[১]
আমরা কেউই শতভাগ দ্বীনদার নই । আপনি নিজেও নন, আমিও নই। এটা সম্ভবও নয়। আমরা সাধারণ মানুষ, ভুলত্রুটি আছে, ভুলত্রুটি থাকবে। তাই বলে কি আপনি এমন কাউকে মোটেও খুঁজবেন না, যে আপনার অনাগত সন্তানকে সুসন্তান হিসেবে গড়ে তুলবে? হ্যাঁ, অবশ্যই খুঁজবেন। কেননা যার অন্তরে বিন্দুমাত্র আল্লাহর ভয় নেই, যে আল্লাহর বিধিবিধানের নূন্যতম তোয়াক্কা করে না, সে কিভাবে দ্বীনদার সন্তান গর্ভে ধারণ করবে কিংবা গড়ে তুলবে? দ্বীনের নূন্যতম প্র্যাকটিসহীন এমন কাউকে জীবনসঙ্গী হিসাবে গ্রহণ করে দ্বীনদার সন্তান আশা করাটা নিশ্চিত বোকামী।
এখন কথা হল আমাদের সমাজের মেয়েরা কি এক্কেবারেই বেদ্বীন কিংবা নূন্যতম প্র্যাকটিসহীন? সালাফী কমিউনিটির বাহিরে কেউ দ্বীনদার নন? ঠিক কেমন আর কতটুকু দ্বীন চর্চা করলে একটা মেয়ে দ্বীনদার বলে পরিগনিত হবেন? মানে, আপনার কাছে কারো দ্বীনদারিত্ব মাপার স্কেল কি? এই সবগুলো প্রশ্নোত্তরের উপর নির্ভর করে আপনি আসলে জীবনসঙ্গী হিসেবে কেমন মেয়ে চাচ্ছেন। আপনি দু’দিন আগে দ্বীনে এসে যদি মেয়ে খোঁজার সময় এক্সট্রিম লেভেলে চলে যান কিংবা যদি ভেবে থাকেন আপনার জন্য কেবল একজন আলেমা মেয়েই পারফেক্ট, তাহলে বিয়ের পরে তারমধ্যে কিছু জিনিস কম-বেশি পেয়ে আপনি অশান্তিতে ভুগবেন। ফ্যান্টাসি ছেড়ে বাস্তবতার আলোকে জীবনসঙ্গী খুঁজলে আশা করা যায় বিয়ের পরে হতাশা আর আক্ষেপ কিছুটা কম হবে।
.
[২]
.
আমাদের অনেক দ্বীনি ভাইয়ের সংসারে শান্তি নাই। কারণ, বাসর রাতেই বউয়ের উপর শরীয়াহ কায়েম করার প্রবনতা। হঠাৎ করে দ্বীনে এসে এতো হার্ডলাইনে চলে যান যে, বউকে পর্যন্ত সামান্য ছাড় দিতে নারাজ।
‘সালাফী মানেই দ্বীনদার আর বাকিরা বেদ্বীন” এমন উদ্ভট চিন্তাভাবনার কারণে দ্বীনী ভাই-বোনদের মাঝে অহরহ তালাক হচ্ছে। এমনকি বিয়ের আগে লম্বা শর্তনামা দেখে অনেকে অগ্রিম তালাক দিয়ে দিচ্ছেন! গ্রাম্য ক্ষ্যাত টাইপের একটা মেয়েকে নিয়ে সারাজীবন সংসার করতে পারবেন, ভুল-ত্রুটি হলেও তাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে মানাতে পারবেন কিন্তু তথাকথিত শিক্ষিতা সালাফী মেয়ে কিংবা ছেলেকে পারবেন না। জানিনা কেন। হয়তো কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ অথবা ইগো কাজ করে। বেশি বুঝ কিংবা অতি বুঝও হতে পারে। আপনি কোনো এককালে বিদ’আতি ছিলেন, বিদ’আতি তরিকায়, বিদ’আতি মহলেই বিয়ে করলেন। পরবর্তীতে হিদায়াতের আলো পেয়েছেন। তো, এখন আপনি আবিস্কার করলেন যে, আপনার স্ত্রী বিদ’আতি। কিছুদিন দাওয়াতি কাজ করে হাঁপিয়ে উঠলেন। না, তোমাকে নিয়ে আর সংসার করা যাবেনা -অতএব, তালাক! এরকম কত তালাক যে হচ্ছে, যার কোন হিসেব নেই ।
.
[৩]
.
জনৈক উস্তাযকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে,”উস্তায! আমার স্বামীর আচার-আচরণসহ সবকিছু ভাল, কিন্তু সে নিয়মিত নামাযী না। মানে, মাঝে মধ্যে নামায পড়ে।
আমি কি এখন খোলা নিয়ে নিবো? উল্লেখ্য যে, আমি দুই সন্তানের মা এবং আমিও আগে বেদ্বীন ছিলাম।”
উস্তায বললেন, “বোন! আপনি সর্বপ্রথম সংসারে দাওয়াতি কাজ করুন। স্বামীর জন্য নিয়মিত দু’আ করুন। যে আল্লাহ্ এক যুগ পরে আপনাকে হিদায়াত দিয়েছেন, সে আল্লাহ্ কি আপনার স্বামীকে হিদায়াত দিতে পারেন না? অবশ্যই পারেন। সুতরাং হাল ছেড়ে দিবেন না, সংসার ভেঙে ফেলবেন না।” ড.আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহও একই কথা বলেছেন। অন্যদিকে শাইখ আসিম আল হাকিমের কাছেও একবোন যুক্তিসঙ্গত কারণ পেশ করে ডিভোর্স নেয়ার কথা বলেছিল, তিনি বারবার উত্তর দেন যে, “বোন! সংসার ভেঙে ফেলবেন না।” সত্যি বলতে সংসারগুলো গড়তে অনেক সময়, সবর আর ত্যাগ-তিতিক্ষা স্বীকার করতে হয় কিন্তু ভাঙতে এক সেকেন্ডও লাগেনা।
.
আপনি স্ত্রীকে দ্বীনী পরিবেশ দিতে অক্ষম। যৌথ ফ্যামিলিতে রেখেছেন। আলাদাভাবে রাখার মতো বাহিরে জায়গা-জমিও নেই। আবার জায়গা থাকলেও টাকা-পয়সা নেই। টাকা থাকলেও সমাজে ছিঃ ছিঃ পড়ে যাওয়ার ভয়ে এক পাতিলে খান। আরে মিয়া! আপনার তো সারা গায়ে ক্ষত অথচ আপনি বউয়ের গায়ে মলম লাগাতে এতো মরিয়া হয়ে উঠছেন কেন!?
সুতরাং ভাইদের বলবো বিয়ের পরে স্ত্রীকে কিছুটা ছাড় দিন, আর বিয়ের আগে একরোখা স্বভাব ত্যাগ করে, প্রান্তিকতার উর্ধে উঠে ভাল, স্বতী, নামাযী নারী পেলে বিয়ে করে ফেলুন। ত্রুটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হলে দাওয়াতি কাজ করুন, তাকে বুঝান। ইনশা আল্লাহ্ সংশোধন হয়ে যাবে। কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজ সংসারকে অগ্নিকুণ্ড বানাবেন না। দিনশেষে আপনার ঘরের চেরাগ আপনাকেই জ্বালাতে হবে, অন্যরা শুধু উপদেশ আর পানির বদলে কেরোসিনই দিবে।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?