আই অ্যাম পিলগ্রিম book review ll thriller books ll bookpoint24

যখনই কোনো বই পড়া শুরু করি, বিশেষ করে কোনো থ্রিলার বই, তখন স্বাভাবিকভাবেই এর এন্ডিং নিয়ে কৌতূহল বোধ করি। ফলে, যত দ্রুত সম্ভব কাহিনির শেষভাগে পৌঁছাতে চেষ্টা করি। কিন্তু, কিছু কিছু বই এতই ভালো হয় যে, মন চায় বইটি যেন শেষ না হোক। অবচেতন মনে কখন যেন আপনাআপনি প্রার্থনা শুরু করে দিই, “বইটি যেন চলতেই থাকে… চলতেই থাকে… চলতেই থাকে…”

বই: আই অ্যাম পিলগ্রিম

লেখক: টেরি হেইস

অনুবাদক: শাহেদ জামান

প্রচ্ছদ: ডিলান

জনরা: থ্রিলার, স্পাই, ডিটেকটিভ, ক্রাইম

প্রকাশনী: বাতিঘর প্রকাশনী

ব্যক্তিগত রেটিং: ৫/৫

কাহিনি সংক্ষেপ:

নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের সস্তা হোটেলে এক তরুনীর খুনের ঘটনার সাথে কি সম্পর্ক তুরস্কের এক অভিজাত ম্যানসনে ঘটা দুর্ঘটনার?

অনেক বছর আগে সৌদি আরবে হওয়া এক শিরোচ্ছেদের সাথে কি সম্পর্ক থাকতে পারে আফগানিস্তানের হিন্দু কুশ পর্বতমালায় পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া তিনটি লাশের? কেনই বা উপড়ে নেওয়া হলো সিরিয়ার গোপন ল্যাবরেটরির এক কর্মকর্তার দুচোখ?

বন্ধুর অনুরোধে ক্রাইম সিনে এসে গোপন এক মিশনে নামতে হলো একজন প্রাক্তন কভার্ড এজেন্টকে। কি এমন ভয়াবহ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে আমেরিকার জন্য যে, নাইন–ইলেভেনের পর থেকে সাভাবিক জীবন যাপনের চেষ্টা করা পিলগ্রিমকে ফিরতে হলো তার পূর্বের জীবনে?

এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে যেতে হবে সৌদি আরব। যেতে হবে বাহরাইন। একবার সিরিয়া। তো কখনো আফগানিস্তানের দুর্গম পর্বতমালায়। কখনো জার্মানি। তো আবার তুরস্ক। সঙ্গি হতে হবে পিলগ্রিমের। কখনো আবার সঙ্গ দিতে হবে সারাসেনকে।

সংক্ষিপ্ত আলোচনা (প্রেক্ষাপট, চরিত্র এবং টুইস্ট):

বইয়ের টাইমলাইনকে ‘অতীত’ এবং ‘বর্তমান’ এই দুইভাগে ভাগ করা যায়। এই দুই ভাগের আবার রয়েছে আরও প্রধান দু’টি ভাগ… ‘পিলগ্রিমের অতীত’ ও ‘সারাসেনের অতীত’ এবং ‘পিলগ্রিমের বর্তমান’ ও ‘সারাসেনের বর্তমান’। এছাড়া অন্যান্য কিছু চরিত্রদেরও অতীত জীবনের কাহিনি রয়েছে যা মূল প্লটের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।

প্রধান দুই চরিত্র তো বটেই, তাদের পাশাপাশি অন্যান্য চরিত্রদেরও মনস্তত্ত্ব, বৈশিষ্ট্য, জীবনদর্শন, উদ্দেশ্য ইত্যাদি খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

কাহিনি একদম স্ট্রেট ফরওয়ার্ড। কিন্তু, এর মানে এই না যে বইয়ে কোনো টুইস্ট নেই। তবে, টুইস্টগুলো একদমই সাদামাটা। চমৎকার একটি থ্রিলার হতে হলে যে দমবন্ধ হয়ে আসার মতো অবিশ্বাস্য কোনো টুইস্ট থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। “আই অ্যাম পিলগ্রিম” তারই প্রমাণ।

পাঠ প্রতিক্রিয়া:

দৈত্যাকার একটি বই। কিন্তু, প্রথম থেকে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত একটা মূহুর্তের জন্যও বিরক্ত বোধ তো করিইনি, বরং শেষ করার পর সর্বপ্রথম যে কথাটি মনে হয়েছে তা হলো, “বইটা কেন আরও বড় হলো না।”… বইটি শেষ হয়ে যাওয়াতে আফসোস হচ্ছিল খুব।

বড়/মোটা বই দেখলেই অনেকে ভয় পায়। আবার অনেকে স্লো বার্ন ভেবে এরিয়ে যায়। কিন্তু, “আই অ্যাম পিলগ্রিম” প্রমাণ করেছে বইয়ের আকার বিশাল হওয়ার মানে এই না যে, বইটি স্লো।

সুবিশাল ক্যানভাসের অসাধারণ এই বইটি নাকি লেখকের প্রথম উপন্যাস। অবিশ্বাস্য!!!…

মার্ডার মিস্ট্রি হিসেবে শুরু হওয়া বইটি চোখের সামনেই কখন যেন একটি স্পাই থ্রিলারে রূপান্তর হয়ে যায়। ডিটেকটিভ এবং স্পাই থ্রিলারের অসম্ভব সুন্দর একটি সংমিশ্রণ।

“আই অ্যাম পিলগ্রিম” ২০২০ সালে আমার পড়া সেরা থ্রিলার তো বটেই। এছাড়াও এখন পর্যন্ত আমার পড়া সেরা বইয়ের তালিকায় অনেক ওপরের দিকে স্থান করে নিয়েছে বইটি।

“বই অনন্ত যৌবনা… যদি তেমন বই হয়।” (কথাটি কার তা মনে নেই।)… “আই অ্যাম পিলগ্রিম” নিসন্দেহে তেমনই একটি বই। সকল থ্রিলারপ্রেমীর উচিৎ বইটি একবার হলেও পড়া। এবং একবার পড়ার পর বার বার পড়তে চাইবেনা এমন থ্রিলার প্রেমী কমই পাওয়া যাবে।

মান (অনুবাদ, সম্পাদনা, বাঁধাই, প্রচ্ছদ):

অনুবাদ ছিলো খুবই সাবলীল। মনেই হচ্ছিল না যে কোনো অনুবাদ পড়ছি। মনে হচ্ছিল, বইটি যেন শাহেদ জামান ভাইয়ের মৌলিক বই। অথবা, টেরি হেইস যেন নিজেই বাংলায় লিখেছেন বইটি।

বানান ভুল ছিলো হাতে গোণা। এছাড়া আর কোনো সমস্যা চোখে পড়েনি।

বাঁধাইয়ের মান মোটামুটি। খুব ভালো না, আবার খারাপও না।

প্রচ্ছদ করেছেন ডিলান। যিনি আর কেও নন, স্বয়ং বাতিঘরের প্রকাশক শ্রদ্ধেয় মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ভাই। প্রচ্ছদটি একদমই সাধারন। তবে, কখনো কখনো অসাধারন একটি বইয়ের জন্য একটি সাধারন প্রচ্ছদই যথেষ্ট।

বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?