“চা পৃথিবীর একটা সত্য জিনিস
ততোধিক সত্য তোমার উপস্থিতি
স্বর বা চিঠি বা স্বপ্নে চলে আসা
এখন সমস্যা হলো কেউ কোথাও আসে না
বরং ছায়াপথ পেরিয়েও অনেকটা দূরে চলে যায়
আমার তো নভোযান নেই”
মানবজীবনে সাফল্য, এর চেয়ে অন্তত এক আলোকবর্ষ দূরের বিষয় সার্থকতা খুব কম আসে। এক জীবন নিরন্তর ঠকে যাওয়া, বারংবার হারতে থাকা, পর্বতসমান ব্যর্থতার গ্লানী বহন করে চলা মানবসন্তান তার সাফল্য এবং রেয়ার সার্থকতা প্রবলভাবে পালন করে। কারণ মনোনয়ন বিরল একটি বিষয়। মেজরিটির জন্যে।
সৈকত দের কবিতায় এই তীব্র এবং নির্মম সত্য বারবার ফুটে ওঠে। লাইফ ফেয়ার না, বরঞ্চ যথেষ্ঠ ক্রুয়েল। এই বইয়ের ছত্রে ছত্রে আপনার ভালো থাকা মন ছত্রভঙ্গ হয়ে যেতে পারে। সৈকতের কবিতা আপনার মন ভালো করে দেয়ার জন্যে নয়। তার ম্যাক্সিমসমূহ দূর্বল হৃদয়ের মানুষের না পড়াই ভালো হবে। এন্টারটেইনমেন্ট দেয়ার জন্যে এসব কবিতা লেখা হয়নি।
তবে গুরুত্বপূর্ণ ইনসাইট যাদের মধ্যে আছে। অথবা যারা কিউরিয়াস বিভিন্ন বিষয়ে সেসব ব্যক্তিরা এই সকল অদ্ভুত সুন্দর কবিতার মধ্য দিয়ে এক অনন্ত ভ্রমণে বেরিয়ে পড়তে পারেন। কবিতায় একটা মজার ব্যাপার আছে। যেকোন পৃষ্ঠা থেকে শুরু করা যায়। শেষ পৃষ্ঠা পড়ে ফেললেও স্পয়লার হয়না। কোন কবিতা দশবার পড়লে দশরকম অর্থ দাড় করানো যেতে পারে। এছাড়া প্রোজের তুলনায় ভালো পোয়েম বা পোয়েট্রি ভবিষ্যতের সাথে বর্তমানের সেতু হিসেবে ব্যাটার কাজ করে। আমার মতে।
এই গ্রন্থের বিভিন্ন কবিতায় এবং ম্যাক্সিমে সৈকত দে সহজবোধ্য ভাষায় অবধারিতভাবে টেনে এনেছেন অনেক অস্বস্তিকর বাস্তবতাকে। সেটা আমাদের সমাজের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, বৈবাহিক, ব্যর্থ বিপ্লবের আখ্যান, আই ওয়াশের অন্তরালে নির্মম অন্যায়ের চিত্রণ এবং আরো অনেক বিষয় তার দুর্দান্ত কাব্য প্রতিভার মাধ্যমে অক্ষরে রূপ লাভ করেছে।
সৈকতের কবিতাগুলো বিপন্ন। একইসাথে বিস্ময়করভাবে এই সকল বিপন্নতা নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা করে তার কবিতা। বিভিন্ন রেফারেন্স, তুলনা, ভঙ্গিমা, উপমা এবং সংকেত একদম ন্যাচারালী তার কবিতায় অস্থিরভাবে বিচরণ করতে থাকে। যেকোন কবিতাপ্রেমীকে আমি এই বই হাইলি রেকমেন্ড করতে চাই।
মহাকালজুড়ে যেকোন ক্ষেত্রে মানবজীবনে মনোনয়নের দিন খুব কমই এসেছে। সেই হিসেবে প্রতিটি দিনই আমাদের প্রায় সবার জন্যে অমনোনয়নের দিন।
“যেকোনো মুহুর্তে ক্যানভাস হাতে ভ্যান গগ
বেরিয়ে আসার মতো হলুদ এইখানে
ভাঙাচোরা ভ্যান গগ, খেতের একপাশে
চিন্তাভারাতুর ছাগল, কোনো
এক জন্মে ছিলো আপসকামী বুদ্ধিজীবী
পয়সার লোভে কলম বিক্রি করে দেয়া”
