন? ওরা কম দামি একটা পোশাক গায়ে জড়িয়ে কাজ শুরু করে। কাজ শেষ হলে পরে গোসল করে পরিষ্কার দুটো কাপড় পরে নেয়। আর আপনি কাজ ধরার আগেই আলসেমির পোশাক মুড়ে শুয়ে আছেন।’
.
ইবনুল-জাওযী (রহ.)-এর ‘মনের ওপর লাগাম’ বই থেকে
  • বই : মনের ওপর লাগাম
  • লেখক : আল্লামা ইবনুল জাওযী (রহঃ)
  • প্রকাশনী : ওয়াফি পাবলিকেশন
  • অর্ডার করতে ভিজিট করুন: Wafilife Dot Com
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?