অহিংসা
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
অবসর প্রকাশনা সংস্থা
১২০ টাকা
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর কোনো একটা বইয়ের আলোচনায় পড়েছিলাম যে, তাঁর বইয়ের মূল উপজীব্য বিষয় দুইটি। নর-নারীর জটিল দ্বন্দ্ব এবং ধনী-গরিবের শ্রেণিবিভাজন।
‘অহিংসা’ উপন্যাসে প্রথমোক্ত বিষয়টির সাথে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ উপজীব্য করে লেখক গল্প ফেঁদেছেন। আশ্রম। যেখানে ধর্মের বাণী শোনানো হয়, জীবন ঘনিষ্ঠ উপদেশ দেয়া হয়। তবে সবসময় যে আশ্রমের মূল উদ্দেশ্য সৎ থাকবে এমনটি নাও হতে পারে। একটি আশ্রম নিয়ে আমাদের গল্প। সেই আশ্রমের কর্তা সদানন্দ সাধু। মানুষকে উপদেশ এবং তপস্যার মাধ্যমেই দিন কাটে তার। আদতে সদানন্দকে আশ্রমের কর্তা মনে হলেও পেছন থেকে সবকিছুর কলকাঠি নাড়ে বৈষয়িক জ্ঞানে পটু বাল্যবন্ধু বিপিন। আশ্রমের ম্যানেজার সেইই, কারণ সদানন্দের এদিকে অভিজ্ঞতা নেই বলে বিপিন তাঁর উপর তেমন ভরসা পায় না।আশ্রম বিপিন চালায় এবং যে রাজা তথা জমিদারের জমির উপর আশ্রম স্থাপিত তাদের সাথেও সবকিছুর দেখভাল সেইই করে।
সবকিছু ঠিকঠাক চলতেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে জমিদারের ছেলে নারায়ণ মাধবীলতা নামে এক মেয়েকে বিয়ের কথা বলে পালিয়ে নিয়ে আসে কিন্তু আমোদের পর সে পুলিশের হাঙ্গামার ভয়ে মাধবীলতাকে আশ্রমে রেখে দিতে চায়।সদানন্দ ও বিপিন রাজি না হলেও,যেহেতু আশ্রমের জমির কর্তা ভবিষ্যতে নারায়ণ হবে সেই চিন্তা করে মাধবীলতাকে রেখে দেয় আশ্রমে। আশ্রমেই তাকে দীক্ষা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।কিন্তু ওদিকে সাধুপুরুষ সদানন্দ যতই মুখে ধর্মের বাণী শোনাক মাধবীলতার প্রতি তার কাম জাগ্রত হয় এবং তা চরিতার্থ করার জন্যই বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে।
এবং এভাবেই গল্প এগোতে থাকে এবং একটি সুন্দর বইয়ের সমাপ্তি ঘটে। আমরা যারা লালসালু পড়েছি তারা নিশ্চয়ই মজিদের মাজারকেন্দ্রিক ভন্ডামির সাথে পরিচিত। সেই লালসালু নাম উপন্যাসের অন্যপিঠ যেন অহিংসা। উপন্যাসে দার্শনিক কথাবার্তা অনেক, পাঠকের একঘেয়ে লাগতে পারে। আর মাঝেমধ্যে কাহিনীর স্পষ্টতা বোঝাতে লেখক কাহিনী বিশ্লেষণ করেছেন আলাদাভাবে। বইটার কাহিনী ধীরপ্রকৃতির। কিন্তু শেষ দিকে খুব দ্রুত শেষ করে দিয়েছেন সব। আরেকটু বিস্তারিত থাকলে বোধ হয় ভালো হতো।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?