বইয়ের নাম: আধার নগরীর ধুম্রকুহেলী
লেখক: মোফাচ্ছের হোসেইন নির্জন
প্রকাশনী: কুহক কমিক্স ও পাবলিকেশন
প্রকাশকাল: জানুয়ারি ২০২১
জনরা: ক্রাইম থ্রিলার
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৭২
মলাট মূল্য: ৪৩০ টাকা
পার্সোনাল রেটিং: ৯.৫/১০
কাহিনি সংক্ষেপ:
শহরে একের পর এক কম বয়সি মেয়ে গুম হয়েই চলেছে। অনেক চেষ্টা করেও হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশদের। এই সময় কেসে দায়িত্ব চলে আসে ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের মেঘার হাতে। প্রশ্ন হলো কেও কি ইচ্ছা করে মেঘাকে ফেলছে এমন ঘোরতর পরীক্ষায়?
ঠিক পাশের শহরেও চলছে নারকীয়তা। মারা পড়ছে একের পর এক মানুষ, যাদের সবাই কোনো না কোনো ভাবে জড়িত অপরাধজগতের সাথে।
এখানেও এসে আটকে গিয়েছে ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ। দায়িত্ব এসে পড়েছে রাজ আর অনিমেষ এর কাধে। কোনো দিক থেকে সমাধান করা যাচ্ছে না। প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে এর সবই কি আত্মকোন্দল নাকি অন্যকিছু? খুনীদের সাথে মন্ত্রীর পরিচয়ের রহস্য কী? দুই শহরের অপরাধের ভিতরে কোনো যোগসুত্র নেই তো? এর সাথে পঁচিশ বছর আগেই মৃত ফাসির আসামির কি সম্পর্ক? মেঘা, রাজ আর অনিমেষ কি পারবে নিজ নিজ শহরের এই রহস্য সমাধান করতে নাকি হারিয়ে যাবে আঁধার নগরীর ধুম্রকুহেলীতে?
চরিত্র বিশ্লেষণ:
বইটিতে আমার প্রিয় চরিত্র ছিলেন অফিসার রাজ। উনার কাজে বারবার মুগ্ধ হয়েছি। বাকি সকল চরিত্রগুলো ও তার চেয়ে কম ছিলো না৷
পাঠ প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্য:
বইটি এক কথায় অসাধারণ লেগেছে। আমার পড়া সেরা থ্রিলার বইগুলোর মধ্যে বইটি সহজেই প্রথম সারির বইগুলোর সাথে নিজের স্থান করে নিয়েছে। লেখকের সাবলীল লিখনশৈলী আমাকে বারবার মুগ্ধ করেছে। বইটি পড়ার সময় ভেবেছিলাম হয়তো শেষটা কেমন হবে তা একটু হলেও কল্পনা করতে পেরেছি, কিন্তু না একেবারেই আমার ভাবনার বাহিরে ছিলো।
বইটিতে সমাজের নানা অন্ধকার দিক ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। সমাজের শত শত মানুষের ভিড়ে বিকৃত মস্তিষ্কের কত মানুষ আছে সে সংখ্যা আমরা অনুমান করতে পারলেও তাদের কাজ সম্পর্কে সবসময় ধারণা করতে পারিনা। রিভেঞ্জ থ্রিলারও বলা চলে বইয়ের ঘটনাটিকে।
“ফিল্যান্ডার” কে সে? কি তার কাজ? বারবার ভাবিয়ে তুলেছে ব্যাপারটা আমাকে। আদৌ কি শহরের আঁধার কাটবে? নাকি আঁধারের মাত্রা আরো বেড়ে যাবে এ নগরীতে? শহরে রাতের অপকর্ম বেড়েই চলেছে। কে আলোর দিশারি হয়ে আসবে আঁধার নগরীতে?
বইয়ের লেখক অসাধারণ ভাবে প্রত্যেকটি চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছেন। সাবলীল লিখনশৈলী বারবার পাঠককে মুগ্ধ করবে! লেখক যে দক্ষতার সাথে খুনীর ব্যাক্তিত্ব এবং কাজ ফুটিয়ে তুলেছেন বইটি পড়ার সময় একটু ভীতি সৃষ্টি হয়েছিলো আমার। খুনের ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যা পড়ে মনে হয়েছে নিজের চোখের সামনে ঘটছে সেগুলো।
লেখক খুবই দক্ষতার সাথে আমাদের বর্তমান সমাজের ঘৃণিত এবং বাস্তব কিছু দিক তুলে ধরেছেন। যা এক কথায় অসাধারণ লেগেছে। উনার লেখা প্রতিটি লাইন ই প্রশংসনীয়। বইটি পড়ে আমার একঘেয়েমি ব্যাপারটা অনুভব হয়নি। বইটিতে ছিলো প্রচুর থ্রিলারে ভরপুর। কখনো ভীতি সৃষ্টি হয়েছে, কখনো শিহরিত হয়েছি। সমাজের কিছু অন্ধকার দিকের ব্যাখ্যা ছিলো বইটিতে। রাজনৈতিক দলের কিছু নেতারা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার কিভাবে করছে তা বইটি না পড়লে ভাবা যাবেনা।
বইটির শেষটা ছিলো সেরা এবং তার উপর যদি কিছু থাকে তাহলে সেটা। টুইস্ট ছিলো প্রচুর। আদৌ কী সব রহস্যের সমাধান হয়েছে? সেটা বইটি পুরোটি না পড়লে বোঝা দায়। থ্রিলারপ্রেমীদের জন্য বেস্ট একটা বই এটি। নবীন লেখক হিসেবে উনার প্রথম বইটি সত্যি ই জয় করেছে আমার পাঠক মন।
প্রিয় বইটির কিছু পছন্দের উক্তি যা মনের মধ্যে গেঁথে থাকার মতো:
• আমার মৃত্যুর আগে আমি বারবার মরেছি
বাঁচিনি কখনো বরংচ মরেছি!
পঁচেছি গলেছি বাঁচিনি শুধু ভালোবেসেছি।
• যেখানেই দেখবে আঁধার, সেখানেই আলো হয়ে জ্বলে উঠো।
• এই মৃত্যু উপত্যকায় বেঁচে আছি, সেটাই আমার বীরত্ব।
• ছাইড়া যাওয়া মেলা কষ্টের, যারা ছাইড়া যায় তারা পাষাণ নয়তো নিরুপায়!
• মৃত্যু হয় আত্মার!
দেহ তো আত্মার বাহক মাত্র।
বইয়ের অপূর্ণতা:
একটি বইয়ের সব শব্দ ই নির্ভুল হয়না। তেমনই এটার ও কয়েকটি শব্দ ভুল ছিল তবে তা পড়ায় কোনো প্রভাব ফেলেনি। আশা করি পরবর্তী মুদ্রণে সেগুলোও ঠিক হয়ে যাবে।
লেখকের জন্য দোয়া ও শুভকামনা রইল। আশা করব আরো ভালো ভালো বই ভবিষ্যতে আমাদের উপহার দিবেন।
ছবি: সংগ্রহীত
[ভালো লাগলে ১০ এর মধ্যে রেটিং দিবেন। শুকরিয়া]
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?