আমি তোমাকেই বলে দেবো – শানজানা আলম | I will tell you – Shanzana Alam

  • বই: আমি তোমাকেই বলে দেবো
  • লেখক: শানজানা আলম 
  • প্রকাশনী: বায়ান্ন
  • প্রচ্ছদ: মোঃ সাদিতউজজামান
  • নামলিপি: গালিব সর্দার
  • মূদ্রিত মূল্য: ৬০০ টাকা
  • প্রকাশকাল: নভেম্বর, ২০২০

আমি তোমাকেই বলে দেবো বইটিতে ৫ টি উপন্যাসিকা রয়েছে। সবগুলো উপন্যাসিকাতে- ই প্রেমকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

শুধু তোমারই জন্য: গল্পটিতে প্রথমেই দেখা যায় আবির- নিলী হুট করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায়। তারা কেউ এই বিয়ের কথা জানত না , পরিবারের কথা রেখেই তারা এই বিয়ে করতে রাজি হয়। বিয়ের পর আবির- নীলির মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিন্তু, নীলির মা এই বিয়েটি মেনে নিতে পারে নি এবং বিয়ের পর আবির- নীলির যোগাযোগ, তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার বিষয়ে কিছুই জানতেন না। তিনি নীলিকে এই বিয়ে থেকে বের করে আনতে চায়। শেষ পর্যন্ত কি আবির- নীলির বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছিল?

বইয়ের মধ্যে এই গল্পটি আমার সবচেয়ে পছন্দের ছিল। আবির- নীলির বিয়ে, তাদের বিয়ের পরবর্তী সম্পর্ক, নীলির মায়ের মনোভাব- লেখিকা খুব সুন্দর করে বর্ণনা করেছেন। গল্পে শেষ দুইটি পর্ব- ও অনেক সুন্দর ছিল। অসাধারণ একটি গল্প ‘শুধু তোমারই জন্য’। 

রোদের চিঠি: ১৬ বছর বয়সী স্কুল পড়ুয়া নিশা প্রেমে পড়ে রাজনৈতিক ক্যাডার আসিফের। এলাকার মানুষ আসিফকে গুন্ডা হিসেবে চেনে। আসিফ- ও নিশাকে মনে মনে পছন্দ করতো। আসিফ নিশার রাস্তায়, নিশার স্কুল বা কোচিংয়ের সময় দেখা হয়, কথা হয়। এই ছোট শহরে আসিফ- নিশাকে, নিশার বাবার এক কলিগ দেখে ফেলে এবং নিশার পরিবারকে জানায়। যার কারণে, নিশার মা- বাবা, নিশাকে একেবারে ঢাকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। নিশা তার ঢাকা যাবার কথা জানতে পারলে, আসিফের বাড়ি চলে আসে এবং আসিফকে বিয়ের কথা বলে। কিন্তু, আসিফ নিশাকে বাড়িতে দিয়ে আসে। নিশা একবুক অভিমান নিয়ে ঢাকা পাড়ি জমায়। আসিফ- নিশার এই গল্পের কি সুন্দর সমাপ্তি হয়েছিল?

এই গল্পের নামটি খুব চমৎকার। গল্পটি পড়লে বুঝা যাবে, কেন এই নাম। গল্পে আসিফ গুন্ডা হলেও , সে কোনো খারাপ বা অনৈতিক কাজে জড়িত ছিল না, সে তার পরিবারের দায়িত্ব ও ঠিকভাবে পালন করতো। নিশা ছোট বয়সে আবেগে ভেসে গেলেও, আসিফ সবসময় সঠিক সিধান্ত নিয়েছে। নিশার ঢাকা থেকে ফেরার পরের গল্পটা আরো সুন্দর ছিল। সহজ- সাবলীল ভাষার এই গল্পটি ও ভালো লেগেছে।

মেঘ রঙ মেয়ে: ইরার চাকরি হয় সৃষ্টি ফাউন্ডেশন এর একটি স্কুলে, যা প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকাতে। ইরা একঘেয়ে শহুরে জীবন ছেড়ে গ্রামে গিয়ে মুগ্ধ হয়ে যায়। একদিন  সৃষ্টির কর্ণধার সোবহান সাহেবের ছেলে তানভীর গ্রামে যায় কিছু কাজে। তখন ইরার সাথে তানভীরের পরিচয় হয়। তারপর থেকে ইরা- তানভীর দুইজন দুইজনকে মনে মনে পছন্দ করতো, যদিও তাদের কথা বা দেখা কোনটাই হতো না। ইরা স্কুলের চাকরির কয়েকমাস পরে স্কলারশিপ পেয়ে কানাডা চলে যায়। ইরা কি তানভীরের কাছে ফিরে এসেছিল?

ব্যক্তিত্ব আর অনুভূতির টানাপোড়েনে ইরা- তানভীর কারোরেই মুখে মনের কথা বলা হয় না। উচ্চবিত্ত তানভীরের সাথে মধ্যবিত্ত ইরার এই সম্পর্কে তানভীরের মা মেনে নিতে পারে না। ইরা- তানভীর দুইজনেই নিজেদের ইগো ধরে রাখে। পুরো গল্পটি পড়ে একটুও একঘেয়ে লাগেনি। গল্পের নামটাও খুব সুন্দর ছিল। 

অদ্বিতীয়া: ৩৮ বছর বয়সী ডিভোর্সী জামানকে বিয়ে করতে চায় ২৪ বছর বয়সী খুশি। জামানের ৫ বছরের এক ছেলেও আছে। খুশির পরিবারের কেউ এই সম্পর্ক মেনে নেয় না। খুশি- জামান কি এক হতে পেরেছিল?

খুশির জামানের অদ্বিতীয়া হওয়ার গল্প এটি। বইয়ের সবচেয়ে ছোট গল্প অদ্বিতীয়া হলেও, এই গল্পের রেশ থেকে যায় অনেকক্ষণ।

একটি গতানুগতিক প্রেমের গল্প: আনিকা প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে তার থেকে ৮ বছরের বড় বিভোরের। আনিকার বাসায় সবজি ডেলিভারি দিতে যায় বিভোর, তখনই আনিকা বিভোরকে প্রথম দেখে। এরপর থেকেই, আনিকা বিভোরকে এক নজর দেখার জন্য তার অফিসের আশেপাশে যেতো। বিভোর ও আনিকাকে পছন্দ করে ফেলে। আনিকার বিয়ে ঠিক হয়। আনিকা বিয়ের কথা আগে জানত না। আনিকা- বিভোর এরপর একটি ভুল করে বসে। ভুলটা কি তারা শুধরাতে পেরেছিল?

আনিকা- বিভোরের প্রথম দেখা হওয়াটা অন্যরকম লেগেছে। তাদের দুইজনের দেখা করার মুহূর্ত, তাদের কাটানো সময়- খুব মিষ্টি ছিল। বিভোরের মা- বোনের চরিত্র ও ভালো লেগেছে। মিষ্টি একটি গল্প ছিল এটি।

সহজ- সাবলীল ভাষায় লেখা এই ৫ টি গল্প মন ছুঁয়ে যায়। গল্পের কাহিনীগুলো সাধারণ হলেও, সবগুলো গল্প অসাধারণ ছিল। শুধু তোমারই জন্য, রোদের চিঠি-  গল্প দুইটি সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। বইয়ের প্রচ্ছদ ও খুব সুন্দর এবং আকর্ষণীয়। শানজানা আলম আপুর অন্য বইগুলোর মতো এই বইটিও দারুণ ছিলো।

বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?