- বই: আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল
- লেখক: নিয়াজ মেহেদী
- প্রকাশনী: বাতিঘর
❝হোটেল খোঁজতাছেন তোমরা?❞
মাঙ্কি ক্যাপ পরা বেটে মতো এক লোক এসে বলল কথাটা। হ্যাঁ বোধক জবাব মিলতেই আবার বলল, ❝তাইলে আসো মোর পাছে পাছে?❞
প্রিয়বন্ধুকে শেষ বিদায় জানাতে উত্তরবঙ্গের কড়া শীতে মধ্যরাতে পলাশবাড়ি পৌঁছায় অরিনন্দম। আশেপাশে হোটেল না মিলায় হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তখনই দেখা হয় সেই বেটে মানুষটার সাথে। তাকে অনুসরণ করে সে পৌঁছায় এক হোটেলে। যার নাম, ❝আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল❞। ঢুকেই দেখতে পায় সেখানে আরও পাঁচজন মানুষ বসে আছে।
মানুষের নানা রকমের শখ থাকে। গান শোনা, বই পড়া, বাগান করা ইত্যাদি। আমাদের হোটেল মালিক আওলাদ মিয়ার এক অদ্ভুত শখ আছে। তার শখ ❝গল্প শোনা❞। যেনতেন গল্প নয়। একজন মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত, অস্বাভাবিক কিংবা অলৌকিক ধরনের গল্প শোনাই তার শখ। শখের তোলা আশি টাকা বললে আওলাদ মিয়ার শখের তোলা হবে অদ্ভুত গল্প শোনা। তাই গত তেরো বছর ধরে আওলাদ মিয়া বছরের একটি বিশেষ দিনে আয়োজন করে এই অদ্ভুত গল্প বলার আসর। আর সেই দিনেই ষষ্ঠ অতিথি হিসেবে আওলাদ মিয়ার হোটেলে গল্প বলার আসরে আগমন হয় অরিনন্দমের। ছয়জন মানুষের গল্প বলা শেষে আওলাদ মিয়া শোনাবেন তার অদ্ভুত গল্প। তবে বৃদ্ধা মহিলাকে দিয়েই শুরু হলো জীবনের গল্প।
একে একে সাতজন বলে যায় তাদের জীবনের অদ্ভুত, অস্বাভাবিক সব কাহিনি। সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে শুনতে থাকে একেকজনের গল্প। সবশেষে আসে আওলাদ মিয়ার পালা। গল্পে গল্পে রাত কেটে যায়। শুরু হয় নতুন সকাল। সমাপ্তি হয় গল্পের আসরের।
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
❝আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল❞ নাম দেখেই নানা মুখরোচক খাবারের চিন্তায় জিভ পানিতে লকলক করে উঠলে বলব, সরি বস ঢোক গিলে ফেলেন। খাবার হোটেলের নামে বই কিন্তু খাবারের কিচ্ছু নাই। এই হোটেলে আওলাদ মিয়া বছরের এক রাতে গল্প বলার আসর করেন। ছয়জন মানুষের জীবনের অস্বাভাবিক কিছু গল্প নিয়েই বইটি রচিত। একেকজনের গল্প ছিল একেকরকম- ভৌতিক, বৈজ্ঞানিক আবার রূপকথা। বিভিন্ন ঘটনার মিশেলে ছয়জনের গল্প শুনে আর আওলাদ মিয়ার নিজের গল্প শুনিয়ে রাত পার হয়।
লেখকের প্রথম বই পড়া শুরু করেছি ❝আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল❞ দিয়েই। ভিন্ন ঘরনার এই বইতে একইসাথে বিভিন্ন ধরনের মানুষের গল্প ভিন্ন ঘরনায় দেখা দিয়েছে। একটা নির্দিষ্ট ঘরনায় এই বইকে ফেলা যায় না। কনফিউজ ঘরনার বই বলে পড়তে যে খারাপ লেগেছে, এমন মোটেও না। অদ্ভুত সব গল্প পড়তে বেশ ভালো লেগেছে। লেখকের গল্প বলার ধরন ভালো ছিল। ছয়জন ভিন্ন মানুষের গল্প বিধায় এক গল্পের সাথে আরেক গল্পের যোগ ছিল না। এজন্য একে ছোটো গল্প সংকলনও বলা যায়।
বন্ধুর মৃ ত্যু তে তাকে শেষ দেখা দেখতে যাওয়া অরিনন্দমের বিস্মৃত মন নিয়ে গভীর রাতে অদ্ভুত সব গল্প শুনে রাত কাটিয়ে দেয়ার মধ্যে দিয়ে লেখক যে গল্পের ভীত তৈরি করেছেন তা আসলেই প্রশংসার দাবি রাখে।
আঞ্চলিক টানে রংপুরের ভাষায় কথা বলা কিশোরের গল্প পড়তে মুখ-দাঁত সব বাঁকা হয়ে গেছে। ভাষা বুঝতে খুব কষ্ট হয়েছে। অর্থ খুঁজে খুঁজে দেখতে হয়েছে বলে এই গল্প পড়তে অনেক বেশি লেগেছে।
বাদবাকি বই আমার ভালো লেগেছে।
❝আওলাদ মিয়া❞ কে নিয়ে আরও লেখা আশা করি লেখক থেকে। সম্প্রতি মেলায় ❝মর্কট মঞ্জিল❞ গল্প সংকলনে আওলাদ মিয়ার একটা গল্প ছিল। সেটাও ভালো লেগেছে। তবে উনাকে নিয়ে আবারও একক বই চাই।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?