অলৌকিক : সালমান হক সম্পাদনা | Aloukik : Salman Hoq

  • অলৌকিক – অতিপ্রাকৃত গল্পসংকলন – পাঠ প্রতিক্রিয়া!
  • সম্পাদনা : প্রান্ত ঘোষ দস্তিদার, সালমান হক
  • প্রকাশক : আফসার ব্রাদার্স
  • প্রকাশকাল : বইমেলা ২০২২
  • মুদ্রিত মূল্য : ৬২০ টাকা

অতীন্দ্রিয় : অতিপ্রাকৃত গল্প সংকলন’-এর ধারাবাহিকতায় আফসার ব্রাদার্স থেকে দিতীয়বার বেরোল ‘অলৌকিক’। প্রান্ত ঘোষ দস্তিদার এবং সালমান হকের সম্পাদনায় আরেকটা দারুণ গল্প সংকলন, এবং এবারেরটা ভালো লেগেছে আগেরবারের চাইতেও বেশি। প্রডাকশন কোয়ালিটি সন্তোষজনক, প্রচ্ছদ দারুণ। পুরো বইয়ে ৩৬টা গল্পের মাঝে উল্লেখযোগ্য ১৫টা গল্পের রিভিউ দিলাম সংক্ষেপে।
মেমেন্ত মরি : যারিন তাসনিম প্রমি’র লেখা এই প্রথম পড়লাম, এবং আমি মুগ্ধ। আগাগোড়া একরকম টোন বজায় রেখে একটা সূক্ষ্ম রহস্যময় যাদুবাস্তব আবহ ধরে রেখেছিলেন লেখক। গল্পের পরিস্থিতি বা পারিপার্শ্ব নির্মাণ করা হয়েছে নিপুণভাবে। লেখিকার আরো লেখা পড়ব নিঃসন্দেহে। প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছেন।  
নোনা : আবারো কোনো লেখকের লেখা প্রথম পড়েই মুগ্ধ হলাম। আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার, প্রান্তিক জীবনযাপন আর যাতায়াত ব্যবস্থার অবিকল ছবি নির্মাণ, আর নিতান্ত মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যাকে উপজীব্য করে গায়ে কাঁটা দেওয়া গল্প লিখেছেন লেখক। অনবদ্য।  
পূর্ণ আভ্যন্তরীণ প্রতিফলন : ‘শ্বাপদ সনে’র প্রটাগনিস্টের চাইতে পার্শ্ব চরিত্র শিপলুর গল্পগুলোই বেশি দারুণ লেগেছিল আমার কাছে। ওই শিপলুই ফেরত এসেছে আবার নব্বই দশকের প্রেক্ষাপটে, এই গল্পটায়। শিপলুর আধিদৈবিক তদন্তগুলো যেমন অভিনব আইডিয়া নিয়ে আসে, তেমনি, লেখকের স্টোরিটেলিং-এর গুণে খুবই সুপাঠ্য হয়ে উঠেছে এই গল্পটা।  
খেকো : এনামুল রেজা’র গল্প-ও আমার এই প্রথম পড়া। খুব গ্রাফিক কিছু ছিল না, কিন্তু আবহ দিয়ে গায়ে কাঁটা দিইয়েছেন লেখক, সাথে শূণ্য করে দেওয়া একটা অনুভূতি। দারুণ লেগেছে পড়তে।  
ইয়াঘুত রত্ন ভান্ডার : আলমগীর তৈমুর একজন বস মানুষ, ওনার নামের মান রেখেছেন এই গল্পে। বুড়িগঙ্গার ওইপাড়ের জিঞ্জিরায় গল্পের প্রেক্ষাপট সাজিয়েছেন, বর্ণনা তুলে এনেছেন চোখে ভাসার মতো। সাথে মিশিয়েছেন মিথ, মধ্যপ্রাচ্যের বিস্মৃত দেবতাকে পুরান ঢাকার স্থানান্তরিত অভিজাত পরিবারের হাত ধরে ঢুকিয়েছেন গল্পে। ‘স্টোরি’-টা এখানে দুর্বল, এইছাড়া বর্ণনা ভালোই লেগেছে।  

১৬ নম্বর বাড়ি চেনার তেরটি উপায় : তানজীম রহমান যে ১৩টি দুয়েক লাইনের গল্প লিখেছেন, এই ধরণের গল্পকে বলে মাইক্রোফিকশন। এরা বাংলা অণুগল্পের মতো না। বরং জাপানি হাইকুর সাথে কিছু তুলনা দেওয়া যায় এদের। এই তেরোটা’র মাঝে একটা বুঝতে পারিনি, দুতিনটা বেশ ভালো লেগেছে। গল্পসংকলনে মাইক্রো ফিকশন যোগ করাটা বৈচিত্র এনেছে।  
রাত্রি ঘনঘোর : The Dreamers সিনেমার প্রসঙ্গ টানলে খুব আকাশ-পাতাল হয়ে যাবে ব্যাপারটা, তবে সিনেমার সমাপ্তির মতো অনুভূতি হয়েছিল আমার, একটা দিশাহীন শূণ্য দুর্বোধ্য পদযাত্রা। ‘ফিয়ার অব আননোন’ কে এনেছেন লেখক। গতবছরের অতীন্দ্রীয়তে লেখকের একই জনরায় লেখা ‘ঘাসভূমি’ গল্পটা ভালো না লাগলেও, এবারেরটা অনুভব করতে পেরেছি। বেশ।  
ছায়ার সওদা : অল্প বিস্তৃতিতে গল্প জমিয়ে দেওয়ার কাজ করেছেন সিদ্দিক আহমেদ। যে আইডিয়া এনেছেন, সহজ এবং চমৎকার। জম্পেশ লাগবে সুনির্মিত এই গল্পটা পড়তে।  
আমার দাদা কাক বিক্রি করতেন :এই বইয়ের সবচে দারুণ কাজগুলোর একটা। মিথলজি, ইতিহাস। ঈশ্বরের খোঁজ। আটকে রাখার মতো একটা স্টোরিটেলিং। আর সবচে সেরা তাঁর যবনিকাপাত। পাঠককে পুরো গল্পটা মনে করিয়ে দিয়ে, একটা পূর্ণতার স্বাদ দিয়ে যাবে।  
প্রতিপদ : এই সংকলনে মাহমুদুর রহমানের লেখা দেখে অবাক হয়েছিলাম। ইতিহাসের বাইরে তাঁর কোনো লেখা এর আগে পড়িনি। এই অব্দি রঙ মিলান্তি আর রুসওয়া এসেছে ইতিহাসের বাইরে। লেখক গল্প বলিয়ে হিসেবে কতটা পাকাপোক্ত, তার নজির মিললো এই গল্প পড়ে। তামাম যত ক্লাসিক লেখক গ্রামের উঠোনে পাঠককে বসিয়ে বাঙালীর গ্রাম্য মনস্তত্ত্বের শেকড়ে টান দিয়েছেন, তাদের রেখে যাওয়া কাজের যোগ্য সম্মান, এই ‘প্রতিপদ’।  
উদক : পছন্দের গল্পের লিস্টে সবচেয়ে দুর্বল গল্প এটা। তাও যে জনরায় কাজ করেছেন, সুবিচার করেছেন সেটায়। শেষে অবাক করে দেওয়ার মতো ভালো।  

যেভাবে গল্পটা হয়ে উঠলো : “All that we see or seem is but a dream within a dream.” ~ এডগার এলান পো’র উক্তি। যে লেখকরা আস্ত একেকটা জগত তৈরী করেন, স্বয়ংসম্পূর্ণ একেকটা নিজস্ব নিয়মাবদ্ধ জগত, তাঁদের নামে ছোট্ট শ্রদ্ধার্ঘ্য , গল্পটা। যে দুনিয়ায় বসে গল্পটা পড়ছেন সেটা আসল তো, নাকি গল্পের ভেতরের গল্প? এটাও সবথেকে সেরা গল্পগুলোর আরেকটা।  
ক্যামেলিয়া হাতে এই সন্ধ্যায় : লেখকরা সবসময়েই নানান জায়গার মিথ, ইতিহাসকে বাংলাদেশে টেনে আনেন। কিন্তু ওয়াসি আহমেদ রাফি ভাইয়ের এই গল্পে জাপানি একটা মিথকে বাংলাদেশের বলে মনে হয়েছে। এত সুন্দর মুনশিয়ানা না পড়ে দেখলে চলে না। স্মৃতিঝিঁঝিঁ : আমি এটা দেখে খুশি হয়েছিলাম যে প্রথম প্রকাশিত বই ‘জাদুকর’ লেখার পর থেকে লেখক অনেক পরিণত হয়েছেন লেখনী-তে। অনবদ্য একটা গল্প।  
শাহ আলী স্মৃতি পাঠাগার : পড়ার সময় খুব দারুণ লেগেছিল। এক মাস পর এসে প্রায় সব ভুলে গেছি। কিন্তু পড়তে ভালো লেগেছে। গল্পটা এমনই। 
রোগ : নিঃসন্দেহে, এই বইয়ের তাজমনি [বা ক্রাউন জুয়েল]। প্যান্ডেমিকের প্রেক্ষাপটে গল্প শুরু করেছিলেন লেখক, তাতে কলকাতার জীবনযাপনের ষোলআনা স্বাদ টাটকা বিদ্যমান, গল্পে অবাস্তব ঢুকলো, রহস্যজনক হয়ে উঠতে লাগলো, যখন কুকুরের মতো অনুভূতির গন্ধ পেতে লাগলেন মূল চুরিত্র। তাও শুধু অনুভূতি না, মৃত্যু এবং খুনের গন্ধও পেতে লাগলেন। গল্পের নির্মাণ অনবদ্য। খুব যত্নশীল গতিতে গল্প এগিয়েছে, পাঠকের আগ্রহ চড়িয়েছে, কমিয়েছে। এটা সেসব গল্পগুলোর একটা যার ‘স্টোরি’-টা বেশ দারুণ লেগেছে। থ্রিলার পাঠক হোক আর ফ্যান্টাসি/হরর পাঠক, পড়ে আনন্দ পাবেন। 

 Collect Aloukik Original Copy

Review Credit GR: 
Find more about us: linktr.ee/musarboijatra
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?