অবচেতন মন লেখক : ডাঃ মোঃ আবেদুর রহমান । Abocheton Mon

  • বই : অবচেতন মন
  • লেখক : ডাঃ মোঃ আবেদুর রহমান
  • প্রকাশনী : ফিটাস পাবলিকেশন্স
  • বিষয় : মন ও মানসিক কাউন্সেলিং
  • পৃষ্ঠা : 116, কভার : হার্ড কভার, সংস্করণ : 1st Published, 2022
  • ভাষা : বাংলা
অবচেতন মনকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা গেলে মানুষ শিক্ষা ও ব্যক্তিগত জীবনে অনেক উন্নতি করতে পারে, তাতে দেশও আরও উন্নত হতে পারে । এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বইটি লেখা ।
ভুল ত্রুটির জন্যে ক্ষমা প্রার্থী । দোয়াও চাই সবার কাছে ।

মন কি ? What is Mind ?

মন কি?

ডাক্তারি ভাষায় যেটা লিম্বিক সিস্টেম, সেটাই মনোবিজ্ঞানে মন । অনেকগুলো অংশ মিলে লিম্বিক সিস্টেম । তবে প্রধান অংশ হল- প্রিফ্রন্টাল করটেক্স আর এমায়গডালা । প্রিফ্রন্টাল করটেক্স হল বিবেকের কেন্দ্র । এমায়গডালা হল আবেগের কেন্দ্র । বিবেক ও আবেগ মিলে মন ।

সচেতন ও অবচেতন মন

সচেতন বনাম অবচেতন মনোবিজ্ঞানে, আমাদের মনকে ৩ টি মূল অংশে বিভক্ত করা হয়। সচেতন, অবচেতন, এবং অজ্ঞান। সচেতন এবং অবচেতন মনুষ্য মন দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সচেতন মন (conscious mind ) এর ক্ষমতা আমাদের মাইন্ডের ১০০% এর মধ্যে ১০% এবং অবচেতন মন (subconscious) এর ক্ষমতা ৯০%।

সচেতন মন :

সিগমুন্ড ফ্রয়েডের ব্যক্তিত্বের মনস্তাত্ত্বিক তত্ত্বের মধ্যে, সচেতন মন আমাদের সচেতনতা এর ভিতরে সবকিছু নিয়ে গঠিত। এটি আমাদের মানসিক প্রক্রিয়াকরণের দিকটি যে আমরা যুক্তিযুক্ত ভাবে চিন্তা এবং কথা বলতে পারি

সচেতন মন আমাদের বর্তমান সচেতনতার ভিতরে sensations, অনুভূতি, স্মৃতি, এবং কল্পনার মত জিনিস অন্তর্ভুক্ত।
সচেতন মন সমস্ত বিষয়ে জড়িত যা আপনি বর্তমানে সচেতন এবং চিন্তা করছেন। এটি সামান্য মেয়াদে মেমরির অনুরূপ এবং ক্ষমতা সীমার মধ্যে সীমিত। 

অবচেতন মন :

বিখ্যাত দার্শনিক কার্ল ইয়াংয়ের মতে সাব-কনশাস বা অবচেতন মন হচ্ছে সচেতন মনের একটি বিপরীত বিকল্প এটি অন্যান্য দার্শনিক ও মনোবিজ্ঞানীরা সমর্থন করেন এমনকি বিখ্যাত দার্শনিক ও মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড অবচেতন মন এর কথা বলেছেন যদিও তিনি এটিকে প্রি-কনশাস বলে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন। অবচেতন মনের শক্তি ব্যবহার করে হোমিওস্টয়াটিক পদ্ধতিতে মনের মধ্যে ভারসাম্য নিয়ে এসে আমরা দুশ্চিন্তা ও মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে পারি শুধু তাই নয় আমাদের জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারি। যেমন ধরুন একজন ব্যক্তি যে দোষী নয় তাকে যদি বারবার বলা হয় তুমি দোষী, তুমি দোষী; তবে সে সত্যি নিজেকে দোষী ভাবতে শুরু করবে এবং এটি তার প্রথমে মানসিকতা ও কর্মে প্রভাব ফেলবে পরবর্তীতে এমনকি শারীরিক পরিবর্তন আনতে পারে তার চেহারায় প্রভাব ফেলে। অবচেতন মনকে ডার্করুমও বলা হয়। 

মনের এই অংশে ভয়ভীতি, বাস্তব, অবাস্তব, পরিষ্কার, উদ্ভট আর সত্য, মিথ্যা সব ধরনের অনুভূতিগুলোই লুকিয়ে থাকে। আপনাকে যদি বলা হয় গত দশ দিন আগে দুপুরে আপনি কী দিয়ে লাঞ্চ করেছিলেন আপনি বলতে পারবেন না কিন্তু যদি বলা হয় পাঁচ বছর আগে ঘটে যাওয়া কোন এক দুর্ঘটনা যেটা আপনি চাক্ষুস দেখেছিলেন তা আপনার স্পষ্ট মনে আছে কারণ অবচেতন মন আমাদের বিশেষ বিশেষ ঘটনাগুলো কখনো ভুলে না মনের গোপন স্তরে তা সঞ্চিত করে রাখে। অবচেতন মন আমাদের পূর্বের সকল অভিজ্ঞতা, মূল্যবোধ, জ্ঞান, আবেগ, বিশ্বাস ও দক্ষতাকে ধারণ করে। 
আমরা অতীতে যা যা করেছি, ভেবেছি বা অর্জন করেছি, সেই সকল তথ্যই সঞ্চিত থাকে অবচেতন মনের কাছে। তাই যদি দেখা যায় যে আমরা নতুন এমন কিছু করতে যাচ্ছি যা আমাদের অতীত অভিজ্ঞতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক, তখনই বেঁকে বসে আমাদের অবচেতন মন। আমরা ইতিমধ্যেই কোনো নির্দিষ্ট আদর্শে বিশ্বাসী হলে সহজে যেমন নতুন কোনো আদর্শকে গ্রহণ করতে পারি না, অবচেতন মনও তেমনই তার নিজস্ব আদর্শ হতে বিচ্যুত হতে চায় না। ফলে আমরা খুব সচেতনভাবে কোনো নতুন ধরনের কাজ করতে চাইলেও, অবচেতন মন তাতে সাড়া দেয় না।
 
ধরুন, আপনি খুব সচেতনভাবেই চাইছেন কোনো একটি কাজ করতে। আপনার বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সদস্যরাও আপনাকে প্রণোদনা যোগাচ্ছে কাজটি করার জন্য। কিন্তু বাস্তবে কাজটি করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন আপনি। থেমে যাচ্ছেন, কিছুতেই এগোতে পারছেন না।
এর কারণ কী? কারণ হলো, আপনার অবচেতন মন আপনাকে কাজটি করতে দিচ্ছে না। আপনার সচেতন মন আপনাকে কাজটি করার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করলেও, অবচেতন মনের অবস্থান এর বিরুদ্ধে, এবং শেষ পর্যন্ত সচেতন মন ও অবচেতন মনের লড়াইয়ে জয় হচ্ছে অবচেতন মনেরই।
সুতরাং একটি বিষয় পরিষ্কার যে, আমাদের সচেতন মনের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী হলো আমাদের অবচেতন মন। এর পেছনে মূলত তিনটি কারণ রয়েছে।
প্রথমত, অবচেতন মন আমাদের পূর্বের সকল অভিজ্ঞতা, মূল্যবোধ, জ্ঞান, আবেগ, বিশ্বাস ও দক্ষতাকে ধারণ করে। আমরা অতীতে যা যা করেছি, ভেবেছি, বা অর্জন করেছি, সেই সকল তথ্যই মজুদ থাকে অবচেতন মনের কাছে। তাই যদি দেখা যায় যে আমরা নতুন এমন কিছু করতে যাচ্ছি যা আমাদের অতীত অভিজ্ঞতার সাথে সাংঘর্ষিক, তখনই বেঁকে বসে আমাদের অবচেতন মন। আমরা ইতিমধ্যেই কোনো নির্দিষ্ট আদর্শে বিশ্বাসী হলে সহজে যেমন নতুন কোনো আদর্শকে গ্রহণ করতে পারি না, অবচেতন মনও তেমনই তার নিজস্ব আদর্শ হতে বিচ্যুত হতে চায় না। ফলে আমরা খুব সচেতনভাবে কোনো নতুন ধরনের কাজ করতে চাইলেও, অবচেতন মন আমাদের টেনে ধরে রাখে।
দ্বিতীয়ত, অবচেতন মনের কাছেই থাকে আমাদের আবেগের নিয়ন্ত্রণ। এবং কে না জানে, আমরা মানুষরা খুবই আবেগী প্রাণী। নিজেদের জীবনের অধিকাংশ সিদ্ধান্ত গ্রহণেই আমরা যতটা না প্রাধান্য দিয়ে থাকি যুক্তিকে, তার থেকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি আমাদের আবেগকে। যেহেতু অবচেতন মনেই অবস্থান করে আমাদের আবেগ, তাই অবচেতন মন চাইলে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে আমাদের ব্যবহার ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকেও। একবার যদি আমরা কোনো কাজের বিরুদ্ধে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি, তখন আবেগকে চাপা দিয়ে ওই কাজ অব্যহত রাখা হয়ে পড়ে অসম্ভব।
তৃতীয়ত, অবচেতন মনের থাকে তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের অসীম ক্ষমতা। আমাদের সচেতন মন একবারে একটির বেশি বিষয়ে ফোকাস ধরে রাখতে পারে না। একসাথে একাধিক বিষয়ে চিন্তা করতে গেলেই সচেতন মনের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। অথচ অবচেতন মনের সেরকম কোনো সমস্যাই নেই। বরং সে চাইলেই একসাথে অনেক বিষয় নিয়ে ভেবে চলতে পারে। তাই যদি আমরা কোনো কাজ করার পেছনে সচেতনভাবে একটি যুক্তি সাজাতে চাই, দেখা যাবে ওই সময়ের মধ্যে আমাদের অবচেতন মন সাজিয়ে ফেলেছে বিপক্ষ অবস্থানের দশটি যুক্তি।
এভাবে অবচেতন মন আমাদের যুক্তি-বুদ্ধি, আবেগ, দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণ, মেজাজ সবকিছুতেই কলকাঠি নাড়তে পারে। ফলে তার কাছে প্রায়শই হার মানতে বাধ্য হয় আমাদের সচেতন মন।
অবচেতন মন নিয়ন্ত্রণের কার্যকরী কিছু উপায় :

মেডিটেশন :

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখেছেন, মেডিটেশনের মাধ্যমে হিপোক্যাম্পাসের কর্টিকাল পুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। আর এই হিপোক্যাম্পাসের মাধ্যমেই মানুষ নতুন কিছু শিখতে ও তা স্মরণে রাখতে পারে। ফলে মেডিটেশন করলে আপনি নতুন কোনো দক্ষতা যেমন সহজেই শিখতে পারবেন, তেমনই কোনো কিছু পড়ার পর তার অধিকাংশ মনে রাখতেও পারবেন। আবার মেডিটেশনের মাধ্যমে আপনার মনের অযাচিত ভয়-শঙ্কা, উদ্বেগ-অস্বস্তিও দূর হবে।

তবে মেডিটেশনের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো অবচেতন মনকে বশ করা, অর্থাৎ একাগ্রতা ও অবধারণগত দক্ষতা বৃদ্ধি। আপনি যখন মেডিটেশন করবেন, তখন শুরুতে আপনি সচেতনভাবেই আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করবেন, যা সাধারণ অবস্থায় অবচেতন মন করে থাকে। এরপর আপনি সচেতনভাবে কিছুক্ষণ নির্দিষ্ট মাত্রায় শ্বাস-প্রশ্বাস চালানোর পর আপনার অবচেতন মনও সেটির সাথে অভ্যস্ত হয়ে যাবে, এবং সে নিজেও ওই একই মাত্রায় শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে থাকবে। এটি কেবলই একটি উদাহরণ মাত্র। মেডিটেশনের মাধ্যমে এভাবে আপনি আপনার অবচেতন মনের সকল চিন্তাকেই সচেতন মনে নিয়ে আসতে পারবেন, এবং সচেতনভাবে সেটির উন্নতিসাধনের পর আবার অবচেতন মনের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবেন।

নেতিবাচক আবেগের অবমুক্তি:

আপনার অবচেতন মন যে আপনার সচেতন মনের ইতিবাচক উদ্যোগকে সহ্য করতে পারে না, এর কারণ হলো আপনার অবচেতন মন বিভিন্ন নেতিবাচক আবেগ দ্বারা পরিপূর্ণ। অতীতে আপনার সাথে যদি খারাপ কিছু হয়ে থাকে, সেই স্মৃতি আপনার অবচেতন মনে খুব ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকে। যখনই আবার আপনি ওই একই ধরনের কিছু একটা করতে উদ্যত হন, অবচেতন মনে ফের ওইসব স্মৃতি উঁকি দিয়ে যায়, ফলে আপনার পক্ষে আর খুশিমনে কাজটি শুরু করা সম্ভব হয় না।কিন্তু আপনি চাইলে এসব নেতিবাচক স্মৃতি থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারেন। সেজন্য আপনার প্রয়োজন সচেতনভাবেও নেতিবাচক চিন্তাভাবনা করা থেকে বিরত থাকা, এবং কখনো নেতিবাচক কোনো সম্ভাবনার কথা মুখ ফুটে না বলা। কেননা কারো কাছে যদি আপনি আপনার নেতিবাচক চিন্তার কথা বলেন, এবং সে যদি আপনার মন থেকে ওই নেতিবাচক চিন্তা দূর করতে না পারে বরং আরো বাড়িয়ে দেয়, তাহলে পরবর্তীতে আপনার পক্ষে নিজে নিজে ওই নেতিবাচক চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসা আরো কঠিন হয়ে পড়বে। সুতরাং নেতিবাচক চিন্তা না করা ও নেতিবাচক কথা না বলার পাশাপাশি আপনার আরো প্রয়োজন নেতিবাচক মানসিকতার মানুষদের সংসর্গ ত্যাগ করা, কেননা তাদের সাথে মিশলে আপনার পক্ষে কখনোই নিজের অবচেতন মনের নেতিবাচক আবেগ থেকে মুক্তিলাভ সম্ভব হবে না।

কল্পনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:

কথায় আছে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। আসলেই তা-ই। আপনি যখন কোনো কাজে ব্যস্ত থাকেন, তখন কিন্তু অবচেতন মন এসে আপনাকে বিরক্ত করার সুযোগ কম পায়। কেননা, তখন সচেতনভাবেই আপনি কাজটিতে পরিপূর্ণ একাগ্রতা দান করতে পারছেন। কিন্তু যখন আপনি অলস সময় কাটান, তখনই আপনার অবচেতন মন বিভিন্ন নেতিবাচক চিন্তার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়ে উপস্থিত হয়ে আপনাকে জ্বালাতন করতে শুরু করে।

তাহলে অবসর সময়ে আপনার কী করা উচিৎ? অবশ্যই নেতিবাচক চিন্তা নয়। বরং আপনার উচিৎ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা। ভবিষ্যতে কোন কাজটি কীভাবে করবেন তা ভেবে রাখতে পারেন, এবং অবশ্যই সেখানে ব্যর্থতার কথা কল্পনা করবেন না। বরং আপনি ভবিষ্যতে যে কাজগুলো ঠিকভাবে করতে সক্ষম হচ্ছেন, সেই বিষয়টিই আপনাকে কল্পনা করতে হবে। এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই যে আগে থেকে ভালো কিছু ভেবে রাখলে তা কখনো বাস্তবায়িত হবে না। এগুলো নিছকই কুসংস্কার। বরং আপনি যদি আগে থেকেই ভালো কিছু কল্পনা করতে থাকেন, তা নিঃসন্দেহে আপনার আত্মবিশ্বাসকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে, এবং আপনার অবচেতন মনও তখন উপলব্ধি করতে শুরু করবে যে কাজটি আসলেই আপনার পক্ষে করা সম্ভব। আর এ কথা তো বলাই বাহুল্য, অবচেতন মন যখন সঙ্গে থাকে, সাফল্য লাভের সম্ভাবনাও যায় বেড়ে।
– সেহজাদ এহসান
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?