‘আলফা মেইল’ প্রসঙ্গ – Alfa Mail

‘আলফা মেইল’ প্রসঙ্গ

ইদানীং অনেকেই নিজেকে আলফা মেইল পরিচয় দেন। এটা নিতান্তই হাস্যরসিকতার ছলে হলেও ব্যাপারটা অনেকটা শ্রুতিকটু। শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে যারা আলফা পুরুষ—তাদের সাথে নিজেদের তুলনা করা হলো মানুষ হিসেবে আমাদের মানবিকতাকে পাশবিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা। আমরা পশু নই। আমরা মানবিক বোধবুদ্ধি আর আবেগ সম্পন্ন মানুষ, আশরাফুল মাখলুকাত।

দেখেন, ‘আলফা মেইল’ টার্মের সাথে যে ধরণের এজাম্পশনগুলো জড়িয়ে আছে—তা একজন মুসলিম পুরুষের জন্য ধারণ করাটা বিব্রতকর।
যেই ছেলেটা লাজুক, তাকে আমাদের স্কুল সমূহে প্রায়শই বুলি করা হয় এভাবে—’লজ্জা নারীর ভূষণ, তুই মহিলা নাকি?’। অথচ দেখুন, লজ্জা তো নারী-পুরুষ নির্বিশেষে একজন মানুষের ভূষণ হওয়ার কথা ছিলো। মুসলিমদের মধ্যে উসমান ইবনে আফফান (রা.) ছিলেন অধিক লজ্জাশীল। তিনি এতটাই লজুক ছিলেন যে রাসূলুল্লাহ (সা) জানিয়েছেন—উসমান (রা)-এর লজ্জা দেখে ফেরেশতারাও লজ্জা পায়। দেখুন, এই লজ্জাশীলতাকে আল্লাহর রাসূল এপ্রিশিয়েট করেছেন। ‘হায়া’ হলো মুমিনের হারানো সম্পদ। অথচ আলফা মেইল হয়ে কোনো পুরুষ যদি তার বেহায়াপনাকে জাস্টিফাই করতে চায়—সে কীভাবে একজন ভালো মুসলিম হতে পারে?
বহুকাল আগে তাও ধর্মের প্রবর্তক লাউৎসে তার রচিত ‘তাও তে চিং’ গ্রন্থে একটা সুন্দর পংক্তি উল্লেখ করেছেন—
“পুরুষের মতো শক্তিমান হও, কিন্তু নারীর মতো ভদ্রোচিত জীবন যাপন করো।”
নারীদের কাছ থেকে পুরুষরা যুগযুগ ধরেই ভদ্রতা শিখেছে, অনুপ্রাণিত হয়েছে। সুতরাং আল্লাহর দেওয়া শরিয়াহর কাঠামোকে কেউ যদি তথাকথিত আলফা মেইল ন্যারেটিভের বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহার করতে চায়—সে ইসলামকেই আদো ঠিকঠাকমতো বোঝে নি।
একথা স্বীকার করতেই হয়, পশ্চিমের এক্সট্রিম নারীবাদ, মডার্নিটি আমাদের মুসলিমদের জীবনে কেওস তৈরি করেছে, আমাদের ঈমান আকিদায় বিভ্রান্তি তৈরি করেছে—তাই বলে আমরা কেনইবা তাদের মোকাবিলায় আরেক এক্সট্রিম চিন্তাকে উৎসাহিত করবো? ইসলাম হলো কুরআন ও সুন্নাহ। কুরআন ও সুন্নাহ জীবনের যে ব্যালেন্স তৈরিতে আমাদের উৎসাহিত করে—সেটা কখনোই এক্সট্রিম চিন্তার মাধ্যমে অর্জন করা যাবে না। 
আল্লাহর রাসূল আমাদের আদর্শ। কোনো কিছু বলার আগে বা রাগ নিবারনের পূর্বে আমাদের বারবার ভাবা উচিত—’এক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল হলে কী করতেন!’
একজন মুসলিমের আখলাক, তার হায়া, তার আচরণ ও হিকমাহ অন্যদেরকে ইসলামের দিকে অনুপ্রাণিত করবে। স্বয়ং আল্লাহর রাসূল যদি কঠোরভাষী হতেন—সেক্ষেত্রে সাহাবীরা আল্লাহর রাসূল থেকে দূরে সরে যেতেন বলেই আল্লাহ বলেছেন। আর আমাদের মতো যারা সাধারণ মানুষ—তাদের দিকটা একবার চিন্তা করুন। আদতে আলফা মেইল হওয়া, গালিবাজ হওয়া, উগ্রভাষী হওয়া, বেহায়া হওয়া কখনোই একজন মুসলিমের চরিত্র হতে পারে না। 
হ্যাঁ, আমরা মানুষ, আমাদের রাগ, ঘৃণা, আবেগ-অনুভূতি অন্যদের মতোই সমপরিমাণে আছে। কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে এসবের প্রকাশে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। অনেক অনেক ধৈর্য ধারণ করতে হবে। নয়তোবা ইসলামবিদ্বেষীরা আমাদের দেখিয়ে বলবে—’ঐ দেখো মুসলিমদের অবস্থা!’
সিয়ান | বিশুদ্ধ জ্ঞান | বিশ্বমান
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?